বিষয় নং-৩: দ্বঈফ সনদ বিশিষ্ট হাদিসের উপরে আমল করার হুকুম:


দ্বঈফ বা দুর্বল হাদিস ফাযায়েল আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য তাতে মুহাদ্দিসীনগণ একমত পোষণ করেছেন। ইলমে হাদিসের এ নীতিমালাটি এখানে এ জন্য উল্লেখ করলাম বর্তমান আহলে হাদিসগণ দ্বঈফ সনদের হাদিসের উপর আমল করা বৈধ নয় বলে উল্লেখ করেন।১৯

➥১৯. এ বিষয়ে আহলে হাদিসের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানীর একটি গ্রন্থ উলে­খযোগ্য, এটি বাংলায় প্রকাশ করা হয়েছে এবং নাম রাখা হয়েছে ‘‘ছহীহ হাদীছের পরিচয় ও হাদীছ বর্ণনার মূলনীতি’’ এটি চট্টগ্রাম, আন্দরকিল্লা, আযাদ প্রকাশন থেকে প্রকাশিত। বইটির ২৩ পৃষ্ঠায় ও ২৫ পৃষ্ঠায়, এবং ২৭ পৃষ্ঠায় আলবানী লিখেছেন যে দ্বঈফ সনদের হাদিসের উপর ভিত্তি করে কোন ক্রমেই আমল করা যাবে না। নাউযুবিল্লাহ


আহলে হাদিস আলবানী সকল মুহাদ্দিসের ইজমার বিরোদ্ধে অবস্থান নিয়ে লিখেন-‘‘অনেকে এরূপ ধারণা পোষণ করেন যে, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যাবে এ মর্মে কোনো মতভেদ নেই। বাস্তবিক পক্ষে তা সঠিক নয়।’’ (আলবানী, য‘ঈফ ও জাল হাদীছ সিরিজ, ১ম খণ্ড, ৫০ পৃ. তাওহীদ পাবলিকেশন্স, বংশাল, ঢাকা-১১০০)


এ বিষয়ে বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, ফকীহ, ইমাম নববী আশ-শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন-

قد اتفق العلماء على جواز العمل بالحديث الضعيف فى فضائل الاعمال:مقدمة المؤلف

-‘‘উলামায়ে কিরাম এই বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন দুর্বল হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ২০

➥২০. ইমাম নববী : আরবাঈন : ১/২০ পৃ. এবং ইমাম ইবনে দাকিকুল ঈদ, শরহে আরবাঈনুন নববিয়্যাহ, ১/২০ পৃ.


পাঠকদের কাছেই বিচারের সিদ্ধান্ত অর্পন করা হলো, আপনারা কাকে মানবেন, আলবানীকে না ইমাম নববী (رحمة الله)সহ পৃথিবী বিখ্যাত ইমামদের!

এ বিষয়ে এক নং নীতিমালার আলোচনায় কতিপয় আহলে হাদিসদের জঘন্য বক্তব্যও উল্লেখ করে এসেছি। এখন আমি এ বিষয়ের সপক্ষে আপনাদের সামনে পৃথিবী বিজ্ঞাত আলেমদের অভিমত তুলে ধরার চেষ্টা করবো, ইনশা আল্লাহ।


✦ অভিমত নং-১: দ্বঈফ হাদিস আমল যোগ্য তার ব্যাপারে হানাফী মাযহাবের অন্যতম ইমাম কামালুদ্দীন ইবনে হুমাম (رحمة الله) বলেন,  

وَرَوَى الْحَاكِمُ عَنْهُ - ﷺ - إنْ سَرَّكُمْ أَنْ تُقْبَلَ صَلَاتُكُمْ فَلْيَؤُمَّكُمْ خِيَارُكُمْ فَإِنْ صَحَّ وَإِلَّا فَالضَّعِيفُ غَيْرُ الْمَوْضُوعِ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ، - 

-‘‘ইমাম হাকিম (رحمة الله) স্বীয় কিতাব (আল-মুস্তাদরাক) হুযূর (ﷺ) থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন, ‘যদি তোমাদের অন্তর চায় যে, তোমাদের নামায কবুল করা হোক, তবে তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তিই যেন ইমাম হন।’ আলোচ্য হাদিস সহীহ হলে তো ভাল, অন্যথায় হাদিসটি দ্বঈফ বানোয়াট নয়, আর দ্বঈফ হাদিস অনুযায়ী আমল করা যাবে,  আমল বা ফযিলত প্রমাণের ক্ষেত্রে এমন হাদিস অবশ্যই দলীল।’’ ২১

➥২১. আল্লামা কামাল উদ্দীন ইবনে হুমাম : ফতহুল কাদীর, ১/৩৪৯ পৃ.


