২৬. শিষ্টাচার অধ্যায়


বাব নং ২২১. ১. শিষ্টাচারের বর্ণনা


২৬- كِتَابُ الْأَدَبُ

১- بَابُ مَا جَاءَ فِي الْأَدَبِ

٤٤٩- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْـمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : أَنْتَ وَمَالُكَ لِأَبِيْكَ.


৪৪৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির থেকে, তিনি জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, তুমি এবং তোমার সম্পদ তোমার পিতার। 

(জামেউল আহাদীস, ৩৪/৫৭/৩৬৮৪৭)


ব্যাখ্যা: এ বিষয়ে বিস্তারিত বর্ণনা আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ শরীফে বর্ণিত হয়েছে। নবী করিম (ﷺ)  এর নিকট এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কাছে সম্পদ আছে, আর আমার পিতাও আছেন, যিনি অভাবী। তখন তিনি বললেন, তুমি এবং তোমার সম্পদ তোমার পিতার। তবে তোমার সন্তান তোমার পবিত্র উপার্জন। সুতরাং তুমি তোমার সন্তানের উপার্জন থেকে পানাহার কর। এ হাদিস থেকে এই মাসয়ালা জানা গেল যে, পিতা নিজের প্রাণের হেফাজতের জন্য স্বীয় ছেলের অনুপস্থিতিতে তার সম্পদ থেকে বিনা অনুমতি বা বিনা সম্মতিতে খরচ করলে কোন দোষ নেই।


٤٥٠- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنِ ابْنِ عَمْرٍو، قَالَ: أَتَى النَّبِيَّ  رَجُلٌ يُرِيْدُ الْـجِهَادَ، فَقَالَ : أَحَيٌّ وَالِدَاكَ؟ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ : فَفِيْهِمَا فَجَاهِدْ.


৪৫০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি জিহাদে অংশগ্রহণের নিয়্যতে রাসূল (ﷺ)  এর দরবারে উপস্থিত হয়। তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, তোমার পিতা-মাতা কি জীবিত আছেন? লোকটি বলল, হ্যাঁ। তখন তিনি বললেন, তুমি তাদের কাছে গিয়ে জিহাদ কর। (অর্থাৎ তাদের খেদমতের চেষ্টা কর এটাই হবে তোমার জন্য জিহাদ) 

(বুখারী, ৩/১০৯৪/২৮৪২)


ব্যাখ্যা: পিতা-মাতার সেবা করা ফরয। বিশেষত যখন তারা বৃদ্ধ হয়ে যায়। উপরোক্ত হাদিসে জিহাদের মত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থেকে পিতা-মাতার সেবাকে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। কারণ হাদিসে আছে তাদের সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি আর তাদের অসন্তুষ্টিত আল্লাহর অসন্তুষ্টি নিহিত রয়েছে। তাছাড়া জিহাদ হলো ফরযে কিফায়া যা অন্যরা করলেও দায়িত্বমুক্ত হয়ে যায়। তাই রাসূল (ﷺ)  লোকটিকে পিতা-মাতার খেদমতে পাঠিয়ে দেন। 


٤٥١- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ زِيَادٍ يَرْفَعُهُ إِلَى النَّبِيِّ  أَنَّهُ أَمَرَ بِالنُّصْحِ لِكُلِّ مُسْلِمٍ.


৪৫১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা যিয়াদ থেকে, তিনি নবী করিম (ﷺ)  থেকে মারফু হাদীসে বর্ণনা করেন, তিনি প্রত্যেক মুসলমানদের কল্যাণ করার নির্দেশ দান করেছেন। 

(মুসলিম, ১/৫৪/২০৯)


ব্যাখ্যা: মুসলিম শরীফে মারফু হাদিসে বর্ণিত আছে, الدين النصيحة “দ্বীন সম্পূর্ণই নসীহত।” রাসূল (ﷺ)  কথাটি তিনবার বলেছেন। সাহাবীগণ আরয করলেন, কার জন্য? উত্তরে তিনি বলেন, আল্লাহর জন্য, আল্লাহর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসূলের জন্য এবং আইম্মায়ে মুসলিমীন ও সাধারণ মুসলমানদের জন্য। গভীর ভাবে চিন্তা করলে দেখা যায় সম্পূর্ণ দ্বীন এ হাদিসে লুকায়িত ও নিহিত রয়েছে।


٤٥٢- حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ عَطَاءِ بْنِ السَّائِبِ، عَنْ أَبِيْ مُسْلِمٍ الْأَغَرِّ صَاحِبِ أَبِيْ هُرَيْرَةَ، عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ : قَالَ اللهُ تَعَالَىٰ: الْكِبْرِيَاءُ رِدَائِيْ، وَالْعَظَمَةُ إِزَارِيْ، فَمَنْ نَازَعَنِيْ وَاحِدًا مِنْهُمَا أَلْقَيْتُهُ فِيْ جَهَنَّمَ.


