বিষয় নং-২: ক্বাদারীয়া ও মুর্যিয়া ফেরকা সম্পর্কে ভবিষ্যৎ বাণীর হাদিস:


হাদীসের নামে জালিয়াতি’’ গ্রন্থের ২৬২ পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখেছেন যে, এ সকল সম্প্রদায় সম্পর্কে ভবিষ্যদ্বানী মূলক কোনো সহীহ হাদিস রাসূল (ﷺ) থেকে বর্ণিত হয়নি। এ বিষয়ে বর্ণিত হাদিসগুলো বানোওয়াট।


উক্ত মিথ্যা দাবীর জবাব:


এ দাবী লেখকের মনগড়া কলমে যা ইচ্ছা তাই লিখেছেন,  কিন্তু লেখকের একটু চিন্তা করার প্রয়োজন ছিল, এ দাবীর পক্ষে তার কাছে কি ভিত্তি আছে। খুব সহজেই লেখকের জ্ঞান শূণ্যতার পরিচয়। 


হাদিস নং-১


ইমাম হাকেম, আবু দাউদ, আহমদ (رحمة الله) সংকলন করেন- 


حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ أَحْمَدُ بْنُ سَلْمَانَ بْنِ الْحَسَنِ الْفَقِيهُ إِمْلَاءً، ثنا أَبُو دَاوُدَ سُلَيْمَانُ بْنُ الْأَشْعَثِ، ثنا مُوسَى بْنُ إِسْمَاعِيلَ، ثنا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ أَبِي حَازِمٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: الْقَدَرِيَّةُ مَجُوسُ هَذِهِ الْأُمَّةِ إِنْ مَرِضُوا فَلَا تَعُودُوهُمْ، وَإِنْ مَاتُوا فَلَا تَشْهَدُوهُمْ


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, কাদারীয়াগণ হল এই উম্মতের মাজুসী। সুতরাং তারা রোগাক্রান্ত হলে তাদেরকে দেখতে যেয়ো না। তাদের মৃত্যু হলে তাদের কাফন-দাফনে উপস্থিত হবে না।’’  ৮

➥৮. 

(১.) খতিব তিবরিযী : মিশকাত : ১/৩৮ পৃঃ হা/১০৭ 

(২.) ইমাম আবু দাউদ, আস্ সুনান : ৪/২২২ পৃ: হা/৪৬৯১ 

(৩.) ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ : ২/৮৬ পৃ: 

(৪.) ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল মুস্তাদরাক : ১/১৫৯ পৃ: হা/২৮৬ 

(৫.) আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়ায়েদ : ৭/২০৫ পৃঃ 

(৬.) আল্লামা ইমাম আবি আছিম,  আস্-সুন্নাহ, ১/১৪৯ পৃঃ হা/৩৩৮ 

(৭.) ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত : ৩/৬৫ পৃঃ : হা/২৪৯৪ 

(৮.) ইবনে মাযাহ, আস্-সুনান, ১/৩৫ পৃঃ হা/৯২ 

(৯.) বায়হাকী, আল-ই‘তিকাদ, ১/২৩৬ পৃঃ সুনানে কোবরা, ১০/৩৪২ পৃঃ হাদিস, ২০৮৬৯, 

(১০.)ক্বদা‘আ ওয়াল ক্বদর, ১/২৮১ পৃঃ হাদিস, ৪০৭ ও ১/২৮২ পৃঃ হাদিস, ৪০৮, 

(১১.)মা‘রিফাতুল সুনানি ওয়াল আছার, ১৪/৪১৯ পৃঃ হাদিস,  ২০১২১, 

(১২.)বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১/১৫২ পৃঃ হাদিস, ৮২, 

(১৩.)খতিবে বাগদাদ, কিফায়াতুল উলূমুল রেওয়াআত, ১/১২৪ পৃঃ


সনদ পর্যালোচনা:


ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) এটি সংকলন করে লিখেন-


هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ، إِنْ صَحَّ سَمَاعُ أَبِي حَازِمٍ، مِنِ ابْنِ عُمَرَ وَلَمْ يُخَرِّجَاهُ وَشَاهِدُهُ


-‘‘এ হাদিসটির সনদ শাইখাইনের শর্তানুসারে সহীহ, তাবেয়ী আবি হাযম (رحمة الله) ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে শুনেছেন এটিই বিশুদ্ধ, যদিও এটি শাইখাইন (রহ.) সংকলন করেননি, এটির শাওয়াহেদও রয়েছে।’’ 

(ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল মুস্তাদরাক : ১/১৫৯পৃ: হা/২৮৬) 


এ হাদিসটিকে আহলে হাদিস আলবানী মিশকাতের তাহকীকে ‘হাসান’ বলেছেন। (আলবানী, তাহকীকে মিশকাত, হা/১০৭) 


কিন্তু কেউ কেউ এ সনদ নিয়ে আপত্তি তুলেন যে আল্লামা মানাভী (رحمة الله) বলেছেন- وَفِيه انْقِطَاع -

‘‘সনদে বিচ্ছিন্নতা রয়েছে।’’ (মানাভী, তাইসীর বিশারহে জামেউস সগীর, ২/২০২ পৃ.) 