✦ অভিমত নং-২: ইমাম সৈয়দ আবু তালেব মক্কী (رحمة الله) রচিত গ্রন্থ ‘কুউয়াতুল কুলূব’ কিতাবে লিখেন, 

بعض ما يضعف به رواة الحديث وتعلل به أحاديثهم لا يكون تعليلاً ولا جرحاً عند الفقهاء ولا عند العلماء بالله تعالى مثل أن يكون الراوي مجهولاً لإيثاره الخمول، وقد ندب إليه أو لقلة الأتباع له إذ لم يقم لهم الأثرة عنه - 

-‘‘এমন কিছু বিষয়,  যেগুলোর কারণে হাদিস বর্ণনাকারীকে দুর্বল এবং তাঁদের বর্ণিত হাদিস সমূহকে সহীহ নয় বলে ঘোষণা দেয়া হয়। সম্মানিত ফিক্বহ বিশারদগণ ও ওলামা-ই-কেরাম সেগুলোকে দ্বঈফ বলার যোগ্য কিংবা ত্র“টিযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করেন না। যেমন বর্ণনাকারীর নাম উল্লেখ না থাকা বা অপরিচিত হওয়া। কারণ, এমনও হতে পারে যে,  বর্ণনাকারী নিজেই তার নাম গোপন করেছেন। নিজেকে প্রকাশ ও প্রচারে উৎসুক না হওয়ার বিষয়ে শরীয়াতে প্রমাণিক দলীল রয়েছে। অথবা এ জন্যই তিনি অপরিচিত হয়েছেন যে,  তাঁর ছাত্র সংখ্যা কিংবা অনুসারী সংখ্যা একেবারে নগন্য। ফলে ব্যাপক হারে মানুষ তাঁর থেকে হাদিস বর্ণনা করার সুযোগ পায়নি।’’ (কুউয়াতুল কুলুব, প্রথম খণ্ড,  পৃ.৩০০,  দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ,  বয়রুত)


✦ অভিমত নং-৩: আল্লামা মুফতী আমীমুল ইহসান (رحمة الله)  বলেন, 

والضعيف غير الموضوع بانفراده يعمل عليه فى الفضائل استحبابا ولا يحتج به فى الاحكام نعم يكفى للاعتضاد الا اذا كان فيه الاحتياط-

 -‘‘দুর্বল হাদিস যদি কাল্পনিক না হয় যদিও তা একক রাবী কর্তৃক বর্ণিত হয়ে থাকে, তবু ফযীলতের বেলায় তার উপর আমল করা মুস্তাহাব। তবে শরীয়তের বিধান প্রয়োগের ক্ষেত্রে এ হাদিস কার্যকর হবে না। হ্যাঁ, তবে সতর্কতার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত জোর প্রকাশের জন্য দুর্বল হাদিসকেও দলীল হিসেবে পেশ করা যেতে পারে।’’ ২২

➥২২. আল্লামা মুফতী আমিমুল ইহসান : মিযানুল আখবার, পৃ-১৫


✦ অভিমত নং-৪: ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمة الله) মত সর্ম্পকে বলা হয়ে থাকে,  

وقد ذهب ابو حنيفة رضى الله تعالى عنه ان ضعيف الحديث عنده اولى من الرأى-

-‘‘ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এ মত দৃঢ়ভাবে পোষণ করেছেন যে, দুর্বল হাদিস কিয়াসী রায় অর্থাৎ নিজস্ব মতামত থেকে অনেক উত্তম।’’  ২৩

➥২৩. মুফতি আমিমুল ইহসান : মিযানুল আখবার, পৃ-১৫, ইবনে হাজার মক্কী, আল খায়রাতুল হিসান, ২৭ পৃ. মিশর হতে প্রকাশিত।


❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-

قَالَ أَبُو مُحَمَّدِ بْنُ حَزْمٍ: جَمِيعُ الْحَنَفِيَّةِ مُجْمِعُونَ عَلَى أَنَّ مَذْهَبِ أَبِي حَنِيفَةَ أَنَّ ضَعِيفَ الْحَدِيثِ أَوْلَى عِنْدَهُ مِنَ الْقِيَاسِ وَالرَّأْيِ.

-‘‘ইমাম আবু মুহাম্মদ ইবনে হাযম (رحمة الله) বলেন,  সকল হানাফীগণ এ বিষয়ে একমত কোন আলেমের নিজ কিয়াস এবং রায় হতে দ্বঈফ সনদের হাদিসের আমল করা উত্তম।’’ (যাহাবী,  তারিখুল ইসলাম,  ৩/৯৯০ পৃ. ক্রমিক. ৪৪৫)


✦ অভিমত নং-৫: বিশ্ববিখ্যাত ফতোয়াবিদ এবং মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) ফতোয়ায়ে শামীর ১ম খণ্ড بَابُ الَاذَانْ এ লিখেন-

 وَالْعَارِفِ الشَّعْرَانِيِّ عَنْ كُلٍّ مِنْ الْأَئِمَّةِ الْأَرْبَعَةِ أَنَّهُ قَالَ: إذَا صَحَّ الْحَدِيثُ فَهُوَ مَذْهَبِي، عَلَى أَنَّهُ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ يَجُوزُ الْعَمَلُ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ كَمَا مَرَّ أَوَّلَ كِتَابِ الطَّهَارَةِ

-‘‘আরিফ কুল সম্রাট ইমাম শা’রানী (رحمة الله) বলেন, নিশ্চয় চার মাযহাবের ইমামগণ বলেছেন, সহীহ হাদিস হলো আমাদের মাযহাব। কিন্তু ফাযায়েল আমলের জন্য দ্বঈফ বা দুর্বল হাদিস আমল করা জায়েয। যা আমি এ গ্রন্থের কিতাবুত ত্বাহারাত অধ্যায়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি।’’ ২৪

➥২৪. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী : ফতোয়ায়ে শামী, পৃ-১/৩৮৫ পৃ. কিতাবুল আযান


✦ অভিমত নং-৬: বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) উমদাতুল ক্বারী শরহে বুখারীর মুকাদ্দামায় দ্বঈফ হাদিসের বর্ণনা করতে গিয়ে বলেন, 

وقد جوز العلماء التساهل فى الضعيف من غير بيان ضعفه فى المواعظ والقصص وفضائل الاعمال-

-‘‘ওলামায়ে কেরামের নিকট দ্বঈফ হাদিস ওয়াজ ও কাহিনীর জন্য এবং ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ২৫

➥২৫. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী : উমদাতুল ক্বারী, শরহে বুখারী : ১/৯ পৃ.


