24 - بَابُ مَا جَاءَ فِي وَعِيْدِ تَفْوِيْتِ صَلَاةِ الْعَصْرِ

87 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ شَيْبَانَ، عَنْ يَحْيَىٰ، عَنْ بُرَيْدَةَ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «بَكِّرُوْا بِصَلَاةِ الْعَصْرِ». وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ بُرَيْدَةَ الْأَسْلَمِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «بَكِّرُوْا بِصَلَاةِ الْعَصْرِ». وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنْ بُرَيْدَةَ الْأَسْلَمِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «بَكِّرُوْا بِصَلَاةِ الْعَصْرِ فِيْ يَوْمِ غَيْمٍ، فَإِنَّ مَنْ فَاتَتْهُ صَلَاةُ الْعَصْرِ حَتَّىٰ تَغْرُبَ الشَّمْسُ، فَقَدْ حَبِطَ عَمَلُهُ».


বাব নং ৩৯.২৪. আসর নামায কাযা হওয়া সম্পর্কে কঠোর হুঁশিয়ারী


৮৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা শায়বান থেকে, তিনি ইয়াহিয়া থেকে, তিনি ইবনে বুরায়দা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, আসর নামায তাড়াতাড়ি আদায় কর।

অন্য এক রেওয়ায়েতে হযরত বুরায়দা আসলামী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ)  বলেছেন- আসর নামায সময় মতে শীঘ্র আদায় কর।

অপর এক রেওয়ায়েতে হযরত বুরায়দা আসলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ)  বলেছেন- মেঘলা দিনে আসর নামায তাড়াতাড়ি আদায় কর। কারণ যার আসর নামায বাদ পড়ে যায় (অনাদায় অবস্থায়) আর সূর্য অস্ত যায় তবে এরূপ ব্যক্তির আমল নষ্ট হয়ে যায়। (ইবনে হিব্বান, ৪/৩৩২/১৪৭০)

ব্যাখ্যা: ইমাম আহমদ, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম মালিক (رحمة الله)’র মতে আসর নামায প্রথম ওয়াক্তে পড়া উত্তম। পক্ষান্তরে ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) বিলম্ব করার পক্ষে মত দিয়েছেন। উভয় মতামতের পক্ষে মওকূফ ও মরফু হাদিস বর্ণিত আছে।

ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) উভয় মতামতের হাদিস একত্র করে জলদি সম্পর্কিত হাদিস মেঘলা দিনের সাথে এবং বিলম্বের হাদিস মেঘবিহীন পরিস্কার দিনের সাথে সংযুক্ত করেছেন। تعجيل তথা জলদি সম্পর্কে হযরত বুরায়দা আসলামী (رحمة الله)’র হাদিস দলীল হিসেবে পেশ করে তিনি এভাবে যুক্তি দিয়েছেন যে, মেঘলা দিনে মেঘের কারণে নামায কাযা হওয়ার আশংকা থাকে। তাই কাযা থেকে বাঁচার জন্য জলদি নামায আদায় করা উত্তম। বিলম্বে নামায আদায়ের ব্যাপারে আবু দাউদ শরীফে হযরত আলী ইবনে শায়বান বর্ণিত হাদিসে বর্ণিত আছে যে,

 قد منا على رسول الله صلى الله عليه وسلم المدينة فكان يؤخر الصلوة ما دامت الشمش بيضاء تقيّة 

“আমরা যখন মদীনায় রাসূল (ﷺ) ’র খেদমতে আগমণ করি, তখন আসর নামায বিলম্ব করে আদায় করা হতো। তখন সূর্যের আলো উজ্জ্বল ও পরিস্কার থাকত। আসর নামায বিলম্বে পড়ার হেকমত হল- এতে আসরের পূর্বে অনেক নফল নামায পড়তে পারে কিন্তু জলদি পড়লে নফল নামায পড়ার আর সুযোগ থাকেনা। কেননা আসর নামাযের পর কোন নফল নামায জায়েয নেই।

মোটকথা হল, আহনাফের মতে সূর্যের রং হলুদ আকার ধারণ করার পূর্বে পর্যন্ত আসর নামায বিলম্ব করে পড়া উত্তম আকাশ পরিস্কার থাকা অবস্থায়, অন্যথায় জলদি পড়া উত্তম।


88 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ شَيْبَانَ، عَنْ يَحْيَىٰ، عَنِ ابْنِ بُرَيْدَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «مَنْ فَاتَتْهُ صَلَاةُ الْعَصْرِ فَكَأَنَّمَا وُتِرَ أَهْلَهُ».


