8 - بَابُ مَا جَاءَ فِيْ وَجُوْبِ الْإِيْمَانِ بِالْقَدْرِ

15 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، أَنَّ سُرَاقَةَ، قَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! حَدِّثْنَا عَنْ دِيْنِنَا كَأَنَّنَا وُلِدْنَا لَهُ، أَنَعْمَلُ بِشَّيْءٍ قَدْ جَرَتْ بِهِ الْـمَقَادِيْرُ، وَجَفَّتْ بِهِ الْأَقْلَامُ، أَمْ فِيْ شَيْءٍ نَسْتَقْبِلُ فِيْهِ الْعَمَلَ؟ قَالَ: «بَلْ فِيْ شَيْءٍ قَدْ جَرَتْ بِهِ الْـمَقَادِيْرُ، وَجَفَّتْ بِهِ الْأَقْلَامُ»، قَالَ: فَفِيْمَ الْعَمَلُ؟ قَالَ: «اِعْمَلُوْا فَكُلٌّ مُيَسَّرٌ لِـمَا خُلِقَ لَهُ، [فَأَمَّا مَنْ أَعْطَىٰ وَاتَّقَىٰ، وَصَدَّقَ بِالْـحُسْنَىٰ، فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْيُسْرَىٰ، وَأَمَّا مَنْ بَخِلَ وَاسْتَغْنَىٰ، وَكَذَّبَ بِالْـحُسْنَىٰ، فَسَنُيَسِّرُهُ لِلْعُسْرَىٰ] {الليل: 5-10}».


বাব নং ৮ : তাকদীরের উপর ঈমান রাখা আবশ্যক


১৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু যুবাইর থেকে, তিনি হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত সুরাকাহ (رحمة الله) রাসূল (ﷺ)  এর নিকট আবেদন করলেন যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে আমাদের দ্বীনের হাকীকত সম্পর্কে বলুন, যা আমাদের সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য। আমরা কি ঐসব কাজ করি যা তাকদীরে লেখা হয়েছে এবং যা লিখে কলম শুকিয়ে গেছে, নাকি আমরা যা করি তা তাকদীরে লিপিবদ্ধ করা হয়? উত্তরে তিনি বলেন, বরং তাকদীরে যা লেখা আছে এবং লিখে কলম শুকিয়ে গেছে আমরা তাই করি। তখন সুরাকাহ আরয করলেন, যদি এরূপ হয় তাহলে আমল কি জন্য? অর্থাৎ তাকদীর অনুযায়ী যদি সবকিছু হয়ে থাকে তাহলে আমরা আমল কেন করব? তাকদীরে যা আছে তাতো হবেই। রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করলেন তোমরা অবশ্যই আমল করতে থাক। কেননা প্রত্যেকের জন্য সেই কাজটিই সহজ হবে, যে কাজের জন্য তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তারপর তিনি কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতসমূহ পাঠ করেন, যার অর্থ “অতএব, যে দান করে এবং খোদাভীরু হয় এবং উত্তম বিষয়কে সত্য মনে করে, আমি তাকে সুখের বিষয়ের জন্য সহজ পথ দান করব। আর যে কৃপণতা করে ও বেপরওয়া হয় এবং উত্তম বিষয়কে মিথ্যা মনে করে, আমি তাকে কষ্টের বিষয়ের জন্য সহজ পথ দান করব।” (সূরা আল লাইল, ৫-১০) (মারেফাতুস সাহাবা ১০/১৩৯/৩১৭৫)

ব্যাখ্যা: তাকদীরের সংজ্ঞা: তাকদীর শব্দটি আরবী ‘কাদরুন’ থেকে নিষ্পন্ন, এর অর্থ নির্ধারণ করা, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি। পরিভাষায় তাকদীর বলা হয়,

هو تحديد كل مخلوق بحده الذى يوجد من حسن وقبح  ونفع وضر وما يحويه من زمان او مكان وما يترتب عليه من ثواب وعقاب 

-‘সৃষ্টির যাবতীয় বিষয় তথা ভাল-মন্দ, উপকার-অপকার ইত্যাদির স্থান-কাল এবং এসবের শুভ-অশুভ পরিণাম পূর্ব হতে নির্ধারিত হওয়া।’ 

➥ আল্লামা তাফতাযানী (رحمة الله) শরহুল আকাঈদিন নসফিয়্যা, আরবী, পৃ: ৮২ ও মুফতি আমীমুল ইহসান (رحمة الله) কাওয়ায়েদুল ফিকহ পৃ: ৪৩১

 

কোন জিনিসই তাকদীরের বাইরে নয়। তবে তাকদীর মানুষের কাজের কারণ নয় এবং তাকদীরে লিপিবদ্ধ আছে বলেই মানুষ ভাল-মন্দ ইত্যাদি করছে বিষয়টি এমনও নয়। বরং মানুষ ভবিষ্যতে যা করবে আল্লাহ তা যেহেতু আদি থেকেই জানেন, তাই তিনি তা পূর্বেই লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। আবার আল্লাহ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন বলেই মানুষ করছে একথাও ঠিক নয়। বরং এর উদাহরণ হল একজন অভিজ্ঞ ডাক্তার তার রোগীর অবস্থা জানেন বলে তার ডায়েরীতে লিখে রাখলেন যে, এ রোগী অমুক সময় অমুক অবস্থায় মারা যাবে। অবশেষে যদি তাই হয়, তবে ডাক্তারের লিখন তার মৃত্যুর কারণ নয়। ঠিক তদ্রুপ আল্লাহ তায়ালা মানুষের যাবতীয় অবস্থা জানেন বলে সব লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তবে এ লিপিবদ্ধ করণ মানুষের কার্যের কারণ নয়। মানুষের ইচ্ছা ও সংকল্পই তার কার্যের কারণ। কাজেই ভালমন্দ কাজের জন্য মানুষ নিজেই দায়ী হবে।

তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস করা ঈমানের অপরিহার্য অঙ্গ। পক্ষান্তরে তাকদীরকে অবিশ্বাস করা মূলত আল্লাহ’র ইলমে আযলীকে (চিরন্তন জ্ঞান) অস্বীকার করারই নামান্তর। হাদিস শরীফে রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, আমার উম্মতের মধ্যে দুই শ্রেণির মানুষ আছে যাদের জন্য ইসলামের কোন অংশ নেই। তারা হল মুরজিয়া ও কাদরীয়া সম্প্রদায়।  

    তিরমিযী, সূত্র: মেশকাত শরীফ, পৃ: ২২

 
Top