আল্লাহর ওলী ও নবীগণ থেকে সাহায্য প্রার্থনা প্রসঙ্গে আলোচনা


আল্লাহর ওলীগণ ও আম্বিয়ায়ে কিরাম থেকে সাহায্য প্রার্থনা করা বৈধ, যদি এ আকীদা পোষন করা হয় যে, মূলতঃ সাহায্যের উৎস মহান প্রতিপালকই। ওলী ও নবীগণ হচ্ছেন সেই সাহায্যের বিকাশস্থল। মুসলমান এ আকীদাই পোষন করেন। কোন মূর্খও কোন ওলীকে খোদা মনে করে না। এ আলোচনাকে দু’টি অধ্যায়ে সুবিন্যস্ত করা হল।



প্রথম অধ্যায়


(খোদা ভিন্ন অন্য কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনার

স্বীকৃতিসূচক প্রমাণসমূহ)



খোদা ভিন্ন অন্য কারো কাছে সাহায্য প্রার্থনার স্বীকৃতি সূচক অনেক প্রমাণ পাওয়া যায় কুরআনী আয়াতসমূহে, বিশুদ্ধ হাদীছ সমূহে, ফিকাহ শাস্ত্রবিদ ও হাদীছবেত্তাগনের উক্তিসমূহে, এমনকি স্বয়ং ভিন্নমতাবলম্বীদের উক্তি সমূহেও। এখন এসবের পৃথক পৃথকভাবে বর্ণনা করার প্রয়াস পাচ্ছি।


❏কুরআন করীম ইরশাদ করছেঃ


وَادْعُوا شُهَدَاءَكُمْ مِنْ دُونِ اللَّهِ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ


-‘‘আল্লাহ ব্যতীত তোমাদের সমস্ত সাহায্যকারীকে আহবান কর, যদি তোমরা (হে কাফিরগণ) দাবীকৃত বিষয়ে সত্যবাদী হও।’’  

{সূরাঃ বাক্বারা, আয়াতঃ ২৩, পারাঃ ১}

  

এ আয়াতে কাফিরদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে- কুরআনের অনুরুপ একটি ‘সূরা’ গঠন করে দেখাও, তোমাদের এ কাজে সহায়তাদানের জন্য তোমাদের সাহায্যকারীদেরকে ডেকে নাও। দেখুন, খোদা ভিন্ন অন্য কিছু বা অন্য কারো কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে এ আয়াতে। 


❏কুরআনের অন্যত্র উক্ত হয়েছেঃ


قَالَ مَنْ أَنْصَارِي إِلَى اللَّهِ قَالَ الْحَوَارِيُّونَ نَحْنُ أَنْصَارُ اللَّهِ


-‘‘হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) বলেছিলেন, আল্লাহর রাস্তায় আমার সাহায্যকারী কে কে আছ? উত্তরে তাঁর অনুগত ‘হাওয়ারী’ নামক বিশ্বাসীগণ বলেছিলেন আমরা আল্লাহর ধর্মের সাহায্য করবো।’’ 

{সূরাঃ আলে ইমরান, আয়াতঃ ৫২, পারাঃ ৩}


এ আয়াতে বলা হয়েছে যে, হযরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) তাঁর অনুসারীদেরকে সম্বোধন করে বলেছেন, আমার সাহায্যকারী কে কে আছ? সুতরাং, বোঝা যায় যে, তিনি খোদা ভিন্ন অন্যদের সাহায্য প্রার্থী হয়েছেন। 


❏কুরআন আর এক জায়গায় ইরশাদ করছেঃ


وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَى وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ


-‘‘তোমরা পরস্পরকে সৎকাজে ও পাপ কাজ থেকে বিরত রাখতে সাহায্য কর এবং পাপ কাজে ও অহেতুক বাড়াবাড়ির ক্ষেত্রে একে অপরকে সাহায্য কর না।’’  

{সূরাঃ মায়েদা, আয়াতঃ ২, পারাঃ ৬}


এখানে দেখুন, বান্দাগণকে একে অপরের সাহায্য করার আদেশ দেয়া হয়েছে। 


❏অন্যত্র আরও বলা হয়েছেঃ


إِنْ تَنْصُرُوا اللَّهَ يَنْصُرْكُمْ


-‘‘যদি তোমরা আল্লাহর দ্বীনের সাহায্য কর, তিনিও তোমাদের সাহায্য করবেন।’’  

{সূরাঃ মুহাম্মদ, আয়াতঃ ৭, পারাঃ ২৬}

 

এখানে স্বয়ং মহান প্রতিপালক, যিনি কারো মুখাপেক্ষী নন, নিজ বান্দাদের নিকট সাহায্য চেয়েছেন। আরও লক্ষ্য করুন, মহান প্রভু প্রতিশ্রুতি গ্রহণের দিন (ইয়াউমে মীছাক) নবীগণের রূহ থেকে হুযুর (ﷺ) এর ব্যাপারে প্রতিশ্রুতি নিয়েছিলেনঃ


لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ


-‘‘আপনারা হুযুর (ﷺ) কে মেনে নিবেন এবং তাঁকে সাহায্য করবেন।’’  

{সূরাঃ আলে ইমরান, আয়াতঃ ৮১, পারাঃ ৩}


এ থেকে জানা গেল যে, সেই অঙ্গীকার গ্রহণের দিন থেকে আল্লাহর বান্দাদেরকে সাহায্য করার নির্দেশ জারী করা হয়েছে। 


❏অন্য এক জায়গায় বলা হয়েছেঃ


اسْتَعِينُوا بِالصَّبْرِ وَالصَّلَاةِ


-‘‘বৈধ ও নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর।’’  

{সূরাঃ বাক্বারা, আয়াতঃ ১৫৩, পারাঃ ২}

  

এ আয়াতে মুসলমানদেরকে নামায ও ধৈর্য্যের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনার উপদেশ দেয়া হয়েছে। নামায ও ধৈর্য খোদা ভিন্ন অন্য কিছুই তো। 


❏কুরআনের আর এক জায়গায় আছেঃ


فَأَعِينُونِي بِقُوَّةٍ


-‘‘অতঃপর আমাকে তোমাদের শক্তি দিয়ে সাহায্য কর।’’  

{সূরাঃ কাহাফ, আয়াতঃ ৯৫}


এ থেকে জানা গেল যে, হযরত যুলকারনাইন লৌহ প্রাচীর নির্মাণ করার সময় জনগণ থেকে সাহায্য চেয়েছিলেন। 


❏মহান প্রতিপালক অন্যত্র ইরশাদ করেছেনঃ


أَيَّدَكَ بِنَصْرِهِ وَبِالْمُؤْمِنِينَ


-‘‘হে নবী, মহা প্রভু আপনাকে স্বীয় সাহায্য ও মুসলমানদের দ্বারা শক্তি যুগিয়েছেন।’’  

{সূরাঃ আনফাল, আয়াতঃ ৬২, পারাঃ ১০}

  

❏আরও ইরশাদ করেছেনঃ


يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ حَسْبُكَ اللَّهُ وَمَنِ اتَّبَعَكَ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ


-‘‘হে নবী, আপনার জন্য আল্লাহর এবং আপনার অনুসারী মুসলমানগণ যথেষ্ট।’’  

{সূরাঃ আনফাল, আয়াতঃ ৬৪, পারাঃ ১০}

  

❏অন্যত্র ইরশাদ করেছেনঃ


فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيرٌ


-‘‘আল্লাহ তাঁর রাসূলের সহায়ক, হযরত জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) ও খোদাভীরু মুসলমানগণ ও এরপরে ফিরিশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী।’’  

{সূরাঃ তাহরীম, আয়াতঃ ৪, পারাঃ ২৮}

  

❏আর এক জায়গায় ইরশাদ করা হয়েছেঃ-


إِنَّمَا وَلِيُّكُمُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا الَّذِينَ يُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَهُمْ رَاكِعُونَ


-‘‘হে মুসলমানগণ, তোমাদের সাহায্যকারী হচ্ছেন আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও সে সব মুসলমান, যারা যাকাত দেয় ও নামায পড়েন।’’  

{সূরাঃ মায়েদা, আয়াতঃ ৫৫, পারাঃ ৬}

  

❏অন্য এক জায়গায় ইরশাদ করা হয়েছেঃ


وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ


-‘‘মুমিন নর-নারীগণ একে অপরের সাহায্যকারী।’’ 

{সূরাঃ তাওবাহ, আয়াতঃ ৭১, পারাঃ ১০}

  

 ❏আর এক জায়গায় এরশাদ করা হয়েছেঃ


نَحْنُ أَوْلِيَاؤُكُمْ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ


-‘‘আমি/আমরা (আল্লাহ/ফিরিশতা) ইহকালীন জীবনে ও পরকালে তোমাদের সাহায্যকারী।’’  

{সূরাঃ হা-মীম সেজদা, আয়াতঃ ৩১, পারাঃ ২৪}

  