৮৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা শায়বান থেকে, তিনি ইয়াহিয়া থেকে, তিনি ইবনে বুরায়দা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)   এরশাদ করেন, যার আসর নামায কাযা হয়ে গেল, যেন তার সন্তান-সন্তুতি ও ধনসম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল। (শুয়াবুল ঈমান, ৩/৫৩/২৮৪৬)

ব্যাখ্যা: আসর নামাযের ব্যাপারে এ কঠোর হুঁশিয়ারী ও শাস্তির কথা বলার কারণ হল আসর নামাযের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। অধিকাংশ হাদিসে এ আসর নামাযকে মধ্যবর্তী নামায তথা  صلوة الوسطى বলা হয়েছে।

আর সন্তান-সন্তুতি ধ্বংস হয়ে যাওয়ার অর্থ হল এদের উপর থেকে রহমত ও বরকত ছিনিয়ে নেওয়া হয় এবং এদের প্রতিপালন ও বৃদ্ধিপ্রাপ্তি থামিয়ে দেওয়া হয়। কারণ মানুষ যখন আল্লাহর গুরুত্বপূর্ণ হক আদায়ের ব্যাপারে গাফিল হয়ে যায় এবং অলসতা প্রদর্শন করে, তখন এ কারণে আল্লাহ বান্দার প্রিয় বস্তুসমূহ থেকে বরকত ও রহমত তুলে নেন।


89 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عنْ عَبْدِ الْـمَلِكِ، عَنْ قَزْعَةَ، عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ ، قَالَ: قَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «لَا صَلَاةَ بَعْدَ الْغَدَاةِ حَتَّىٰ تَطْلُعَ الشَّمْسُ، وَلَا صَلَاةَ بَعْدَ الْعَصْرِ حَتَّىٰ تَغِيْبَ، وَلَا يُصَامُ هَذَانِ الْيَوْمَانِ: الْأَضْحَىٰ وَالْفِطْرُ، وَلَا تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلَّا إِلَىٰ ثَلَاثَةِ مَسَاجِدَ: إِلَى الْـمَسْجِدِ الْـحَرَامِ، وَالْـمَسْجِدِ الْأَقْصَىٰ، وَإِلَىٰ مَسْجِدِيْ هَذَا، وَلَا تُسَافِرُ الْـمَرْأَةُ يَوْمَيْنِ إِلَّا مَعَ ذِيْ مَحْرَمٍ».


৮৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আব্দুল মালিক থেকে, তিনি কাযআ থেকে, তিনি আবু সাঈদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, ফজরের নামাযের পর সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত কোন নামায নেই এবং আসর নামাযের পর সূর্য অস্ত যাওয়ার পূর্বে কোন নামায নেই। ঈদুুল আযহা এবং ঈদুল ফিতরের দিন কোন রোযা রাখা যাবেনা। তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদে (বেশী সওয়াবের উদ্দেশ্যে) সফর করা যাবে না। (এই মসজিদ তিনটি হল) মসজিদে হারাম, মসজিদে আক্সা ও আমার এ মসজিদ (মসজিদে নববী)। আর মহিলাগণ মুহরিম ব্যতীত দু’দিনও সফর করবে না।

ব্যাখ্যা: সিহাহ্ সিত্তাহ্ গ্রন্থসমূহে প্রায় একই বাক্য দ্বারা এ হাদিসটি বর্ণিত হয়েছে, বরং এত অধিক সংখ্যক সাহাবা থেকে এ হাদীস বর্ণিত হয়েছে যে, হানাফী ফকীহগণ এটিকে মুতাওয়াতির পর্যায়ে গণ্য করেছেন।

উক্ত হাদিসে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা বর্ণিত হয়েছে। প্রথম মাসয়ালা হল: ফজরের নামাযের পর সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত এবং আসর নামাযের পর সূর্যাস্তের পূর্বে কোন নামায পড়া মাকরূহ। এ হাদিস ঐসব লোকদের মতামতকে খণ্ডন করেছে, যারা আসর নামাযের পর দু’রাকাত নামায জায়েয বলে মনে করে। অথবা সূর্যোদয়ের সময় ফজরের নামায বৈধ মনে করে। অথবা যারা ফজর নামাযের পর সুন্নতের কাযা জায়েয মনে করে। উক্ত চারটি মতামতকে হাদিসের প্রথমাংশ দ্বারা খণ্ডন করা হয়েছে। তবে আসরের পর দু’রাকাত নামায কোন কোন সহীহ রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে। এমনকি বুখারী ও মুসলিম শরীফেও এ হাদিস বর্ণিত আছে। এবং এর উপর রাসূল (ﷺ)  ’র অনবরত আমলেরও প্রমাণ আছে। তবে এ হাদিসের আলোকে বলা হবে যে, এ আমল রাসূল (ﷺ) ’র সাথে নির্ধারিত ছিল। উম্মতের জন্য এ বিধান নিষিদ্ধ। যেমন রাসূল (ﷺ)  صوم وصال রাখতেন কিন্তু তা উম্মতের জন্য নিষেধ করেছেন। এটা রাসূল (ﷺ) ’র বিশেষ আমল।