✦ অভিমত নং-৭: বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির,  মুহাদ্দিস,  ফকিহ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) ’’তাফসীরে রুহুল বায়ানে’’ বলেন-

لكن المحدثين اتفقوا على ان الحديث الضعيف يجوز العمل به فى الترغيب والترهيب–

-‘‘তবে মুহাদ্দিসীনে কিরাম এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে,  আকর্ষণ সৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারের বেলায় দ্বঈফ হাদিস অনুযায়ী আমল করা যায়েয।’’ ২৬

➥২৬. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসিরে রুহুল বায়ান, ২/৪১০ পৃ.


তিনি কিতাবের অন্যস্থানে বলেন , 

يقول الفقير قد صح عن العلماء تجويز الاخذ بالحديث الضعيف فى العمليات فكون الحديث-

-‘‘এই অধম ফকীর আরজ করছি যে, ওলামায়ে কেরাম থেকে আমলের ব্যাপারে দ্বঈফ হাদিস গ্রহণযোগ্য। ব্যাপারটি বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত আছে।’’ ২৭

➥২৭. আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসীরে রুহুল বায়ান, ৭/ পৃ. ২২৯


❏ তিনি তার আরেক গ্রন্থে লিখেন-

وفى كلام الحافظ السيوطي لم يثبت فى التلقين حديث صحيح او حسن بل حديثه ضعيف باتفاق جمهور المحدثين والحديث الضعيف يعمل به فى فضائل الأعمال

-‘‘ইমাম হাফেয সুয়ূতি (رحمة الله) বক্তব্য হলো কবরে তলকীনের হাদিস দৃঢ়ভাবে প্রমাণিত নয়,  এ বিষয়ের হাদিসটি সহীহ বা হাসান কোন পর্যায়ের নয়, বরং এ বিষয়ক হাদিসটি দ্বঈফ; কিন্তু জমহুর মুহাদ্দিসগণ একমত যে দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (তাফসিরে রুহুল বায়ান,  ৪/৪১৭ পৃ.) 


❏ তিনি আরেক স্থানে লিখেন-

ان الحديث الضعيف يعمل به فى فضائل الأعمال

-‘‘নিশ্চয় হাদিসে যঈফ ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (তাফসিরে রুহুল বায়ান,  ৭/১৮৬ পৃ.)


✦ অভিমত নং-৮: আল্লামা ইমাম আবু তালিব মক্কী (رحمة الله) বলেন, 

الاحاديث وفي فضائل الأعمال وتفضيل الأصحاب متقبلة محتملة على كل حال مقاطيعها ومراسيلها لا تعارض ولا ترد،ৃ.. كذلك كان السلف يفعلون-

-‘‘ফাযায়েলে আমল এবং সাহাবাদের বা কারও ফযীলত বর্ণনার ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণ একমত এই যে,  তা যে প্রকারের হোক না কেন সেটা গ্রহণযোগ্য ও গৃহীত। যদিও তা সনদ অসংযুক্ত অথবা মুরসাল হয়, তার বিরোধীতা করা বা খণ্ডন করা যাবে না। এমনকি পূর্ব যুগের ইমামগণ এরুপই করেছেন।’’ ২৮

➥২৮. আল্লামা আবু তালিব মক্কী : কুউয়াতুল কূলুব : ১/৩০১ পৃ.


✦ অভিমত নং-৯: ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন-

قد اتفق العلماء على جواز العمل بالحديث الضعيف فى فضائل الاعمال:مقدمة المؤلف

-‘‘উলামায়ে কেরাম এই বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন দুর্বল হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ২৯

➥২৯. ইমাম নববী : আরবাঈন : ১/২০ পৃ. এবং ইমাম ইবনে দাকিকুল ঈদ, শরহে আরবাঈনুন নববিয়্যাহ, ১/২০ পৃ.


✦ অভিমত নং-১০: আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) বলেন, 

(وَيَجُوزُ عِنْدَ أَهْلِ الْحَدِيثِ وَغَيْرِهِمُ التَّسَاهُلُ فِي الْأَسَانِيدِ) الضَّعِيفَةِ (وَرِوَايَةُ مَا سِوَى الْمَوْضُوعِ مِنَ الضَّعِيفِ وَالْعَمَلُ بِهِ مِنْ غَيْرِ بَيَانِ ضَعْفِهِ وَفَضَائِلِ الْأَعْمَالِ وغيرها (مِمَّا لَا تَعَلُّقَ لَهُ بِالْعَقَائِدِ وَالْأَحْكَامِ)وَمَنْ نُقِلَ عَنْهُ ذَلِكَ: ابْنُ حَنْبَلٍ، وَابْنُ مَهْدِيٍّ، وَابْنُ الْمُبَارَكِ، قَالُوا: إِذَا رُوِّينَا فِي الْحَلَالِ وَالْحَرَامِ شَدَّدْنَا، وَإِذَا رُوِّينَا فِي الْفَضَائِلِ وَنَحْوِهَا تَسَاهَلْنَا.- 

