ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র জীবনী


নাম ও জন্ম: 


নাম: নো‘মান, উপনাম আবু হানিফা, পিতার নাম- সাবিত, উপাধি: ইমাম আ‘যম, ইমামুল আইম্মাহ, সিরাজুল উম্মাহ, রঈসুল ফুকাহা, ওয়াল মুজতাহিদীন, সায়্যেদুল আউলিয়া ওয়াল মুহাদ্দিসীন, হাফেযুল হাদীস। পূর্ণ নাম- নো‘মান ইবনে সাবিত ইবনে নো‘মান ইবনে মারযুবান। তারীখে বাগদাদ গ্রন্থে খতীব বাগদাদী (رحمة الله) ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র পৌত্র ইসমাঈল থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন- “আমি ইসমাঈল ইবনে হাম্মাদ ইবনে সাবিত ইবনে নো‘মান ইবনে মারযুবান। আমরা পারস্য বংশোদ্ভুত এবং কখনো কারো দাসে পরিগণিত হইনি। আমার দাদা ৮০ হিজরীতে জন্ম গ্রহণ করেন। সাবিত শৈশবকালে হযরত আলী (رضي الله عنه)’র খেদমতে হাযির হয়েছিলেন। তিনি তাদের বংশের কল্যাণ ও মঙ্গলের জন্য দোয়া করেছিলেন। আমরা আশা করি তাঁর ঐ দোয়া কবুল হয়েছে।” 

    হাফিয আবু বকর আহমদ ইবনে আলী খতীব বাগদাদী (رحمة الله) (৪৬৩), তারীখে বাগদাদ, খণ্ড-১২, পৃ ৩২৬

 

ইমাম আ‘যম (رحمة الله)’র পূর্বপুরুষের মধ্যে কেউ কখনো কারো গোলাম ছিলেন না। তবে আরবে একটা নিয়ম ছিল যে, যখন কোন দুর্বল ব্যক্তি বা ভিন দেশীকে কোন গোত্র আশ্রয় কিংবা সহযোগিতা বা নিরাপত্তা দান করে তখন তাকে مولي (মাওলা) হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে থাকে এবং তার ব্যাপারে هذا مولائى বাক্য ব্যবহার করে থাকে। ইমাম আ‘যম (رحمة الله)’র দাদা আরবের কোন গোত্রের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুলেন এবং এই সম্পর্কের কারণে তিনি মাওলা (যা গোলাম অর্থেও ব্যবহার হয়) হিসেবে প্রসিদ্ধ লাভ করেন। ইমাম তাহাভী (رحمة الله) ‘শরহে মশকিলুল আসার’ গ্রন্থে বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াযিদ বলেন, আমি ইমাম আ‘যমের খেদমতে উপস্থিত হলে তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন-তুমি কে? আমি বললাম-আমি এমন ব্যক্তি যার উপর আল্লাহ তায়ালা ইসলামের দ্বারা ইহসান করেছেন। অর্থাৎ আমি নও মুসলিম। ইমাম আ‘যম বললেন, এরূপ বলোনা, বরং ঐ সব গোত্র থেকে কোন একটির সাথে সম্পর্ক গড়ে তোল, তারপর তোমার সম্পর্কও তাদের দিকে হবে। আমি নিজেও এরূপ ছিলাম।  

    ইমাম তাহাভী (رحمة الله) (৩৬১হি) মশকিলুল আসার, খণ্ড- ৪, পৃষ্ঠাঃ  ৫৪

 

ইসমাঈল ইবনে হাম্মাদের বর্ণনানুযায়ী অধিকাংশ ওলামায়ে কিরামের মতে তিনি ৮৪ হিজরী সনে জন্ম লাভ করেন এবং ১৫০ হিজরী সনে ইন্তেকাল করেন। ইমাম আবু ইউসুফ (رحمة الله)’র মতে তিনি ৭৭ হিজরীতে জন্ম লাভ করেন।

আল্লামা কাওসারী দলীল প্রমাণ দিয়ে ৭০ হিজরী বলেছেন এবং এ মতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, ইমাম আ‘যম (رحمة الله) ৮৭ হিজরী সনে স্বীয় পিতার সাথে হজ্জে গিয়েছিলেন এবং সেখানে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হারিস (رضي الله عنه)’র সাথে সাক্ষাত করেন এবং তাঁর থেকে হাদিসও শ্রবণ করেন। ইবনে হিব্বানও ৭০ হিজরীকে বিশুদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন। এ হিসাবে প্রথম মতানুযায়ী তাঁর বয়স ৭০ বছর, দ্বিতীয় মতানুযায়ী হয় ৭৩ বছর আর তৃতীয় মতানুযায়ী হয় ৮০ বছর।  

➥      মাওলানা হানিফ খান রেজভী, মুকাদ্দামা জামেউল আহাদীস, পৃষ্ঠাঃ  ২২৯

 

ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) তাঁর নামের ব্যাখ্যা ও রহস্য সম্পর্কে বলেন, সকলেরই ঐকমত্য যে, তাঁর নাম নো‘মান এবং এতে এক গুঢ় রহস্য রয়েছে। কেননা নো‘মান মূলতঃ ঐ রক্তকে বলে যার মাধ্যমে শরীরের কাঠামো ঠিক থাকে। এ কারণে কেউ কেউ বলেন এটি শরীরের রূহ। ইমাম আ‘যম আবু হানিফার কারণে ফিকহ প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে এবং তাঁর দ্বারাই ফিকহের দলীলাদি ও দূরহ মাসয়ালা সমাধান হয়েছে। অথবা নো‘মান এক প্রকারের লাল বর্ণের সুগন্ধি ঘাস বা এক প্রকার সুগন্ধিযুক্ত রক্তকে নো‘মান বলা হয়। এর দ্বারা তাঁর উত্তম চরিত্র ও পূর্ণতা লাভের দিকে ইঙ্গিত বহণ করে। অথবা নো‘মান فعلان এর ওযনে নিয়ামত অর্থ থেকে নির্গত। এ অর্থে তিনি সমগ্র সৃষ্টির জন্য আল্লাহর নিয়ামত স্বরূপ।  

    ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩ হিঃ) আল খায়রাতুল হিসান আরবী, পৃষ্ঠাঃ   ৪৪, পাকিস্তান

 

ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র উপনাম আবু হানিফা হওয়ার কারণ বর্ণনায় বলেন, তাঁর উপনাম আবু হানিফা এ ব্যাপারেও সবাই একমত। হানিফা শব্দটি ‘হানিফুন’ এর স্ত্রীলিঙ্গ। যার অর্থ হলো নাসেক, আবেদ ও মুসলিম। কেননা হানিফ শব্দের অর্থ হলো ধাবিত হওয়া। মুসলিমরা দ্বীনে হকের দিকে ধাবিত হয়। তাই তার উপনাম আবু হানিফা। কেউ কেউ বলেছেন তাঁর উপনাম আবু হানিফা হওয়ার কারণ হলো-তাঁর নিকট সর্বদা (লিখার জন্য) দোয়াত থাকত। ইরাকী ভাষায় এটাকে হানিফা বলা হয়।  

    ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩ হিঃ) আল খায়রাতুল হিসান আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ৪৫

 
Top