তিনি তাবেয়ী আবি হাযম (رحمة الله) সাহাবী ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে শুনা প্রমাণিত নয় বুঝিয়েছেন, অথচ ইমাম হাকেম (رحمة الله) তার জবাব বহু আগে দিয়ে দিয়েছেন এবং ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার সাথে একমত পোষণ করেছেন। এবার আমরা দেখবো তাবেয়ী আবু হাযম (رحمة الله) এ হাদিসটি তার অন্য শায়খের মাধ্যমে উক্ত সাহাবী থেকে বর্ণনা করেছেন কীনা। 


ইমাম তাবরানী (رحمة الله) সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا أَبُو مُسْلِمٍ قَالَ: نا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَبْدِ الْوَهَّابِ الْحَجَبِيُّ قَالَ: نا زَكَرِيَّا بْنُ مَنْظُورٍ قَالَ: نا أَبُو حَازِمٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْقَدَرِيَّةُ مَجُوسُ هَذِهِ الْأُمَّةِ، إِنْ مَرِضُوا فَلَا تَعُودُوهُمْ، وَإِنْ مَاتُوا فَلَا تَشْهَدُوهُمْ


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, কাদারীয়াগণ হল এই উম্মতের মাজুসী। সুতরাং তারা রোগাক্রান্ত হলে তাদেরকে দেখতে যাবে না। তাদের মৃত্যু হলে তাদের কাফন-দাফনে উপস্থিত হবে না।’’ 

(ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৩/৬৫ পৃ. হা/২৪৯৪, ইমাম ইবনে আসাকীর, তারিখে দামেস্ক, ১৯/৬২ পৃ.)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এ সনদে তাবেয়ী আবূ হাযম (رحمة الله) তাবেয়ী না‘ফে (رحمة الله)-এর সূত্রে এটি বর্ণনা করেছেন। এ সনদটির মান ‘হাসান’, কেননা ইমাম হাইসামী (رحمة الله) লিখেছেন-


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَفِيهِ زَكَرِيَّا بْنُ مَنْظُورٍ، وَثَّقَهُ أَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ وَغَيْرُهُ، وَضَعَّفَهُ جَمَاعَةٌ.


-‘‘সনদে যাকারিয়্যা ইবনে মানযুর রয়েছেন, তাকে আহমদ সালেহ ও অন্যান্য ইমামগণ সিকাহ বলেছেন, এক জামাত মুহাদ্দিস তাকে যঈফও বলেছেন।’’ (ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৭/২০৫ পৃ. হা/১১৮৭৪) 


তবে ইমাম হাইসামী (رحمة الله) উক্ত রাবীর আরেকটি হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে লিখেন-


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ وَالصَّغِيرِ، وَفِيهِ زَكَرِيَّا بْنُ مَنْظُورٍ، وَقَدْ وُثِّقَ.


-‘‘সনদে যাকারিয়্যা ইবনে মানযুর রয়েছেন, তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’ (ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৪/২৪৩ পৃ. হা/৭২৫৮) 


ইমাম জুরজানী (رحمة الله) তার বিষয়ে উল্লেখ করেছেন-  لَيْسَ بِهِ بأس -‘‘তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।’’ (তারিখে জুরজানী, ১/৫৫৮ পৃ.) 


ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন-


حَدَّثَنَا عَبد الرَّحْمَنِ بْنُ أَبِي بكر، حَدَّثَنا عَبَّاسٍ قَالَ سُئِلَ يَحْيى عَنْ زكريا بْن منظور فقال ليس به بأس.


-‘‘ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।’’ (ইবনে আদী, আল-কামিল, ৪/১৬৮ পৃ. ক্রমিক. ৭০৯) 


অন্য আরেকটি সূত্র উল্লেখ করেছেন এভাবে-


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنا عثمان بن سعيد، قلت ليحيى بْن مَعِين: فزكريا بْن منظور كيف حديثه؟ قَال: ليس به بأس.


