পূর্বাপর সব বস্তুর জ্ঞান রাসূলে পাক  (ﷺ) -এর জ্ঞানের কিয়দাংশ মাত্رحمه الله تعالي 


আর আমরা সত্যপন্থী (আল্লাহর জন্য সকল প্রশংসা) জানি, আদিকাল থেকে যা সংঘটিত হয়েছে এবং অনন্তকাল পর্যন্ত যা সংঘটিত হবে এর বিস্তারিত বর্ণনা  


যা আমি উল্লেখ করেছি, তা আমাদের প্রিয় নবী  (ﷺ) -এর জ্ঞানের সম্মুখে নিতান্ত নগণ্যই। আল্লাহ তায়ালার এ আয়াতই এর পক্ষে দলীল। 


তিনি ইরশাদ করেন, 

 

علمك ما لكن تعلم-وكان فضل الله. 


“তিনি আপনাকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা কিছু আপনি জানতেন না, আপনার উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।” 


আমি বলবাে-এ আয়াতে কারীমার মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা স্বীয় হাবীব  (ﷺ) -এর উপর ইহসান করেছেন যে, যা কিছু তিনি জানতেন না, আল্লাহ তা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর এ ইহসান প্রদর্শনকে (১) এমন কথা দ্বারা সমাপ্তি . করেছেন যা এ মহা অনুগ্রহের মর্যাদা এবং মহান নি’মাতের মহত্বের প্রমাণ বহন করে। 


টিকাঃ (১) মুহাম্মদ  (ﷺ) -এর উপর আল্লাহর এ অনুগ্রহ, এ মহান নিমাতের মর্যাদার জন্য যথেষ্ট প্রমাণ যে, প্রকৃতপক্ষে কোন বাদশাহ স্বীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি মর্যাদাময় বস্তু দ্বারা ব্যতীত অনুগ্রহ করে না। তাহলে শাহেনশাহে কায়েনাত (রাব্বল আলামীন) কিভাবে তাঁর মহান, সম্মানিত, মর্যাদাময় ও স্বীয় প্রধান খলিফা (মুহাম্মদ  (ﷺ) )-এর প্রতি কি ধরনের অনুগ্রহ করবেন? অতঃপর তা কেমন হবে যখন স্বীয় ইহসান ও অনুগ্রহরাজি এমন ব্যক্তির দ্বারা সমাপ্ত করবেন যা তাঁর মহানত্ব প্রকাশের সুস্পষ্ট প্রমাণ হয়?  


ইরশাদ করেছেন,


وكان الله عليك عظيما. 


“তােমাদের উপর আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে”। 


জেনে রাখুন যে, (পূর্বাপর প্রত্যেক কিছুর জ্ঞান) উল্লেখিত মর্মার্থ সহকারে যার প্রতিটি একক পরিপূর্ণ ও বিস্তারিতভাবে ‘লাওহ-ই মাহফুজে বর্তমান রয়েছে। কেননা, আখিরাততাে কিয়ামতের পরেই সংঘটিত হবে। আর দুনিয়া ও আখিরাত উভয়ের বহির্ভূত হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার পবিত্র জাত ও গুণাবলীসমূহ, যা না ‘লাওহ-ই মাহফুজে রক্ষিত, না কলমে। আর আল্লাহ তায়ালা দুনিয়া সম্পর্কে ইরশাদ করেছেন, “আপনি বলুন, দুনিয়ার পুঁজি নিতান্তই নগণ্য।” 


সুতরাং যা আল্লাহ তায়ালা অতি নগণ্য বলেছেন, তা সে মহান সত্ত্বার সাথে কিভাবে সম্পর্ক রাখবে? যাকে আল্লাহ মহান বলেছেন এবং যার শান ও মাহাত্ম্য বৃদ্ধি করেছেন, সাথে সাথে তাঁর (হুজুর সৈয়দ আলম  (ﷺ) ) জ্ঞানকে অনন্তকালের পরের বস্তুসমূহ পর্যন্তও বৃদ্ধি করেছেন। যেমন-হাশর, নশর, হিসাব নিকাশ এবং তথায় যে পূণ্য ও শাস্তি রয়েছে। এর বিস্তারিত এতটুকু পর্যন্ত যে, লােকেরা জান্নাত ও জাহান্নামে নিজ নিজ ঠিকানায় পৌছা এবং এর পরের অনেক | কথা যতটুকু আল্লাহ তায়ালা বলতে ইচ্ছে (সব বিষয় সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালা হুজুর  (ﷺ) কে অবগত করেছেন) আর হুজুর সৈয়দে আলম  (ﷺ)  নিশ্চয়ই জাত ও গুণাবলী সম্পর্কে ততটুকু জেনে নিয়েছেন। যার পরিমাণ সে মহান আল্লাহই অবগত আছেন যিনি তাঁর এ পুরস্কার স্বীয় মুস্তফা  (ﷺ)  (নির্বাচিত রাসুল)কে দান করেছেন। সুতরাং প্রমাণিত হলাে যে, সকল ভবিষ্যত ও অতীতের জ্ঞান যা ‘লওহ-ই মাহফুজে লিপিবদ্ধ রয়েছে তা হুজুর  (ﷺ) -এর জ্ঞানের একটি ছােট অংশমাত্র। তাঁর জন্য তা অনেক বেশী নয় যে, তা হাসিল হওয়া অসম্ভব হবে। 


