২৫. চিকিৎসা, রোগ, দম ও দোয়ার ফযীলত অধ্যায়


বাব নং ২২০. ১.


২৫- كِتَابُ الطَّب وَفَضْلِ الْـمَرَضِ وَالرُّقَىٰ وَالدَّعَوَاتِ

১- بَابٌ

٤٣٦- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَائِشَةَ ، عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ، قَالَ: إِنَّ اللهَ لَيَكْتُبُ لِلْإِنْسَانِ الدَّرَجَةَ الْعُلْيَا فِي الْـجَنَّةِ، وَلَا يَكُوْنُ لَهُ مِنَ الْعَمَلِ مَا يَبْلُغُهَا، فَلَا يَزَالُ يَبْتَلِيْهِ اللهُ حَتَّىٰ يَبْلُغَهَا .


৪৩৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আসওয়াদ থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে, তিনি রাসূল (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা কোন মানুষের জন্য জান্নাতে উঁচু মর্যাদা নির্ধারণ করে দেন। কিন্তু যখন ঐ মর্যাদা পর্যন্ত পৌঁছার মত তার কোন আমল না থাকে তখন আল্লাহ তায়ালা তাকে সর্বদা এমন রোগে আক্রান্ত করে রাখেন যার ফলে ব্যক্তি ঐ মর্যাদায় পৌঁছে যায়। 

(আল মু’জামুল কবীর, ২/১২৯/১৫৪৮)


٤٣٧- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيْهِ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : إِذَا مَرِضَ الْعَبْدُ، وَهُوَ عَلَىٰ طَائِفَةٍ مِنَ الْـخَيْرِ، قَالَ اللهُ  لِـمَلَائِكَتِهِ: اكْتُبُوْا لِعَبْدِيْ أَجْرَ مَا كَانَ يَعْمَلُ وَهُوَ صَحِيْحٌ .  زَادَ فِيْ رِوَايَةٍ: مَعَ أَجْرِ الْبَلَاءِ . وَفِيْ رِوَايَةٍ: اكْتُبُوْا لِعَبْدِيْ مَا كَانَ يَعْمَلُ، وَهُوَ صَحِيْحٌ . وَفِيْ رِوَايَةٍ: إذَا مَرِضَ الْعَبْدُ، وَهُوَ عَلَىٰ عَمَلٍ، فَإِنَّ اللهَ ، يَقُوْلُ لِـحَفَظَتِهِ: اكْتُبُوْا لِعَبْدِيْ أَجْرَ مَا كَانَ يَعْمَلُ، وَهُوَ صَحِيْحٌ .


৪৩৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আলকামা থেকে, তিনি ইবনে রুবাইদা থেকে, তিনি তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, যখন এমন কোন বান্দা অসুস্থ হয়, যে সুস্থ অবস্থায় কল্যাণের কাজ করত, তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেস্তাদেরকে বলেন, আমার বান্দার জন্য এমন আমল লিপিবদ্ধ কর যা সে সুস্থ অবস্থায় করতো। অন্য বর্ণনায় আছে, রোগের প্রতিদানসহ।


অপর বর্ণনায় আছে, আমার বান্দার জন্য এমন আমল লিপিবদ্ধ কর, যা সে সুস্থ অবস্থায় করতো।


অন্য রেওয়ায়েতে আছে, কোন আনুগত্যশীল বান্দা যখন অসুস্থ হয়, তখন আল্লাহ তায়ালা বান্দার হেফাজতকারী ফেরেস্তাকে বলেন, আমার বান্দার জন্য লিপিবদ্ধ কর এমন সওয়াব যা সে সুস্থ অবস্থায় করতো। 

(বুখারী, ৩/১০৯২/২৮৩৪)


٤٣٨- أَبُوْ حَنِيْفَةَ وَمُقَاتِلُ بْنُ سُلَيْمَانَ: عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ ، أَنَّ النَّبِيَّ  قَالَ: لِكُلِّ دَاءٍ جَعَلَ اللهُ تَعَالَىٰ دَوَاءً، فَإِذَا أَصَابَ الدَّاءَ دَوَاءٌ بَرِئَ بِإِذْنِ اللهِ .


