আল্লাহর ওলীগণ থেকে সাহায্য প্রার্থনার স্বীকৃতি সূচক যুক্তিসঙ্গত প্রমাণাদি


মর্ত্যজগত হচ্ছে পরকালের নমুনা। এখানকার কাজ কারবার থেকে ঐ জগতের কাজ কারবার সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাওয়া যায়। এ জন্যই কুরআন করীম কিয়ামত, পুনরুত্থান ও মহাপ্রতিপালকের একচ্ছত্র আধিপত্রের বিষয়কে পার্থিব দৃষ্টান্তসমূহের দ্বারা প্রমাণ করছে। যেমন- কুরআন বলছে, শুক্না ভূমিতে বারিপাত হলে, তা’পুনরায় শস্য-শ্যামল প্রান্তরে রূপান্তরিত হয়। এভাবে নিষ্প্রাণ দেহে পুনরায় প্রাণের সঞ্চার করা হবে। অন্যত্র বলা হয়েছে, তোমরা বরদাশত করবে না যে, ক্রীতদাসদের উপর তোমাদের মালিকানায় অন্য কেউ অংশীদার হোক; এমতাবস্তায় আমার সর্বময় কর্তৃত্বে প্রতিমা ইত্যাদিকে অংশীদাররূপে স্বীকার করছ কেন? এক কথায় বলতে গেলে, এ দুনিয়া হচ্ছে পরকালের নমুনা। এখানে দেখাতে পাচ্ছেন, রাজা-বাদশাহ প্রত্যেকটি কাজ নিজ হাতে করেন না, বরং রাজ্য পরিচালনার জন্য যাবতীয় কাজ-কর্ম সম্পাদনের নিমিত্ত বিভিন্ন বিভাগ সৃষ্টি করেন, প্রত্যেক বিভাগে বিভিন্ন স্তর ও গুণের অধিকারী লোক নিয়োগ করেন, কাউকে অফিসার আবার কাউকে তার অধীনস্থ হিসেবে নিযুক্ত করেন। আবার ওই সব বিভাগের উপর কর্তৃত্বকারী বা সর্বোচ্চ প্রশাসক হিসেবে প্রধান মন্ত্রীকে নির্বাচিত করেন। তাঁর ইচ্ছানুসারে বাদশাহের মর্জি মাফিক সব কাজই সম্পন্ন করা হয়, সরাসরি বাদশাহ নিজে করেন না। এর কারণ এ নয় যে, বাদশাহ বাধ্য কিংবা অপারগতা বশতঃ সব কাজের জন্য কর্মচারীবৃন্দ নিযুক্ত করেন। বাদশাহ নিজে পানি পান করতে পারেন, নিজের জীবন ধারনের প্রয়োজনীয় প্রায় সব কাজ নিজেই সমাধান করতে পারেন। কিন্তু তাঁর মর্যাদা ও প্রতাপের সাথে মানানসই আচরণ হচ্ছে প্রত্যেক কাজ সেবকদের দ্বারা সম্পন্ন করা। প্রজা সাধারণকে নির্দেশ দেয়া হয়- তারা যেন তাদের প্রয়োজনের সময় সংশি­ষ্ট কর্মকর্তাদের শরণাপন্ন হয়। 