অতএব, জানা যায় যে, মহান প্রতিপালক আমাদের সাহায্যকারী। আবার মুসলমানগণও পরস্পর পরস্পরের সাহায্যকারী। তবে, মহান প্রতিপালক হচ্ছেন সত্ত্বাগতভাবে সাহায্যকারী, আর অন্যরা হচ্ছেন পরোক্ষভাবে সহায়তাকারী।

হযরত মুসা (আলাইহিস সালাম) ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে যখন ফিরাউনের কাছে যাবার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন, তখন তিনি আরয করেছিলেনঃ


وَاجْعَلْ لِي وَزِيرًا مِنْ أَهْلِي - هَارُونَ أَخِي - اشْدُدْ بِهِ أَزْرِي


-‘‘হে খোদা, আমার ভাই হারুন (আলাইহিস সালাম) কে নবী মনোনীত করে আমার ‘ওযীর’ নিযুক্ত করে দিন; তাঁর বদৌলতে আমার কোমর মজবুত করে দিন।’’  

{সূরাঃ ত্বহা, আয়াতঃ ২৮-৩০, পারাঃ ১২}


প্রতিপালক আল্লাহ তখন একথা বলেন নি, তুমি আমাকে বাদ দিয়ে অন্যের আশ্রয়ের মুখাপেক্ষী হচ্ছ, আমি কি যথেষ্ট নই? বরং তাঁর প্রার্থনা মঞ্জুর করেছেন। বোঝা গেল যে, বান্দাগণ যে সাহায্যপ্রার্থী হন, তা’নবীগণের ‘সুন্নাত’।


❏মিশকাত শরীফের باب السجود وفضله শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত রবী’আ ইবনে কা’ব আসলামী থেকে মুসলিম শরীফের রওয়ায়াতের উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণিত আছেঃ হুযুর (ﷺ) আমাকে (রবী’আ) বলেনঃ


سَلْ فَقُلْتُ: أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِي الْجَنَّةِ. قَالَ: أَوْ غَيْرَ ذَلِكَ قُلْتُ: هُوَ ذَاكَ. قَالَ: فَأَعِنِّي عَلَى نَفْسِكَ بِكَثْرَةِ السُّجُودِ


-‘‘আমার কাছে কিছু চাও। আমি বললাম, বেহেশতে আপনার সঙ্গে থাকার জন্য প্রার্থনা জানাচ্ছি। এছাড়া আরও কিছু তোমার কাম্য আছে কি?” বললাম, “না, কেবল এটিই।” ইরশাদ করলেন আত্মসত্ত্বার ঘাড়ে বেশী করে নফল ইবাদতের বোঝা চাপিয়ে আমাকে সহায়তা দান কর।’’ 

{ক. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ কিতাবুস্-সালাত, ১/৩৫৩ হাদিসঃ ৪৮৯

খ. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ১/১৮৪ হাদিসঃ ৮৯৬

গ. আবু আওয়ানাহঃ আল-মুসনাদঃ ১/৪৯৯ হাদিসঃ ১৮৬১

ঘ. নাসাঈঃ সুনানে কোবরাঃ ২/২২৭ পৃ. হাদিসঃ ১১৩৮

ঙ. মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/২৫৩ পৃ. হাদিসঃ ২২৬}

  

এ থেকে প্রমাণিত হল যে, হযরত রবী’আ  (رضي الله عنه) হুজুর (ﷺ) এর কাছে বেহেশত লাভের প্রার্থনা করেছেন।  হুজুর (ﷺ) একথা বলেন নি, যে ‘তুমি খোদার কাছে প্রার্থী না হয়ে আমার কাছে বেহেশত তলব করছ ; তাই তুমি মুশরিকে গণ্য হয়েছ।’ বরঞ্চ বলছেন, ‘তোমার প্রার্থনা মন্জুর করা হল, আরও কিছু চাওয়ার থাকলে চেয়ে নাও।’ এক্ষেত্রে দেখুন, খোদা ভিন্ন অন্যের থেকে সাহায্য চাওয়া হয়েছে। আরও মজার ব্যাপার হচ্ছে যে, হুযুর (ﷺ) রবী’আ  (رضي الله عنه) কে বলেছেন, হে রবী’আ, তুমি এ ব্যাপারে আমাকে এতটুকু সাহায্য কর তথা বেশী করে নফল ইবাদত কর। তিনিও খোদা ভিন্ন অপরের কাছে সাহায্য চেয়েছেন। এ হাদীসের প্রেক্ষাপটে 


❏“আশিআতুল লুমআত” গ্রন্থে বলা হয়েছেঃ


وازاطلاق سوال كه فر مودسل وتخصيص نه كرد بمطلوبے خاص معلوم مے شود كه كار همه بدست همت وكرامت اوست هر چه خواهد هر كرا خواهد باذن پر وردگار خود بد هد

فَاِنَّ مِنْ جُوْدِكَ الدُّنْيَا وَضَرَّتُهَا

وَمِنْ عُلُوْ مِكَ عِلْمُ اللَّوْحِ وَالْقَلَمِ

اگر خيريت دنيا وعقبى آرزو دارى

بدر گاهش بياوهر چه مى خواهى تمناكن


অর্থাৎ- প্রার্থিত বস্তুকে বিশেষিত না করে ইরশাদ করা হয়েছে ‘চেয়ে নাও’। কোন বিশেষ বস্তু তলব করার কথা বলেন নি। এতে বোঝা যায়, সব কিছুই তাঁরই হাতে। তিনি যা’ চান এবং যাকে দিতে চান স্বীয় প্রতিপালকের সম্মতিক্রমে দিয়ে দেন। কেননা দুনিয়া ও আখিরাত তাঁর বদান্যতার ফল; আর লওহ ও কলমের জ্ঞানরাশি তাঁর জ্ঞান ভান্ডারের কিয়দাংশ মাত্র। দুনিয়া ও আখিরাতের কল্যাণকামী হলে তাঁর মহান দরবারে আসুন, যা ইচ্ছে চেয়ে নিন। 

{শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীঃ আশিয়াতুল লুমআতঃ ১/৩৯৬ পৃ.}


কা’বা ঘরে তিনশ’ ষাটটি প্রতিমা ছিল। সেগুলো তিনশ’ বছর থেকে বিদ্যমান ছিল। এরপর হুযুর (ﷺ) এর বদৌলতে পবিত্র ও মহিমান্বিত হয়েছিল সে কা’বা ঘর। প্রতিপালক আল্লাহ যেন একথাই বলেছিলেন- আমার ঘর কা’বা যখন আমার মহাবুবের সাহায্য ছাড়া পবিত্র হতে পারে না, তোমাদের অন্তরও তাঁর শুভ দৃষ্টি ব্যতীত পবিত্র কালিমামুক্ত হতে পারবে না।


❏‘নুরুল আনওয়ার’ গ্রন্থের ভূমিকায়  হুজুর (ﷺ) এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের আলোচনায় আছেঃ


هُوَالْجُوْدُ بِالْكَوْنَيْنِ وَالتَّوَجَّهُ اِلَى خَالِقِهِمَا


অর্থাৎ- দু’জাহান পরিচালনার দায়িত্ব অন্যান্যদেরকে দিয়ে সৃষ্টিকর্তার দিকে নিবিষ্টচিত্তে মনোনিবেশ করাই হচ্ছে হুযুর (ﷺ) এর অন্যতম চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য।  

{মোল্লা জিওনঃ নূরুল আনওয়ারঃ ১৫ পৃ.}

  

এ বক্তব্য থেকে একথা সুস্পষ্ট যে, দু’জাহান তিনিই দান করতে পারেন, যিনি হবেন উভয় জাহানের মালিক। সুতরাং, তাঁর মালিকানার স্বীকৃতি পাওয়া গেল।


শাইখ আবদুল হক (رحمة الله) এর এ উক্তি এ বিষয়টির ফায়সালা করে দিল যে, দুনিয়া ও আখিরাতের যাবতীয় নিয়ামত সন্তান-সন্ততি, ধন-দৌলত বেহেশত, নরকাগ্নি থেকে মুক্তি, এমনকি আল্লাহকেও  হুজুর (ﷺ) এর কাছ থেকে চাইতে পারবেন। 


❏জনৈক সুফী কবি কি চমৎকার কথাই না বললেনঃ


محمد ازتومى خواهم خدارا

خدا يا ازتو عشق مصطفى را


ইয়া রাসূলাল্লাহ, আপনার কাছে চাচ্ছি খোদাকে। ইয়া আল্লাহ, তোমার কাছে কামনা করছি রাসূলকে পাবার।


❏হযরত কিবলায়ে আলম মুহাদ্দিছ আলীপুরী (দাঃ বঃ) বলেছেন, প্রতিপালক আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেছেনঃ


وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذْ ظَلَمُوا أَنْفُسَهُمْ جَاءُوكَ فَاسْتَغْفَرُوا اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُوا اللَّهَ تَوَّابًا رَحِيمًا


