চতুর্দশ অধ্যায় 


কথা-বার্তা বলার  সুন্নাত


(১) মুচকি হেসে ও উৎফুল্লতার সাথে কথাবার্তা বলুন।



(২) মুসলমানের মন খুশি করার নিয়্যতে ছোটদের সাথে স্নেহের ভরা এবং বড়দের সাথে শ্রদ্ধার ভাব রাখুন ইনশা’আল্লাহ্  সাওয়াব অর্জনের সাথে সাথে উভয়ের নিকট আপনি সম্মানিত হবেন।



(৩) চিৎকার করে কথাবার্তা বলা যেমন আজকাল বন্ধু মহলে হয়ে থাকে এটা সুন্নাত নয়।



(৪) চাই একদিনের বাচ্চাও হোক না কেন ভাল ভাল নিয়্যতে তাদের সাথেও আপনি জনাব করে কথাবার্তা বলার অভ্যাস করুন আপনার চরিত্রও উত্তম হবে সাথে সাথে বাচ্চাও ভদ্রতা শিখবে।



(৫) কথাবার্তা অবস্থায় পর্দার স্থানে হাত লাগানো, থুথু ফেলতে থাকা, আঙ্গুলের মাধ্যমে শরীরের ময়লা পরিস্কার করা, অন্যজনের সামনে বারবার নাক স্পর্শ করা কিংবা নাকে বা কানে আঙ্গুল প্রবেশ, ভাল অভ্যাস নয়। এগুলোর মাধ্যমে অন্যান্যদের ঘৃণার সৃষ্টি হয়।



(৬) যতক্ষণ দ্বিতীয় ব্যক্তি কথা বলবে মনোযোগ সহকারে শুনুন, তার কথা কেটে নিজের কথা শুরু করা সুন্নাত নয়।



(৭) কথাবার্তা বলা অবস্থায় বরং সর্বাবস্থায় অট্টহাসি দেওয়া থেকে বিরত থাকুন, কেননা হযরত মুহাম্মদ ﷺ কখনোই অট্টহাসি দেননি।



(৮) বেশী কথা বললে এবং বারবার অট্টহাসি দিলে নষ্ট হয়ে যায়।



(৯) প্রিয় নবী ﷺ এর মহান বাণী হচ্ছে, যখন তুমি দেখবে যে কোন বান্দা পার্থিব অনাসক্তি ও অল্প ভাষী হওয়ার নেয়ামত দ্বারা ধন্য করা হয়েছে তবে তুমি তার নৈকট্য ও সঙ্গ অবলম্বন কর কেননা এসব লোককে হিকমত দান করা হয়। 


(সুনানে ইবনে মাজাহ, খন্ড-৪, পৃ-৪২২, হাদীস নং-৪১০১)



(১০) প্রিয় নবী ﷺ এর বাণী হচ্ছে, যে চুপ রইল সে নাজাত পেল। 


(সুনানে তিরমিযী, খন্ড-৪, পৃ-২২৫, হাদীস নং-২৫০৯) 


মিরআতুল মানাজিহ এর মধ্যে হুজ্জাতুল ইসলাম হযরত সায়্যিদুনা ইমাম গাজালী رحمة الله বলেন, যে কথাবার্তা চার প্রকারের হয়ে থাকে।যথাঃ- 


(১) একান্ত ক্ষতিকর বরং পুরো কথাটাই ক্ষতিকর, 

(২) একান্ত উপকারী, 

(৩) কিছু ক্ষতিকর কিছু উপকারী, 

(৪) না উপকারী না ক্ষতিকর। 


একান্ত ক্ষতিকর কথাবার্তা থেকে বিরত থাকা প্রয়োজন। একান্ত উপকারী কথাবার্তা অবশ্যই করুন, যে কথাবার্তায় উপকারও রয়েছে ক্ষতিও রয়েছে তা বলতেও সতর্কতা অবলম্বন করুন উত্তম হচ্ছে না বলা। চতুর্থ প্রকারের কথাবার্তা (অর্থাৎ না উপকার, না ক্ষতিকর) দ্বারা সময় বিনষ্ট হয়। এসব কথায় ভারসাম্য রক্ষা (উপকারী কিংবা অপকারী কথার পার্থক্য) করা কঠিন হয়ে পড়ে, চুপ থাকাটাই উত্তম। 


(মিরআতুল মানাজীহ, খন্ড-৬, পৃ-৪৬৪)



(১১) কারো সাথে কোন কথাবার্তা বলতে কোন সঠিক উদ্দেশ্য থাকা চাই, সর্বদা শ্রোতার উপযুক্ততা ও মনমানসিকতা অনুযায়ী কথাবার্তা বলা উচিত।



(১২) খারাপ আলাপ ও অশ্লীল কথাবার্তা থেকে সর্বদা দূরে থাকুন গালি গালাজ থেকে বিরত থাকুন। মনে রাখবেন, কোন মুসলমানকে শরীয়তের অনুমতি ছাড়া গালি দেওয়া অকাট্য হারাম। 


(ফাতাওয়ায়ে রযবীয়্যাহ, খন্ড-২১, পৃ-১২৭) 


এবং অশ্লীল কথাবার্তা কারীর জন্য জান্নাত হারাম। 


হুজুর তাজেদারে মাদীনা, হযরত মুহাম্মদ ﷺ ইরশাদ করেন, ঐ ব্যক্তির জন্য জান্নাত হারাম, যে ব্যক্তি অশ্লীল কথাবার্তার মাধ্যমে কাজ সম্পাদন করে। 


(কিতাবুস সামত মাআ মাওসূআতুল ইমাম ইবনে আবিদ দুনিয়া সম্বলিত, খন্ড-৭, পৃ-২০৪, হাদীস নং- ৩২৫ আল মাকতাবাতুল আসরিয়্যাহ, বৈরুত)

 
Top