অর্থাৎ রোগাক্রান্ত হলে চিকিৎসালয়ে গিয়ে ডাক্তারকে বলুন, মামলা-মুকাদ্দামার ব্যাপারে কোর্টে গিয়ে উকিলের মাধ্যমে জজকে বলুন ইত্যাদি। এসব সংকটের সময় প্রজাগনের সংশি­ষ্ট কর্মকর্তাদের কাছে যাওয়া বাদশাহের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পরিচায়ক নয়, বরং তাঁরই মর্জি এতে প্রতিফলিত হয়; তিনিই তো সব কাজের জন্য ওনাদেরকে নিযুক্ত করেছেন। তবে হ্যাঁ, প্রজাগণ যদি অন্য কাউকে বাদশাহ মনোনীত করে তার সাহায্য প্রার্থী হয়; তাহলে তারা বিদ্রোহী হিসেবে গণ্য হবে। কারণ তারা বাদশাহের মনোনীত কর্মচারীদের বাদ দিয়ে অন্যকে নিজেদের প্রশাসকরূপে মেনে নিচ্ছে। এসব কথা নিশ্চয় বুঝতে পারছেন। তাহলে এবার বুঝে নিন যে, আল্লাহর বাদশাহীরও পদ্ধতিগত নিয়ম এরূপ। তিনি ছোট বড় যাবতীয় কাজ নিজ ক্ষমতা বলে নিজেই সম্পন্ন করতে পারেন, কিন্তু তা’ করেন না বরং। জগতের সুষ্ঠু পরিচালনার জন্য ফিরিশতা ইত্যাদিকে নিয়োজিত করেছেন এবং তাঁদের হাতে পৃথক পৃথক বিভাগের দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। প্রাণহরণকারী ফিরিশতাদের একটি বিভাগ রয়েছে, যাঁর প্রধান কর্মকর্তা হচ্ছেন হযরত আযরাইল (আলাইহিস সালাম)। অনুরূপ মানুষের রক্ষণাবেক্ষণ, রুজি-রোজগার বণ্টন, বৃষ্টিবর্ষণ, মাতৃগর্ভে সন্তান-সন্ততি উৎপাদন, তকদীরের লিখন, দাফনকৃত মৃতদের পরীক্ষা গ্রহণ, শিঙ্গা ফুঁকে মৃতদের পুনরুজ্জীবিত করন, কিয়ামত বা সবাইকে একত্রিকরণ, তারপর কিয়ামতে বেহেশত দোযখের ব্যবস্থাপনা মোট কথা দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় কাজকর্ম ফিরিশতাদের মধ্যে বণ্টন করে দিয়েছেন। এভাবে তাঁর প্রিয় বান্দাদের হাতেও জগতের ব্যবস্থাপনার ভার অর্পণ করেছেন। তাঁদেরকে বিশেষ ক্ষমতা ও বৈশিষ্ট্যমন্ডিত স্বাধিকার প্রধান করেছেন। 


তাসাউফের কিতাব পাঠ করলে জানা যায় আল্লাহর ওলীদের কয়টি স্তর আছে এবং কার দায়িত্বে কোন্ কোন্ ধরনের কাজ রয়েছে। এ দায়িত্ব বণ্টনের কারণ এ নয় যে, প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা উনাদের মুখাপেক্ষী বরং। জগত পরিচালনায় নির্ধারিত বিধি-বিধানের চাহিদা হচ্ছে তাই। এজন্যই তো তাঁদেরকে বিশেষত্বমূলক ক্ষমতা ও অধিকার প্রদান করেন, যদ্দুরুন তাঁরা বলে থাকেন, ‘আমরা এ কাজ করতে পারি’। একথাগুলো শুধু যে আমার তুলনামূলক ধারণা প্রসূত, তা নয় বরং কুরআন-হাদীছই এর যথার্থ সাক্ষী। 


❏হযরত জিব্রাঈল (আলাইহিস সালাম) হযরত মরিয়ম (আলাইহিস সালাম) কে বলেছিলেন


قَالَ إِنَّمَا أَنَا رَسُولُ رَبِّكِ لِأَهَبَ لَكِ غُلَامًا زَكِيًّا


-‘‘ওহে মরিয়ম, আমি তোমারই প্রতিপালকের বার্তাবাহক; তোমাকে একটি পবিত্র সু-সন্তান দান করার জন্য এসেছি।’’  

{সূরাঃ মারিয়াম, আয়াতঃ ১৯, পারাঃ ১৬}

  

একথা থেকে বোঝা গেল যে, হযরত জিব্রাঈল (আলাইহিস সালাম) সন্তান দান করেন। 


❏হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) বলেছিলেনঃ


أَخْلُقُ لَكُمْ مِنَ الطِّينِ كَهَيْئَةِ الطَّيْرِ فَأَنْفُخُ فِيهِ فَيَكُونُ طَيْرًا بِإِذْنِ اللَّهِ وَأُبْرِئُ الْأَكْمَهَ وَالْأَبْرَصَ وَأُحْيِ الْمَوْتَى بِإِذْنِ اللَّهِ