-‘‘মুহাদ্দিস ও অন্যান্য ওলামাদের বক্তব্য হলো দুর্বল সনদ সম্পর্কে অথবা কিছু ছাড় দেওয়া এভাবে যে মওদ্বু বা বানোয়াট না হয়, তা ফাযায়েল আমল এবং অন্যান্য বিষয়ের মধ্যে আমল করা বৈধ আছে। যদি তা আহকাম ও আকায়েদের সাথে সম্পর্ক না হয়, যে ইমামগণ এ মত পোষণ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল, ইমাম ইবনে মাহদী, ইমাম ইবনুল মোবারক সংযুক্ত আছেন। তাঁরা বলেন যে, আমরা হালাল হারামের মধ্যে হাদিস বর্ণনা করতে গিয়ে কঠিনতা অবলম্বন করেছি এবং ফাযায়েল বর্ণনার ক্ষেত্রে নম্রতা অবলম্বন করেছি।’’৩০

➥৩০. ইমাম আব্দুর রহমান জালালুদ্দীন সুয়ূতি : তাদরীবুর রাবী, ১/৩৫১ পৃ.


✦ অভিমত নং-১১: ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, 

قال العلماءُ من المحدّثين والفقهاء وغيرهم: يجوز ويُستحبّ العمل في الفضائل والترغيب والترهيب بالحديث الضعيف ما لم يكن موضوعاً-مقدمة المؤلف:فصل فى الامر بالاخلاق

-‘‘মুহাদ্দিসীনে কেরাম ও ফুকাহায়ে কেরাম এবং অন্যান্য ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, ফাযায়েল বা উৎসাহিত করা ও ভয়ভীতি প্রমাণ বা গ্রহণ করা হাদিসে দ্বঈফ দ্বারা জায়েজ, যদি তা জাল হাদিস না হয়।’’ ৩১

➥৩১. ইমাম নববী : কিতাবুল আযকার, ১/৮ পৃষ্ঠা, দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত,  লেবানন।


✦ অভিমত নং-১২: আল্লামা ইমাম বুরহানুদ্দিন ইবরাহিম হালবী (رحمة الله) বলেন, 

يستحب ان يمسح بدنه بمنديل بعد الغسل لما روت عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ: كَانَ لِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خِرْقَةٌ يُنَشِّفُ بِهَا بَعْدَ الوُضُوءِ-وراه الترمذى هو ضعيف ولكن يجوز العمل بالضعيف فى الفضائل-

-‘‘গোসল বা ওজুর পরে রুমাল দ্বারা শরীর মুছাহ মুস্তাহাব। হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন,  হুযূর (ﷺ) এর একটি কাপড়ের টুকরা ছিল যা দ্বারা ওযুর পরে অঙ্গ মোবারক মাসেহ করিতেন। উক্ত হাদিস ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) দুর্বল বলেছেন। এরপরেও উহার আমল বিদ্যমান আছে।’’ ৩২

➥৩২. ইমাম ইব্রাহীম হালবী হানাফি : গুনিয়াতুল মুসল্লী, ৫২ পৃ.


✦ অভিমত নং-১৩: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন, 

وَالضَّعِيفُ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ اتِّفَاقًا وَلَذَا قَالَ أَئِمَّتُنَا إِنَّ مَسْحَ الرَّقَبَةِ مُسْتَحَبٌّ أَوْ سُنَّةٌ-

-‘‘দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের মধ্যে আমল করার ব্যাপারে ইমামগণের ঐকমত্য হইয়াছে। এই জন্য আমাদের ইমামগণ বলেছেন  গর্দান মাসেহ করা মুস্তাহাব অথবা সুন্নাত প্রমাণিত হয়েছে।’’ ৩৩

➥৩৩. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মওজু আতুল কাবীর : ১/৩১৫ পৃ. হা/৪৩৩


✦ অভিমত নং-১৪: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) অন্যস্থানে বলেন-

إِنَّمَا يُعْمَلُ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘দ্বঈফ সনদের হাদিস (মওদ্বু বা জাল নয়) ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ৩৪

➥৩৪. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত : ২/২০৬ পৃ. হা/৫২১


✦ অভিমত নং-১৫: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) অন্যত্র বলেন, 

اعْلَمْ أَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘নিশ্চয় জেনে রাখুন! দুর্বল সনদের হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ৩৫

➥৩৫. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত : ৩/৪৯ পৃ. কিতাবুস সালাত : হা/৯৭৪


✦ অভিমত নং-১৬: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) আরও বলেন-

أَجْمَعُوا عَلَى جَوَازِ الْعَمَلِ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘ইমাম মুহাদ্দিস ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে, ফাযায়েলে আমলের জন্য দ্বঈফ বা দুর্বল হাদিস দ্বারা আমল করা বৈধ।’’ ৩৬

➥৩৬. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মেরকাত : ৩/৪৯ পৃ. কিতাবুস সালাত : হা/১১৭৩


✦ অভিমত নং-১৭: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) আরও বলেন-

ضَعْفُهُ يُعْمَلُ بِهِمَا فِي الْفَضَائِلِ. 

