• আমাকে পাঁচটি জ্ঞান ছাড়া সমস্ত কিছুর (জ্ঞানের) চাবি দান করা হয়েছেঃ



সংশ্লিষ্ট প্রশ্নাবলী (নিম্ন বর্ণিত বিষয়ে):


❏ হাদিস ৭৯:


ইমাম ইঊসুফ নাবহানী (رحمة الله) বর্ণনা করেন মহানবী (ﷺ)-এর কথা, যিনি বলেন:

أُوتيت مَفَاتِيح كل شَيْء إِلَّا الْخمس

আমাকে (আল্লাহর খাস্) পাঁচটি জ্ঞান ছাড়া সমস্ত কিছুর (জ্ঞানের) চাবি দান করা হয়েছে।” [৯২]

🔺[৯২] হুজ্জাতু্ল্লাহি আলাল আলামীন, ৩য় খণ্ড, ১০৯ পৃষ্ঠা।


এ হাদীস রওয়ায়াত করেন -

● হযরত ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে ইমাম আহমদ (২:৮৫); 

● তাবারানী নিজ ‘কবীর’ গ্রন্থে (১২:৩৬১); 

● হায়তামী আপন ‘মজমাউল যাওয়াঈদ’ পুস্তকে (৮:২৬৩); 

● ইবনে কাসীর স্বরচিত ‘তাফসীর’গ্রন্থে (৬:৩৫৫) এবং 

● ইমাম সৈয়ূতী নিজ ‘তাফসীরে দুর্রে মানসূর’ বইয়ে (৫:১৬৯)। 

● ইমাম হায়তামী বলেন, “ইমাম আহমদ (رحمة الله)-এর এসনাদে রাবী বা বর্ণনাকারীবৃন্দ সবাই সিক্বা (নির্ভরযোগ্য)।”

● ইমাম নাবহানী (رحمة الله)-এর ওই বিশ্বকোষের একই পৃষ্ঠায় (৩:১০৯) আরো লিপিবদ্ধ আছে:


❏ হাদিস ৮০:


১/- হযরত ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু অনুরূপভাবে বর্ণনা করেন,

أُوتِيَ نَبِيكُم صلى الله عَلَيْهِ وَسلم مَفَاتِيح كل شَيْء غير الْخمس

তিনি (অদৃশ্যের) সমস্ত কিছুর চাবি প্রাপ্ত হয়েছেন, শুধু (আল্লাহর জানা) পাঁচটি জ্ঞান ব্যতিরেকে।’ ]৯৩]

🔺[৯৩] আহমদ : আল মুসনাদ, ১:৪৩৮।


এটা হযরত ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  হতে বর্ণনা করেন ইমাম আহমদ (رحمة الله) ও ইবনে ‘আদী। ইমাম হায়তামী বলেন, “উভয় এসনাদের রাবীবৃন্দ সিক্বা।”


❏ হাদিস ৮১:


২/ ইমাম ইবনে হাজর আসক্বালানী (رحمة الله) -ও নিজ ‘ফাতহুল বারী’ পুস্তকে আরো দুটি একদম অনুরূপ নির্ভরযোগ্য হাদীস বর্ণনা করেন (দারুল ফিকর সংস্করণ, ১:১২৪ ও ৮:৫১৪), যা’তে বিবৃত হয়,

أُوتِيَ نَبِيُّكُمْ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عِلْمَ كُلِّ شَيْءٍ سِوَى هَذِهِ الْخَمْسِ


‘তোমাদের রাসূল (ﷺ) এই পাঁচটি (জ্ঞান) ছাড়া সমস্ত কিছু প্রাপ্ত হয়েছেন।[৯৪]” 

🔺[৯৪] ইবনে হাজর : ফাতহুল বারী শরহু বুখারী, ৪১৬:৭০।


“আমি গায়ব তথা অদৃশ্যের চাবি প্রাপ্ত হয়েছি।”

ওই গ্রন্থের পরবর্তী পৃষ্ঠায় (৩:১১০) লিপিবদ্ধ আছে:


❏ হাদিস ৮২:


৩/ বনূ ’আমির গোত্রের এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর কাছে নির্দিষ্ট কিছু প্রশ্ন করার পর জিজ্ঞেস করেন,