-‘‘উসমান ইবনে সাঈদ (رحمة الله) বলেন, আমি ইমাম ইবনে মাঈন (رحمة الله) কে রাবী যাকারিয়া ইবনে মানযুরের হাদিস কেমন প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।’’(ইবনে আদী, আল-কামিল, ৪/১৬৮ পৃ. ক্রমিক. ৭০৯, ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ৯/৩৭১ পৃ. ক্রমিক. ১৯৯৬) 


ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


وَلَيْسَ بِهِ بَأْس قَالَه أَحْمد بن صَالح


-‘‘তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।’’ (ইবনে শাহীন, তারিখু আসমাউস সিকাত, ১/৯৪ পৃ. ক্রমিক.৪১০) দুটি সূত্র মিলিয়ে এটির মান সহীহ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।


হাদিস নং-২


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يَزِيدَ الْمُقْرِيُّ أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ، قَالَ: حَدَّثَنِي سَعِيدُ بْنُ أَبِي أَيُّوبَ، حَدَّثَنِي عَطَاءُ بْنُ دِينَارٍ، عَنْ حَكِيمِ بْنِ شَرِيكٍ الْهُذَلِيِّ، عَنْ يَحْيَى بْنِ مَيْمُونٍ الْحَضْرَمِيِّ، عَنْ رَبِيعَةَ الْجُرَشِيِّ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: لَا تُجَالِسُوا أَهْلَ الْقَدَرِ وَلَا تُفَاتِحُوهُمْ


-‘‘হযরত আবূ হুরায়রা (رحمة الله) এবং হযরত উমর ইবনে খাত্তাব (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তাঁরা হুযূর (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমরা কাদারিয়াদের সাথে সম্পর্ক রেখো না। তাদেরকে কোন ব্যাপারে শালিস মানবে না।’’ ৯

➥৯. খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : বাবুল ঈমান বিল কদর : ১/৪১ পৃঃ হা/১০৮, ইমাম আবু দাউদ : আস সুনান : ৫/১৪১ : হাদিস নং : ৪৭১০, ইমাম শামসুদ্দিন সাখাভী : আল মাকাসিদুল হাসানা : পৃষ্ঠা নং ৩৫০ : হা/৭৫৯, ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল : আল মুসনাদ : ১/৩০ পৃঃ, আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৭/২০৫ পৃ:  


হাদিস নং-৩


ইমাম আসেম (رحمة الله) সংকলন করেন-


ثنا يَحْيَى بْنُ دَاوُدَ الْوَاسِطِيُّ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ فُضَيْلٍ، عَنِ الْقَاسِمِ بْنِ حَبِيبٍ، عَنْ نِزَارٍ، عَنْ عِكْرِمَةَ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: صِنْفَانِ مِنْ أُمَّتِي لَيْسَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ نَصِيبٌ: الْقَدَرِيَّةُ، وَالْمُرْجِئَةُ


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আমার উম্মতের মধ্যে দুই শ্রেণীর লোকের জন্য আখিরাতে দুর্ভাগ্য রয়েছে; তারা হইলো মুর্জিয়া এবং ক্বাদারীয়াগণ।’’ ১০

➥১০. ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী : আসু সুনান : ৪/৩৯ পৃঃ, খতিব তিবরিযী : মিশকাত শরীফ : ঈমান বিল ক্বদর : হাদিস নং-৯৮, ইবনে মাজাহ: আস-সুনান : ১/২৪ পৃঃ হাদিস নং-৬২, আল্লামা ইমাম হাকেম নিশাপুরী : আল মুস্তাদরাক : ১/৮৫ পৃঃ, আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়ায়িদ : ৭/২০৫, ইমাম আসেম, আস-সুন্নাহ, ১/১৪৭ পৃঃ হা/৩৩৪


হাদিস নং-৪:


ইমাম তাবরানী (رحمة الله) সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْفَرْغَانِيُّ قَالَ: نا هَارُونُ بْنُ مُوسَى الْفَرْوِيُّ قَالَ: نا أَبُو ضَمْرَةَ أَنَسُ بْنُ عِيَاضٍ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْقَدَرِيَّةُ، وَالْمُرْجِئَةُ، مَجُوسُ هَذِهِ الْأُمَّةِ، فَإِنْ مَرِضُوا فَلَا تَعُودُوهُمْ، وَإِنْ مَاتُوا فَلَا تَشْهَدُوهُمْ


-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, কাদারীয়া এবং মুর্জিয়াগণ হল এই উম্মতের মাজুসী। সুতরাং তারা রোগাক্রান্ত হলে তাদেরকে দেখতে যেয়ো না এবং তাদের মৃত্যু হলে তাদের কাফন-দাফনে উপস্থিত হয়ো না।’’ (ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৪/২৮১ পৃ. হা/৪২০৫) 