৪৩৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ও মুকাতিল ইবনে সোলায়মান আবু যুবাইর থেকে, তিনি জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করমি (ﷺ)  এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক রোগের ঔষুধ তৈরি করেছেন। সুতরাং যখন রোগের সঠিক ঔষুধ সেবন করা হয় তখন আল্লাহর অনুমতিক্রমে রোগী সুস্থ হয়ে যায়। 

(মুসলিম, ৭/২১/৫৮৭১)


٤٣٩- حَمَّادٌ: عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ قَيْسِ بْنِ مُسْلِمٍ، عَنْ طَارِقِ بْنِ شِهَابٍ، عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ ، عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ: إِنَّ اللهَ لَـمْ يَضَعْ دَاءً إِلَّا وَضَعَ لَهُ دَوَاءً، إِلَّا السَّامَ وَالْـهَرَمَ، فَعَلَيْكُمْ بِأَلْبَانِ الْبَقَرِ، فَإِنَّهَا تَخْلِطُهُ مِنْ كُلِّ شَجَرٍ .


৪৩৯. অনুবাদ: হাম্মাদ তার পিতা থেকে, তিনি কায়েস ইবনে মুসলিম থেকে, তিনি তারেক ইবনে শিহাব থেকে, তিনি ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে, তিনি নবী করমি (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, আল্লাহ তা’য়ালা এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি যার কোন ঔষুধ নেই, মৃত্যু এবং বার্ধক্য ব্যতীত। তোমরা অবশ্যই গাভীর দুধপান করবে। কেননা এতে প্রত্যেক গাছপালা মিশ্রিত আছে। 

(সুনানে নাসাঈ কুবরা, ৪/৩৭০/৭৫৬৭)


٤٤٠- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ قَيْسٍ، عَنْ طَارِقٍ، عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ ، قَالَ، قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : لَـمْ يُنَزِّلِ اللهُ دَاءً إِلَّا وَأَنْزَلَ مَعَهُ الدَّوَاءَ، إِلَّا الْـهَرَمَ، فَعَلَيْكُمْ بِأَلْبَانِ الْبَقَرِ، فَإِنَّهَا تَرُمُّ مِنَ الشَّجَرِ . وَفِيْ رِوَايَةٍ: إِنَّ اللهَ تَعَالَىٰ لَـمْ يَجْعَلْ فِي الْأَرْضِ دَاءً إِلَّا جَعَلَ لَهُ دَوَاءً، إِلَّا الْـهَرَمَ وَالسَّامَ، فَعَلَيْكُمْ بِأَلْبَانِ الْبَقَرِ، فَإِنَّهَا تَخْلِطُ مِنْ كُلِّ الشَّجَرِ .

وَفِيْ رِوَايَةٍ: مَا أَنْزَلَ اللهُ مِنْ دَاءٍ إِلَّا أَنْزَلَ مَعَهُ دَوَاءً، إِلَّا السَّامَ وَالْـهَرَمَ، فَعَلَيْكُمْ بِأَلْبَانِ الْبَقَرِ، فَإِنَّهَا تَخْلِطُ مِنَ الشَّجَرِ . وَفِيْ رِوَايَةٍ: إِنَّ اللهَ تَعَالَىٰ لَـمْ يَضَعْ فِي الْأَرْضِ دَاءً، إِلَّا وَضَعَ لَهُ شِفَاءً، أَوْ دَوَاءً، فَعَلَيْكُمْ بِأَلْبَانِ الْبَقَرِ، فَإِنَّهَا تَخْلِطُ مِنْ كُلِّ الشَّجَرِ، عَلَيْكُمْ بِأَلْبَانِ الْبَقَرِ، فَإِنَّهَا تَرُمُّ مِنْ كُلِّ شَجَرَةٍ، وَفِيْهَا شِفَاءٌ مِنْ كُلِّ دَاءٍ .


৪৪০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা কায়েস থেকে, তিনি তারেক থেকে তিনি ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, আল্লাহ তা’য়ালা এমন কোন রোগ প্রেরণ করেননি যার সাথে ঔষুধ প্রেরণ করেননি, বার্ধক্য ব্যতীত। তোমরা গাভীর দুধকে আবশ্যক করে নাও। কেননা এতে গাছপালার অংশ মিশ্রিত থাকে।


অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে এমন কোন রোগ সৃষ্টি করেননি, যার কোন ঔষুধ সৃষ্টি করেননি। একমাত্র মৃত্যু ও বার্ধক্য ব্যতীত। তোমরা গাভীর দুধকে আবশ্যক করে নাও। কেননা এতে প্রত্যেক প্রকারের গাছপালার অংশ মিশ্রিত আছে।