حَدثنِي رجل من بني عَامر أَنه قَالَ: يَا رَسُول الله هَل بَقِي من الْعلم شَيْء لَا تعلمه فَقَالَ: لقد عَلمنِي الله خيرا وَإِن من الْعلم مَا لَا يُعلمهُ إِلَّا الله

الْخمس  { إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ وَيُنَزِّلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا تَكْسِبُ غَدًا وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ }


আপনি জানেন না এমন কোনো জ্ঞান আছে কি?” এর উত্তরে মহানবী (ﷺ) বলেন, “আল্লাহ এর চেয়ে ভালো জানেন; অধিকন্তু এমন এক ধরনের অদৃশ্য জ্ঞান আছে যা একমাত্র আল্লাহই জানেন: 

(ক) তাঁর জানা রয়েছে প্রলয়-দিবস কখন; 

(খ) বৃষ্টি বর্ষণের জ্ঞান; 

(গ) কোন্ মাতৃগর্ভে কী রয়েছে; 

(ঘ) আগামীকাল কোন্ রূহ কী আয় করবে না জানা, (কিন্তু আল্লাহর তা জানা) এবং 

(ঙ) কোন্ দেশে কোন্ রূহ/আত্মা পরলোক গমন করবে তা না জানা (কিন্তু আল্লাহর সে সম্পর্কে জানা)।” [৯৫]

🔺[৯৫] আহমদ : আল মুসনাদ, ৩৮:২০৭ হাদীস নং ২৩১২৭।


ইমাম আহমদ (رحمة الله) এ হাদীসটি বর্ণনা করেন এবং ইবনে কাসীর নিজ তাফসীর গ্রন্থের সূরা লুক্বমানে এটা উদ্ধৃত করেন। আল-হায়তামী (رحمة الله) তাঁর ‘মজমাউল যাওয়াঈদ’ পুস্তকে (#১১৬) বলেন,

“ইমাম আবূ দাউদ (رحمة الله) এটার অংশ-বিশেষ বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম আহমদ (رحمة الله) -এর এসনাদে সকল বর্ণনাকারী-ই আস্থাভাজন (সিক্বা) এবং তাঁরা সবাই ইমাম।”


❏ হাদিস ৮৩:


উপরন্তু,

৪/ হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে ইবনে মারদাওয়াঈ’র বর্ণনায় এটা সমর্থিত হয়েছে,  যেটা ‘কানযুল উম্মাল’ শীর্ষক তাফসীর-গ্রন্থের সূরা লুক্বমানের ব্যাখ্যায় উদ্ধৃত হয়েছে সূরা আল-ক্বাসাস এর তাফসীর হিসেবেই, যা’তে বিবৃত হয়:

فَعَمِيَتْ عَلَيْهِمُ الْأَنْبَاءُ يَوْمَئِذٍ

অতঃপর সেদিন তাদের ওপর (খোশ)-খবরসমূহ অন্ধকার হয়ে যাবে” ।[৯৬]

🔺[৯৬] আল-ক্বুরআন, আল কাসাস, ২৮:৬৬।


এমতাবস্থায় হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু  বলেন,

“لم يعم1 على نبيكم صلى الله عليه وسلم شيء إلا خمس من سرائر الغيب، هذه الآية في آخر لقمان: {إِنَّ اللَّهَ عِنْدَهُ عِلْمُ السَّاعَةِ} إلى آخر السورة”.


তোমাদের রাসূল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে অদৃশ্য জ্ঞানের পাঁচটি বিষয় ছাড়া কিছুই অন্ধকার (আড়াল) করা হয়নি। [৯৭]

🔺[৯৭] কানযুল উম্মাল : ২:৪৭৯ হাদীস নং ৪৫৪৯।


❏ হাদিস ৮৪:


অধিকন্তু,

৫/ –

أَتَانِي اللَّيْلَةَ رَبِّي تَبَارَكَ وَتَعَالَى فِي أَحْسَنِ صُورَةٍ،، قَالَ أَحْسَبُهُ فِي الْمَنَامِ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ هَلْ تَدْرِي فِيمَ يَخْتَصِمُ الْمَلَأُ الأَعْلَى؟ قَالَ: قُلْتُ: لاَ،قَالَ: فَوَضَعَ يَدَهُ بَيْنَ كَتِفَيَّ حَتَّى وَجَدْتُ بَرْدَهَا بَيْنَ ثَدْيَيَّ أَوْ قَالَ: فِي نَحْرِي، فَعَلِمْتُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الأَرْضِ،

