34 - بَابُ مَا جَاءَ فِي الْقُنُوْتِ فِي الْفَجْرِ

113 - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ ، أَنَّ النَّبِيَّ  لَـمْ يَقْنُتْ فِي الْفَجْرِ إِلَّا شَهْرًا وَاحِدًا، لَـمْ يُرَ قَبْلَ ذَلِكَ، وَلَا بَعْدَهُ يَدْعُوْ عَلَى انَاسٍ مِنَ الْـمُشْرِكِيْنَ.


বাব নং ৪৯. ৩৪. ফজর নামাযে দোয়া কুনূত পাঠ প্রসঙ্গে


১১৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আলকামা থেকে, তিনি ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, একমাস ছাড়া রাসূল (ﷺ)  কখনো ফজর নামাযে দোয়া কুনূত পাঠ করেন নি। এর পূর্বে বা পরে কখনো তা পাঠ করতে দেখা যায়নি। তিনি এতে কয়েকজন মুশরিকের বিরুদ্ধে বদ দোয়া করেছেন।

ব্যাখ্যা: হাদিসে বর্ণিত আছে, যে সমস্ত কাফিরের বিরোদ্ধে রাসূল (ﷺ)  বদ দোয়া করেছেন, তারা তাঁর সাথে চুক্তি করে তা ভঙ্গ করেছে এবং প্রতারণা করে বেশ কয়েকজন সাহাবীকে নিয়ে গিয়ে অত্যন্ত মর্মান্তিকভাবে শহীদ করে। এর ফলে রাসূল (ﷺ)  অন্তরে এত দুঃখ পেয়েছেন যে, তিনি এই অপকর্মকারীদের বিরোদ্ধে দোয়া কুনূতের মাধ্যমে একমাস যাবৎ বদ দোয়া অব্যাহত রেখেছিলেন।

হাদিসে বর্ণিত দোয়া কুনূত সম্পর্কে ইমামদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ (رحمة الله)’র মতে বিতর নামাযে দোয়া কুনূত পাঠ করা সুন্নত। কারণ তাদের মতে ফজরে দোয়া কুনূত একটি বিশেষ সময়ে এবং বিশেষ অবস্থার প্রেক্ষিতে শুরু হয়েছিল যা একমাস অব্যাহত থাকার পর সমাপ্ত হয়ে যায়। এটা রাসূল (ﷺ) ’র নিয়মিত আমল নয়। ফলে এটা স্থায়ী সুন্নত হতে পারেনা।

ইমাম শাফেঈ ও ইমাম মালিক (رحمة الله)’র মতে ফজর নামাযে দোয়া কুনূত পাঠ করা সুন্নত। তাঁরা আবু জাফরের সূত্রে দারেকুতনী গ্রন্থে হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হাদিস দলীল হিসেবে পেশ করেন:-ما زال رسول الله صلى الله عليه وسلم يقنت فى الصبح حتى فارق الدنيا “রাসূল (ﷺ)  ইন্তেকালের পূর্ব পর্যন্ত ফজর নামাযে দোয়া কুনূত পাঠ করেন।”   

➥ ইমাম দারেকুতুনী (رحمة الله) (৩৮৫ হিঃ), সুনানে দারেকুতুনী, খন্ড ২, পৃ, ৩৯, হাদীস নং ৯, বৈরুত

 

 দ্বিতীয় দলীল হিসেবে বুখারী শরীফে হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হাদিস পেশ করেছেন। হাদিসে আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) বলেন, আমি নামাযে তোমাদের চেয়ে রাসূল (ﷺ) ’র অতি নিকটবর্তী ছিলাম। অর্থাৎ আমি রাসূল (ﷺ) ’র সাথে তোমাদের চেয়ে অধিক নামায আদায় করেছি। হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) ফজর নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে سمع الله لمن حمده  বলার পর মু’মিনদের জন্য দোয়া করতেন এবং কাফিরদের জন্য বদদোয়া করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে সাঈদ আল মাকবিরী (رحمة الله)’র সূত্রে হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে অপর রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, নবী করিম (ﷺ)  ফজর নামাযের দ্বিতীয় রাকাতে রুকু থেকে মাথা উঠানোর পর দোয়া কুনূত পাঠ করতেন।

ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র প্রথম দলীল হলো হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফজরের দোয়া কুনূতে নাযিলা আকারের ছিল। এই দোয়া কুনূতে নাযিলা একমাস পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। এরপর তা বন্ধ হয়ে যায়। দ্বিতীয় দলীল হলো বায়হাকী বর্ণিত হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه)’র হাদিস। তিনি বলেন, আমি ইবনে ওমর (رضي الله عنه)’র সাথে ফজরের নামায আদায় করি। তিনি এই নামাযে দোয়া কুনূত পাঠ করেন নি। ইবনে আবি শায়বা ও হযরত সাঈদ ইবনে যুবাইর (رحمة الله) থেকে বর্ণিত আছে, হযরত ওমর (رضي الله عنه) ফজর নামাযে দোয়া কুনূত পাঠ করেননি। ইমাম শা’বী (رحمة الله) বলেন, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (رضي الله عنه) পড়েননি। যদি হযরত ওমর (رضي الله عنه) পড়তেন তবে হযরত ইবনে ওমর (رضي الله عنه)ও পড়তেন। ইবনে আবি শায়বা (رضي الله عنه) বলেন, হযরত আবু বকর, হযরত ওমর, হযরত ওসমান (رضي الله عنه) ফজরের নামাযে দোয়া কুনূত পড়তেন না। মুহাম্মদ ইবনে হাসান আসওয়াদ ইবনে ইয়াযিদ থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি দু’বৎসর সফরে ও বাড়িতে হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র সাথে ছিলাম। আমি তাঁকে ফজর নামাযে দোয়া কুনূত পড়তে দেখিনি।

ইবনে আবি শায়বা বলেন, একবার হযরত আলী (رضي الله عنه) শত্রুদের অনিষ্টতা থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য ফজর নামাযে দোয়া কুনূত পড়েন। এই নূতন ঘটনায় মুকতাদীগণ অবাক হলেন। ফলে হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, এই দোয়া আমরা শক্রদের উপর জয়ী হওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট সাহায্য চেয়েছি। এতে প্রতীয়মান হয় যে, এটা কুনূতে নাযিলা ছিল। যদি সর্বদা পাঠ করতেন তাহলে সাহাবায়ে কিরাম এতে অবাক হতেন না। 

তৃতীয় দলীল হলো- আবু মালিক সা‘দ ইবনে তারেক আশজাঈ তাঁর পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন, আমি রাসূল (ﷺ) ’র পিছনে ইকতিদা করে নামায আদায় করেছি, কিন্তু তিনি কুনূত পাঠ করেন নি। এমনিভাবে হযরত আবু বকর, হযরত ওমর, হযরত ওসমান এবং হযরত আলী (رضي الله عنه)’র পিছনেও নামায আদায় করেছি, কিন্তু তাঁরা নামাযে দোয়া কুনূত পাঠ করেন নি। অতঃপর তিনি বলেছেন, হে পুত্র! এটা বিদআত। ইমাম তিরমিযী, নাসাঈ ও ইবনে মাজাহ (رحمة الله) এই হাদিস বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী এই হাদিসকে হাসান বলেছেন এবং আরো বলেছেন যে, অধিকাংশ আলিম এই মত পোষণ করেন। সুতরাং উপরোক্ত দলীল সমূহের দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, আবু হানিফা (رحمة الله)’র মাযহাবই সঠিক।

শরীয়তের দৃষ্টিতে কুনূতে নাযিলা এখনো জায়েয আছে না রহিত হয়েছে, এটা জানা প্রয়োজন। পরবর্তী ওলামায়ে কিরামের বর্ণনায় প্রতীয়মান হয় যে, রাসূল (ﷺ) ’র পরও এই আমল বহাল আছে। কেননা হযরত আবু বকর ও ওমর (رضي الله عنه) যুদ্ধের সময় কুনূতে নাযিলা পাঠ করতেন। হযরত আলী (رضي الله عنه) হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه)’র বিরুদ্ধে এবং হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) হযরত আলী (رضي الله عنه)’র বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় কুনূতে নাযিলা পাঠ করেছেন।

১১৪ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِيْ سَعِيْدٍ ، عَنِ النَّبِيِّ ، أَنَّهُ لَـمْ يَقْنُتْ إِلَّا أَرْبَعِيْنَ يَوْمًا، يَدْعُوْ عَلَىٰ عُصَيَّةَ وَذَكْوَانَ، ثُمَّ لَـمْ يَقْنُتْ إِلَىٰ أَنْ مَاتَ.

১১৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতিয়্যাহ থেকে, তিনি আবু সাঈদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ)  (নামাযে) কুনূত পাঠ করেন নি। তবে উসাইয়্যা ও যাকওয়ান গোত্রের উপর চলি­শদিন কুনূতের মাধ্যমে বদ দোয়া করেছেন। এরপর মৃত্যু পর্যন্ত তিনি কুনূত পাঠ করেন নি।

 
Top