-‘‘হাদিসটি দুর্বল, তবে ফাজায়েলের জন্য এবং আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ৩৭

➥৩৭. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাত : ৩/৮৯৯ পৃ. কিতাবুস সালাত : হা/১১৮৪


✦ অভিমত নং-১৮: আল্লামা শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) বলেন, 

ان الحديث الضعيف معتبر فى الفضائل الأعمال لا فى غيرها المراد مفرداته لا مجموعها لانه داخل فى الحسن لا فى الضعيف-

-“দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য,  তা ব্যতিত অন্য বিষয়ের জন্য নয়। এই কথার মর্ম হচ্ছে তার বর্ণনা যদি একক হয়,  একাধিক সনদে বর্ণিত যে হাদিস  তা হাসানের অন্তর্ভূক্ত,  তা তখন দ্বঈফের অন্তর্ভূক্ত নয়।’’৩৮

➥৩৮. আল্লামা শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী : মুকাদ্দামাতুশ্ শায়খ, ২৩ পৃ.


✦ অভিমত নং-১৯: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন, 

لَكِنْ يَعْمَلُ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ بِاتِّفَاقِ الْعُلَمَاءِ

-‘‘সমস্ত ওলামায়ে কেরাম ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে দ্বঈফ হাদিস ফযিলতপূর্ন আমল এর ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্য।’’৩৯

➥৩৯. মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাত, ৩/৩৪০ পৃ. বাব : সাহরী কিয়ামে রামাদ্ধান : হা/১৩২৯


❏ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) অন্য জায়গায় আরো বলেন, 

يَجُوزُ الْعَمَلُ بِالْخَبَرِ الضَّعِيفِ،

-‘‘দ্বঈফ হাদিসের উপর আমল করা জায়েয বা বৈধ।’’ ৪০

➥৪০. আল্লামা মোল্লা ক্বারী : মিরকাত : ৩/৩৫০ পৃ., হাদিসঃ ১৩০৮


✦ অভিমত নং-২০: আল্লামা ড. মাহমুদ আত্-ত্বহান বলেন, 

اختلف العلماء في العمل بالحديث الضعيف، الذي عليه جمهور العلماء أنه يستحب العمل به في فضائل الأعمال،-

-‘‘দুর্বল হাদিসের উপর আমলের ব্যাপারে ইখতিলাফ (মত পার্থক্য) রয়েছে,  তবে জমহুর (অধিকাংশ) ইমাম ও ওলামার মতে দ্বঈফ হাদিস ফাযাে লে আমলের ক্ষেত্রে আমল করা মুস্তাহাব। ’’ ৪১

➥৪১. আল্লামা ড. মাহমুদ জাহান : তাইসীরুল মাস্তালিউল হাদিস, ৪৪ পৃ


✦ অভিমত নং-২১: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন , 

جهالة بعض الرواة لاتقتضى كون الحديث موضوعا و كذا نكارة الالفاظ فينبغى ان يحكم عليه بانه ضعيف ثم يعمل بالضعيف فى فضائل الاعمال-

-‘‘হাদিসের সনদে কোন বর্ণনাকারী অজানা বা অচেনা হওয়া অথবা হাদিসের কোথাও স্পষ্ট না হওয়া দ্বারা হাদিসটি মওদ্বু বা বানোয়াট বিবেচিত হয় না। তবে হ্যাঁ,  দ্বঈফ বলা যেতে পারে। অতএব দ্বঈফ হাদিস অনুসারে ফযিলত বর্ণনার ক্ষেত্রে এবং আমল করা যাবে।’’  ৪২

➥৪২. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : ফাযায়েলে নিসফিস শা’বান : ৪৪ পৃ.


✦ অভিমত নং-২২: আল্লামা আজলূনী (رحمة الله) হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) এর বর্ণিত ঘাড় মাসেহ এর হাদিস প্রসঙ্গে বলেন-

بِسَنَدٍ ضَعِيفٍ...... مَسْحَ الرَّقَبَةِ مُسْتَحَبٌّ أَوْ سُنَّةٌ

-‘‘উক্ত হাদিসটির সনদ দুর্বল ......... তবে হাদিসটি দ্বারা প্রমণিত হলো ঘাড় মাসেহ করা মুস্তাহাব অথবা সুন্নাত।’’৪৩

➥৪৩. আল্লামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ২/১৮৬ পৃ. হা/২২৯৮


✦ অভিমত নং-২৩: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-

وَهِيَ يُعْمَلُ فِيهَا بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ وَالْمُرْسَلِ وَالْمُنْقَطِعِ بِالِاتِّفَاقِ، كَمَا قَالَهُ النَّوَوِيُّ

-‘‘এ হাদিসের উপর আমল করা বৈধ, কেননা হাদিসের সনদ দুর্বল, মুরসাল,  মুনকাতে হলেও আমল করা বৈধ, আর এ ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছেন,  যেমনটি ইমাম নববী (رحمة الله) বলেছেন।’’ ৪৪

➥৪৪. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত, ২/৪৭৭ পৃ. হা/৫২১


✦ অভিমত নং-২৪: তিনি এ কিতাবে আরও উল্লেখ করেন

فِي مَذْهَبِ الشَّافِعِيِّ أَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ لَا يُعْمَلُ بِهِ إِلَّا فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘এ হাদিসটি শাফেয়ী মাযহাবের অনূকুলে, তবে হাদিসটি দ্বঈফ। তবে তা শুধু ফাযায়েলে আমালের জন্যই গ্রহণযোগ্য।’’ ৪৫

➥৪৫. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত, ৩/১২২৩ পৃ. হা/১৭০৮


✦ অভিমত নং-২৫: তিনি আরও বলেন-

أَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘নিশ্চয় এ হাদিসটি দ্বঈফ, আর যা ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য। ’’ ৪৬

➥৪৬. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/২৮২ পৃ.