-‘‘এমন লোক, যারা নিজেদের আত্মার প্রতি অবিচার করেছেন, তারা যদি আপনার মহান দরবারে এসে খোদার কাছে মাগফিরাত কামনা করত, এবং রাসূলও যদি তাদের মাগিফরাতের জন্য দু’আ করতেন, তাহলে তারা আপনার কাছে পেত আল্লাহকে তওবা গ্রহণকারী ও করুণাময়রূপে।’’ আপনার কাছে আসলে তারা খোদাকে পেয়ে যেত। 

{সূরাঃ নিসা, আয়াতঃ ৬৪, পারাঃ ৫}

 

❏জনৈক কবি সুন্দর কথা বলেছেন এ পংক্তিতে,


الله كَو اابهى پايامولى تيري گلى ميں


অর্থাৎ- হে মওলার আপনার আস্তানায় আল্লাহকেও পেয়েছি। পূর্বোলি­খিত হাদীছের ব্যাখ্যা প্রসেঙ্গ 


❏‘আশিআতুল লুমআত’ গ্রন্থের ভাষ্যের অনুরূপ মিশকাত শরীফের অপর একটি ব্যাখ্যা গ্রন্থ ‘মিরকাতে’ বলা হয়েছে- হুযুর (ﷺ) যা’কে যা’ দিতে চান, দিয়ে দেন। ‘তাফসীরে কবীরে’ ৩য় খন্ডের ৭ম পারার সুরা আনআমের আয়াতঃ  وَلَوْ اَشْرَكُوْا لَحَبِطَ عَنْهُمْ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বর্ণিত হয়েছেঃ

{সূরাঃ আনআম, আয়াতঃ ৮৮, পারাঃ ৭}

  

، وَثَالِثُهَا: الْأَنْبِيَاءُ، وَهُمُ الَّذِينَ أَعْطَاهُمُ اللَّه تَعَالَى مِنَ الْعُلُومِ وَالْمَعَارِفِ مَا لِأَجْلِهِ بِهَا يَقْدِرُونَ عَلَى التَّصَرُّفِ فِي بَوَاطِنِ الْخَلْقِ وَأَرْوَاحِهِمْ، وَأَيْضًا أَعْطَاهُمْ مِنَ القدرة والممكنة مَا لِأَجْلِهِ/ يَقْدِرُونَ عَلَى التَّصَرُّفِ فِي ظَوَاهِرِ الْخَلْقِ


-‘‘এর ৩য় প্রকারের অন্তভুর্ক্ত হচ্ছেন নবীগণ, তাঁরা হচ্ছেন সে সব সম্মানিত মহাপুরুষ, যাঁদেরকে মহাপ্রতিপালক আল্লাহ এতটুকু প্রজ্ঞা ও খোদা পরিচিতির জ্ঞান দান করেছেন যে, এর ফলশ্রুতিতে তাঁরা সৃষ্টিকূলের অভ্যন্তরীণ অবস্থা ও তাদের রূহ সমূহকে সক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। তাঁদেরকে এমন কুদরত ও ক্ষমতায় ভুষিত করেছেন যে, এর ফলে সৃষ্টিকূলের বাহ্যিক অবস্থাও তাদের নিয়ন্ত্রণাধীন।’’  

{ইমাম ফখরুদ্দীন রাজীঃ তাফসীরে কবীরঃ ১৩/৫৫পৃ.}


সেই একই ‘তাফসীরে’ আয়াতঃوَاِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلَئِكَةِ 

{সূরাঃ বাক্বারাঃ আয়াতঃ ৩০, পারাঃ ১}


এর তাফসীর প্রসঙ্গে লিখা আছে হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস  (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, কেউ কোন বনে-জঙ্গল বিপদে পড়লে যেন বলেঃ


اَعِيْنُوْنِىْ عِبَادَاللهِ يَرْ حَمُكُمْ اللهُ হে আল্লাহর বান্দাগণ, আমাকে সাহায্য করুন, আল্লাহ আপনাদেরকে দয়া করবেন। 


❏‘তাফসীরে রূহুল বয়ানে’ ৬ পারার ‘সুরা’ মায়েদা’র আয়াত 

{সূরাঃ মায়েদা, আয়াতঃ ৩৩, পারাঃ ৬}

 

 وَيَسْعَوْنَ فِى الْاَرْضِ فَسَادًا এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে লিখা আছে- শাইখ সালাউদ্দিন (رحمة الله) বলেছেন, আমাকে প্রতিপালক আল্লাহ এমন ক্ষমতা দিয়েছেন যে, আসমানকে যমীনের উপর ফেলে দিতে পারি; সেই খোদা প্রদত্ত ক্ষমতা বলে ইচ্ছে করলে সারা দুনিয়াবাসীকে ধ্বংস করে দিতে পারি। কিন্তু আমি তা না করে তাদের সংশোধন ও বিশুদ্ধির জন্য দো’আ করি।  

{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ২/৪৬৫ পৃ.}

  

❏সুবিখ্যাত ‘মছনবী শরীফে আছেঃ


اولياء راهست قدرت ازاله – تير جسته باز گر داندزراه


অর্থাৎ- ওলীগণ আল্লাহ থেকে এমন ক্ষমতা লাভ করেছেন, যার ফলে তাঁরা ধুনক থেকে নিক্ষেপ্ত তীর ফিরিয়ে আনতে পারেন।


❏‘আশিআতুল লুমআত’ গ্রন্থে ‘যিয়ারাতুল কবুর’ শীর্ষক অধ্যায়ের প্রারম্ভে আছেঃ


امام غزالى گفته هركه استمداد كرده شود بوے درحيات استمداد كرده مي شود بوے بعداز وفات يكے از مشائخ گفته ديدم چهار كس را از مشائخ كه تصرف مى كنند در قبور خود مانند تسر فها يه ايشان در حيات خوديابيشتر قومےمى گويند كه امداد حى قوى تراست ومن مے گويم كه امدادميت قوى تر واولياء راتصرف دراكوان حاصل است واں تيست مگر ارواح ايشان راو وراح باقى است


অর্থাৎ- ইমাম গাজ্জালী (رحمة الله) বলেছে, যাঁর কাছ থেকে জীবদ্দমায় সাহায্য চাওয়া যায়, তাঁর মৃত্যুর পরেও তাঁর নিকট সাহায্য চাওয়া যাবে। জনৈক বুজুর্গ ব্যক্তি বলেছের, আমি চারজন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে দেখেছি, যারা তাঁদের কবরে সে একই কাজ বা তার চেয়েও বেশী কাজ করছেন,যা তারা তাঁদের জীবদ্দশায় করতেন। আমাদের এক সম্প্রদায় বলেছেন, জীবিতদের সাহায্য অধিকতর সক্রিয়; আর আমি বলি, মৃতের সাহায্য অধিকতর কার্যকরী। ওলীগণের নিয়ন্ত্রণ সব জগতেই বিদ্যমান। এ ক্ষমতা হচ্ছে তাঁদের রূহসমূহের, রূহসমূহ অবিনশ্বর ও স্থায়ী।  

{শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভীঃ আশআতুল লুমআতঃ ১/৭১৫ পৃ.}

  

❏মিশকাত শরীফের ‘যিয়ারাতুল কুবর’ শীর্ষক অধ্যায়ের হাশিয়াতে লিখা হয়েছেঃ


وَاَمَّا الْاِسْتِمْدَادُ بِاَهْلِ الْقُبُوْرِ فِىْ غَيْرِ النَّبِىِّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ اَوِ الْاَنْبِيَاءِ فَقَدْ اَنْكَرَهُ كَثِيْرٌُ مِّنَ الْفَّقُهَاءِ وَاَثَبَتَهُ الْمَشَائِخُ الصُّوْفِيَّهُ وَبَعْضَ الْفُقُهَاءِ قَالَ الْاِمَامَ الشَّاَفِعِىُّ قَبْرُ مُوْسَى الْكَاظِمِ تِرْيَاقٌُ مُجَرَّبٌُ لِاَجَابَةِ الدُّعَاءِ وَقَالَ الْاِمَامُ الْغَزَّ اِلُّي مَنْ يَّسْتَمَدُّ فِيْ حَيَاتِهِ يُسْتَمَدُّ بَعْدَ وَفَاتِهِ. 


