সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ বিন মুগাফ্ফাল (رضي الله عنه)'র আক্বিদা


বদ আক্বিদা পোষণকারীর সাথে মেলামেশা বর্জন করাঃ-


হযরত ইবনু জুবাইর (رضي الله عنه) বলেন, হযরত আবদুল্লাহ ইবনু মুগাফ্ফাল (رضي الله عنه)’র কোন এক আত্মীয় কংকর নিক্ষেপ করলে তিনি তাকে একথা বলে নিষেধ করেন যে, রাসূল (ﷺ) কংকর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। কংকর দ্বারা কোন জীবজন্তু শিকার বা কোন দুশমনকে ধ্বংস করবে না। 

কিন্তু লোকটি দাঁত ভেঙ্গে ফেলল এবং চোখ ক্ষত করল। রাবি বলেন, লোকটি পুনরায় কংকর নিক্ষেপ করলে হযরত আবদুল্লাহ্ বিন মুগাফ্ফাল (رضي الله عنه) বলেন, 


أُحَدِّثُكَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهٰى عَنْهُ، ثُمَّ تَخْذِفُ، لَا أُكَلِّمُكَ أَبَدًا


-“আমি তোমাকে রাসূল (ﷺ)’র হাদিসে পাক শুনিয়ে বলেছিলাম যে, তিনি কংকর নিক্ষেপ করতে নিষেধ করেছেন। এরপরেও তুমি যখন কংকর নিক্ষেপ করলে, আমি তোমার সাথে আর কখনো কথা বলব না।’  ২৫২

{২৫২. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৩/১৫৪৮ পৃ:, হা/১৯৫৪, পরিচ্ছেদ: بَابُ إِبَاحَةِ مَا يُسْتَعَانُ بِهِ عَلَى الِاصْطِيَادِ وَالْعَدُوِّ، وَكَرَاهَةِ الْخَذْفِ , সুনানে দারেমী, ১/৪০৬ পৃ. হা/৪৫৩, হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৪/৩১৫ পৃ. হা/৭৭৫৯, মুসনাদে আহমদ, ৩৪/১৭১ পৃ. হা/২০৫৫১, মুসনাদে হুমাইদী, ২/১৩৭ পৃ. হা/৯১১, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, ১ম খণ্ড, হা/১৭২, আবু নুয়াইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৪/৩০৮ পৃ. }


আক্বিদা

মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী (رحمة الله) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন, এই হাদিসের মধ্যে এই দলিল বিদ্যমান যে, বিদ‘আতী, ফাসিক, ফাজির এবং সুন্নাত বর্জনকারীদের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করা জায়িয।  ২৫৩

{২৫৩. ইমাম নববী, শরহে সহীহ মুসলিম, ১৩/১০৬ পৃ. 

ইমাম ইবনে নাজ্জার (رحمة الله) হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বিদ‘আতীদের (বাতিলপন্থীদের) বিষয়ে বলেছেন-

فَلَا تُؤَاكُلُوْهُمْ وَلَا تُشَارِبُوْهُمْ وَلَا تُجَالِسُوْهُمْ وَلَا تُصَلُّوْا عَلَيْهِمْ وَلَا تُصَلُّوْا مَعَهُمْ.

-‘‘তোমরা তাদের সাথে খাবার গ্রহণ কর না, তাদের সাথে পানীয় প্রান কর না, তাদের কারো সাথে উঠা বসা কর না, তারা মারা গেলে তাদের জানাযায় অংশগ্রহণ করবে না এবং তাদের সাথে নামায আদায় কর না।’’ (মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৫৪০ পৃ. হা/৩২৫২৯, ইমাম যাহাবী, মিযানুল ই‘তিদাল, ১/৩২০ পৃ. ক্রমিক. ১২০৭, ইমাম ইবনে হাজার, লিসানুল মিযান, ২/২৯৯ পৃ. ক্রমিক.১৪৮৬) আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

فَإِنْ أَدْرَكْتُمُوْهُمْ فَلَا تُنَاكِحُوْهُمْ وَلَا تُؤَاكِلُوْهُمْ وَلَا تُشَارِبُوْهُمْ وَلَا تُصَلُّوْا مَعَهُمْ وَلَا تُصَلُّوْا عَلَيْهِمْ