অপর বর্ণনায় আছে, আল্লাহ তায়ালা প্রত্যেক রোগের সাথে ঔষুধও প্রেরণ করেছেন, মৃত্যু ও বার্ধক্য ব্যতীত। সুতরাং তোমরা গাভীর দুধপান কর। কেননা এতে সমস্ত গাছপালার নির্যাস মিশ্রিত হয়ে থাকে।


অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, আল্লাহ তায়ালা পৃথিবীতে এমন কোন রোগ রাখেননি যার কোন শেফা বা ঔষুধ রাখেননি। অতএব, তোমরা গাভীর দুধপান কর, কেননা এতে প্রত্যেক প্রকারের গাছপালার নির্যাস বিদ্যমান থাকে। তোমরা অবশ্যই গাভীর দুধপান কর। কেননা এতে প্রত্যেক প্রকারের গাছের রস মিশ্রিত থাকে এবং সব রোগের শেফা রয়েছে। 

(আল মু’জামুল কবীর, ৯/২৩৮/৯১৬৪)


ব্যাখ্যা: রোগের চিকিৎসা করা তাওয়াক্কুলের বিপরীত নয়। সহীহ বুখারী শরীফে চিকিৎসা অধ্যায় নামক একটি অধ্যায় রয়েছে যাতে এ ব্যাপারে অনেক হাদিস বিদ্যমান।


❏বুখারী শরীফের كتاب المرض এ একাধিক হাদিসে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ)  বলেছেন, মুসলিম ব্যক্তির উপর যে সকল যাতনা, রোগ-ব্যাধি, উৎকণ্ঠা, দুশ্চিন্তা, কষ্ট ও পেরেশানী আপতিত হয়, এমনকি যে কাঁটা তার দেহে বিদ্ধ হয়, এসবের দ্বারা আল্লাহ তার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দেন।

রোগব্যধি দ্বারা গুনাহ মাফ হয় এবং জান্নাতের উঁচু মর্যাদা লাভে সক্ষম হয় বিধায় এটাকে আল্লাহর গযবের কারণ মনে করা ঠিক নয়। বরং আল্লাহর দয়া মনে করে ধৈর্যধারণ করা উচিত।


❏বুখারী শরীফে ৫৩২৪ থেকে ৫৩৪১ নং পর্যন্ত হাদিসসমূহে ঝাড়-ফুঁক সম্পর্কে বর্ণিত হয়েছে এবং এর বিনিময় নেয়ার কথাও উলে­খ আছে। তবে শর্ত হলো কুরআনের আয়াত দ্বারা কিংবা দোয়ায়ে মাছুরা বা প্রসিদ্ধ কোন দোয়া পড়ে ঝাড়-ফুঁক করতে হবে। কুফুরী কালিমা দিয়ে কিংবা কোন আযমী শব্দ দিয়ে বা অর্থহীন শব্দ দিয়ে ঝাড়-ফুঁক করা নিষিদ্ধ। আর রোগমুক্তির জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা জায়েয এবং এটিও তাওয়াক্কুলের খেলাফ নয়। এ ব্যাপারে হাদিস শরীফে অনেক দোয়া বর্ণিত হয়েছে।


٤٤١- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : جُعِلَ الشِّفَاءُ فِي الْـحَبَّةِ السَّوْدَاءِ وَالْـحِجَامَةِ وَالْعَسَلِ وَمَاءِ السَّمَاءِ .


৪৪১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবদুল্লাহ থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা কালজিরা, শিংগা, মধু ও আকাশের (বৃষ্টির) পানিতে শেফা রেখেছেন। 

(বুখারী, ৫/২১৫৪/৫৩৬৪)


ব্যাখ্যা: হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে কালজিরা সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (ﷺ)  বলেছেন ان لهذه الحبة السوداء شفاء من كل داء “এই কালজিরা হলো প্রত্যেক রোগের শেফা”। শিংগা লাগানোরও প্রশংসা আছে। আর মধু সম্পর্কে স্বয়ং আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেন, فيه شفاء للناس “মধুর মধ্যে মানুষের জন্য শেফা রয়েছে”। বৃষ্টির পানি যেহেতু ময়লা ও জীবাণুমুক্ত বিশুদ্ধ পানি, তাই এটাকে শেফা বলা হয়েছে।


٤٤٢- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَبْدِ الْـمَلِكِ، عَنْ عَمْرِو الْـجُرَشِيِّ، عَنْ سَعِيْدِ بْنِ زَيْدٍ، عَنْ رَسُوْلِ اللهِ ، قَالَ : إِنَّ مِنَ الْـمَنِّ الْكَمْأَةُ، وَمَاؤُهَا شِفَاءٌ لِلْعَيْنِ.