-‘‘নবী (ﷺ) কিংবা অপরাপর আম্বিয়ায়ে কিরাম ছাড়া অন্যান্য কবরবাসীদের কাছ থেকে দু’আ চাওয়ার ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। অনেক ফিকহা শাস্ত্রবিদ এর স্বীকৃতি দেননি, কিন্তু সুফী মাশায়েখ এবং কতিপয় ফিকাহ বিশারদ এ বিষয়টি স্বপ্রমাণ করেছেন। ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) বলেছেন- মুসা কাযেম (رحمة الله) এর কবর দু’আ কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে বিষনাশক অষুদতুল্য, যা বাস্তব অভিজ্ঞতার আলোকে প্রমাণিত। ইমাম মুহাম্মদ গায্যালী (رحمة الله) বলেছেন, যার কাছে জীবদ্দশায় সাহায্য চাওয়া যায়, তাঁর থেকে ওফাতের পরেও সাহায্য প্রার্থনা করা যেতে পারে।’’  

{ক. হাশিয়ায়ে মেশকাতঃ পৃ. ১৫৪, নূর মুহাম্মদ কুতুবখানা, করাচী,

খ. ইমাম গাজ্জালীঃ ইহইউ-উলুমুদ্দীনঃ ২/২৪৭ পৃ.}


এ ইবারত থেকে জানা গেল যে, নবী করীম (ﷺ) বা অন্যান্য আম্বিয়ায়ে কিরাম থেকে সাহায্য চাওয়ার ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই; তবে আল্লাহর ওলীগণের কবরসমূহ থেকে সাহায্য কামনার ব্যাপারে মতভেদ আছে। স্থূলদৃষ্টি সম্পন্ন উলামা এর স্বীকৃতি দেন নি; সুফীয়ায়ে কিরাম ও দিব্যজ্ঞানের অধিকারী ফিকহবিদগণ তা’ জায়েয বলেছেন।


❏‘হিসনে হাসীন’ নামক কিতাবের ২০২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত আছেঃ


وَاِنْ اَرَ ادَعَوْنًا فَلْيَقُلْ يَاعِبَادَاللهِ اَعِيْنُوْنِىْ يَاعِبَادَاللهِ اَعِيْنُوْ نِىْ يَا عِبَادَاللهِ اَعِيْنُوْنِىْ

অর্থাৎ- কেউ সাহায্যের প্রত্যাশী হলে তার বলা উচিত “হে আল্লাহর বান্দাগণ আমাকে সাহায্য করুন, হে আল্লাহর বান্দাগণ, আমাকে সাহায্য করুন, হে আল্লাহর বান্দাগণ, আমাকে সাহায্য করুন।” 

{ইমাম জাজরী দামেস্কীঃ হিসনে হাসীনঃ ২২ পৃ., মিসর থেকে মুদ্রিত}

  

❏উক্ত কিতাবের ব্যাখ্যা গ্রন্থ “আল হিরযুছ ছমীন”- এর ব্যাখ্যাকার আল্লামা মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) উক্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আরও বলেছেনঃ


وَاِذَا نْفَلَتَتْ دَابَّةُ اَحَدِ كُمْ بِاَرْضِ فَلاَةِ فَلْيُنَادِ يَاعِبَاد اللهِ اِحْبِسُوْا


-‘‘যদি অরণ্যে কারো পশু পালিয়ে যায়, তার এ বলে ‘আহবান করা উচিত- ‘হে আল্লাহর বান্দাগণ, একে থামিয়ে দিন।’’  

{মোল্লা আলী ক্বারীঃ আল-হিরযুছু ছমীনঃ ২০২ পৃ.}

  

আল্লাহর বান্দাগণ’ বলতে কি বুঝানো হয়, সে প্রসঙ্গে তিনি বলেছেনঃ


اَلْمُرَادُ بِهِمْ الْمَلَئِكَةُ اَوِالْمُسْلِمُوْنَ مِنَ الْجِنِّ اَوْرِ جَالُ الْغَيْبِ الْمُسَمَّوْنَ بِاَبْدَالٍ


-‘‘আল্লাহর বান্দাগণ, বলতে এখানে ফিরিশতা, বা মুসলমান জ্বিন কিংবা আবদাল নামে অভিহিত ‘রিজালুল গায়বকে বোঝানো হয়েছে।’’  

{মোল্লা আলী ক্বারীঃ আল-হিরযুছু ছমীনঃ ২০২ পৃ.}

  

❏এরপর আরো বলেছেনঃ


هَذَا حَدِيْثُ حَسَنٌُ يَّحْتَاجُ اِلَيْهِ آلْمُسَافِرُوْنَ وَاَنَّهُ مُجَرَّبٌُ


-‘‘এ হাদীছটি ‘হাদীছে হাসান’ এর পর্যাভুক্ত (হাদীছ যে ‘সহীহ’ ‘হাসান’ ও ‘যয়ীফ’ এ তিন শ্রেণীতে বিভক্ত, তন্মধ্যে ‘হাসান’ শ্রেণীভুক্ত। মুসাফিরদের জন্য এ হাদীছটির বিশেষ প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এ হাদীছের সত্যতা পরীক্ষিত।’’ 

{মোল্লা আলী ক্বারীঃ আল-হিরযুছু ছমীনঃ ২০২ পৃ.}

  

❏আল্লামা শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী সাহেব (رحمة الله) তাফসীরে ‘ফতেহুল আযীরের’ ২০ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ


بايد فهميد كه استعا نت ازغير بوجهےكه اعتماد باشد واورا عواں الہى نداند حرام است واگر التفات محض بجانب حق است واورا يكے از مظاهر عون الہى دانسته و بارخانه اسبابى وحكمت اوتعالى دراں نموده بغير استعانت ظاهري نمايد دور ازعرفان نخواهد بود ودرشرع نيز جائز وروايت وانبياء واو لياء ايں نوع ايتعانت تعبير كرده اندو ودر حقيقت ايںنوع استعانت بغير نيست بلكه استعانت بحضرت حق است لاغير


অর্থাৎ- একথা উপলব্ধি করা দরকার যে, আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো কাছ থেকে তাঁর উপর এমনভাবে ভরসা করে সাহায্য ভিক্ষা করা ‘হারাম’ যেখানে সে ব্যক্তিকে খোদায়ী সাহয্যের প্রতিভুরূপে মনে করা হয় না। আর যদি আল্লাহর দিকেই মনোনিবেশ করা হয় এবং সে ব্যক্তিকে আল্লাহর সাহায্যের বিকাশস্থল মনে করে আল্লাহর হিকমত ও কার্যকারণ সম্পর্কের ভিত্তিতে তার নিকট বাহ্যিকরূপে সাহায্য প্রার্থনা করা হয়, তা’হলে তা খোদা পরিচিতিমূলক জ্ঞান থেকে দূরে নয় এবং শরীয়তের দৃষ্টিতেও বৈধ। অপরের কাছ থেকে এ ধরনের সাহায্য ওলী ও নবীগণও চেয়েছেন। মূলতঃ এতে খোদা ভিন্ন অন্য কার কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া হয় না বরং খোদার কাছ থেকেই সাহায্য প্রার্থনা করা হয়। 

{শায়খ আবদুল আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভীঃ তাফসীরে ফতহুল আযীযঃ ১/৮ পৃ.}


❏‘তাফসীরে আযীযীতে’তে সূরা ‘বকরা’র তাফসীরে ৪৬০ পৃষ্ঠায় শাহ আবদুল আযীয সাহেব বলেনঃ


افعال عادى الهي رامثل بخشيدن فرزند وتوسبع رزق وشفاء مريض وامثال ذلك رامشر ان نسبت به ارواح خبيثه وامنام مى نمايند وكافر مى شوند از تاثير الهى ياخواصى مخلوقات اومي دانند از ادويه ومقافير يادعائے صلحاء بند گان اوكه همه از جناب اودر خواسته انجاح مطلب مى كنا نند مى فهمند در ايمان ايشاں خلل نمى افتد 


অর্থাৎ- আল্লাহর সচরাচর কার্যাবলী যেমন- সন্তান, দান, রুজি-রোজগার বৃদ্ধিকরণ, রোগীকে রোগ-মুক্তিদান ও এ ধরনের অন্যান্য কার্যাবলীকে মুশরিকগণ দুষ্ট ও পাপী আত্মা ও প্রতিমাদের সহিত সম্পর্কযুক্ত করে থাকে, যা’র ফলে তারা কাফির বলে গণ্য হয়। আর মুসলমানগণ এসব বিষয়কে খোদার হুকুম বা তাঁর সৃষ্ট জীবের বিশেষত্বের ফলশ্রুতি বলে মনে করেন। যেমন- ওষুধ, গাছ-গাছড়া, লতা-পাতা ইত্যাদির দ্রব্যগুণ কিংবা তাঁর নেক বান্দাগণের দু’আ। আল্লাহর এ নেক বান্দাগণ মহান প্রতিপালকের নিকট প্রার্থনা করে জনগণের মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করেন। এতে ওসব মুসলিমের ঈমানের কোন ক্ষতি হয় না। 

{শায়খ আবদুল আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভীঃ তাফসীরে ফতহুল আযীযঃ ১/৪৬০ পৃ.}

  

❏‘বুস্তানুল মুহাদ্দিছীন’ নামক গ্রন্থে শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস সাহেব (رحمة الله) শায়খ আবুল আব্বাস আহমদ যররূক (رحمة الله) এর কবিতার এ স্তবকটি উদ্ধৃত করেছেনঃ


اَنَا لِمُرِيْدِ يْ جَامِعٌُ لِشَتَاتِهِ – اِذَا مَامَطَى جَوْرُ الزَّمَانِ بِنِكْبِةِ

وَاِنْ كُنْتَ فِيْ ضَيْقٍ وَّكَرْبٍ وَّوَحْشَةٍ – فَنَادِبِيَازَرُّوْقُ آَتِ بِسُرْعَةِ


