হযরত সিদ্দিকে আকবর, ফারুকে আযম, ‘ওসমান যিন্নূরাইন (রা.) এর আক্বীদা


পর্বতমালায় রাজত্ব ও অদৃশ্য জ্ঞান-

বিশিষ্ট সাহাবিয়ে রাসূল (ﷺ), খাদেমুর রাসূল (ﷺ) সাইয়্যিদুনা হযরত আনাস ইবন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন- একদিন রাসূলে পাক (ﷺ) হযরত আবু বকর, হযরত উমর (رضي الله عنه) এবং হযরত ওসমান (رضي الله عنه) কে সাথে নিয়ে উহুদ পর্বতে চড়ে বসলে পাহাড় কম্পন শুরু করে। তখন নবীজি (ﷺ) তাঁর পা মুবারক পাহাড়ে মেরে ইরশাদ করেন- 


اثْبُتْ أُحُدُ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ نَبِيٌّ، وَصِدِّيقٌ، وَشَهِيدَانِ


-‘‘হে ওহুদ শৃঙ্গধর, থাম! তোমার উপর একজন নবী, একজন সিদ্দিক, আর দু’জন শহীদ আরোহিত।’’ ৫৬

{৫৬. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৫/৯ পৃ. হা/৩৬৭৫, হা/৩৬৮৬, খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩/১৭১৭পৃ. হা/৬০৮৩, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৩৭/৪৮৬ পৃ. হা/২২৮১১, ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৬/৬৫ পৃ. হা/৩৬৯৭, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, হা/২৯১০, সুনানি আবি দাউদ, ৪/২১২ পৃ. হা/৪৬৫১, সহীহ ইবনে হিব্বান, ১৪/৪১৬ পৃ. হা/৬৪৯২}


‘আক্বীদা

হুযুর আক্বা আলাইহিস সালামের কর্তৃত্ব পর্বতমালার উপর এবং পাহাড়ও তাঁর নির্দেশ পালন করে থাকে। আর সাহাবায়ে কিরামও এই ‘আক্বিদা পোষণ করতেন যে, তিনি (ﷺ) উম্মাতের অন্তিম অবস্থা কীরূপ হবে সে ব্যাপারে সম্যক অবগত। শহিদকে তখনই শহিদ নামে আখ্যায়িত করা হয়, যখন তার শরীর থেকে প্রাণকে বিচ্ছিন্ন করা হয়। আর যদি যুদ্ধক্ষেত্রে আঘাতপ্রাপ্ত হন এবং চিকিৎসার মাধ্যমে নিরোগ হয়, তাহলে তাঁকে শহিদ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয় না; বরং ‘গাযি’ হিসেবে। আর যুদ্ধ সম্পর্কীয় কোনো অবদানে শারীরিক বন্দিশালা হতে রূহ যখন উড্ডয়ন করে, তখনই তাকে শহিদ নামে আখ্যায়িত করা হয়। তিনজন খলিফা পাশে দণ্ডায়মান আর নবীজি (ﷺ) হযরত উমর এবং ‘ওসমান (رضي الله عنه) কে শহিদ বলে সম্বোধন করে বসলেন। তাঁরা উভয়ের মধ্য হতে কেউ জানতে চাননি যে, হে আল্লাহর হাবীব! আপনি কীভাবে শহিদ বলে আখ্যায়িত করলেন? তাঁদের জিজ্ঞাসা না করাটা এ কথা প্রমাণ করে যে, তাঁদের আক্বিদা ছিল যে, নবীজি (ﷺ) জানেন- উম্মতের তিরোধান কীরূপ হবে।




সফরের উদ্দেশ্যে মাজার যিয়ারতের বৈধতা-


❏ ইমাম আব্দুর রায্যাক (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِيِّ قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَأْتِي قُبُورَ الشُّهَدَاءِ عِنْدَ رَأْسِ الْحَوْلِ، فَيَقُولُ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ بِمَا صَبَرْتُمْ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ. قَالَ: وَكَانَ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرَ وَعُثْمَانَ يَفْعَلُونَ ذَلِكَ


