• হযরত উসমান (رضي الله عنه)


❏ হাদিস ৩৬:


আত্ তাবারানী হযরত যায়দ ইবনে সাবেত (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন যে মহানবী (ﷺ)-কে তিনি বলতে শুনেছেন:

مَرَّ بِي عُثْمَانُ وعِنْدِي مَلَكٌ مِنَ الْمَلاَئِكَةِ ، فَقَالَ : شَهِيدٌ يَقْتُلُهُ قَوْمُهُ ، إِنَّا لَنَسْتَحْيِي مِنْهُ.

উসমান আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিল যখন একজন ফেরেশতা আমার সাথে ছিল। ওই ফেরেশতা বললেন, ‘ইনি একজন শহীদ; তাঁর লোকেরা তাঁকে হত্যা করবে। সত্যি, তিনি (মহত্ত্বে) আমাদেরকে (অর্থাৎ, ফেরেশতাকুলকে) লজ্জায় ফেলে দিয়েছেন’।”[৪৩]

🔺৪৩. [নোট-৬: হযরত যায়দ (رضي الله عنه) থেকে আত্ তাবারানী তাঁর ‘আল-কবীর’ পুস্তকে (৫:১৫৯) বর্ণনা করেছেন; তবে যে সনদ তিনি পেশ করেছেন, আল-হায়তামী (৯:৮২) এর ভাষ্যানুযায়ী তাতে রাবী (বর্ণনাকারী) মোহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল আল-ওয়াসাউইসী একজন জাল হাদীস পরিবেশক।]


❏ হাদিস ৩৭:


আল-বায়হাকী হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে একটি বর্ণনা, যেটিকে আল-হাকিম বিশুদ্ধ বলেছেন, তা রওয়ায়াত করেন, যা’তে হযরত উসমান (رضي الله عنه) যখন তাঁর ঘরে অবরুদ্ধ ছিলেন তখন হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন:

إِنَّهَا سَتَكُونُ فِتْنَةٌ، وَاخْتِلَافٌ – أَوِ اخْتِلَافٌ – وَفِتْنَةٌ» ، قَالَ: قُلْنَا: يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَمَا تَأْمُرُنَا؟ قَالَ: «عَلَيْكُمْ بِالْأَمِيرِ وَأَصْحَابِهِ» وَأَشَارَ إِلَى عُثْمَانَ.

আমি মহানবী (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি: ‘একটি ফিতনা-ফাসাদ (ভবিষ্যতে) হবে।’ আমরা বললাম, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমরা তখন কী করবো বলে আপনি হুকুম দেন?’ তিনি হযরত উসমান (رضي الله عنه)-এর দিকে ইঙ্গিত করে উত্তর দিলেন, ‘(তোমাদের) খলীফা ও তার বন্ধুদের সাথে থাকবে’।”[৪৪]

🔺৪৪. [নোট-৭: হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে এটি বর্ণনা করেছেন আল-হাকিম (৩:৯৯=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১০৫; ৪:৪৩৪=৪:৪৮০) এবং আয্ যাহাবী একে বিশুদ্ধ বলেছেন; এটি আরও বর্ণনা করেন ইবনে আবি শায়বা (১০:৩৬৩ #৩২০৪৯), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আওসাত’গ্রন্থে’ (৯:১৭৫ #৯৪৫৭), ইবনে আবি আসিম তাঁর ‘আস্ সুন্নাহ’ বইয়ে (২:৫৮৭ #১২৭৮) এবং বায়হাকী স্বরচিত ‘আল-এ’তেকাদ’ কিতাবে (পৃষ্ঠা ৩৬৮)।]


❏ হাদিস ৩৮:


ইবনে মাজাহ, আল-হাকিম বিশুদ্ধ হিসেবে, আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,

قَالَ: فَجَعَلَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُسِرُّ إِلَى عُثْمَانَ، وَلَوْنُ عُثْمَانَ يَتَغَيَّرُ، قَالَ: فَلَمَّا كَانَ يَوْمُ الدَّارِ قُلْنَا: أَلَا تُقَاتِلُ؟ قَالَ: لَا، إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَهِدَ إِلَيَّ أَمْرًا، فَأَنَا صَابِرٌ نَفْسِي عَلَيْهِ.

তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত উসমান (رضي الله عنه)-কে ডেকে একান্তে আলাপ করেন, যার দরুণ তাঁর চেহারায় পরিবর্তন আসে। (পরবর্তীকালে) ঘরে অবরুদ্ধ হবার দিন আমরা তাঁকে জিজ্ঞেস করি, ‘আপনি কি এর বিরুদ্ধে লড়বেন না?’ খলীফা বললেন, ‘না! রাসূলে পাক (ﷺ) আমার কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছেন (যেন আমার শাহাদাতের সময় আমি না লড়ি); আমি ওয়াদা প্রতিশ্রুতি) ওয়াফা (পূরণ) করবো’।”[৪৫]

🔺৪৫. [নোট-৮: হযরত উসমান (رضي الله عنه)র মুক্ত করে দেয়া গোলাম হযরত আবু সাহলা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন আত্ তিরমিযী (হাসান সহীহ গরিব), ইমাম আহমদ তাঁর ‘মুসনাদ’ ও ‘ফযাইলে সাহাবা’ পুস্তকে (১:৪৯৪), ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৩:১০৬), ইবনে সা’আদ (৩:৬৬), আবু এয়ালা নিজ ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (৮:২৩৪), এবং সহীহ সনদে আল-বাযযার (২:৬০)।]


❏ হাদিস ৩৯:


ইবনে আদি ও ইবনে আসাকির হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন:

يا عثمان ! إنك ستؤتى الخلافة من بعدي وسيريدك المنافقون على خلعها فلا تخلعها وصم في ذلك اليوم تفطر عندي…

মহানবী (ﷺ) বলেন, ‘ওহে উসমান! আমার (বেসালের) পরে তোমার কাছে খেলাফতের ভার ন্যস্ত করা হবে, কিন্তু মোনাফেকরা চাইবে যেন তুমি তা ত্যাগ করো। তুমি ত্যাগ করো না, বরং রোযা রেখো যাতে তুমি আমার সাথে (ওই রোযা) ভাঙ্গতে পারো’।”[৪৬]

🔺৪৬. [নোট-৯: হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে ইবনে আসাকির নিজ ‘তারিখে দামেশক’ (৩৯:২৯০), ইবনে আদি তাঁর ‘আল-কামিল’ (৩:২৭); এবং আয্ যাহাবী স্বরচিত ’মিযান’ গ্রন্থে’ (২:৪২৪) যা’তে দুর্বল সনদ আবু আল-রাহহাল খালেদ ইবনে মোহাম্মদ আল-আনসারী, যিনি এর একমাত্র বর্ণনাকারীও।]


❏ হাদিস ৪০:


আল-হাকিম বিশুদ্ধ হিসেবে ঘোষণা করে হযরত মুররাহ ইবনে কাআব (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন এবং ইবনে মাজাহ-ও তাঁর থেকে রওয়ায়াত করেন, তিনি বলেন:

سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَذْكُرُ فِتْنَةً فَقَرَّ بِهَا، فَمَرَّ بِهِ رَجُلٌ مُقَنَّعٌ فِي ثَوْبٍ، فَقَالَ: «هَذَا يَوْمَئِذٍ عَلَى الْهُدَى» فَقُمْتُ إِلَيْهِ، فَإِذَا هُوَ عُثْمَانُ بْنُ عَفَّانَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ.

আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-কে একটি পরীক্ষার কথা বলতে শুনেছি যখন এক ব্যক্তি তাঁর জুব্বা পরে পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি এরশাদ করেন, ‘এই ব্যক্তি ওই সময় সঠিক পথ অনুসরণ করবে।’ আমি ওই ব্যক্তিকে দেখতে গেলাম এবং দেখলাম তিনি হযরত উসমান (رضي الله عنه)।” [৪৭]

🔺৪৭. [নোট-১০: হযরত কা‘আব ইবনে মুররা আল-বাহযী (رضي الله عنه) থেকে আত্ তাবারানী (হাসান সহীহ), দুর্বল সনদে ইবনে মাজাহ, বেশ কিছু বিশুদ্ধ সনদে ইমাম আহমদ তাঁর ‘মুসনাদ’ ও ‘ফযায়েলে সাহাবা’ কিতাবে (১:৪৫০), আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৩:১০৯, ৪:৪৭৯ সহীহ), তিনটি সনদে ইবনে আবি শায়বা (৬:৩৬০ #৩২০২৫-৩২০২৬, ৭:৪৪২ #৩৭০৯০), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে’ (১৯:১৬১-১৬২ #৩৫৯, #৩৬২, ২০:৩১৫ #৭৫০), এবং নুয়াইম ইবনে হাম্মাদ স্বরচিত ‘আল-ফিতান’ পুস্তকে (১:১৭৪ #৪৬১)।]