-‘‘আমি তোমাদের জন্য মাটি থেকে পাখীর আকৃতি সর্বস্ব বস্তু তৈরী করে তাতে ফুঁক দিই, অমনি তা খোদার হুকুমে পাখী হয়ে যায়।’’  

{সূরাঃ আলে ইমরান, আয়াতঃ ৪৯, পারাঃ ৩}

  

এ থেকে জানা গেল যে, হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) খোদার হুকুমে নিষ্প্রাণকে প্রাণ দান করেন। 


❏কুরআনের বলা হয়েছে-


قُلْ يَتَوَفَّاكُمْ مَلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ


-‘‘আপনি বলে দিন যে, মৃত্যুর ফিরিশতা তোমাদের মৃত্যু ঘটাবেন, যা’কে তোমাদের এ কাজের জন্য ভার দেওয়া হয়েছে।’’  

{সূরাঃ সিজদাহ, আয়াতঃ ১১, পারাঃ ২১}

  

এ আয়াত থেকে জানা গেল যে, হযরত আযরাঈল (আলাইহিস সালাম) প্রাণীদেরকে নিষ্প্রাণ করেন। এ রকম আরও অনেক আয়াত পাওয়া যাবে, যেখানে আল্লাহ তা’আলার কার্যাবলীতে বান্দাদেরকে সম্বন্ধিত করা হয়েছে। 


❏মহান প্রভু আল্লাহ হুযুর (আলাইহিস সালাত ওয়াস সালাম) এর শান-মান প্রকাশার্থে বলেছেনঃ


وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ


-‘‘আমার মাহবুব তাঁদেরকে পবিত্র করেন এবং তাঁদেরকে কিতাব ও হিকমত শিখান।’’  

{সূরাঃ আলে ইমরান, আয়াত ১৬৪, পারাঃ ৪}


❏কুরআনে অন্যত্র আছেঃ


أَغْنَاهُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ مِنْ فَضْلِهِ


-‘‘আল্লাহ ও রাসূল অনুগ্রহ করে তাদেরকে ধনী করে দিয়েছেন।’’  

{সূরাঃ তাওবাহ, আয়াতঃ ৭৪, পারাঃ ১০}

  

সুতরাং, বোঝা গেল যে, হুযুর (ﷺ) সব ধরনের অপবিত্রতা দূরীভুত করে উম্মতকে পুত পবিত্র করে দেন, আর নিঃস্ব দারিদ্র্য পীড়িত লোকদেরকে ঐশ্বর্যশালী করেন। 


❏আরও বলা হয়েছেঃ


خُذْ مِنْ اَمْوَا لِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُ هُمْ وَتُزَ كِّيْهِمْ بِهَا


অর্থাৎ- আপনি তাদের ধন-সম্পদ থেকে সদকা উসুল করুন এবং এ কাজের দ্বারা তাদেরকে পুত পবিত্র করে দিন।  

{সূরাঃ তাওবাহ, আয়াতঃ ১০৩, পারাঃ ১১}

  

এ থেকে জানা গেল যে, খোদার কাছে সে আমলই গৃহীত হয়, যা রাসূলের মহান দরবারে অনুমোদিত হয়। 


❏আরও বলা হয়েছেঃ


وَلَوْ اَنَّهُمْ رَضُوْا مَآ اَتَا هُمُ اللهُ وَرَسُوْلَهُ وَقَالُوْا حَسْبُنَا اللهُ سَيُؤْتِيْنَا اللهُ مِنْ فَضْلِهِ وَرَسُوْلُهُ


অর্থাৎ- কতই না উত্তম হত, যদি তারা আল্লাহ ও রাসূল যা দিয়েছেন, তা’তে সন্তুষ্ট হত। আর একথা বলতো, আল্লাহ আমাদের জন্য যথেষ্ট; তখন আল্লাহ মেহেরবাণী করবেন এবং তাঁর রাসূলও দান করবেন।  এ থেকে জানা গেল যে, রাসূল (ﷺ) দান করেন।

{সূরাঃ তাওবাহ, আয়াতঃ ৫৯, পারাঃ ১০}

  