অর্থাৎ শাইখ আহমদ যররূক (رحمة الله) বলেছেন, আমার মুরীদ যখন যুগসন্ধিক্ষণে বা যুগের আবর্তন-বিবর্তনের ফলে বিবিধ-বিপদাপদ ও দুর্যোগের শিকার হয়, আমি তাঁর অস্থির চিত্ততা, ব্যাকুলতা, আশা নিরাশার মধ্যে তাঁর দোদুল্যমানতা ইত্যাদি দূরীভূত করি। তাঁর মুরীদগণের প্রতি লক্ষ করে তিনি আরো বলেছেন, তুমি যদি আর্থিক দৈন্য-দশার শিকার হও, কোন দুর্যোগে পতিত হও বা কোন ভয় ভীতির সম্মুখীন হও, তখনই ‘ইয়া যররূপ’ বলে আমাকে ডাকিও, আমি তৎক্ষণাৎ তোমার সাহায্যার্থে উপস্থিত হয়ে যাব। 

{শায়খ আবদুল আজীজ মুহাদ্দিস দেহলভীঃ বুস্তানুল মুহাদ্দিছীনঃ ৮২পৃ.} 

  

❏তাফসীরে কবীরে, তাফসীরে রূহুল বয়ানে এবং তাফসীরে খাযেনে’ সুরা ইউসূফের এক আয়াত  প্রসঙ্গে লিখেন-

{সূরাঃ ইউসূফ, আয়াতঃ ৪২, পারাঃ ১২}


وَاعْلَمْ أَنَّ الِاسْتِعَانَةَ بِالنَّاسِ فِي دَفْعِ الظُّلْمِ جَائِزَةٌ فِي الشَّرِيعَةِ


-‘‘জেনে রাখ জুলুম নির্যাতন প্রতিরোধ করার জন্য মানুষের সাহায্য প্রার্থী হওয়া শরিয়তে বৈধ।’’ 

{আল্লামা ইসমাঈল হাক্কীঃ তাফসীরে রুহুল বায়ানঃ ৪/৩৪০পৃ. ফখরুদ্দীন রাজী, তাফসীরে কাবীর, ১৮/৪৬১পৃ. জুহাইলী, তাফসরিুল মুনীর, ১২/২৭১পৃ.}


❏তাফসীরে ‘খাযেনে’ আয়াত فَاَنْسَاهُ الشَّيْطَنُ এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে বলা হয়েছেঃ


اَلْاِسْتِعَانَةُ بِالْمَخلُوْقِ فِىْ دَفْعِ الضَّرَرِ جَائِزَةٌ


-‘‘বিপদাপদ দূরীকরণার্থে সৃষ্টজীবের সাহায্য প্রার্থনা বৈধ। 

(তাফসীরে খাযেন, ২/৫৩০পৃ.) 


❏সুপ্রসিদ্ধ ‘দুররুল মুখতার’ গ্রন্থের ৩য় খন্ডে ‘বাবুল লুকাত’ শীর্ষক অধ্যায়ের শেষে হারানো জিনিস অনুসন্ধানের একটি পন্থার কথা উলে­খিত হয়েছেঃ


اِنَّ الْاِنْسَانَ اِذَاضَاعَ لَهُ شَيْءٍ وَّاَرَادَ اَنْ يَّرُدُّهُ اللهُ عَلَيْهِ فَلْيَقِفْ عَلَى مَكَانِ عَالٍ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ وَيَقْرَءُ الْفَاتِحَةَ وَيُهْدَىْ ثَوَابَهَا لِلنَّبِيِّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ ثُمَّ يُهْدِيْ ثَوَابَهَا لِسَّيِّدِىْ اَحْمَدَ اِبْنَ عَلْوَانٍ يَقُوْلُ يَاسَيِّدِىْ يَااَحمَدُ اِبْنِ عَلْوَانَ اِنْ لَّمْ تَرُدَّعَلَيَّ ضَالَّتِىْ وَاِلاَّنَزَعْتُكَ مِنْ دِيْوَانِ الْاَوْلِيَاءِ فَاِنَّ اللهَ يَرُدُّ ضَالَتَهُ بِبَرْكَتِهِ


-‘‘কারো কোন জিনিস হারানো গেলে সে যদি এ প্রত্যাশা করে যে, খোদা তা’আলা তার হারানো বস্তুটি ফিরিয়ে দিক, তাহলে তার উচিত কোন উঁচু জায়গায় গিয়ে কিবলামুখী হয়ে দাঁড়ানো। তথায় সুরা ফাতিহা পাঠ করে তার ছওয়াব নবী করীম (ﷺ) কে ও পরে আমার মাননীয় শাইখ আহমদ ইবন আলওয়ান (رحمة الله) কে হাদিয়া স্বরূপ দান করে এ দু’আটি পাঠ করতে হবেঃ


يَاسَيِّدِىْ يَا اَحْمَدُ اِبْنِ عَلْوَانَ اِنْ لَّمْ تَرُدَّ عَلَىَّ ضَالَّتِىْ وَاِلاَّنَزَعَتُكَ مِنْ دِيْوَانِ الْاَوْلِيَاءِ


‘হে আমার মওলা, হে আহমদ বিন আলওয়ান, আপনি যদি আমার হারানো বস্তুটি ফিরিয়ে না দেন, তাহলে ওলীগণের দপ্তর থেকে আপনার নাম বাদ দিয়ে দেব।’ এরূপ বললে খোদা তা’আলা তাঁর (উক্ত ওলী) বরকতে হারানো বস্তুটি ফিরিয়ে দিবেন।’’ 

{আলাউদ্দিন হিস্কসীঃ দুররুল মুখতারঃ ৩/৩২৪ পৃ.}

  

দেখুন, এ দু’আর মধ্যে সৈয়দ আহমদ ইবন আলওয়ান (رحمة الله) কে আহবান করা হয়েছে, তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করে হয়েছে, তাঁর থেকে হারানো জিনিসটি তলব করা হয়েছে। আর এ দু’আটির কথা কে বলেছেন? এ দু ’আটি শিখাচ্ছেন হানাফীদের শ্রেষ্ঠ ফিকাহ বিশারদ সুবিখ্যাত দুররুল মুখতার’ গ্রন্থের রচয়িতা।


❏হযরত ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) ‘কাসিদায়ে নু’মান’ এ হুযুর (ﷺ) কে লক্ষ্য করে বিনীত প্রার্থনা জানিয়েছেনঃ


يَااَكْرَمَ الثَّقَلَيْنِ يَاكَنْزَ الْوَريَ

جُدْلِىْ بِجُوْدِكَ وَاَرْضِنِىْ بِرَضَاكَ

اَنَا طَامِعٌُ بِالْجُوْدِ مِنْكَ لَمْ يَكُنْ

لِاَبِيْ حَنِيْفَةَ فِي الْاَنَامِ سَوَاكَ


অর্থাৎ- ‘ওহে জ্বীন ও মানবজাতির সর্বাধিক সম্মানিত ও দয়াবান, সত্ত্বা, ওহে খোদার নেয়ামত সমূহের ভান্ডার, আল্লাহর আপনাকে যে নিয়ামতের বিশাল ভান্ডার দান করেছেন, সেখান থেকে দয়া করে আমাকেও কিছু দিন। আল্লাহ তা’আলা আপনাকে সন্তুষ্ট করেছেন। আপনি আমাকে সন্তুষ্ট করুন। আপনার দান ও করুণার প্রত্যাশী হয়েছি। এ আবু হানীফার জন্য সৃষ্টি জগতে আপনি ছাড়া আর কেউ নেই।  

{ইমাম আবু হানিফাঃ কাসীদায়ে নুমানঃ পৃ.২২}

  

এখানে দেখুন, স্পষ্টতঃ হুযুর (ﷺ) এর সাহায্যের জন্য বিনীত আবেদন করা হয়েছে। 


❏‘কাসিদায়ে বুরদা’য় আছেঃ 


يَااَكْرَمَ الْخَلْقِ مَالِي مَن اَلُوْذُبِهِ

سِوَاكَ عِنْدَ حَلُوْلِ الْحَادِثِ الْعَمَمِ


অর্থাৎ- হে সৃষ্টিকূরের সর্বোত্তম সত্ত্বা! আপনি ছাড়া আমার এমন কেউ নেই, যাঁর শরণাপন্ন হতে পারি সর্বাব্যাপী বিপদাপদ অবতীর্ণ হবার সময়। 

 {ক. শরফুদ্দীন বুহুরীঃ কাসীদায়ে বুরদাঃ ১৫-১৬ পৃ.