“আমার প্রভু আমার কাছে আসেন সেরা সুরতে।” এ হাদীসের বর্ণনাকারী বলেন, “আমার মনে হয় তিনি বলেছিলেন: ‘আমার ঘুমে’।” ”এবং (তিনি) আমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আল-মালা’উল আ’লা তথা উচ্চস্তরের ফেরেশতামণ্ডলী কিসের জন্যে প্রতিযোগিতা করেন (আপনি জানেন কি)?’ আমি উত্তরে না জানার কথা বলি। এমতাবস্থায় তিনি তাঁর হাত মোবারক আমার দুই কাঁধের মাঝখানে রাখেন, আর আমি এর শীতল স্পর্শ আমার (আত্মার) গভীরে অনুভব করি। এরই ফলশ্রুতিতে পূর্ব হতে পশ্চিমে অবস্থিত সমস্ত জ্ঞান আমার কাছে আগমন করে।[৯৮]


🔺[৯৮] তিরমিযী : আস সুনান, ৫:২২০।

(ক) ইবনে শায়বা  : আল মুসান্নাফ, ৫:৩১৩ হাদীস নং ৩১৭০৬।

(খ) আহমদ : আল মুসনাদ, ১:৩৬৮ হাদীস নং ৩৪৮৪।

(গ) ত্ববরানী : আল মু‘জামুল কাবীর, ২০ : ১০৯।


অর্থাৎ, মহানবী (ﷺ)  স্বয়ং জোর দিয়ে বলেছেন তিনি সব জ্ঞান প্রাপ্ত হয়েছেন শুধু (আল্লাহর খাস্) পাঁচটি  জ্ঞান ব্যতিরেকে। আর এটা উম্মতের উপকারার্থে অধিকাংশ সাহাবা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম-বৃন্দ কর্তৃক সমর্থিত হয়েছে। এটাই হচ্ছে নস (শরঈ দলিল), যা অস্বীকার করার কোনো অনুমতি-ই নেই।


ক্বেয়ামত দিবস প্রসঙ্গে:


(ভাই হানী বলেন) শায়খ নাযিমউদ্দীন হাক্কানী সাহেব হতে প্রলয় দিনটির কোনো *প্রত্যক্ষ* বিবরণ না পাওয়াতে আমি এখনো তাঁর সহযোগীদের কাছ থেকে এরকম তথ্য পাবার ব্যাপারে আগ্রহী।

(ড: হাদ্দাদ জবাবে বলেন) আয়াতে করীমায় যদি বিবৃত হয়,

لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً

তা তোমাদের ওপর আসবে না, কিন্তু আকস্মিকভাবে। [৯৯]

🔺[৯৯] আল কুরআন : আল আ‘রাফ, ৭:১৮৭।


তাহলে ক্বুরআনের এই নস্-কে বাতিলকরণে এ আগ্রহ কেন? এতে অনির্দিষ্টভাবে প্রকাশিত শেষ দিনটি ও সুনির্দিষ্টভাবে প্রকাশিত একের পর এক আলামতের ভবিষ্যদ্বাণীর মাঝে বিভ্রান্তি বিদ্যমান।

এমন কি তাঁর আশীর্বাদপূর্ণ হায়াতে জিন্দেগীতেও তিনি (এ ব্যাপারে) বলতেন, চুপ থাকতেন; অতঃপর উপস্থিত কিছু মানুষ অন্যদের জিজ্ঞেস করতেন, “তিনি এই মাত্র কী বল্লেন?” আর ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপূর্ণ’ খোঁচা যেগুলোর কিছু কিছু সন্দেহ, সেগুলো পাপ-ও।

“মাথা দিয়ে যে পাহাড়কে ঢুঁ মারছো তার জন্যে শঙ্কিত হয়ো না, বরং তোমার মাথার জন্যে শঙ্কিত হও।”

ওয়াস্ সালাম।

– আলহাজ্জ জি, এফ, হাদ্দাদ

*সমাপ্ত*


ওয়া সাল্লাল্লাহু আ’লা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদিন ওয়া আলিহী ওয়া সাল্লামা তাসলিমা।


  =সমাপ্ত

 
Top