৩. সদাচরণ


স্ত্রীর প্রতি স্বামীর আরেকটি গুরুত্বপুর্ন দায়িত্ব হলো স্ত্রীর সাথে সর্বদা সদ্ব্যবহার ও সদাচরণ করা। মূলতঃ স্বামী থেকে সদাচার পাওয়াটা স্ত্রীর একান্ত অধিকার বটে। কারণ বৈবাহিক সম্পর্কটাই হচ্ছে প্রেম-প্রীতি ও ভালোবাসার সম্পর্ক। ভালোবাসার অভাব ঘটলে স্বামী-স্ত্রীর দাম্পত্য সুখের জীবন বিষন্ন হয়ে পড়ে। স্বামী স্ত্রীর সাথে সদাচরণ করলে, প্রাণভরা ভালোবাসা দিলে তবেই স্ত্রীর অন্তরে স্বামীর প্রতি শ্রদ্ধা ও সম্মানবোধ সৃষ্টি হবে। ফলে স্ত্রী স্বামীর আদেশ-নিষেধ শিরোধার্য্য করে নিবে। এভাবে একটা সুন্দর সংসার গড়ে উঠবে। আল্লাহ তা’আলা স্বামীদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন-

 وَعَاشِرُوهُنَّ بِالْمَعْرُوفِ-

নিজ স্ত্রীদের সাথে সদ্ভাবে জীবনযাপন কর। ১৫০

১৫০.সূরা নিসা, আয়াত: ১৯


أكمل المؤمنين إيمانا أحسنهم خلقا وخياركم خياركم لنسائهم خلقا

-হযরত আবু হুরাইরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, মু’মিনদের মধ্যে সে অধিকতর পূর্ণ মু’মিন যে (মানুষের সাথে) উত্তম ব্যবহারকারী এবং আর তোমাদের মধ্যে সেই উত্তম, যে তার স্ত্রীদের নিকট উত্তম । ১৫১

১৫১.তিরমিযী, সূত্র. মিশকাত, পৃ. ২৮২

 

হযরত আয়িশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন

- خيركم خيركم لأهله وأنا خيركم لأهلي وإذا مات صاحبكم فدعوه- 

তোমাদের কাছে সে ব্যক্তিই উত্তম যে নিজের পরিবারের কাছে উত্তম। আর আমি হচ্ছি তোমাদের সবার চেয়ে আমার পরিবারের নিকট উত্তম। আর যখন তোমার কোন সঙ্গী মৃত্যুবরণ করে তবে তোমরা তাকে ছেড়ে দাও। অর্থাৎ তার দোষ ত্রুটি বর্ণনা করো না। ১৫২

১৫২.তিরমিযী, ইবনে মাজাহ, দারেমী, সূত্র. মিশকাত; পৃ. ২৮১

 

হযরত হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন

- فاستوصوا بالنساء خيرا فإنهن خلقن من ضلع وإن أعوج شيء في الضلع أعلاه فإن ذهبت تقيمه كسرتهوأن تركته لم يزل أعوجواستوصوا بالنساء خيرا-

তোমরা স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণের ব্যাপারে উপদেশ গ্রহণ কর। কেননা তাদেরকে পাঁজড়ের হাঁড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে আর হাঁড়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বাকা হলো উপরেরটা। সুতরাং যদি তুমি তাকে সোজা করতে যাও ভেঙ্গে ফেলবে, আর যদি ছেড়ে দাও তাহলে সর্বদা তা বাকাই থাকবে। অতএব তোমরা স্ত্রীদের সাথে উত্তম আচরণ সম্পর্কিত উপদেশ গ্রহন কর। ১৫৩

১৫৩.বুখারী ও মুসলিম, সূত্র. মিশকাত; পৃ. ২৮৩


لاَ يَفْرَكْ مُؤْمِنٌ مُؤْمِنَةً إِنْ كَرِهَ مِنْهَا خُلُقًا رَضِىَ مِنْهَا آخَرَ - 

হযরত হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, কোন মু’মিন পুরুষ (স্বামী) কোন মু’মিন নারীকে (স্ত্রী) ঘৃণা না করে ও পরিত্যাগ না করে। কারণ যদি স্ত্রীর কোন স্বভাব স্বামীর অপছন্দ হয় তাহলে হতে পারে অন্য কোন ভালো স্বভাব স্বামীর নিকট পছন্দ হতে পারে। ১৫৪

১৫৪.ইমাম মুসলিম র. (২৬১ হি), সহীহ মুসলিম, সূত্র. ইমাম নবভী র. রিয়াদুস সালেহিন, পৃ. ১৪৫

 

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কী চমৎকার বলেছেন! কোন স্ত্রীর স্বভাব স্বামীর পছন্দ নাও হতে পারে কিন্তু সব স্বভাব যে অপছন্দ হবে এমন নয়। কারণ প্রত্যেক মানুষের মধ্যে ভালো-মন্দ উভয় স্বভাব বিদ্যমান থাকে। সুতরাং স্ত্রীর কোন একটি স্বভাব স্বামীর অপছন্দ হলেও স্ত্রীর অন্য কোন স্বভাব চরিত্র নিশ্চয় তার পছন্দ হবে। যেমন কোন স্ত্রী যদি একটু রাগী হয় দেখা যায় সে আবার সরল, কাজ-কর্মে চালু, স্বামীর আত্মীয়-স্বজনের প্রতি যত্নবান কিংবা সাংসারিক বিষয়ে আন্তরিক। সুতরাং একটা মন্দ স্বভাবের উপর ভিত্তি করে স্ত্রীকে তালাক দেয়া কিংবা ঘৃণা করা উচিত নয়। বরং তাকে বুঝিয়ে মন্দ স্বভাব পরিহার করার চেষ্টা করা উচিত। এটাই ইসলামের বিধান। 


 
Top