✦ অভিমত নং-২৬: তিনি তাঁর এ কিতাবে অন্যস্থানে তাকিদ দিয়ে বলেন

اعْلَمْ أَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘জেনে রাখুন! নিশ্চয় দ্বঈফ সনদের হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য। ’’  ৪৭

➥৪৭. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ২/৭৭৩ পৃ.


✦ অভিমত নং-২৭: হুবহু তিনি এ কিতাবের অন্যস্থানে বলেন এ রুপ বলেছেন। ৪৮

➥৪৮. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৩/১২২৭ পৃ. হা/১৭১৬


✦ অভিমত নং-২৮: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ কিতাবে আরও বলেন

أَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي الْفَضَائِلِ

-‘‘যখন বুঝা গেল হাদিসটি দ্বঈফ, তাই তা শুধু ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহনযোগ্য। ’’  ৪৯

➥৪৯. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৩/১৪৮ পৃ. হা/১৭৩৩


✦ অভিমত নং-২৯: তিনি আরও বলেন

أَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ اتِّفَاقًا

-‘‘সবাই এ ব্যাপারে একমত হয়েছেন যে, দ্বঈফ সনদের হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য। ’’ ৫০

➥৫০. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১০৪৫ পৃ.


✦ অভিমত নং-৩০: তিনি আরও লিখেন 

لِأَنَّ الْحَدِيثَ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي الْفَضَائِلِ.

-‘‘ইমাম ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) বলেন, নিশ্চয় দ্বঈফ সনদের হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’৫১

➥৫১. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১৬৩৭ পৃ.


✦ অভিমত নং-৩১: তিনি এ কিতাবে আরও বলেন

فَإِنَّ فَضَائِلَ الْأَعْمَالِ يَكْفِيهَا الْحَدِيثُ الضَّعِيفُ لِلْعَمَلِ

-‘‘ফাযায়েলে আমালের জন্য দ্বঈফ সনদের হাদিসই যথেষ্ট।’’ ৫২

➥৫২. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৭/৩০৫৭ পৃ. হা/৪৮৭৭


✦ অভিমত নং-৩২: তিনি অন্যস্থানে বলেন-

إِنَّهُ ضَعِيفٌ لَكِنَّهُ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘নিশ্চয় এ সনদটি দুর্বল, তবে এটি ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ৫৩

➥৫৩. আল্লাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১৩৮০ পৃ. হা/১৯৮২


✦ অভিমত নং-৩৩: আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) বলেন,

حديثه ضعيف باتفاق جمهور المحدثين والحديث الضعيف يعمل به فى فضائل الأعمال

-‘‘দ্বঈফ সনদের উপর আমালের ব্যাপারে জমহুর মুহাদ্দিসগণ বলেছেন যে,  দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ৫৪

➥৫৪. আল্লাম ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বায়ান, ৪/৪৩৭ পৃ. সূরা ইবরাহিম, আয়াত,  ২৭


✦ অভিমত নং-৩৪: আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী (رحمة الله) বলেন-

ان الحديث الضعيف يعمل به فى فضائل الأعمال

-‘‘নিশ্চয় দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’  ৫৫

➥৫৫. আল্লাম ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বায়ান, ৭/১৮৬ পৃ. সূরা আহযাব, আয়াত,  ৪০


✦ অভিমত নং-৩৫: আল্লামা তিব্বী (رحمة الله) লিখেন-

وقد اتفق العلماء على جواز العمل بالحديث الضعيف في فضائل الأعمال.

-‘‘উলামায়ে কেরামগণ এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন যে দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’(ইমাম তিব্বী, শরহে মিশকাত, ২/৭০৭ পৃ. হা/২৫৯) 


✦ অভিমত নং-৩৬: আল্লামা সান‘আনী (رحمة الله) লিখেন-

ومعلوم عند المحدثين أن الاستدلال بالحديث الضعيف -في فضائل الأعمال

-‘‘বুঝতে হবে মুহাদ্দিসগণের নিকট দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য দলিলযোগ্য।’’ (সান‘আনী, তানভীর শরহে জামেউস সগীর, ১/১২৮ পৃ. মুকাদ্দামা)


✦ অভিমত নং-৩৭: ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) তার আরেক গ্রন্থে লিখেন-

أَنهم اجْمَعُوا على جَوَاز الْعَمَل بِالْحَدِيثِ الضَّعِيف فِي فَضَائِل الْأَعْمَال

-‘‘সকলে (ফকিহ, মুহাদ্দিস, আহলে তাফসির) একমত পোষণ করেছেন যে দ্বঈফ সনদের হাদিসের উপরে আমল করা বৈধ।’’ (সুয়ূতি,  শরহে সুনানে ইবনে মাযাহ,  ১/৯৮ পৃ.) 


❏ তিনি তার আরেক (قوت المغتذي على جامع الترمذي) গ্রন্থের ১/৫১৩ পৃষ্ঠায় হাদিসের নীতিমালা আলোচনা করতে গিয়ে লিখেন-

الرابعة: وهي من يطلق عليه: ضعيف، فيعمل به في فضائل الأعمال دون الأحكام الراجعة إلى الاعتقاد في الأصول، والحل والحرمة في الفُرُوع.