 খ. ইমাম খরপুতীঃ শরহে কাসীদায়ে বোরদাঃ ২১৭ পৃ.}


খ্যাতনামা উলামা, ফিকাহ বিশারদ ও মাশাইখের উক্তি সমূহ, যেখানে তাঁরা হুযুর (ﷺ) এর কাছ থেকে সাহায্য ভিক্ষা করেছেন, সবগুলো একত্রিত করতে একটি দপ্তরের প্রয়োজন। সুতরাং, এতটুকুই যথেষ্ট বিধায় এখানেই শেষ করছি।


❏এছাড়া ‘কবরসমূহ যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ভ্রমণ’ শীর্ষক আলোচনায় ফতোয়ায়ে শামীর ইবারত উদ্ধৃত কবর, 

{ইবনে আবেদিন শামীঃ রুদ্দুল মুখতারঃ২/২৮২পৃ.}


যেখানে ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) বলেছেন, “যখন আমি কোন সমস্যার সম্মুখীন হতাম, তখনই ইমাম আবু হানীফা (رحمة الله) এর মাযারে চলে যেতাম; তাঁর বরকতেই আমার উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যেত।” 

{খতিবে বাগদাদীঃ তারিখে বাগদাদঃ ১/১২৩ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ,বৈরুত}


❏‘নুযহাতুল খাতিরিল ফাতির ফি তরজুমাতে সাইয়েদীন শরীফ আবদিল কাদির’ নামক গ্রন্থের ৬১ পৃষ্ঠায় গ্রন্থকার মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) হুযুর গাউছে আযম  (رضي الله عنه) এর একটি বাণী উদ্ধৃত করেছেনঃ


مَنِ اسْتَغَاثَ بِىْ فِىْ كُرْبَةٍ كُشِفَتْ عَنْهُ وَمَنْ نَادَانِىْ بِاِسْمِىْ فِىْ شِدَّةٍ فُرٍجَتْ عَنْهُ وَمَنْ تَوَسَّلَ بِىْ اِلَىَ اللهِ فِىْ حَاجَةٍ قُضِيَتْ


অর্থাৎ- যে কেউ দুঃখ-দুর্দশায় পতিত হয়ে আমার কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনা করে, তার দুঃখ দুর্দশা লাঘব হয়ে যাবে; যে কেউ দৈন্য-দশার টানা পোড়নে পড়ে রাহুগ্রস্থ হবে, সে যদি আমার নাম ধরে আমাকে ডাকে, তাহলে তার দুরবস্থা দূরীভূত হয়ে যাবে; আর যে কেউ আমার মাধ্যমে আল্লাহর দরবারে স্বীয় উদ্দেশ্য পূরণ করতে চাইবে, তার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হবে।

{হাসান শানতুফীঃ বাহজাতুল আসরারঃ ১/১০২পৃ.}


সেই জায়গায় আরো উলে­খিত আছেঃ হুযুর গাউছে পাক  (رضي الله عنه) ‘নামাযে গাউছিয়াহ’ পড়ার এ নিয়ম বর্ণনা করেছেন, দু’রাকাত নফল পড়বে, প্রতি রাকআতে ১১ বার ‘সূরা ইখলাস’ পাঠ করবে। সালাম ফিরিয়ে ১১ বার সালাত ও সালাম পাঠ করবে। এরপর বাগদাদের দিকে (উত্তর দিক) বার কদম চলতে থাকবে এবং প্রতি পদে আমার নাম উচ্চারণ পূর্বক স্বীডয় মকছুৃদের কথা ব্যক্ত করবে; আর দু’চরণ বিশিষ্ট এ কবিতার স্তবকটি আবৃত্তি করবেঃ


اَيُدْرِ كُنِىْ ضَيْمٌُ وَاَنْتَ ذَخِيْرَتِىْ

وَاُظْلَمُ فِى الدُّنْيَا وَاَنْتَ نَصِيْرِىْ

وَعَارٌُ عَلَى حَامِىْ اَلْحَمَى وَهُوَ مُنْجَدِىْ

اِذَا ضَاعَ فِى البَيْدَا عِقَالِ بِعَيْرِىْ


অর্থাৎ- আপনি বিশাল ভান্ডারের মালিক হয়েও কি আমি কি দুর্দশাগ্রস্ত হব? আপনার মত সাহায্যকারী থাকতে আমি কি পৃথিবীতে নিগৃহীত হব? চারণভূমির রক্ষক যদি আমার সাহায্যকারী হয়, তথায় বিচরণকারী আমার উটের রসিও যদি খোয়া যায়, তা’হলে সেই চারণ ক্ষেত্রের রক্ষকের জন্য যে এটি লজ্জার বিষয়, তা’বলাই বাহুল্য। এ নিয়ম বর্ণনা করার পর মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) বলেছেনঃ এ আমলটি বেশ কয়েকবার পরীক্ষা করে উক্ত বক্তব্যের সত্যতা প্রমাণ করা হয়েছে।


দেখুন, হুযুর গাউছে পাক মুসলমানদেরকে শিক্ষা দিচ্ছেন- দুর্দশাগ্রস্থ হলে আমার সাহায্য প্রার্থনা করে। আর হানাীদের বিশিষ্ট নির্ভরযোগ্য আলিম মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) উক্ত বক্তব্য খন্ডন না করে হুবহু উদ্ধৃত করে বলছেন অভিজ্ঞতার আলোকে এর সত্যতা যাচাই করে দেখা হয়েছে। এ থেকে জানা গেল বুজুর্গদের কাছ থেকে তাঁদের ওফাতের পরেও সাহায্য চাওয়া জায়েয ও ফলপ্রসূ।


এতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ ছাড়া অন্যের সাহায্য ভিক্ষা করার স্বপক্ষে কুরআনী আয়াত, হাদীছ ও খ্যাতনামা ফিকাহবিদ, উলামা ও মাশায়েখের উক্তিসমূহ থেকে প্রমাণাদি উপস্থাপন করেছি। এখন খোদ ভিন্নমতাবলম্বীদের মাননীয় আলিমদের বক্তব্যসমূহ থেকেও প্রমাণাদি উপস্থাপন করছি।


❏দেওবন্দীদের শায়খুল হিন্দ মৌলভি মাহমুদুল হাসান সাহেব স্বীয় তরজুমায়ে কুরআনে’ اَيَّاكَ نَسْتَعِيْنُ আয়াত এর প্রেক্ষাপটে বলেছেনঃ “হ্যা, যদি কোন প্রিয় বান্দাকে রহমতে ইলাহীর মাধ্যম মনে করে, তাঁকে স্বয়ং সম্পূর্ণ ও সত্ত্বাগতভাবে সাহায্যকারী জ্ঞান না করে তাঁর কাছ থেকে বাহ্যিক সাহায্য ভিক্ষা করা হয়, তাহলে তা বৈধ। কেননা তাঁর কাচে সাহায্য চাওয়া মূলতঃ আল্লাহ তা’আলার কাছ থেকে সাহায্য প্রার্থনার নামান্তর।”  

{শাব্বির আহমদ উসমানীঃ তাফসীরে উসমানীঃ ১/৪ পৃ., সূরা ফাতিহা}


এ বক্তব্য যা ফায়সালা করে দিল তা’ই আমাদের প্রতিপাদ্য বিষয়। কোন মুসলমান কোন ওলী বা নবীকে খোদা কিংবা খোদার পুত্র জ্ঞান করে না, কেবল মাধ্যম বলেই বিশ্বাস করে।


❏ফতোয়ায়ে রশীদিয়াহ’ গ্রন্থের ১ম খন্ডের ৬৪ পৃষ্ঠায় ‘কিতাবুল খত্রে ওয়াল ইবাহাতে’ শীর্ষক আলোচনায় আলোচ্য বিষয় প্রসঙ্গে একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর লিপিবদ্ধ আছে।


❏প্রশ্নঃ কোন কোন কবিতায় আছেঃ


يارسول كبر يافريادهے

يامحمد مصطفى فرياد هے

مدد كر بهر خدا حضرت محمد مصطفى

ميرے تم سے هر گهر ى فرياد هے


 (ওহে রাসূলে কিবরিয়া, আপনার কাছে আমার ফরিয়াদ আছে। হে মুহাম্মদ মুস্তফা, আমার ফরিয়াদ আছে। হে হযরত মুহাম্মদ মুস্তাফা, আল্লাহর ওয়াস্তে আমাকে সাহায্য করুন। আপনার কাছে প্রতিনিয়ত আছে আমার ফরিয়াদ।) এ ধরনের বিষয়বস্তু সম্বলিত কবিতাসমূহ পাঠ করা প্রসঙ্গে আপনার মত কি?