❏ হাদিস ৪১:


আল-হাকিম হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন যে মহানবী (ﷺ) তাঁদেরকে বলেছিলেন হযরত উসমান (رضي الله عنه)র রক্তের ফোঁটা কুরআন মজীদের

فَسَيَكْفِيكَهُمُ اللَّهُ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ..

হে মাহবুব! অদূর ভবিষ্যতে আল্লাহই তাদের দিক থেকে আপনার জন্যে যথেষ্ট হবেন”[৪৮] 

আয়াতটির ওপর পড়বে; আর তাই ঘটেছিল।[৪৯]

 

🔺৪৮. আল কুর‘আন : আল বাকারা, ২/৩৭।

🔺৪৯. [নোট-১১: হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে আল-হাকিম বর্ণিত (৩:১০৩=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১১০), আল-যুবায়র ইবনে আবদিল্লাহর দাদী হতে আত্ তাবারী নিজ ‘তারিখ’ কিতাবে (২:৬৭১), ‘উমরা বিনতে আবদ্ আল-রহমান হতে ইবনে আবি হাতিম তাঁর ‘আল-জারহ ওয়াল তা’দিল’ পুস্তকে (৪:১৭৯ #৭৮০), এবং ওয়াসসাব হতে ইবনে সাআদ (৩:৭২)।]


❏ হাদিস ৪২:


মুহাদ্দীস আল-সিলাফী হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “ফিতনার আরম্ভ হযরত উসমান (رضي الله عنه)-কে শহীদ করার মাধ্যমে এবং শেষ হবে মসীহ-বিরোধী (অর্থাৎ, দাজ্জাল)-এর আবির্ভাব দ্বারা।[৫০]  

🔺৫০. [নোট-১২: হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) থেকে দু’টি বর্ণনানুক্রমে ইবনে আবি শায়বা (৭:২৬৪ #৩৫৯১৯-৩৫৯২০)।]


সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! হযরত উসমান (رضي الله عنه)-এর হত্যাকারীদের প্রতি কেউই এক সরষে দানা পরিমাণ মহব্বত অন্তরে লালন করে মৃত্যুবরণ করবে না; তবে হ্যাঁ, সে দাজ্জালের দেখা যদি তার জীবনে পায়, তাহলে সে তাকে অনুসরণ করবে, নতুবা সে তার কবরে দাজ্জালকে বিশ্বাস করবে।” এটা স্পষ্ট যে হযরত হুযায়ফা (رضي الله عنه) মহানবী (ﷺ) এর কাছ থেকে এ কথা শুনেছিলেন, কেননা এ ধরনের কথা মতামতের ভিত্তিতে বলা যায় না।


❏ হাদিস ৪৩:


আত্ তাবারানী সহীহ সনদে হযরত (আবু) মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

قَالَ أَبُو مَسْعُودٍ : كُنَّا مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزَاةٍ ، فَأَصَابَ النَّاسَ جَهْدٌ حَتَّى رَأَيْتُ الْكَآبَةَ فِي وَجْهِ الْمُسْلِمِينَ وَالْفَرَحَ فِي وُجُوهِ الْمُنَافِقِينَ ، فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ : وَاللَّهِ لاَ تَغِيبُ الشَّمْسُ حَتَّى يَأْتِيَكُمُ اللَّهُ بِرِزْقٍ فَعَلِمَ عُثْمَانُ أنَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ سَيَصْدُقَانِ ، فَاشْتَرَى عُثْمَانُ أَرْبَعِينَ رَاحِلَةً بِمَا عَلَيْهَا مِنَ الطَّعَامِ ، فَوَجَّهَ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تِسْعَةً مِنْهَا ، فَلَمَّا رَأَى ذَلِكَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ : مَا هَذَا ؟ فَقَالُوا : أَهْدَى إِلَيْكَ عُثْمَانُ ، فَعُرِفَ الْفَرَحُ فِي وَجْهِ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالْكَآبَةُ فِي وُجُوهِ الْمُنَافِقِينَ ، وَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَدْ رَفَعَ يَدَيْهِ حَتَّى رُؤِيَ بَيَاضُ إِبْطَيْهِ يَدْعُو لِعُثْمَانَ دُعَاءً مَا سَمِعْتُهُ دَعَا لأَحَدٍ قَبْلَهُ.