-‘‘চতুর্থতম নীতি: সাধারণ দ্বঈফ। এ ধরনের হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য, যদিও তা আহকাম, ই‘তিকাদে উসূলের এবং হালাল-হারামের নির্ণয়ের জন্য গ্রহণ বৈধ নয়।’’ 


✦ অভিমত নং-৩৮: আল্লামা জুরকানী (رحمة الله) লিখেন-

أَنَّ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ.

-‘‘নিশ্চয় দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (শরহে মুয়াত্তায়ে মালেক,  ৪/৪৪৮ পৃ.)


✦ অভিমত নং-৩৯: আহলে হাদিসদের শায়খ উবায়দুল্লাহ মোবারকপুরী লিখেন-

قد اتفقوا على جواز العمل بالضعيف في فضائل الأعمال

-‘‘উলামায়ে কেরামগণ এ বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন যে দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’  (মের‘আত,  ১/৩৫০ পৃ. হা/২৬২)


✦ অভিমত নং-৪০: আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভি (رحمة الله) লিখেন-

فإن الضعيف يكفي في فضائل الأعمال

-‘‘দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য যথেষ্ট।’’ (আত-তালাকুল মুমাজ্জাদ আ‘লা মুয়াত্তায়ে মুহাম্মদ,  ২/৬৬০ পৃ.)


✦ অভিমত নং-৪১: আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-

رواه ابن ماجه بإسناد ضعيف لكنه قوي حيث يعمل به في فضائل الأعمال والله أعلم بالأحوال.

-‘‘এ হাদিসটি ইমাম ইবনে মাযাহ দ্বঈফ সনদে বর্ণনা করেছেন। তবে এটি ফাযায়েলে আমলের জন্য শক্তিশালী দলিল। মহান রবই এ অবস্থা সম্পর্কে অবগত।’’ (শরহে মুসনাদে আবি হানিফা,  ১/২৬ পৃ.)


✦ অভিমত নং-৪২: আল্লামা নুরুদ্দীন সানাদী (رحمة الله) লিখেন-

الْحَدِيثُ ضَعِيفٌ وَالْعَمَلُ عَلَيْهِ لِمُسَامَحَتِهِمْ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ بِالْعَمَلِ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ.

-‘‘এ হাদিসটি যঈফ, আর যঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে মুহাদ্দিসগণ নমনীয়তা প্রকাশ করেছেন।’’ (হাশীয়ায়ে সানাদী আ‘লা সুনানে ইবনে মাযাহ,  ২/২২৬ পৃ.)


✦ অভিমত নং-৪৩: আল্লামা ইমাম সাফেরী (৯৫৬হি.) লিখেন-

واتفق العلماء على أن الحديث الضعيف والمرسل والموقوف يتسامح به في فضائل الأعمال ويعمل بمقتضاه.

-‘‘উলামায়ে মুহাদ্দিসীন যঈফ, মুরসাল, মাওকুফ হাদিসের ক্ষেত্রে, তা ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য হওয়ার বিষয়ে নর্মতা প্রকাশ করেন এ বিষয়ে উলামগণ একমত পোষণ করেছেন।’’ (শরহে বুখারী লিসাফেরী,  ২/৩১৩ পৃ.)


✦ অভিমত নং-৪৪: আল্লামা আব্দুর রহমান মোবারকপুরী  লিখেন-

قال بن حَجَرٍ رَوَاهُ التِّرْمِذِيُّ بِسَنَدٍ مُنْقَطِعٍ وَمَعَ ذَلِكَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘এ ধরনের হাদিসের উপর আমল করা জায়েয।’’ (তুহফাতুল আহওয়াজী,  ২/৪০ পৃ.)


✦ অভিমত নং-৪৫: আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (المطالب العالية بزوائد المسانيد الثمانية) এ একটি পরিচ্ছেদ কায়েম করেন এ শিরোনামে-

২৩ - بَابُ الْعَمَلِ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘পরিচ্ছেদ নং-২৩: যঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণ বৈধতা প্রসঙ্গ।’’ (মাত্তালিবুল আলিয়া, ১২/৬৫৯ পৃ.)


✦ অভিমত নং-৪৬: ইমাম সাখাভী (رحمة الله) তার বিখ্যাত গ্রন্থে লিখেন-

وقد قال ابن عبد البر: إنهم يتساهلون في الحديث إذا كان من فضائل الأعمال

-‘‘ইমাম ইবনে আবদুল র্বা (رحمة الله) বলেন, মুহাদ্দিসগণ ফাযায়েলে আমল সংক্রান্ত কোনো বিষয়ের হাদিস আসলে ন¤্রতা প্রকাশ করেন।’’ (ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা,  ৬৩৫ পৃ. হা/১০৯১)


✦ অভিমত নং-৪৭: ইমাম ইবনে আছির (رحمة الله) লিখেন-

وقال أَحْمَدَ بْنَ حَنْبَلٍ ,يَقُولُ: إِذَا رَوَيْنَا عَنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَّ فِي الْحَلَالِ وَالْحَرَامِ وَالسُّنَنِ وَالْأَحْكَامِ تَشَدَّدْنَا فِي الْأَسَانِيدِ , وَإِذَا رَوَيْنَا عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَّ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ وَمَا لَا يَضَعُ حُكْمًا ولا يرفعه، تساهلنا في الأسانيد ، ولولا الأسانيد لقال من شاء ما شاء

