সায়্যিদুনা মুয়াজ ইবনু জাবাল  (رضي الله عنه)র আক্বিদা


ঝর্র্ণার পানি বাগিচাগুলোকে সিক্ত করবেঃ-

সায়্যিদুনা মু‘আজ বিন জাবাল (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, তাবুক যুদ্ধের বছর আমরা রাসূল (ﷺ)’র সাথে গিয়েছিলাম। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করলেন, ইনশা‘আল্লাহ আগামীকাল তোমরা তাবুকের ঝর্ণার কাছে পৌঁছে যাবে। আর তোমরা দিন ছড়িয়ে পড়ার পূূর্বে পৌঁছবে না। 

তোমাদের মধ্য হতে যেই ব্যক্তি ঐ ঝর্ণার কাছে যাবে, তবে আমি পৌঁছার পূর্বে সে যেন উক্ত ঝর্ণার পানিতে হাত না দেয়। ঝর্ণার কাছে আমাদের থেকে দুজন ব্যক্তি প্রথমে পৌঁছল। ঝর্ণার মধ্যে পানি অধিক থেকে অধিক হচ্ছিল আর তা আস্তে আস্তে প্রবাহিত হচ্ছিল। রাসূল (ﷺ) এ দু’ব্যক্তি থেকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কি ঝর্ণার পানি স্পর্শ করে অঞ্জলি ভরে পানি নিয়েছো?” তারা বললেন, “হ্যাঁ”, রাসূল (ﷺ) তাদের উপর রাগান্বিত হলেন। 

উপস্থিত লোকেরা অল্প অল্প করে অঞ্জলি ভরে ঝর্ণার পানি নিয়ে একটি পাত্রে জমা করলেন। অতঃপর রাসূল (ﷺ) ওই পাত্র হাত দিলেন এবং চেহারা মুবারক ধৌত করলেন। আর অবশিষ্ট পানিগুলো ঝর্ণায় ঢেলে দিলেন। তারপর ঝর্ণার মধ্যে স্ফুটন (জোশ) চলে আসল। এমনকি উপস্থিত সকলে (নিজেদের সাথী জন্তুগুলো) পান করে নিলেন, এরপর রাসূল (ﷺ) হযরত মু’আয (رضي الله عنه) কে বললেন-


إِنْ طَالَتْ بِكَ حَيَاةٌ، أَنْ تَرٰى مَا هٰاهُنَا قَدْ مُلِئَ جِنَانًا


যদি তুমি দীর্ঘ হায়াত পাও তবে দেখতে পাবে এখানকার আশপাশ বাগ-বাগিচায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।’’  ২২৬

{২২৬. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৭৬৪ পৃ., হা/৭০৬, রাসূূল (দ.) মু’জেযা অধ্যায়।}


আক্বিদা

রাসূল (ﷺ)’র তাবাররুকের মাধ্যমে বারকত মন্ডিত হয়েছে। প্রিয় নাবী (ﷺ) অদৃশ্যের সংবাদ দানকারী। এজন্যই হযরত মু‘আয (رضي الله عنه) কে বলেছেন, ঝর্ণার পানি এতো বেশি হবে যে, তা বাগ-বাগিচাকে প্রবাহিত করে দেবে।






মুজতাহিদদের ইজতিহাদ মান্য করাঃ-


❏ইমাম আহমদ ও আবু দাউদ (رحمة الله) সংকলন করেন- 


عَنْ مُعَاذٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حِينَ بَعَثَهُ إِلَى الْيَمَنِ، فَقَالَ: كَيْفَ تَصْنَعُ إِنْ عَرَضَ لَكَ قَضَاءٌ؟ قَالَ: أَقْضِي بِمَا فِي كِتَابِ اللَّهِ. قَالَ: فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِي كِتَابِ اللَّهِ؟ قَالَ: فَبِسُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ. قَالَ: فَإِنْ لَمْ يَكُنْ فِي سُنَّةِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ؟ قَالَ: أَجْتَهِدُ رَأْيِي، لَا آلُو. قَالَ: فَضَرَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ صَدْرِي، ثُمَّ قَالَ: الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي وَفَّقَ رَسُولَ رَسُولِ اللَّهِ لِمَا يُرْضِي رَسُولَ اللَّهِ


-‘‘হযরত মু‘আয বিন জাবাল (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) যখন মু‘আয ইবনে জাবাল (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘যখন তোমার কাছে বিচারের ভার ন্যস্ত করা হবে তখন তুমি কিভাবে ফয়সালা করবে’? অতঃপর তিনি বললেন, ‘আমি ফয়সালা করবো কিতাবুল্লাহর দ্বারা। রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘যদি কিতাবুল্লাহ এ না পাও’? তিনি বলেন, ‘তাহলে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাহ দ্বারা ফয়সালা করবো।’ রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘যদি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর সুন্নাহে না পাও’? তখন তিনি বললেন, ‘ইজতিহাদ তথা উদ্ভাবণ করার চেষ্টা করবো।’ তারপর রাসূল (ﷺ) বললেন, ‘যাবতীয় প্রশংসা সেই আল্লাহর যিনি তাঁর প্রতিনিধিকে এমন পন্থা অবলম্বনের তাওফিক দান করেছেন যে ব্যাপারে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) সন্তুষ্ট আছেন।’’ ২২৭