আমরা কোনো জ্বেহাদে মহানবী (ﷺ) এর সাথে ছিলাম যখন মুসলমানদের খাদ্য সংকট দেখা দেয়। আমি তাঁদের মুখমন্ডলে হতাশার ছাপ দেখতে পাই, আর এর বিপরীতে মোনাফেকদের চেহারায় দেখি আনন্দ। এই পরিস্থিতি দেখে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, ‘আমি আল্লাহর নামে কসম করে বলছি, আল্লাহ তোমাদের জন্যে খাবার ব্যবস্থা না করা পর্যন্ত সূর্য অস্তমিত হবে না।’ হযরত উসমান (رضي الله عنه) আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) এর ইচ্ছা নিশ্চিত জেনে চৌদ্দটি সওয়ার-ভর্তি খাবার এনে ওর মধ্যে নয়টি মহানবী (ﷺ) এর খেদমতে পেশ করেন। মুসলমানদের চেহারায় খুশির ভাব ফুটে ওঠে, পক্ষান্তরে মোনাফেকদের মুখ ভার হয়ে যায়। আমি দেখতে পাই মহানবী (ﷺ) (দোয়ায়) হাত তোলেন যতোক্ষণ না তাঁর বগলের সাদা অংশ দেখা যায়; তিনি হযরত উসমান (رضي الله عنه)-এর জন্যে এমন দোয়া করেন, যা আমি ইতিপূর্বে আর কারো জন্যেই তাঁকে করতে দেখি নি।” [৫১]

🔺৫১. [নোট-১৩: হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে নয়, বরং হযরত আবু মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে ইমাম আহমদ তাঁর ‘ফযায়েলে সাহাবা’ কিতাবে (১:২৩৪ #২৮৭), এবং আত্ তাবারানী দুর্বল সনদে সাঈদ ইবনে মোহাম্মদ আল-ওয়াররাক হতে নিজ ‘আল-কবীর’(১৭:২৪৯-২৫০ #৬৯৪) ও ‘আল-আওসাত’ (৭:১৯৫-১৯৬ #৭২৫৫) গ্রন্থগুলোতে বর্ণিত; যদিও আল-হায়তামী (৯:৮৫-৯৬=৯:১১৩-১১৫ #১৪৫২৩, #১৪৫৬০) ইমাম তাবারানী (رحمة الله)-এর সনদকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।]


❏ হাদিস ৪৪:


আল-বায়হাকী হযরত উরওয়া (رضي الله عنه) থেকে রওয়ায়াত করেন যে মহানবী (ﷺ) যখন হুদায়বিয়ায় উপস্থিত হন, তখন তিনি হযরত উসমান (رضي الله عنه)কে কুরাইশদের কাছে পাঠান এ কথা বলে,

أخبرهم أنا لم نأت لقتال ، وإنما جئنا عماراً ، وادعهم إلى الإسلام ، وأَمَرَه أن يأتي رجالاً بمكة مؤمنين ونساء مؤمنات ، فيبشرهم بالفتح ، وأن الله عز وجل مظهر دينه بمكة ، حتى لا يستخفى فيها بالإيمان . فانطلق عثمان ، فمر على قريش ، فقالوا : إلى أين ؟ فقال : بعثني رسول الله صلى الله عليه وسلم أدعوكم إلى الله وإلى الإسلام ، ويخبركم : أنه لم يأت لقتال ، وإنما جئنا عماراً . قالوا : قد سمعنا ما تقول ، فانفذ إلى حاجتك. .

