রাসুল (ﷺ) এর কাছে গায়বের কোন জ্ঞান নেই, তিনি শেষ পরিণতি সম্পর্কেও ‘অজ্ঞ' উক্তিকারী কাফিরঃ 



আর শর্তহীন বিস্তারিত জ্ঞান যা আল্লাহ তায়ালার সকল মৌলিক জ্ঞান ভান্ডারের সাথে পরিবেষ্টিত হবে। অতএব, যে আয়াতসমূহে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্যদের জ্ঞান অস্বীকার করা হয়েছে, তাতে এ উভয় অর্থই উদ্দেশ্য হবে। আর এ কথাও প্রতীয়মান হলাে যে, যে জ্ঞান বান্দাদের জন্য প্রমাণ করা হবে তা প্রদত্ত জ্ঞান, যদিও তা মুতলকুে এজমালী হােক কিংবা মুলকু ইলমে তাফসীলী’ হােক। আর প্রশংসা এ দ্বিতীয় প্রকারের দ্বারাই হয়ে থাকে।

(১) তাফসীরে কবীরে রয়েছে এটি বলা নিষেধ নয় যে, গায়ব থেকে আমরা তাই জানি, যার উপর আমাদের জন্য দলীল রয়েছে। ইমাম কাযী আয়াজ (رحمة الله) থেকে নাসীমুর রিয়াদ শরহে শিফাতে’ বর্ণিত আছে- “আল্লাহ তায়ালা আমাদের গায়বের প্রতি, বিশ্বাস স্থাপন করা সম্পর্কে কষ্ট দিবেন না। বরং এর দ্বারা অকাট্যভাবে গায়বের দ্বার উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। আল্লামা ইবনে জরীর আয়াতে করীমা এর ব্যাখ্যায় ইবনে জায়েদ থেকে রেওয়ায়েত করেন- ‘গায়ব’ হলাে কুরআন'। আর ইবনে যর থেকে বর্ণনা করেন-- ৫-১০ (দানীন) হলাে কৃপন, আর -- (গায়ক) হলাে কুরআন। ইমাম মােজাহিদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-“তিনি সে সম্পর্কে কৃপনতা করেন না, যে সম্পর্কে তাঁর জ্ঞান রয়েছে। হযরত কাতাদাহ থেকে বর্ণিত-“নিঃসন্দেহে এ কুরআন গায়ব (অদৃশ্য বস্তু)। এটা মুহাম্মদ(ﷺ)কে প্রদান করেছেন এবং তা তাঁকে শিক্ষা দিয়েছেন।' 


আর নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা জ্ঞান দ্বারাও বান্দাদের প্রশংসা করেছেন। যেমন ইরশাদ হয়েছে-


✦(ফেরেশতাগণ ইব্রাহীমকে (আঃ) এক জ্ঞানী ছেলের সুসংবাদ প্রদান করেছেন)। 


✦আরাে ইরশাদ করেন-(নিশ্চয়ই ইয়াকুব আমার প্রদত্ত জ্ঞান। থেকে অবশ্যই জ্ঞানী) 


✦আরাে ইরশাদ করেন-(আমি খিযিরকে ইলমে লাদুন্নী। প্রদান করেছি।) 


✦আরাে ইরশাদ হয়েছে-(হে নবী (ﷺ) আপনি যা জানতেন না। আমি তা আপনাকে শিখিয়েছি।) 


আরাে অনেক আয়াতে এ প্রকারের জ্ঞানের প্রমাণ রয়েছে। যা দ্বারা বান্দাদের ‘ইলমে গায়ব (অদৃশ্য জ্ঞান) প্রদান করাই প্রমাণিত হয়। আয়াতের এটাই সঠিক মর্মার্থ। প্রকৃত পক্ষে যা থেকে না পলায়নের স্থান আছে, না অন্য কোন মর্মার্থের সম্ভাবনা। সুতরাং আপনাদের কাছে। 