{২২৭. আহমদ ইবনে হাম্বল: আল-মুসনাদ : মুআসসিসাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন: ৩৬/৩৩৩পৃ. হাদিস: ২২০০৭, ইমাম আদ-দারিমী: আস-সুনান: ১/২৬৭পৃ. হাদিস: ১৭০, দারুল মুগনী, রিয়াদ, সুউদি আরব, ইমাম আবু-দাউদ : আস-সুনান :৩/৩০৩পৃ., হাদিস : ৩৫৯২, আল-মাকতাবাতুল আসরিয়া, বয়রুত, লেবানন, আত তিরমিযী : আল জামিউল কবির : ৩/৬০৮পৃ., হাদিস: ১৩২৭, মুস্তফা আল-বাবী অ্যান্ড সন্স পাবলিশিং অ্যান্ড প্রিন্টিং গ্রæপ হলব, মিসর, খতিব তিবরিযী : মেশকাত : কিতাবুল ইমারত : ৩য় খনড, ইমাম বগভী : শরহে সুন্নাহ : ৫/৩৫২পৃ. , ইমাম আবু হুমায়দী : আল-মুসনাদ : ১/৭২ পৃ. হাদীস : ১২৪ , ইমাম তাহাভী : আল-মুসনাদ : ৭/২৭৮পৃ. হাদীস: ৬৭৬০, ইমাম যাহাবী : সিয়ারু-আলামিন আন-নুবালা : ১/৪৪৮পৃ. }


আক্বিদা

এই হাদিসে লক্ষ করুন! রাসূল (ﷺ)-এর জাহেরী হায়াতে হযরত মু’আয (رضي الله عنه) বলেছেন যে, আমি কুরআন-সুন্নাহ এ না পেলে নিজ থেকে ইজতিহাদ করবো, আল্লাহর নবী (ﷺ) এর জন্য ‘আল-হামদুলিল্লাহ তথা শোকরিয়া আদায় এবং আল্লাহর রাসূল (ﷺ) তাঁর প্রতি সন্তুষ্ট বলে ঘোষণা দিয়েছেন। একবারও আহলে হাদিসদের ন্যায় বলেননি কোরআন সুন্নাহের বাহিরে মু‘আয ইজতিহাদ করবে কেন? রাসূল (رضي الله عنه) এর ওফাতের পর সাহাবাদের যুগে যে সকল মুজতাহিদ ফকীহ সাহাবী ছিলেন তাদের মাযহাব আম (যাদের ইজতিহাদ করার যোগ্যতা ছিল না) সাহাবীদের অনুসরণীয় ছিল। এর মধ্যে অন্যতম একজন হলেন হযরত মু‘আয বিন জাবাল (رضي الله عنه)। ২২৮

{২২৮. ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীতে লিখেন- وكان من نجباء الصحابة وفقائهم -‘‘তিনি একজন উঁচু মানের সাহাবী এবং (মুজতাহিদ তবকার) ফকিহ্ ছিলেন।’’ (ইমাম যাহাবী, তাযকিরাতুল হুফ্ফায, ১/১৯ পৃ. ক্রমিক.৮) }


❏ইমাম ইস্পাহানী (رحمة الله) উক্ত সাহাবীর জীবনীতে উল্লেখ করেন, হযরত উমর (رضي الله عنه) একদা খুতবা দেওয়া অবস্থায় মানুষদেরকে বলছিলেন-


وَمَنْ أَرَادَ أَنْ يَسْأَلَ عَنِ الْفِقْهِ، فَلْيَأْتِ مُعَاذَ بْنَ جَبَلٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ.


-‘‘কেউ যদি ফিকহ সম্পর্কে কোন প্রশ্ন থাকে যে যেন হযরত মু‘আয (رضي الله عنه)-এর নিকটে যায়।’’ 

(ইমাম ইস্পাহানী, সিরু সালফে ছালেহীন, ১/৬৪৭ পৃ.) 


তিনি আরও উল্লেখ করেন-


وَعَنْ أَنَسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَعْلَمُهُمْ بِالْحَلَالِ وَالْحَرَامِ مُعَاذُ بْنُ جَبَلٍ


-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, কেউ যদি হালাল-হারাম সম্পর্কে জানতে চায় সে যেন মু‘আয ইবনে জাবালের কাছে যায়।’’

(ইমাম ইস্পাহানী, সিরু সালফে ছালেহীন, ১/৬৪৭ পৃ.)


এ হাদিস থেকে বুঝা গেল তখন ইয়ামেনের লোকদের উপর হযরত মু‘আযের মত তথা মাযহাব অনুসরণ যে আবশ্যক এটাও কিন্তু হাদিস দ্বারা স্পষ্ট। ২২৯

{২২৯. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}

 
Top