৪৫২. অনুবাদ: হাম্মাদ তার পিতা থেকে, তিনি আতা ইবনে সায়েব থেকে, তিনি আবু মুসলিম আগর থেকে, যিনি আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) এর বন্ধু ছিলেন, তিনি আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে, তিনি নবী করিম (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেন, অহংকার আমার চাদর, মহানত্ব আমার লুঙ্গী (স্বরূপ)। সুতরাং যে কেউ আমার এদু’টির ব্যাপারে আমার সাথে ঝগড়া বা বাড়াবাড়ি করবে, আমি তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবো। 

(মুসনাদে আহমদ, ১২/৩৩৭/৭৩৮২)


ব্যাখ্যা: চাদর ও লুঙ্গী হওয়ার অর্থ হলো এদু’টি গুণ শুধু আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট। অন্য কেউ এর সাথে অংশীদার নেই। অহংকারের সম্পর্ক তাঁর সত্তার সাথে আর মহানত্বের সম্পর্ক তাঁর সিফাতের সাথে।


٤٥٣- حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْـمُنْكَدِرِ، أَنَّهُ بَلَغَهُ: أَنَّ الْـمُتَكَبِّرَ رَأْسُهُ بَيْنَ رِجْلَيْهِ، حَيْثُ كَانَ يَرْتَفِعُ بِرَأْسِهِ فِيْ تَابُوْتٍ مِنْ نَارٍ مُقْفَلٍ عَلَيْهِ، وَلَا يَخْرُجُ مِنَ التَّابُوْتِ أَبَدًا فِي النَّارِ.


৪৫৩. অনুবাদ: হাম্মাদ তার পিতা থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি মুহাম্মদ ইবনে মুনকাদির থেকে বর্ণনা করেন, তিনি অবগত হয়েছেন যে, নিশ্চয় অহংকারী ব্যক্তির মাথা কিয়ামতের ময়দানে তার দুই পায়ের মধ্যখানে আগুনের সিন্দুকের ভিতর তালাবদ্ধ থাকবে। কারণ সে (দুনিয়াতে) মাথা দ্বারা অহংকার প্রদর্শন করতো। আর কখনো আগুন থেকে বের হতে পারবে না।


ব্যাখ্যা: আত্মার ব্যাধিসমূহের মধ্যে অহংকার হচ্ছে গুরুতর একটি ব্যাধি। অহংকার মানে নিজেকে অন্যের তুলনায় বড় মনে করা এবং অন্যকে তুচ্ছ ও নিকৃষ্ট মনে করা। সর্বপ্রথম অহংকার প্রদর্শন করেছে শয়তান। ফলে, সে চির অভিশপ্ত হয়েছে। পবিত্র কুরআনে অনেক জায়গায় বলা হয়েছে যে, আল্লাহ অহংকারীকে মোটেই পছন্দ করেন না। 


❏রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন,لايدخل الجنة من كان فى قلبه مثقال ذرة من كبر “যার অন্তরে অনুপরিমাণ অহংকার থাকবে সে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবেনা।” ২০৯  

➥ ইমাম মুসলিম (رحمة الله), (২৬১ হি), সহীহ মুসলিম শরীফ, সূত্র: মিশকাত, পৃষ্ঠাঃ  ৪৩৩


সর্বোপরি অহংকারীকে কেউ পছন্দ করেনা বরং সকলের ঘৃণার পাত্র হয়ে যায়। তাই সূফী সাধকগণ এই মারাত্মক অন্তরের অদৃশ্য ব্যাধিকে পরিহার করার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। 


২- بَابُ مَا جَاءَ فِي الرِّفْقِ وَالْـخُلْقِ

٤٥٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ زِيَادٍ، عَنْ أُسَامَةَ بْنِ شَرِيْكٍ، قَالَ: شَهِدْتُ رَسُوْلَ اللهِ  وَالْأَعْرَابُ يَسْأَلُوْنَهُ، قَالُوْا: يَا رَسُوْلَ اللهِ! مَا خَيْرُ مَا أُعْطِيَ الْعَبْدُ؟ قَالَ : خُلُقٌ حَسَنٌ.




 
Top