উত্তরঃ আল্লাহ তা’আলা তাঁকে (রাসূল) এ বক্তব্য সম্পর্কে অবহিত করবেন এ ধারণা বশবর্তী হয়ে এককভাবে মনে মনে কিংবা প্রকাশ্যে এ ধরনের শব্দাবলী সম্বলিত কবিতা পাঠ করা বা কোনরূপ ধারণা ব্যতিরেকে কেবল আন্তরিক মহব্বত সহকারে এ ধরনের শব্দাবলী উচ্চারণ করা বৈধ।


❏উক্ত ফত্ওয়ায়ে রশীদিয়ার ৩য় খন্ডের ৫ পৃষ্ঠায় উলে­খিত আছেঃ জনৈক ব্যক্তি মৌলভি রশীদ আহমদ সাহেবের কাছে এ প্রশ্নটি রেখেছিলেন একটি কবিতায় আছেঃ


يَا رَسُوْلَ اللهِ اَنْظُرْ حَالَنَا – يَارَسُوْلَ اللهَ اِسْمَعْ قَالَنَا

اِنَّنِىْ فِى بَحرِهَمٍّ مُّغْرَقٌُ – خُذْيَدِىْ سَهِّلْ لَنَا اَشْكَالَنَا


অর্থাৎ- ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের অবস্থায় দিকে লক্ষ্য করুন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, আমাদের আবেদন শুনুন। আমি দুঃশ্চিন্তা, দুর্ভাবনার সমুদ্রে তলিয়ে যাচ্ছি, আমার হাত ধরুন আমাদের জটিল সমস্যাদি সহজ করে দিন। কিংবা


❏‘কছীদায়ে বুর্দায় আছেঃ


يَا اَكْرَمَ الْخَلْقِ مَالِيْ مِنْ اَلُوْ ذُبِهِ

سِوَاكَ عِنْدَحَلُوْلِ الْحَادِثِ الْعَمَمِ


অর্থাৎ- ওহে সৃষ্টিজীবের সর্বাধিক সম্মানিত ও করুণাময় সত্ত্বা, ব্যাপক আকারে সংকট ও বিপদাপদ অবতীর্ণ হবার সময় আমার এমন কেউ নেই, যা’র নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে পারি।


এসব চরণগুলো জপ করা বা ‘ওযীফা’ হিসাবে পাঠ করা সম্পর্কে আপনার বক্তব্য কি? উত্তরে মৌলভি রশীদ আহমদ বলেছেন এসব শব্দাবলী গদ্যাকারে বা পদ্যাকারে জপ করা ‘মকরূহ তনযীহী’ কুফর, কিংবা কবীরা গুনাহ নয় (মকরূহ তানযীহী হচ্ছে, যে সব কাজ করা শরীয়তের পছন্দনীয় নয়, কিন্তু করলে পরে কোন শস্তি হবে না।) এ দু’টি ইবারতে হুযুর (ﷺ) এর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করাকে কুফর ও শিরক বলে অভিহিত করা হয়নি, খুব বেশী হলে ‘মাকরূহ তানযীহী বলা হয়েছে, যা অনেকটা বৈধতার কাছাকাছি বা বৈধ বললেই চলে।


❏‘কছায়েদে কাসেমী’তে ভিন্ন মতাবলম্বীদের মহামাননীয় আলেম মৌলভি কাসেম সাহেব বলেছেনঃ


مدد كراىكرم احمدى كه تيرى سوا

نهيں هے قاسم بيكس كاكوئ حامى كار


অর্থাৎ- ওহে করুণাময় আহমদ, আমাকে সাহায্য করুন। আপনি ছাড়া এ সহায় ও সম্বলহীন কাসেমের আর কোন সাহায্যকারী নেই।  

{কাসেম নানুতবীঃ কাসীদায়ে কাসেমীঃ ৫-৭ পৃ.}


এখানে লক্ষ্য করুন, তিনি  হুজুর (ﷺ) এর সাহায্য প্রার্থী হয়েছেন, আরয করেছেন- আপনি ছাড়া আমার আর কোন সহায়ক নেই। অর্থাৎ খোদাকেও ভুলে গেছেন তিনি। উদুর্ ভাষায় অনূদিত ‘সিরাতে মুস্তাকীম’ গ্রন্থের পরিশিষ্টে ৩য় উপকারী বিষয়ের’ বর্ণনায় মৌলভি ইসমাইল সাহবে (ভারতে ভিন্নমত প্রচার ও প্রসারের অগ্রদূত) বলেন- “এরূপ উচ্চ মরতবা সম্পন্ন ও উচ্চ পদস্থ বুযুর্গগণ অদৃশ্যসূক্ষ্ম জগত (আলেম মিছাল যেখানে এ জগতের দৃশ্যমান সবকিছু নমুনা আছে) ও দৃশ্যমান জগতে সক্রিয় ভূমিকা পালনের অবাধ এখতিয়ার ও অনুমতি প্রাপ্ত হন। 

{ইসমাঈল দেহলভীঃ সিরাতে মুস্তাকীমঃ ৬০ পৃ.}

  

❏ভিন্ন মতাবলম্বী অনেক আলেমের পীর হাজী ইমদাদুল্লা সাহেব বলেছেনঃ


جهاز امت كا حق نے كرديا هے آپكے هاتهوں

تم اب چاهے ڈباؤ ياتراؤ يارسول الله


অর্থাৎ- ইয়া রাসূলাল্লাহ! উম্মতের জাহাজের নিয়ন্ত্রণ ভার আল্লাহ তা’আলা আপনার হাতে তুলে দিয়েছেন। আপনি ইচ্ছা করলে সেটি ডুবিয়ে দিতে পারেন, কিংবা রক্ষাও করতে পারেন।  

{ইমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কীঃ কুলি­য়াতে এমদাদিয়াঃ১৮ পৃ.}


❏ফতোয়ায়ে রশীদিয়া’ ১ম খন্ডে ‘কিতাবুল বিদআত’ শীর্ষক আলোচনার ৯৯ পৃষ্ঠায় লিপিবদ্ধ আছে, কোন কোন রিওয়ায়াতে যে বলা হয়েছেঃ হে আল্লাহর বান্দাগণ আমাকে সাহায্য করুন, এতে আসলে কোন মৃতব্যক্তির কাছে সাহায্য প্রার্থনা করার কথা বলা হয়নি, বরং যেসব আল্লাহর বান্দা বিজন বনে বিদ্যমান আছেন, তাঁদের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়ার কথাই বলা হয়েছে। আল্লাহ তা’আলা তাঁদেরকে সে সব কাজের জন্যই সেখানে নিযুক্ত করেছেন।


এ ইবারত থেকে বোঝা গেল যে, আল্লাহর কিছুসংখ্যক বান্দা আল্লাহর পক্ষ থেকে বন জঙ্গলে নিয়োজিত থাকেন, যাতে তাঁরা মানুষের সাহায্য ও উপকার করতে পারেন । তাঁদের কাছে সাহায্য প্রার্থনা বৈধ। এখন বাকী রইল এ কথার ফয়সালা করা নবী করীম (ﷺ) সাহায্য করতে পারেন কিনা? এ প্রসঙ্গে অনেক কিছু উপস্থাপন করেছি এবং সামনে যুক্তি নির্ভর প্রমাণাদির বর্ণনায়ও এর বিশদ আলোচনা করব। মৌলভি মাহমুদুল হাসান সাহেব ‘আদিল্লায়ে কামিলাহ’ নামক গ্রন্থের ১৪ পৃষ্ঠায় বলেছেনঃ ‘আসলে খোদার পরে এ বিশ্বের মালিক হচ্ছেন রাসূল (ﷺ)। জড় পদার্থ হোক বা প্রাণীকূল, মানব জাতি হোক বা অন্য কোন জাতি হোক, মোট কথা সবকিছুর মালিক তিনিই। এ কারণেই তো তাঁর স্ত্রীগণের সহিত সহাবস্থানের ব্যাপারে ন্যায়নুগ আচরণ ও তাঁদের মুহরানা আদায় তাঁর উপর অত্যাবশ্যকীয় বা ওয়াজিব ছিল না।” 


❏“সিরাতে মুস্তাকীম” গ্রন্থের ‘২য় হিদায়েত’ এর ‘১ম ইফাদাহ’ এর ৬০ পৃষ্ঠায় মৌলভি ইসমাইল সাহেব বলেছেন, হযরত আলী মুরতাযা  (رضي الله عنه) এর ফযীলত হযরত আবু বকর সিদ্দীক  (رضي الله عنه) ও হযরত উমর ফারুক  (رضي الله عنه) এর তুলনায় এক দিক দিয়ে বেশী প্রমাণিত। ফযীলতের এ আধিক্যের কারণ হচ্ছে, তাঁর অনুসারীদের সংখ্যাধিক্য এবং বেলায়তের স্তরসমূহ এবং কুতবিয়াত, গাউছিয়াত ও আবদালিয়ত এবং এ জাতীয় অন্যবিধ গুরুত্বপূর্ণ কর্মকান্ড তাঁর সময়কাল থেকে পৃথিবীর সমাপ্তিলগ্ন পর্যন্ত তাঁরই মাধ্যমে সম্পন্ন হয় ও হতে থাকবে। আর রাজা-বাদশাগণের বাদশাহী ও শাসকবর্গের, শাসনেও তাঁর সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে, যা’ ‘আলমে মালাকুত’ বা ফিরিশতা জগতে ভ্রমণকারীদের কাছে গোপন নয়।”

এ ইবারত থেকে পরিষ্কার জানা গেল যে, অন্যান্য লোকগণ বাদশাহী, আমিরী, বেলায়াত ও গাউছিয়ত হযরত আলী  (رضي الله عنه) থেকে লাভ করেন।