হাদিস নং-৫:


ইমাম তাবরানী (رحمة الله) সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْفَرْغَانِيُّ قَالَ: نا هَارُونُ بْنُ مُوسَى الْفَرْوِيُّ قَالَ: نا أَبُو ضَمْرَةَ أَنَسُ بْنُ عِيَاضٍ، عَنْ حُمَيْدٍ، عَنْ أَنَسٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صِنْفَانِ مِنْ أُمَّتِي لَا يَرِدَانِ عَلَيَّ الْحَوْضَ، وَلَا يَدْخُلَانِ الْجَنَّةَ: الْقَدَرِيَّةُ، وَالْمُرْجِئَةُ


-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের দুশ্রেণীর লোক আমার হাওজে কাউসার থেকে বঞ্চিত হবে এবং তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তারা হলো, কাদারীয়া এবং মুর্জিয়াগণ সম্প্রদায়।’’ 

(ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৪/২৮১ পৃ. হা/৪২০৪)


এ হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেন-


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ غَيْرَ هَارُونَ بْنِ مُوسَى الْفَرْوِيِّ وَهُوَ ثِقَةٌ.


-‘‘হাদিসটি তাবরানী তার মু‘জামুল আওসাতে সংকলন করেছেন, সনদের সমস্ত রাবী সহীহ বুখারীর ন্যায় তবে হারুন ইবনে মূসা আল-ফারভী ছাড়া, কিন্তু সেও সিকাহ।’’ (ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৭/২০৭ পৃ. হা/১১৮৮৯) বুঝা গেল এ হাদিসটির সনদ সহীহ।


হাদিস নং-৬:


ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) সংকলন করেন-


قَالَ إِسْحَاقُ: أَخْبَرَنَا بَقِيَّةُ بْنُ الْوَلِيدِ عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ سَابِطٍ، عَنْ أَبِي بَكْرٍ الصِّدِّيقِ رَضِيَ الله عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:  صِنْفَانِ مِنْ أُمَّتِي لَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ: الْقَدَرِيَّةُ وَالْمُرْجِئَةُ.


-‘‘হযরত আবূ বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের দুশ্রেণীর লোক তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, তারা হলো, কাদারীয়া এবং মুর্জিয়াগণ সম্প্রদায়।’’ 

(ইবনে হাজার, মাত্তালিবুল আলিয়া, ১২/৫০৩ পৃ. হা/২৯৭৭) 


হাদিস নং-৭


ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) সংকলন করেন-


عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: الْقَدَرِيَّةُ مَجُوسُ هَذِهِ الْأُمَّةِ، وَهُمْ شِيعَةُ الدَّجَّالِ


-‘‘তাবেয়ী নাফে (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, কাদারিয়া সম্প্রদায় হলো এ উম্মতের মাজুসী, আর শীয়াগণ হচ্ছেন দাজ্জাল।’’ (মুসনাদে আবি হানিফা, হা/২১, পরিচ্ছেদ: كِتَابُ الْإِيمَانِ وَالْإِسْلَامِ وَالْقَدَرِ وَالشَّفَاعَةِ)


হাদিস নং-৮-১০


ইমাম তাবরানী (رحمة الله) সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْحَضْرَمِيُّ قَالَ: ثَنَا الْقَاسِمُ بْنُ الْعَلَاءِ الْبَجَلِيُّ قَالَ: ثَنَا شَرِيكٌ، عَنْ بَحْرٍ السِّقَاءِ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: صِنْفَانِ مِنْ أُمَّتِي لَا تَنَالُهُمْ شَفَاعَتِي: الْمُرْجِئَةُ، وَالْقَدَرِيَّةُ


-‘‘হযরত জাবের (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে দুই শ্রেণীর লোকদের জন্য আমার শাফায়াত নেই, তারা হলো মুর্জিয়া এবং কাদারিয়া সমপ্রদায়।’’ (ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৬/৬৯ পৃ. হা/৫৮১৭) 


এ হাদিসের সনদের সমস্ত রাবীই সিকাহ শুধু ‘বাহর সিকাহ’ ছাড়া, কেননা সে দুর্বল রাবী। তবে এ হাদিসটির আরেকজন সাহাবীর সূত্রে বর্ণিত আছে। 


ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (رحمة الله) সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا مُحَمَّدٌ، ثنا مُحَمَّدٌ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ أَسْلَمَ، ثنا عَبْدُ الْحَكَمِ بْنُ مَيْسَرَةَ، ثنا سَعِيدُ بْنُ بَشِيرٍ - صَاحِبُ قَتَادَةَ - عَنْ قَتَادَةَ، عَنْ أَنَسٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صِنْفَانِ مِنْ أُمَّتِي لَا تَنَالُهُمْ شَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ الْمُرْجِئَةُ وَالْقَدَرِيَّةُ


-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে দুই শ্রেণীর লোকদের জন্য আমার শাফায়াত নেই,  তারা হলো মুর্জিয়া এবং কাদারিয়া সম্প্রদায়।’’ (ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৯/২৫৪ পৃ.) 