এসব আয়াত থেকে জানা গেল যে, কেউ যদি একথা বলে আমাদেরকে আল্লাহ রাসূল ইজ্জত সম্মান দেন, ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি দেন, তাহলে এরূপ বলা বিশুদ্ধ; কারণ কুরআনের আয়াতই তো তা’ বলছে। কিন্তু এরূপ বক্তব্যের উদ্দেশ্য বা লক্ষ্যার্থ হবে, ওসব প্রিয় বান্দাগণ আল্লাহর রাজ্যের প্রশাসক। প্রতিপালক আল্লাহ তাঁদেরকে দিয়েছেন, ওনারা আমাদেরকে দেন। নানাবিধ সংকট ও বিপদের সময় আল্লাহর ওলীগণ ও আম্বিয়ায়ে কিরামের কাছ হতে সাহায্য প্রার্থনার ব্যাপারটিও ঠিক এরূপ, যেরূপ অসুখ-বিসুখের সময় কিংবা মামলা-মুকাদ্দমার ক্ষেত্রে বাদশাহর প্রজাগণ ডাক্তার বা বিচারকদের দ্বারস্থ হয়ে সাহায্য প্রার্থী হয়ে থাকে। 


❏কুরআন বলছেঃ


وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا


-‘‘ওসব পাপী নিজেদের প্রতি অবিচার করে যদি (হে মাহবুব) আপনার কাছে আসত ও আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রাথী হত, আর, হে মাহবুব, আপনিও যদি তাদের মাগফিরাতের জন্য দু’আ করতেন, তাহলে তারা আল্লাহকে তওবা গ্রহণকারী ও মেহেরবানরূপে পেত।’’  

{সূরাঃ নিসা, আয়াত ৬৪, পারাঃ ৫}


❏সুবিখ্যাত ফতোয়ায়ে আলমগীরী’তে ‘কিতাবুল ইজ্জত’ এর ‘বাবু আদাবে যিয়ারাতি কবরিন নবী’ শীর্ষক অধ্যায়ে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, “এখনও যদি কোন যিয়ারতকারী সেই রওযা পাকে উপস্থিত হয়, তার উক্ত আয়াতটি পাঠ করা চাই।” এতো গেল ইহজীবনের কথা। কবরে মুনকার-নকীর নামক ফিরিশ্তাদ্বয় মৃতব্যক্তির কাছে তিনটি প্রশ্ন রাখেন। এর প্রথমটি হলো- তোমার প্রতিপালক কে? উত্তরে বান্দা বলে “আল্লাহ”। এরপর জিজ্ঞাসা করেন, ‘তোমার ধর্ম কি?’ উত্তরে বান্দা বলে ‘ইসলাম’। এ প্রশ্ন দুটির মধ্যে ‘ইসলামের’ সবকিছুই এসে গেছে, কিন্তু মৃত ব্যক্তি এখনও পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়নি। বরং সবশেষে প্রশ্ন করা হবে, ঐ যে সবুজ গুম্বদ বিশিষ্ট রওযার অধিকারী মওলা সম্পর্কে কি ধারণা পোষন কর? যখন সুস্পষ্টভাবে মৃতব্যক্তির মুখ থেকে বের হবে- হ্যাঁ, আমি উনাকে চিনি, উনি হচ্ছেন আমার নবী মুহাম্মদ রাসূলাল্লাহ (ﷺ) তখনই প্রশ্নোত্তরের পালা শেষ হবে। তারপরেই সেই রাসূলের নামের বদৌলতে তার নাজাত হবে। কিয়ামতের সুবিশাল মাঠে মানুষ বিচলিত হয়ে তাদের সুপারিশকারীকে হন্যে হয়ে তালাশ করতে থাকবে। যখন হুযুর (ﷺ) এর দ্বারস্থ হবে, তখন হিসাব-নিকাশ শুরু হবে; তা’ও হুযুরের সুপারিশের বদৌলতে। জানা গেল যে, প্রতিপালক আল্লাহর একান্ত ইচ্ছা যে, সমগ্র জগতব্যাপী হুযুর (ﷺ) এর মুখাপেক্ষী থাকুক- এখানে, কবরে ও হাশরের ময়দানেও। এ জন্যই মহান আল্লাহ ইরশাদ করছেনঃ وَابْتَغُوْا اِلَيْهِ الْوَسِيْلَةَ