স্পষ্ট হয়ে গেলাে, ধর্মীয় যেসব বক্তব্য আমি এখানে বর্ণনা করেছি তা সব - (কোরআন-হাদীস) দ্বারা অবশ্যই প্রমাণিত। যে ব্যক্তি তা থেকে কোন একটিকে অস্বীকার করে সে দ্বীনকেই অস্বীকার করে, সে ইসলামী সম্প্রদায়ের বহির্ভূত। আর এটাই সে ব্যাখ্যা দ্বারা নির্ভরযােগ্য ওলামায়ে কিরাম স্বীকৃতি-অস্বিকৃতিমূলক আয়াতগুলাের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান করেছেন। যেমন, 


✦বিখ্যাত ইমাম আবু জাকারিয়া নবভী (رحمة الله) স্বীয় ফতােয়ায় বর্ণনা করেছেন। তারপর ইমাম ইবনে হাজর মক্কী (رحمة الله) ফতােয়ায়ে হাদীসিয়ায় এবং অন্যান্যদের গায়বের ইলমের অস্বীকৃতির অর্থ হলাে, কেউ সত্তাগতভাবে নিজ পক্ষ থেকে গায়ব জানেনা, আর কারাে জ্ঞান আল্লাহর সকল জ্ঞানকে পরিবেষ্টন করতে পারে। 


সুতরাং উদীয়মান সূর্য ও অতিবাহিত দিনের ন্যায় প্রতীয়মান হলো, যারা নবীর ‘শর্তহীন ইলমে গায়ব। আল্লাহ প্রদত্ত হলেও অস্বীকার করে; যেমন আমাদের দেশের ওহাবীরা, তারা পরিস্কার ভাষায় বলে যে “এমন কি নবী (ﷺ) না স্বীয় শেষ পরিণতির কথা জানেন, না উম্মতের।” এমন একজন ভ্রষ্টের প্রশ্নের হুকুম সম্পর্কিত প্রশ্ন দিল্লী থেকে রবিউল আওয়াল ১৩১৮ হিজরী সনে আমার হস্তগত হয়েছে। এর প্রত্যুত্তরে আমি ‘আম্বাউল মােস্তফা বিহালে সিররিও ওয়াআখফা’ লিখে ওহাবীদের উপর ক্বিয়ামতে কুবরা কায়েম করেছি; সুতরাং এরা এমন বস্তু অস্বীকার করছে, যা কোরআনে করীম প্রমাণ করেছে। আর তার একথা তার ঈমানকেই অস্বীকার করেছে এবং এটাই তার অনিষ্ট ও ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট। সে তার এ কুফরী বাক্যের কারণে কাফির ও মুরতাদ। আর তার বাক্য-নবী করিম (ﷺ) না স্বীয় খাতেমার (শেষ পরিণতি) অবস্থা জানেন, না উম্মতের’ এটা দ্বিতীয় কুফর। যা অনেক সুস্পষ্ট আয়াতেরই অস্বীকার জ্ঞাপক। 


✦আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন- (আপনার জন্য দুনিয়ার চেয়ে পরকালই অতি উত্তম)


✦(অতিসত্বর আপনার প্রতিপালক আপনাকে এমনভাবে দান করবেন যে, আপনি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন।)


✦(সে দিন আল্লাহ তায়ালা নবী ও তার সাথে যারা থাকবেন, তাঁদের লজ্জিত ও অপমানিত করবেন না, তাদের ডানে ও বামে তাঁদের নুর থাকবে।) 


✦(অতিসত্ত্বর আপনার প্রতিপালক আপনাকে মাকামে মাহমুদ (প্রশংসিত স্থান) প্রদান করবেন) 


✦(হে নবীর পরিবারবর্গ, আল্লাহ। চান তােমাদের অপবিত্রতা থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে এবং তােমাদের খুব পবিত্র করতে) 


✦(নিশ্চয় আপনাকে আমি প্রকাশ্য বিজয় দান করেছি যেন আল্লাহ আপনার কারণে (১) পূর্ববর্তী ও পরবর্তীদের পাপ ক্ষমা করেন, স্বীয় নিমাত আপনার উপর পরিপূর্ণ করেন এবং আপনাকে তার দিকে সঠিক পথ প্রদর্শন ও সম্মানজনক সাহায্য প্রদান করেন। 