৪৪২. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবদুল মালিক থেকে, তিনি আমর জুরশী থেকে তিনি সাঈদ ইবনে ইয়াযিদ থেকে, তিনি রাসূল (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, ব্যাঙের ছাতা মান্ন তথা আসমানী খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত। এর পানি চোখের জন্য শেফা। 

(বুখারী, ৪/১৬২৮/৪২০৮)


ব্যাখ্যা: এই হাদিস বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী শরীফেও বর্ণিত আছে। ইমাম আহমদ (র.)ও মুসনদে বর্ণনা করেছেন, এটাকে মান্ন এর সাথে তুলনা দেয়ার কারণ হলো মান্ন যেমন বণী ইসরাইল বিনা পরিশ্রমে পেয়েছিল এগুলোও যেখানে সেখানে কোন পরিশ্রম ছাড়া বিনামূল্য পাওয়া যায় এবং বহুপরিমাণে জন্ম হয়। পঁচাকাঠ, দ্রব্য ও আবর্জনার মধ্যে সাধারণত এগুলো জন্মে থাকে। চোখের জন্য এটা উপকারী। এককভাবে কিংবা সুরমা বা তুতের সাথে মিশ্রিত করে এটা ব্যবহার করা যায়। আল্লামা নববী (رحمة الله) এর উপকারিতার ব্যাপারে পরীক্ষা করে উপকৃত হয়েছেন।


٤٤٣- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـهَيْثَمِ، عَنْ أَبِيْ صَالِحٍ، عَنْ أَبِيْ هُرَيْرَةَ ، عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ : مَنْ قَالَ حِيْنَ يُصْبِحُ: أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ لَـمْ يَضُرَّهُ عَقْرَبٌ حَتَّىٰ يُمْسِيَ، وَمَنْ قَالَ حِيْنَ يُمْسِيْ لَـمْ يَضُرَّهُ عَقْرَبٌ حَتَّىٰ يُصْبِحَ.

وَفِيْ رِوَايَةٍ، قَالَ : مَنْ قَالَ: أَعُوْذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ حِيْنَ يُصْبِحَ، قَبْلَ طُلُوْعِ الشَّمْسِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ لَـمْ يَضُرَّهُ عَقْرَبٌ يَوْمَئِذٍ، وَإِذَا قَالَهَا حِيْنَ يُمْسِيْ لَـمْ يَضُرَّهُ عَقْرَبٌ لَيْلَتَهُ.


৪৪৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হায়শাম থেকে, তিনি আবু সালেহ থেকে, তিনি আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে, তিনি নবী করিম (ﷺ)   থেকে বর্ণনা করেন, তিনি এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সকালে তিনবার اعوذ بكلمات الله التامة পাঠ করবে, তাকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কোন বিচ্ছু ক্ষতি করতে পারবেনা। আর যে ব্যক্তি বিকেলে এ দোয়া পাঠ করবে সকাল পর্যন্ত কোন বিচ্ছু তার ক্ষতি করতে পারবেনা। 

(সুনানে নাসাঈ কুবরা, ৬/১৫২/১০৪২৬)


অন্য বর্ণনায় আছে, যে ব্যক্তি উক্ত দোয়া সকালে সূর্যোদয়ের পূর্বে তিনবার পাঠ করবে। তাকে সারাদিন কোন বিচ্ছু দংশন করবে না। আর এ দোয়া যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় পাঠ করবে, সারারাত সে বিচ্ছুর দংশন থেকে মুক্ত থাকবে।


ব্যাখ্যা: ঐ দোয়ার অর্থ হলো, আমি আল্লাহর পূর্ণ কালিমা দ্বারা আশ্রয় প্রার্থনা করতেছি। ইবনে আবদুল বার (رحمة الله) তামহীদ নামক গ্রন্থে সাঈদ ইবনে মুসাইয়্যিব (র.) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি অবহিত হয়েছি যে, যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় سلام على نوح فى العالمين পাঠ করবে, সারারাত সে বিচ্ছুর দংশন থেকে নিরাপদ থাকবে।


٤٤٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مُسْلِمٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ مَسْرُوْقٍ، عَنْ عَائِشَةَ ، قَالَتْ: لَقَدْ كَانَ رَسُوْلُ اللهِ  إِذَا أُتِيَ بِمَرِيْضٍ يَدْعُوْ لَهُ، يَقُوْلُ : أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِيْ، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا.