অর্থাৎ- তোমরা আল্লাহর কাছে যেতে মাধ্যম বা ওসীলার অন্বেষণ কর। অর্থাৎ প্রত্যেক জায়গায় মুস্তাফা (ﷺ) এর ওসীলার প্রয়োজন আছে।


এখানে যদি ‘ওসীলা’ বলতে সৎকার্যাবলীর ওসীলা বলে ধরে নেওয়া হয়, তাহলে আমাদের মত পাপী, অসৎ কর্ম সম্পাদনকারী, মুসলমানদের মধ্যে অপ্রাপ্ত বয়স্ক ছেলে-মেয়ে, পাগল, আর যারা ঈমান আনার সাতে সাথেই মৃত্যু মুখে পতিত হয়- তারা সবাই বে-ওসীলা থেকে যাবে। তাছাড়া সৎকার্যও  হুজুর (ﷺ) এর মাধ্যমে অর্জিত হবে। তাহলে বুঝা যায় যে, অন্তত পরোক্ষভাবে হুযুরের ওসীলার প্রয়োজন হচ্ছে। কাফিরগণও নবীর ওসীলার বিশ্বাসী ছিল। 


❏কুরআনেই আছেঃ


وَكَانُوا مِنْ قَبْلُ يَسْتَفْتِحُونَ عَلَى الَّذِينَ كَفَرُوا


-‘‘তারাও (পূর্ববর্তী নবীগণের উম্মত) কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় লাভের জন্য  হুজুর (ﷺ) এর নামের ওসীলায় প্রার্থনা করত।’’  

{সূরাঃ বাক্বারা, আয়াতঃ ৮৯, পারাঃ ১}

  

মক্কা মুয়াজ্জমাও হুযুর (ﷺ) এর ওসীলায় অপবিত্র প্রতিমা সমূহ থেকে পুত পবিত্র স্থানে পরিণত হয়েছে, তাঁরই মাধ্যমে ‘কিবলা’ মনোনীত হয়েছে। 


❏কুরআন ঘোষণা করছেঃ


فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا


-‘‘অচিরেই আপনাকে সেই কিবলার দিকে মুখ ফিরানোর ব্যবস্থা করছি, যা আপনি পছন্দ করেছেন।’’  

{সূরাঃ বাক্বারা, আয়াতঃ ১৪৪, পারাঃ ২}


বরং  হুজুর (ﷺ)-এর মাধ্যমেই কুরআনকে ‘কুরআন’ নামে অভিহিত হয়েছে।


শয়তান যখন নবীগণের মাধ্যম ব্যতিরেকে সরাসরি মহা প্রতিপালক পর্যন্ত পৌঁছতে চায়, তখনই তার দিকে উল্কাপিন্ড ছুঁড়ে মারা হয়। যদি মদীনার রাস্তা হয়ে যেত, কখনও তাকে মারা হত না। সে একই পরিণতি তাদেরও হবে, যারা বলেন, ‘খোদাকে মান, খোদা ছাড়া আর কাউকে মান না।’


আমার উপরোক্ত বক্তব্য থেকে এতটুকু বোঝা গেল যে, নবী ও ওলীগণের কাছ হতে সাহায্য প্রার্থনা করা ও তাঁদেরকে হাজত পূরণকারী জ্ঞান করা শিরকও নয়, খোদার বিরুদ্ধে বিদ্রোহও নয়, বরং তা’ হবে যথার্থ ইসলামী কানুনের অনুসরণ ও খোদার অভিপ্রায় অনুযায়ী চলেন। জনাব, মেরাজে প্রথমতঃ পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করা হয়েছিল। পরে হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) এর বারংবার আরয করার ফলে কমাতে পাঁচ ওয়াক্তই নির্ধারিত হয়। স্বভাবতঃই মনে প্রশ্ন জাগে, শেষ পর্যন্ত এটি হল কেন? এটা এজন্য যে, মাখলুক যেন জানতে পারে যে, পঞ্চাশ ওয়াক্ত থেকে যে পাঁচ ওয়াক্তই নির্ধারিত হল, তা’তে হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) এর হাত ছিল। অর্থাৎ আল্লাহর মকবুল বান্দা ওফাতের পরেও সাহায্য করেন। মুশরিকদের প্রতিমা সমূহের কাছে থেকে সাহায্য প্রার্থনা পুরোপুরি ‘শিরক’। এর কারণ দু’টি- 