-“হযরত মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত্-তায়মী (رحمة الله) বলেন, আল্লাহর রাসূল (ﷺ) প্রতি বছরের শুরুতে উহুদের যুদ্ধে শহিদগণের মাজারে আসতেন। অতঃপর বলতেন, ‘আস্-সালামু আলাইকুম বিমা ছাবারতুম ফানি‘মা উকবাদ্ দারি’। তিনি বলেন, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه), হযরত উমর (رضي الله عنه) এবং হযরত উসমান (رضي الله عنه) অনুরূপ করতেন।”  ৫৭

{৫৭ . ইমাম ইবনে জারির আত-তাবারী, তাফসিরে তাবারী, হা/২০৩৪৫, সূরা রা’দ এর ২৪ নং আয়াতের ব্যাখ্যায়; মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, ৩য় খণ্ড, হা/৬৭১৬; তাফসিরে ছা’লাভী, ৫/২৮৭ পৃ:; তাফসিরে নিছাপুরী, ২/২২৭ পৃ:; তাফসিরে কুরতবী, ৯/৩১২ পৃ:; তাফসিরে আবুস সাউদ, ৫/১৮ পৃ:; তাখরিজু আহাদিছুল কাশ্শাফ, হা/৬৫১}

 

এই হাদিসের রাবী হযরত মুহাম্মদ ইবনু ইব্রাহিম আত-তায়মী (رحمة الله) একজন নির্ভরযোগ্য তাবেয়ী। 


❏ ইমাম সামসুদ্দিন যাহাবী (رحمة الله) তার সম্পর্কে লিখেন-


مُحَمَّد بن إِبْرَاهِيم التَّيْمِيّ من ثِقَات التَّابِعين


-“মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত তায়মী তিনি বিশ্বস্ত তাবেয়ীগণের একজন।” ৫৮

{৫৮. ইমাম যাহাবী, আল মুগনী ফিদ-দোয়াফা, ২/৫৪৪ পৃ. ক্রমিক. ৫২০৩}


❏ আল্লামা হাফিজ ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন-


قلت: وثقة الناس واحتج به الشيخان


-“আমি (ইবনে হাজার আসকালানী) বলছি, লোকেরা তাকে বিশ্বস্ত বলেছেন। ইমাম বুখারী ও ইমাম মুসলিম (رحمة الله) তার উপর নির্ভর করেছেন।” ৫৯

{৫৯ . ইমাম আসকালানী, লিসানুল মিযান, ৫/২০ পৃ:}

 

❏ ইমাম ইজলী (رحمة الله) {ওফাত ২৬১ হিজরী} তদীয় কিতাবে বলেন-


محمد بن إبراهيم التيمي: مدني ثقة.


-“মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আত্-তায়মী মাদানী’ বিশ্বস্ত রাবী।” ৬০

{৬০. ইমাম ইজলী, তারিখুস সিক্বাত, ক্রমিক. ১৪৩২}

 

সুতরাং ‘মুহাম্মদ ইব্রাহিম আত্ তায়মী (رحمة الله)’ এর এ হাদিসটি মুরসাল সহীহ। 


আক্বিদা

এ সহীহ্ রেওয়াত হতে জানা যায় যে, প্রিয় নবীজি (ﷺ) প্রতি বছরের শুরুতে নির্দিষ্ট দিনে উহুদের যুদ্ধের শহিদগণের মাজার যিয়ারত করতেন, এমনকি হযরত আবু বকর সিদ্দিক (رضي الله عنه), হযরত উমর (رضي الله عنه) ও হযরত উসমান (رضي الله عنه) এরূপ আমল করেছেন। সুতরাং নির্দিষ্ট দিনে কবর যিয়ারতে যাওয়া স্বয়ং রাসূলে পাক (ﷺ) ও তিন খলিফার মুস্তাহাব পর্যায়ের সুন্নাত। ৬১

{৬১. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}

 
Top