✦আল্লাহ তায়ালা এমনও পর্যন্ত ইরশাদ করেছেন-


خلدين فيها و يكفر عنهم سيأتهم وكان ذلك عند الله فوزا عظيما 


" (যেন আল্লাহ ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার মহিলাদের জান্নাতে প্রবেশ করান যার নিম্নদেশে নহর প্রবাহিত, তাতে তারা স্থায়ীভাবে বসবাস করবেন, তাদের থেকে তাদের পাপ মােচন করবেন আর এটাই আল্লাহর নিকট মহান সাফল্য)। আরাে ইরশাদ করেছেন-(সেই বরকতময় আল্লাহ যদি চান, তাহলে তােমাদের জন্য উত্তম করবেন জান্নাত, যার নিম্নপ্রদেশে নহরসমূহ প্রবাহমান এবং তৈরী করবেন তােমাদের জন্য উঁচু ও নীচু প্রাসাদ) - শব্দের পেশ বর্ণের সহিত যা আল্লামা ইবনে কাসীর, আমেরের ক্বিরাত এবং আসেম থেকে আবু বকরের রেওয়ায়েত হিসেবে বর্ণনা করেন। এতদ্ব্যতীত আরাে অনেক আয়াত রয়েছে। এ সম্পর্কে বহু হাদীসে মুতাওয়াতিরও রয়েছে, যা এক গভীর সমুদ্র, যার তল ও কুল পাওয়া অসম্ভব। (যারা কোরআন অস্বীকার করে বসেছে তারা) আল্লাহ ও তাঁর আয়াতের পর কোন্ হাদীসের উপর ঈমান আনবে? হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে প্রার্থনা করছি এবং কাফিরদের আঘাত থেকে আশ্রয় চাচ্ছি।


টিকাঃ

১. এটা আমাদের প্রতিপালকের রায়। তিনি কুরআনে করীমে ইরশাদ করেছেন “বাহানা করাে না, তােমরা ঈমান আনার পর কাফির হয়েছিলে।” এ আয়াতের তাফসীরে ইবনে আবী শােবা, ইবনে জরীর, ইবনে মুনজির, ইবনে আবী হাতিম ও আবু শেখ প্রমুখ মােজাহিদ থেকে বর্ণনা করেন-“কোন মুনাফিক বললাে ‘মুহাম্মদ (ﷺ) আমাদের বললেন যে, অমুকের উষ্ট্রী অমুক জঙ্গলে রয়েছে, তিনি গায়ব সম্পর্কে কি জানেন? এটা কেনইবা নবুয়তের অস্বীকার হবে না।” 


আল্লামা কুলানী (رحمة الله) মাওয়াহেবে লাদুনিয়ায় উল্লেখ করেন-“নবুয়ত হলাে গায়ব, সম্পর্কে অবগত করানাে।” তিনি আরাে বলেন - নবুয়ত নাবা’ থেকে, উৎকলিত! এর অর্থ সংবাদ। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা তাঁকে গায়ব সম্পর্কে অবগত করেছেন।


(২) “লাকা এর মধ্যে লাম কারণ বুঝানাের জন্য। আর যাম্বুন (পাপ)-এর নিসবত (সম্পৰ্ক) নগন্য সম্পর্কের কারণে অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা আপনার কারণে এবং আপনার সাথে সম্পর্ক রাখার কারণে আপনার পরিবার বর্গের ত্রুটি ক্ষমা করুন। অর্থাৎ আপনার সম্মানিত পিতা-মাতা হযরত আবদুল্লাহ ও মহিয়সী মাতা হযরত আমিনা (رضي الله عنه) থেকে হযরত আদম ও হাওয়া (আঃ) পর্যন্ত সকলের পূর্ববর্তী পাপ ও পদস্খলন এবং আপনার পরবর্তী বংশধর তথা সন্তান-সন্ততি, পৌত্র পৌত্রের সকল আত্মিক বংশধর তথা কিয়ামত পর্যন্ত আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের সকল অনুসারীর পাপ, পদস্খলন ও ভুল-ত্রুটি ক্ষমা করুন। এটাই আমাদের মতে উত্তম ও বিশুদ্ধ ব্যাখ্যা। আল্লাহই অধিক জ্ঞানী।

 
Top