উক্ত হাদিসে কোনো সমালোচিত রাবী নেই, কেউ কেউ সনদের ‘সাঈদ ইবনে বাশীর’ কে যঈফ হিসেবে দাঁড় করাতে চাইলেও কোনো লাভ নেই, কেননা তিনিও সিকাহ। এ রাবীর গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে ইতোপূর্বে ‘আমি সৃষ্টিতে প্রথম প্রেরণে সবার শেষ’ হাদিসের আলোচনায় উল্লেখ করেছি।  আল্লামা সান‘আনী (رحمة الله) লিখেন-


رمز المصنف على أبي نعيم بالحسن


-‘‘গ্রন্থাকার (ইমাম সুয়ূতি ) ইমাম আবু নুয়াইম (رحمة الله)-এর সূত্রকে ‘হাসান’ বলে সনাক্ত করেছেন।’’ (তানভীর শরহে জামেউস সগীর, ৬/৬১০ পৃ. হা/৫০২৭)


শুধু তাই নয় ইমাম তাবরানী (رحمة الله) এ হাদিসটির আরেকটি সূত্র এভাবে উল্লেখ করেন-


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ قَالَ: نا مُعَلَّلُ بْنُ نُفَيْلٍ قَالَ: نا مُحَمَّدُ بْنُ مِحْصَنٍ، عَنِ الْأَوْزَاعِيِّ، عَنْ مَكْحُولٍ، عَنْ وَاثِلَةَ بْنِ الْأَسْقَعِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صِنْفَانِ مِنْ هَذِهِ الْأُمَّةِ لَا تَنَالُهُمَا شَفَاعَتِي: الْمُرْجِئَةُ، وَالْقَدَرِيَّةُ


-‘‘হযরত ওয়াসেলিা ইবনে আস্কা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমার উম্মতের মধ্যে দুই শ্রেণীর লোকদের জন্য আমার শাফায়াত নেই, তারা হলো মুর্জিয়া এবং কাদারিয়া সম্প্রদায়।’’ (ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ২/১৭৪ পৃ. হা/১৬২৫) 


হাদিস নং-১১:


শুধু তাই নয় ইমাম তাবরানী (رحمة الله) এ হাদিসটির আরেকটি সূত্র এভাবে উল্লেখ করেন-


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْحَضْرَمِيُّ قَالَ: نَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ بْنِ أَبَانَ قَالَ: نَا عَمْرُو بْنُ الْقَاسِمِ بْنِ حَبِيبٍ التَّمَّارُ، عَنِ ابْنِ أَبِي لَيْلَى، عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: صِنْفَانِ مِنْ أُمَّتِي لَيْسَ لَهُمَا فِي الْإِسْلَامِ نَصِيبٌ: الْمُرْجِئَةُ وَالْقَدَرِيَّةُ


-‘‘ হযরত আবূ সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, আমার উম্মতের মধ্যে দুই শ্রেণীর লোকের জন্য ইসলাম নেই; তারা হইলো মুর্জিয়া এবং ক্বাদরীয়াগণ। (ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৫/৩৭০ পৃ. হা/৫৫৮৭)


এ সনদে ইবনে আবি লাইলা রয়েছেন তার হাদিস ‘হাসান’ পর্যায়ের। তার বিষয়ে ইতোপূর্বে আলোচিত ‘হায়াতুন্নবী’ বিষয় এক সনদ বিশ্লেষণে আলোচনা করেছি, পাঠকবৃন্দের সেখানে দেখে নেয়ার অনুরোধ রইল। এ সনদের তাবেয়ী ‘আতিয়্যাহ আওফী’ রয়েছেন তার হাদিসের মানও ‘হাসান’। 


আল্লামা সান‘আনী (رحمة الله) লিখেন-

 رمز المصنف لحسنه -

‘‘গ্রন্থাকার (ইমাম সুয়ূতি ) এ হাদিসটিকে ‘হাসান’ বলে সনাক্ত করেছেন।’’ 

(তানভীর শরহে জামেউস সগীর, ৬/৬০৯ পৃ. হা/৫০২৫)

 
Top