এ কারণে (১) যমানার ইমাম আল্লামা বুসীরী (رحمه الله تعالي) (আল্লাহ তায়ালা তাঁর বরকতের দ্বারা আমাদের উপকারিতা দান করুন) হুজুরে সৈয়দে আলম  (ﷺ)  এর কাছে আরজ করেছেন, “আপনার বদান্যতার সম্মুখে দুনিয়া ও এর বস্তুসমূহ। একাংশ, আপনার জ্ঞানের সম্মুখে লওহ ও কলমের জ্ঞান এক টুকরা।” 


টিকা (১) :

এবং শীর্ষ স্থানীয় আলিম, বাহরুল উলুম, আবুল আয়াশ আবদুল আলী মুহাম্মদ লকনবী (رضى الله تعالي عنه) হাশিয়া শরহে মীর জাহিদ লিরিসালাতিল কুতুবিয়াহ’ গ্রন্থের খােতবায় ‘তাসার ও তাসদীক-এর বর্ণনায় রাসুলে সৈয়দে আলম  (ﷺ) -এর প্রশংসা এভাবেই করেছেন-যার বক্তব্য-“তাঁকে কতেক এমন জ্ঞান শিক্ষা দেয়া হয়েছে যা শ্রেষ্ঠতম কলম পরিবেষ্টন করতে পারে নি। আর লওহে আওফিও তা পরিবেষ্টন করতে সক্ষম নয়, আর কাল প্রথম দিবস থেকে এমনি না সৃষ্টি করতে পেরেছে, না শেষ দিবস পর্যন্ত এমনি সৃষ্টি হবে। সুতরাং আসমান ও জমীনে এর কোন জোড়া নেই।

-------------------------------

এখানে ইমাম (رضى الله تعالي عنه) (মিন) উল্লেখ করেছেন, যদ্বারা আংশিকই বুঝায় এবং প্রত্যেক রােগা অন্তরে ক্লেশ ও ক্রোদের পাহাড় নিক্ষেপ করে। তাদের বলুন যে, তােমরা স্বীয় ক্রোধে মৃত্যু বরণ করাে! আল্লাহ্ তায়ালা হৃদয়ের কথা ভাল করেই জানেন । 


আল্লামা মােল্লা আলী ক্বারী (رحمه الله تعالي) “জুবদাহ শরহে বুরদাহ' গ্রন্থে উক্ত পংক্তির ব্যাখ্যায় বলেন, এর মর্মার্থ হলাে ‘লাওহের জ্ঞান দ্বারা উদ্দেশ্য সে পবিত্র নকশা ও অদৃশ্য আকৃতিসমূহ যা তাতে প্রমাণ করা হয়েছে। আর কলমের জ্ঞান দ্বারা উদ্দেশ্য ঐ জ্ঞান যা আল্লাহ তায়ালা যেভাবে ইচ্ছে তাতে গচ্ছিত রেখেছেন। আর এ সংযােগ নগণ্য সম্বন্ধের কারণেই। আর লওহ ও কলমের জ্ঞান হুজুরে সৈয়দে আলম  (ﷺ) -এর জ্ঞানের একাংশ হওয়ার কারণ এ যে, তার জ্ঞানের অনেক শ্রেণী বিভাগ রয়েছে। (সম্পূর্ণ-পরিপূর্ণ) (খন্ডিত) (মূলতাত্বিক) (সূক্ষ্ম ও রহস্যাবৃত) (জ্ঞান-বিজ্ঞান) যা আল্লাহ তায়ালার জাত ও সিফাতের সাথে সম্পর্কিত। লওহ ও কলমের জ্ঞান রাসুলে পাক  (ﷺ) -এর লিপিবদ্ধ জ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এক পংক্তি এবং হুজুরের জ্ঞানের সমুদ্রসমূহ থেকে একটি নহর (স্রোতধারা)। এতদসঙ্গে এর জ্ঞানতাে হুজুর  (ﷺ)  এর বরকতময় অস্তিত্বের মাধ্যমেই। 


সুতরাং এখন সত্য উদ্ভাসিত হয়েছে, আর মিথ্যা দূরিভূত হয়েছে। এখানে বাতিলেরা ক্ষতিতেই রয়েছে। (সকল প্রশংসা সমগ্র জাহানের প্রতিপালকের নিমিত্তে)। 

 
Top