৪৪৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মুসলিম থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি মসরূক থেকে, তিনি আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ)  যখন কোন রোগী দেখতে যেতেন, তখন তার জন্য তিনি এই দোয়া করতেন ,

أَذْهِبِ الْبَاسَ رَبَّ النَّاسِ، اشْفِ أَنْتَ الشَّافِيْ، لَا شِفَاءَ إِلَّا شِفَاؤُكَ، شِفَاءً لَا يُغَادِرُ سَقَمًا

“হে মানবজাতির প্রভূ! রোগ দূরীভূত করুন, শেফা দান করুন, আপনিই শেফা দানকারী। আপনার শেফাই একমাত্র প্রকৃত শেফা যা থেকে কোন রোগই বাদ পড়েনি।” 

(সুনানে নাসাঈ কুবরা, ৪/৩৫৮/৭৫০৮)


٤٤٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَبْدِ اللهِ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : لَيْسَ لِلْمُؤْمِنِ أَنْ يُذِلَّ نَفْسَهُ، قِيْلَ: وَكَيْفَ يُذِلُّ نَفْسَهُ؟ قَالَ : يَتَعَرَّضُ مِنَ الْبَلَاءِ مَا لَا يُطِيْقُ.


৪৪৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবদুল্লাহ থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, কোন মু’মিনের জন্য উচিত নয় সে তার আত্মাকে অপদস্থ করা। জিজ্ঞাসা করা হয়, হে আল্লাহর রাসূল! মু‘মিন নিজেকে কিভাবে অপদস্থ করে? উত্তরে তিনি বলেন, সে নিজেকে এমন মুসিবতে ফেলে দেয় যা সে সহ্য করতে পারে না। 

(মুসনাদে বাযযার, ১/৪২৮/২৭৯০)


ব্যাখ্যা: যদি কোন ব্যক্তি দ্বীনের এমন কোন কষ্টের কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে, যা সে পরিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয় না। অবশেষে বাধ্য হয়ে ঐ আমল ত্যাগ করে এবং অল্প ইবাদতের যোগ্যতাও হারিয়ে ফেলে, এটাই হলো নিজেকে অপদস্থ করা। এজন্যই রাসূল (ﷺ)  সওমে বিছাল রাখতে নিষেধ করেছেন। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহ তায়ালা ঐ নেক আমল অধিক পছন্দ করেন যা কম হলেও দীর্ঘস্থায়ী হয়। আল্লাহ তায়ালা বান্দাকে সাধ্যের বাইরে কষ্ট দেন না। যেমন 


❏পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,

لا يكلف الله نفسا الا وسعها



٤٤٦- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ: جَاءَ رَجُلٌ مِنَ الْأَنْصَارِ إِلَى النَّبِيِّ ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! مَا رُزِقْتُ وَلَدًا قَطُّ وَلَا وُلِدَ لِيْ، قَالَ النَّبِيُّ  : فَأَيْنَ أَنْتَ مِنْ كَثْرَةِ الِاسْتِغْفَارِ، وَكَثْرَةِ الصَّدَقَةِ تُرْزَقُ بِهَا، قَالَ: فَكَانَ الرَّجُلُ يُكْثِرُ الصَّدَقَةَ وَيُكْثِرُ الِاسْتِغْفَارَ، قَالَ جَابِرٌ: فَوُلِدَ لَهُ تِسْعَةُ ذُكُوْرٍ.


৪৪৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, জনৈক আনসারী ব্যক্তি নবী করিম (ﷺ)  এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আমার কোন সন্তানসন্তুতি হয়নি। তখন তিনি বললেন, তুমি বেশী করে ইস্তেগফার এবং আধিক পরিমাণে দান সদকা কর না কেন? এ দু’টির বরকতে তোমাকে তা দেয়া হবে। অতঃপর ঐ ব্যক্তি অধিক পরিমাণে সদকা করতে থাকে এবং অধিক পরিমাণে ইস্তেগফার পড়তে থাকে। হযরত জাবির (رضي الله عنه) বলেন, এরপর ঐ ব্যক্তির নয়টি পুত্র সন্তান জন্মলাভ করে।


ব্যাখ্যা: মূলত অধিক ইস্তেগফার দ্বারা বৃষ্টিপাত এবং ধন সম্পদ ও সন্তান লাভ হওয়ার বিষয়টি পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের দ্বারা সাব্যস্ত 