-‘‘ঐ সমস্ত ব্যক্তিদের সাথে সাক্ষাত বা পরিচয় থাকলে তাদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবে না, তাদের সাথে খাবার গ্রহণ করবে না, তাদের সাথে সালাত আদায় করবে না, তারা মারা গেলে তাদের জানাযাতে যাবে না।’’ (মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৫৪০ পৃ. হা/৩২৫২৮) তবে ইমাম আবু বকর খাল্লাল (رحمة الله) সাহাবীদের সমালোচনাকারী বিদ‘আতীদের সম্পর্কে একটি হাদিস বর্ণনা করেন। হযরত আনাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:......فَلَا تُجَالِسُوهُمْ، وَلَا تُؤَاكِلُوهُمْ، وَلَا تُشَارِبُوهُمْ، وَلَا تُنَاكِحُوهُمْ، وَلَا تُصَلُّوا مَعَهُمْ، وَلَا تُصَلُّوا عَلَيْهِمْ

-‘‘তাদের সাথে বসবে না, তাদের সাথে পানাহার করবে না, তাদের সাথে পান করবে না, তাদের সাথে আত্মীয়তা বন্ধনে আবদ্ধ হবে না, তাদের সাথে নামায পড়বে না, তারা মারা গেলে তাদের জানাযা পড়তে যাবে না।’’ (ইমাম আবু বকর খাল্লাল, আস-সুন্নাহ, ২/৪৮৩ পৃ. হা/৭৬৯, ইবনে হাজার আসকালানী, মুখাল্লিসিয়্যাত, ৩/৩৬৮ পৃ. হা/২৭৩২, খতিবে বাগদাদী, তালখিসুল মুতাশাবাহ ফির রসম, ১/৭০ পৃ. এবং তারিখে বাগদাদ, ক্রমিক. ৪৫৭১) বিদ‘আতীদের বিষয়ে আরও বর্ণিত আছে যে হযরত জাবির (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-

وَإِنْ لَقِيتُمُوهُمْ فَلَا تُسَلِّمُوا عَلَيْهِم

-‘‘যখন তাদের সাথে সাক্ষাত লাভ করবে তখন তাদেরকে সালাম দিও না।’’ (ইমাম ইবনে মাযাহ, আস-সুনান, ১/৬৯ পৃ. হা/৯২)}


এটাও প্রমাণিত যে, বদ আক্বিদাধারি আলিমদের মধ্যে যারা কুরআন-সুন্নাহ পরিপন্থি আক্বিদা এবং দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে তাদের সাথে মেলামেশা করা নাজায়িয। মেলামেশা করা যখন নাজায়িয, তখন তাদের পেছনে ইকতিদা করা কিভাবে জায়িয হবে? আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে পাকে ইরশাদ করেন যে, 


وَلَا تَرْكَنُوا إِلَى الَّذِينَ ظَلَمُوا فَتَمَسَّكُمُ النَّارُ وَمَا لَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ مِنْ أَوْلِيَاءَ ثُمَّ لَا تُنْصَرُونَ


-“এবং জালিমদের প্রতি, ঝুঁকে পড়ো না, পড়লে তোমাদেরকে আগুন স্পর্শ করবে এবং আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের কোন অভিভাবক নেই। অতঃপর তোমরা সাহায্য প্রাপ্ত হবে না।’’ ২৫৪ 

{২৫৪. সূরা হুদ, আয়াত: ১১৩}


আরও ইরশাদ হচ্ছে-


وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّى يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ وَإِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ


-“এবং হে শ্রোতা, তুমি তাদেরকে দেখবে, যারা আমার নিদর্শন সমূহের মধ্যে লেগে আছে, তখন তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত হয় এবং যখনই তোমাকে শয়তান ভুলিয়ে দেবে, অতঃপর স্মরণে আসতেই যালিমদের নিকটে বসো না!  ২৫৫

{২৫৫. সূরা আনআম: আয়াত: ৬৮}


কুরআনের পর রাসূল (ﷺ)’র হাদিসও পেশ করা হল- হযরত আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত রাসূলে আকরাম (ﷺ) ইরশাদ করেন, 


يَكُونُ فِي آخِرِ الزَّمَانِ دَجَّالُونَ كَذَّابُونَ، يَأْتُونَكُمْ مِنَ الْأَحَادِيثِ بِمَا لَمْ تَسْمَعُوا أَنْتُمْ، وَلَا آبَاؤُكُمْ، فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ، لَا يُضِلُّونَكُمْ، وَلَا يَفْتِنُونَكُمْ


-‘‘শেষ যামানায় দাজ্জাল মিথ্যুকের প্রকাশ হবে। তারা তোমাদেরকে এমন হাদিস শুনাবে, যেগুলো তোমরা শুননি আর তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। 

তোমরা তাদের থেকে দূরে থাক, তারাও যেন তোমাদের থেকে দূরে থাকে, তারা তোমাদেরকে ভ্রষ্ট করতে পারবে না এবং ফিতনার মধ্যেও ফেলতে পারবে না।’’  ২৫৬

{২৫৬. সহীহ মুসলিম শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃ: ১২, হা/৭}

 
Top