-‘‘ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) বলেন, যখন রাসূল (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে কোনো হাদিস আমাদের কাছে আসে তখন হালাল-হারাম, সুনান সম্পর্কিত হলে আমরা সনদের বিষয়ে কঠোরতা করতাম, যখন ফাযায়েলে আমল সংক্রান্ত কোনো হাদিস বর্ণিত হলে সে সনদের বিষয়ে নরমতা প্রকাশ করতাম, যদি তা জাল না হয়। যদি সনদ না থাকতো যে যা ইচ্ছে তাই বলতো।’’ (জামেউল উসূল,  ১/১০৯ পৃ., ইমাম খতিবে বাগদাদী,  আল-কিফায়াত ফি উলূমির রিওয়ায়েত,  ১/১৩৪ পৃ.,  ইবনে আবি ই‘য়ালা,  তবকাতুল হাম্বলীয়া,  ১/৪২৫ পৃ.)


✦ অভিমত নং-৪৮-৪৯: আল্লামা ইবনুল মুলাক্কীন (رحمة الله) লিখেন-

وَهُوَ ضَعِيف لكنه من فَضَائِل الْأَعْمَال

-‘‘এ হাদিসটি যঈফ, তবে তা ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (তুহফাতুল মুহতাজ ইলা আদিল্লাতিল মিনহাজ,  ১/১৬৮ পৃ.) 


❏ তিনি আরেক গ্রন্থে লিখেন-

وَقد اتّفق الْعلمَاء عَلَى الْعَمَل بِالْحَدِيثِ (الضَّعِيف) فِي فَضَائِل الْأَعْمَال دون الْحَلَال وَالْحرَام

-‘‘ওলামায়ে মুহাদ্দিসীন যঈফ হাদিসের উপর আমল করার উপর একমত পোষণ করেছেন, তবে তা যদি হালাল-হারাম সংক্রান্ত বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত না হয়।’’ (ইবনুল মুলাক্কীন, বদরুল মুনীর,  ৪/২০৩ পৃ.)


✦ অভিমত নং-৫০: ইমাম হাকেম নিশাপুরী (رحمة الله) লিখেন-

عَنْ عَبْدِ الرَّحْمَنِ بْنِ مَهْدِيٍّ، يَقُولُ: إِذَا رَوِينَا، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي الْحَلَالِ، وَالْحَرَامِ، وَالْأَحْكَامِ، شَدَّدْنَا فِي الْأَسَانِيدِ، وَانْتَقَدْنَا الرِّجَالَ، وَإِذَا رَوِينَا فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ وَالثَّوَابِ، وَالْعِقَابِ، وَالْمُبَاحَاتِ، وَالدَّعَوَاتِ تَسَاهَلْنَا فِي الْأَسَانِيدِ

-‘‘ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী (رحمة الله) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূল (ﷺ)-এর পক্ষ থেকে কোনো হাদিস আমাদের কাছে আসে তখন হালাল-হারাম, আহকাম সম্পর্কিত হলে আমরা সনদের বিষয়ে কঠোরতা করতাম, সনদের রাবী নিয়ে কঠোর যাচাই বাছাই করতাম। যখন ফাযায়েলে আমল, কর্মের সাওয়াব এবং দাওয়াত বিষয়ক কোনো হাদিস বর্ণিত হয়, তখন সে সনদের বিষয়ে নর্মতা প্রদর্শন করতাম (যদি তা জাল না হয়)।’’ (ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক,  ১/৬৬৬ পৃ. হা/১৮০১)


✦ অভিমত নং-৫১: আল্লামা মোল্লা খুসরু (رحمة الله) এর লিখিত র্দুরুল হেকাম হানাফী নির্ভরযোগ্য ফিকহের কিতাবে রয়েছে-

وَإِنْ كَانَتْ ضَعِيفَةً لِلْعَمَلِ بِالْحَدِيثِ الضَّعِيفِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘যঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের ক্ষেত্রে আমল করা বৈধ।’’ (দুররুল হেকাম, ১/১২ পৃ.)


✦ অভিমত নং-৫২: ইমাম ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) লিখেন-

وَالْعُلَمَاءُ يَتَسَاهَلُونَ فِي ذِكْرِ الْحَدِيثِ الضَّعِيفِ وَالْعَمَلِ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘উলামায়ে মুহাদ্দিসীনগণ যঈফ হাদিসের হুকুমের বিষয়ে বলেছেন, তা ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ১/১৩১ পৃ.) 


❏ তিনি আরেক স্থানে লিখেন-

أَنَّ الضَّعِيفَ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ

-‘‘নিশ্চয় যঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ৬/৪০৫ পৃ.)


✦ অভিমত নং-৫৩: শরহে বেকায়া গ্রন্থকার আল্লামা উবায়দুল্লাহ মাসউদ (رحمة الله) লিখেন-

الاتفاق على أن الضعيف يُعمل به في فضائل الأعمال

-‘‘সকলে একমত যে দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ (শরহে বেকায়া,  ১/৩৪ পৃ. ঘাড় মাসেহ এর আলোচনা)।


সর্বশেষ বলতে চাই উপরের আলোচনা থেকে বুঝলাম যে সকল ইমাম ও মুহাদ্দিসগণ একমত পোষণ করেছেন দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমালের জন্য গ্রহণীয় এবং মুস্তাহাব।

 
Top