দ্বিতীয় মাসয়ালা হলো- দু’ঈদের দিন রোযা রাখা নিষেধ। বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আবু সাঈদ খুদুরী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে যে, نهى صوم الفطر والنحر “রাসূল (ﷺ)  ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন।” তবে ঈদুল আযহার সাথে ১১, ১২, ১৩ যিলহজ্জও এ বিধানের অন্তর্ভুক্ত। কেননা মুসলিম শরীফে নাবীশা থেকে মারফু রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, ايام التشريق ايام اكل وشرب وذكر الله “ আইয়্যামে তাশরীক তথা ১১, ১২ ও ১৩ যিলহজ্জ হল পানাহার ও আল্লাহর যিকরের দিন।”  

➥ ইমাম মুসলিম (رحمة الله), (২৬১ হিঃ), মুসলিম, খন্ড ৩, পৃষ্ঠাঃ  ১৫৩, হাদীস নং ২৭৩৩, বৈরুত

 

সুতরাং রোযা রেখে নিজের উপর পানাহার হারাম করে নেওয়া কিভাবে বৈধ হবে? মোটকথা, এ দিন সমূহে রোযা হারাম হওয়ার ব্যাপারে ইমামগণ একমত।

তৃতীয় মাসয়ালা হলো- অধিক সওয়াবের উদ্দেশ্যে বর্ণিত তিনটি মসজিদ ব্যতীত অন্য কোন মসজিদের দিকে সফর করা নিষেধ। কারণ এই তিনটি মসজিদের জন্য সওয়াব নির্ধারিত রয়েছে। বাকী সব মসজিদের সওয়াব সমান। তবে কেউ যদি জ্ঞানার্জন, ব্যবসা কিংবা হক আদায়ের উদ্দেশ্যে সফর করে, তাহলে অন্যান্য মসজিদের দিকে সফর করা জায়েয হবে। কেননা এ হাদিস দ্বারা কোন বৈধ কাজের সফর নিষিদ্ধ নয়। যদিও কেউ কেউ এ হাদিস দ্বারা কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু মুহাদ্দিসীনে কিরাম এই মতকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ কবর যিয়ারত الافزورها হাদিসাংশ দ্বারা সাব্যস্ত। সুতরাং এর জন্য সফর করাও বৈধ। মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) মিরকাত গ্রন্থে, ইমাম নববী (رحمة الله) শরহে মুসলিম গ্রন্থে ও ইমাম গাযযালী (رحمة الله) ইয়াহিয়াউল উলুমুদ্দীন গ্রন্থে এ ব্যাপারে বিস্তারিত লিখেছেন। 

চতুর্থ মাসয়ালা, দু’টি অবস্থার উপর বিদ্যমান। প্রথমত: মহিলাগণ স্বামী কিংবা অন্যান্য মুহরিম তথা পুত্র, ভাই, মামা, চাচ ছাড়া সফর করতে পারবে কিনা? দ্বিতীয়ত: তাদের সফরের সময়সীমা কোথাও কোথাও একদিন একরাত বর্ণিত আছে। যদি সফরের আভিধানিক অর্থ গ্রহণ করা হয়, তাহলে একদিন একরাতের কম সময়ের সফরও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মুসলিম শরীফের রেওয়ায়েতে একরাত, আবার অন্যান্য গ্রন্থে একদিন। 

ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) এবং ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله) থেকে এরূপ একটি রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে যে, মহিলাদের একদিনের জন্যও মুহরিম ব্যতীত সফর করা নিষেধ। কিন্তু গ্রহণযোগ্য মত হলো- সবচেয়ে কম সময়ের সফরে মহিলাগণ স্বামী ও মুহরিম ব্যতীত সফর করতে পারবে।

 
Top