তাদেরকে বলো, আমরা যুদ্ধ করতে আসি নি, শুধু ওমরাহ হজ্জ্ব ও ইসলামের দিকে দাওয়াত দিতে এসেছি।” তিনি আরও আদেশ করেন যেন হযরত উসমান (رضي الله عنه) মক্কাবাসী ঈমানদার নর-নারীদেরকে আসন্ন বিজয়ের খোশ-খবরী দেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় সেখানে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হলে তাঁদের ধর্ম-বিশ্বাস যে আর উপহাসের বিষয় হবে না, তাও জানাতে। হযরত উসমান (رضي الله عنه) কুরাইশদের কাছে হুযূর পাক (ﷺ) এর বার্তা পৌঁছে দেন, কিন্তু তারা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং যুদ্ধ করার ঘোষণা দেয়। এমতাবস্থায় রাসূলে খোদা (ﷺ) সকল মুসলমানকে সমবেত করেন এবং আনুগত্যের শপথ নেন। এই সময় কেউ একজন উচ্চস্বরে বলেন,

 ونادى منادي رسول الله (صلى الله عليه وسلم) ألا إن روح القدس قد نزل على رسول الله (صلى الله عليه وسلم) 

দেখো, নিশ্চয় জিবরীল আমীন এখানে মহানবী (ﷺ)-এর কাছে অবতীর্ণ হয়েছেন।” মুসলমানগণও তখন নবী পাক (ﷺ)-কে ছেড়ে না যাবার অঙ্গীকার করেন। আল্লাহর মহিমায় এতে মূর্তি পূজারীরা ভয় পেয়ে যায় এবং এর দরুণ তারা ইতোপূর্বে যতো মুসলমানকে বন্দি করেছিল, তাঁদের সবাইকে ছেড়ে দেয়, আর সন্ধি স্থাপনের প্রস্তাব দেয়। হযরত উসমান (رضي الله عنه)র প্রত্যাবর্তনের আগে হোদায়বিয়ায় অবস্থানকালে মুসলমানগণ বলাবলি করতে থাকেন যে তিনি কাবায় পৌঁছে তওয়াফ করেছেন; এমতাবস্থায় হুযূর পূর নূর (ﷺ) বলেন,

فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم ما أظنه طاف بالبيت ونحن محصورون.

“আমরা অবরুদ্ধ থাকাকালীন আমি মনে করি না উসমান (কাবাকে) তওয়াফ করবে।” তিনি ফিরে এলে পরে মানুষেরা তাঁকে বলেন,

فقال المسلمون اشتفيت يا أبا عبد الله من الطواف بالبيت فقال عثمان بئس ما ظننتم بي فوالذي نفسي بيده لو مكثت بها مقيما سنة ورسول الله (صلى الله عليه وسلم) مقيم بالحديبية ما طفت بها حتى يطوف بها رسول الله (صلى الله عليه وسلم) ولقد دعتني قريش إلى الطواف بالبيت فأبيت فقال المسلمون رسول الله (صلى الله عليه وسلم) كان أعلمنا بالله وأحسننا (২) ظنا.

আপনি কাবার তাওয়াফ করেছেন।” হযরত উসমান (رضي الله عنه) উত্তর দেন: “এই চিন্তা মাথা থেকে দূর করে দাও! সেই মহান সত্তার শপথ, যাঁর হাতে আমার প্রাণ! মহানবী (ﷺ)-কে হুদায়বিয়ায় রেখে আমি ওখানে এক বছরের জন্যে বসতি স্থাপন করলেও মহানবী (ﷺ) এর আগে আমি কাবাকে তাওয়াফ করতাম না। কুরাইশ গোত্র আমাকে তা করতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল, কিন্তু আমি তা ফিরিয়ে দেই।” অতঃপর মুসলমানগণ বলেন, “রাসূলুল্লাহ (ﷺ)ই আমাদের মাঝে আল্লাহকে সবচেয়ে ভাল জানেন এবং তিনি-ই সর্বোত্তম মতের অধিকারী।”[৫২]

🔺৫২. [নোট-১৪: হযরত ‘উরওয়া (رضي الله عنه) থেকে এটি বর্ণনা করেন ইবনে আসাকির নিজ ‘তারিখে দিমাশ্ক’ গ্রন্থে (৩৯:৭৬-৭৮), আল-বায়হাকী তাঁর ‘আস্ সুনান আল-কুবরা’ পুস্তকে (৯:২১৮-২২১), এবং ইবনে আবি শায়বা; এ ছাড়া আংশিকভাবে ইবনে সা’আদ (২:৯৭)। দেখুন – ইবনে কাসীরের তাফসীর (৪:১৮৭), কানয (#৩০১৫২), এবং ‘আওন আল-মা’বুদ (৭:২৮৯)।]

 
Top