استغفروا ربكم انه كان غفّارًا يرسل السماء عليكم مدرارًا ويمددكم باموال وبنين

হযরত নূহ (আ.) তার উম্মতদেরকে বলেছিলেন “তোমরা তোমাদের প্রভূর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, কেননা তিনি অধিক ক্ষমাশীল। (এর ফলে) তিনি তোমাদের উপর আকাশ থেকে বৃষ্টি বর্ষণ করবেন এবং তোমাদেরকে ধনসম্পদ ও সন্তানসন্তুতি দ্বারা সাহায্য করবেন। 

(সূরা নূহ, আয়াত: ১০-১১)


উপরোক্ত হাদিসে নবী করিম (ﷺ)  সন্তান লাভের জন্য অধিক পরিমাণ ইস্তেগফার ও সদকা করতে উৎসাহিত করেন এবং এতে তার কথা মত সে সন্তানও লাভ করেছে।

সন্তান-সন্তুতি আল্লাহর রহমত ও নিয়ামত। অনেক সময় আল্লাহর অসন্তুষ্টির কারণে   সন্তান লাভ থেকে বঞ্চিত হয়। তখন অধিক পরিমাণে সদকা করলে হয়তো আল্লাহর ক্রোধ দূরীভূত হয়ে যায় আর আল্লাহ তায়ালা নিয়ামত স্বরূপ  সন্তান দান করেন। কেননা الصدقة يطفئ غضب الرب “সদকা আল্লাহর ক্রোধ নিভিয়ে দেয়”। অতএব, এখনও কোন নিঃসন্তান লোক এই আমল করলে উপকৃত হবে ইনশাল্লাহ। 


٤٤٧- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ إسْمَاعِيْلَ، عَنْ أَبِيْ صَالِحٍ، عَنْ أُمِّ هَانِئٍ، قَالَتْ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : مَنْ عَلِمَ أَنَّ اللهَ يَغْفِرُ لَهُ، فَهُوَ مَغْفُوْرٌ لَهُ.


৪৪৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ইসমাঈল থেকে, তিনি আবু সালেহ থেকে, তিনি উম্মে হানী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি নিশ্চিত ভাবে জানে যে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন, তাহলে সে ক্ষমা প্রাপ্ত হবে। 

(বুখারী, ৬/২৭২৫/৭০৬৮)


ব্যাখ্যা: এ হাদিস মুসলিম শরীফেও বর্ণিত আছে। তাবরানী সগীর নামক গ্রন্থে আবু মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে মারফু হাদিস বর্ণনা করেন,من اذنب ذنبا فعلم ان الله قد اطلع عليه غفرله وان لم يستغفر “যে ব্যক্তি কোন পাপ করে তারপর সে জানে যে, আল্লাহ তার পাপের বিষয়টি জেনে ফেলেছেন, তাহলে তার পাপ ক্ষমা করে দেয়া হয়, যদিও সে ক্ষমা প্রার্থনা না করে।”  ২০৮

➥  ইমাম তবরানী (رحمة الله), মু’জামুল আওসাত, খন্ড ৪, পৃষ্ঠাঃ  ৩৭৪


মূলত আল্লাহ তায়ালা বান্দার গুনাহ মাফের জন্য বাহানা খুঁজেন এবং বান্দার সামান্যতম আল্লাহর দিকে অগ্রসর হওয়াকে গুনাহ মাফের উসীলা হিসাবে গ্রহণ করে মাফ করে দেন। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল ও দয়ালু।


٤٤٧- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ، عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ  : إِنَّ اللهَ هُوَ السَّلَامُ، وَمِنْهُ السَّلَامُ.


৪৪৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি আবু ওয়ায়েল থেকে, তিনি ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা হলেন সালাম তথা শান্তি এবং শান্তি তার পক্ষ থেকেই এসে থাকে। 

(মুসলিম, ২/৯৪/১৩৬২)


ব্যাখ্যা: আল্লাহ তায়ালা সালাম হওয়ার অর্থ হলো তিনি যাবতীয় দোষ ত্র“টি থেকে মুক্ত ও পবিত্র এবং সকল প্রকার বালা-মুসিবত, বিপদ-আপদ ও রোগ-বালাই থেকে মুক্ত ও নিরাপদ। সুতরাং রোগ মুক্তি চাইলে তাঁরই কাছে চাওয়া উচিত। এদিক বিবেচনায় হাদিসটি অধ্যায়ের সাথে সামঞ্জস্য রয়েছে।


 
Top