প্রথমত তারা মূর্তিসমূহকে খোদায়ী প্রভাবের ধারক ও ঐগুলোকে ছোট খোদা জ্ঞান করেই ওদের কাছে থেকে সাহায্য চায়। এজন্যই তারা সেগুলোকে ‘উপাস্য’ বা ‘অংশীদার’ বলে অভিহিত করে। অর্থাৎ এসব মূর্তিকে আল্লাহর বান্দা ও একই সাথে তাঁর অংশীদার বলে বিশ্বাস করে। যেমন- ঈসায়ীগণ হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) কে ‘বান্দা’ বলে বিশ্বাস করে বটে, তবে একই সাথে তাঁকে আল্লাহর পুত্র তিন খোদার একজন বা খোদ আল্লাহ বলে মনে করে। মুমিনগণ ওলী ও নবীগণকে কেবল ‘বান্দা’ জ্ঞান করেন। তাঁদেরকে এরূপ হাজত পূরণকারী হিসাবে জ্ঞান করেন, যেরূপ দেওবন্দীগণ ধনীদেরকে মাদ্রাসার শুভাকাঙ্খী ও সাহায্যকারী এবং ডাক্তার কিংবা শাসককে সরকার থেকে প্রাপ্ত ক্ষমতার অধিকারী করেন নি, তারা নিজেরাই ঐগুলোকে স্বাধিকার প্রাপ্ত মনে করেই সেগুলোর কাছ থেকে সাহায্য সহযোগিতা প্রার্থনা করে। তাই তারা অপরাধী, বরং আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণাকারী বান্দা। এ সম্পর্কে সর্বোত্তম দৃষ্টান্ত একটু আগেই পেশ করেছি। মুশরিকদের মূর্তির কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার সাথে মুমিনদের ওলী/নবীর কাছ হতে সাহায্য প্রার্থনার সুস্পষ্ট পার্থক্যের প্রতি লক্ষ্য করেই শাহ আবদুল আযীয (رحمة الله) ফায়সালা করে দিয়েছেনঃ সাদৃশ্য প্রমাণ করা উদ্দেশ্য নয়, বরং অনুধাবন করার উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে, একজন মূর্তিপূজারী পাথরের দিকে সিজদা করে, সে মুশরিক; কারণ তার এ কাজটি হচ্ছে তার নিজস্ব উদ্ভাবন। পক্ষান্তরে, মুসলমান কা’বার দিকে সিজদা করে সেখানেও পাথর নির্মিত সৌধ রয়েছে। কিন্তু সে মুশরিক নয়, কারণ কা’বাকে সিজদা করা তার উদ্দেশ্য নয়। সে আসলে খোদাকেই সিজদা করছে, কাবাকে নয় বরং তাও খোদার আদেশনুযায়ী করা হচ্ছে। আর মুশরিক খোদার আদেশকে লঙ্ঘন করে পাথরকেই সিজদা করছে। এ পার্থক্যটুকু অনুধাবন করা প্রয়োজন। গঙ্গার জলের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন কুফর; কিন্তু যমযমের পানির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ ঈমানের অন্তভুর্ক্ত। কারণ, গঙ্গাজরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন নিজস্ব উদ্ভাবন, আর যমযমের পানির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন শরীয়তের নির্দেশ প্রসূত। এরূপ মন্দিরের পাথরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন শিরক। কিন্তু ‘মাক্বামে ইব্রাহীম’ নামক পাথরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন ঈমানের অন্তভুর্ক্ত, অথচ সেটিও একটি পাথর।

 
Top