❏দেওবন্দীদের পীর ও মুর্শিদ হাজী ইমদাদুল্লাহ সাহেব স্বীয় গ্রন্থ ‘যিয়াউল কুলুব’ এ লিখেছেনঃ

‘এ স্তরে উপনীত হয়ে বান্দা খোদার প্রতিনিধিরূপে খোদার পথের যাত্রীদের ঐস্তরে পৌঁছান এবং বাহ্যিকরূপে বান্দা থাকলেও বাতেনী জগতে খোদা হয়ে যান। একেই বলা হয় ‘বরয্খ’। এখানে অপরিহার্যতা ও সম্ভাবনা এক সমান- একটির উপরে অন্যটির প্রাধান্য নেই। এস্তরে পৌঁছে আরেফ (খোদার পরিচয় প্রাপ্ত) জগত নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা পালনকারী হয়ে যান। 

(যিয়াউল কুলুব গ্রন্থ, দেওবন্দের রাশেদ কোম্পানীর আশরাফিয়া কুতুবখানা কর্তৃক মুদ্রিত- ২৯ পৃষ্ঠায় ‘মরাতেব কা বয়ান’ শীর্ষক বর্ণনা দেখুন।)


বিঃদ্রঃ- এখানে যে ‘অপরিহার্যতা ও সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে এগুলো সম্পর্কে কিছু ধারণা থাকা প্রয়োজন। আল্লাহকেই বলা হয় ‘ওয়াজিবুল উযুদ’ অর্থাৎ তার অস্তিত্ব’ একান্ত অপরিহার্য। আর আল্লাহ ছাড়া সমগ্র সৃষ্টি জগতকে ‘মুমকিনুল উযুদ’ নামে অভিহিত করা হয় অর্থাৎ এর অস্তিত্ব সম্ভপর, অপরিহার্য নয়। সুতরাং, ‘অপরিহার্য’ ও সম্ভাবনা কথা দু’টি যথাক্রমে খোদার ও মাখলুকের অস্তিত্বের প্রকৃতি নির্ণয় করে।

সুধী পাঠকবৃন্দ, এখন গভীরভাবে চিন্তা করে দেখুন, পীর সাহেব বান্দাকে অভ্যন্তরীণ দিক থেকে খোদা মেনে নিয়েছেন এবং সেই বান্দাকে জগৎ পরিচালনার ক্ষেত্রে সক্রিয়ভাবে তৎপর বলে স্বীকার করেছেন।


❏১৯৬১ ইংরেজী সনের ৯ই জুলাই, রবিবার রাওয়াল পিন্ডির ‘জংগ’ পত্রিকায় একটি খবর প্রকাশিত হয় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ আইয়ুব খান সাহেব আমেরিকা সফরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হচ্ছেন। তখন মৌলানা ইহতেশামুল হক সাহেব দেওবন্দী প্রেসিডেন্টের বাহুতে ‘ইমাম যামেন’ বেঁধে দেন। ১০ই জুলাই, ১৯৬১ সোমবারের ‘জংগ’ পত্রিকায় মৌলানার ছবিও ফলাও করে ছাপানো হয়। ছবিতে তাকে প্রেসিডেন্টের বাহুতে- ‘ইমাম যামেন’ বাঁধতে দেখা যায়। ‘ইমাম যামেন’ কি, হয়ত বুঝতে পারেন নি। ‘ইমাম যামেন’ হচ্ছে ইমাম হোসাইন  (رضي الله عنه) এর নামাঙ্কিত মুদ্রা (রুপিয়া) যা’ ভ্রমণকারীর বাহুতে এ উদ্দেশ্যেই বেঁধে দেওয়া হয় যে, হযরত ইমাম হোসাইন  (رضي الله عنه) তার জিম্মাদার হবেন। অর্থাৎ ইমামের জিম্মাদারীতে ভ্রমণকারীকে অর্পণ করা হয়। ভ্রমণকারী যখন সফর তেকে নিরাপদে ফিরে আসে, তখন ঐ টাকার ফাতিহাখানী করা হয়। হযরত ইমাম হোসাইন  (رضي الله عنه) এর নামে, যাঁর জিম্মাদারীতে এ ভ্রমণকারীকে অর্পণ করা হয়েছিল। এবার দেখুন, এখানে হযরত ইমাম হোসানই  (رضي الله عنه) এর সাহায্যও নেয়া হল; জনাব প্রেসিডেন্টকে তাঁর জিম্মাদারীতে অর্পণ করা হল। সুবহানাল্লাহ! কেমন ঈমান উদ্দীপক কাজ! খোদার শুকরিয়া যে, দেওবন্দীগণও এর সমর্থক হয়ে গেছে।


❏মৌলভি আশরাফ আলী থানবী সাহেব রচিত ‘ইমদাদুল ফত্ওয়া’ নামক গ্রন্থের ৪র্থ খন্ডের ‘কিতাবুল আকায়েদে ওয়াল কালাম’ শীর্ষক আলোচনায় ৯৯ পৃষ্ঠায় লিখা হয়েছেঃ “খোদা ভিন্ন অপরের থেকে যে সাহায্য সহযোগিতা চাওয়া হয়, তা’ যদি এ বিশ্বাসের বশবর্তী হয়ে চাওয়া হয় যে, যাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা হচ্ছে তিনি স্বয়ং সম্পূর্ণ ও সত্ত্বাগত জ্ঞান ও ক্ষমতার অধিকারী, তাহলে এটি ‘শিরক’। আর যদি তাঁর জ্ঞান ও ক্ষমতা প্রদত্ত বিশ্বাস করে তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা হচ্ছে তিনি জীবিত হোক বা ওফাত প্রাপ্ত, তাতে কিছু আসে যায় না। সুতরাং তিনি ফায়সালা করে দিলেন যে, সৃষ্ট জীবকে স্বয়ং সম্পূর্ণ ও সত্ত্বাগত ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে বিশ্বাস না করলে তার কাছ থেকে সাহায্য ভিক্ষা করা জায়েয, যদিও ওফাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি থেকে সাহায্য ভিক্ষা করা হয়। আমরাও তাই বলছি।


❏সে একই মৌলভি সাহেব তার রচিত কিতাব ‘নশরুত তীব’ এর শেষে ‘শমীমুল হাবীব’ নামক কাব্য গ্রন্থের আরবী কবিতার উদুর্ অনুবাদ করেছেন এবং অনূদিত অংশের নামকরণ করেছেন ‘শম্মুত তীব’। সেখানে তিনি বিনা দ্বিধায় হুযুর (ﷺ) এর সাহায্য ভিক্ষা করেছেন। সেই আরবী কবিতার চরণগুলিও সাথে সাথে উদুর্তে পদ্যাকারে অনূদিত চরণগুলিও এখানে উলে­খিত হল।


يَا شَفِيْعَ الْعِبَادِ خُذْ بِيَدِىْ – اَنْتَ فِى الْاِضطِرَا رِ مُعْتَمِدِىْ

دستگيرى كيجے ميرى نبى – كشمكش ميں تم هى هو ميرى ولى

لَيْسَ لِىْ مَلْجًا سِوَاكَ اَغِثْ – مَسَّنِىَ اَلضُّرُ سَيِّدِىْ سَنَدِيْ

بجز تمهارے هے كهاں ميرى پناه – فوج كلفت مجه په اغالب هوئ

غَشِّنِى الدَّهْرُ ابنَ عَبْدِ اللهِ – كَنْ مُغِيْثًا فَاَنْتَ لِىْ مَدَدِىْ

ابن عبدالله زمانه هے خلاف – اے مرے مولى خبر ليجے مرے

نام احمد چوں حصينے شد حصين – پس چه باشد ذات آں روح الامين

(نشر الطيب فى ذكر الحبيب-১৮৬)


বঙ্গানুবাদঃ নবী হে আমার, আমার হাত ধরে রক্ষা করুন। আশা-নিরাশার দোদুল্যমান অবস্থায় যখন কিং কর্তব্যবিমুঢ় হয়ে পড়ি, সে সময় আপনিই আমার অভিভাবক ও সাহায্যকারী, আপনার আশ্রয় ছাড়া আমি কার আশ্রয় নিব। আশ্রয় দিন। সংকট, দুঃখ-দুর্দশার সৈন্য-সামন্ত আমাকে পরাভূত করে দিয়েছে। ওগো ইবন আবদুল্লাহ, কালের বিবর্তন চলছে আমার প্রতিকূলে, হে আমার মওলা, আমার খবর নিন।

{আশরাফ আলী থানীবঃ নশরুত্তীবঃ ১৮৬ পৃ. করাচী থেকে প্রকাশিত}


হযরত আহমদ মুস্তাফা (ﷺ) এর পবিত্র নাম যেখানে সুরক্ষিত দূর্গের মত রক্ষাকারী হতে পারে, স্বয়ং সেই পবিত্র সত্ত্বার ক্ষমতা কতটুকু তা’ প্রণিধানযোগ্য।

 
Top