৮- بَابُ مَا جَاءَ فِي فَضْلِ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ

٣٧٢- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـهَيْثَمِ، عَنْ رَجُلٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ ، أَنَّ أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ أَسْمَرَا عِنْدَ رَسُوْلِ اللهِ  ذَاتَ لَيْلَةٍ، قَالَ: فَخَرَجَا وَخَرَجَ مَعَهُمَا، فَمَرُّوْا بِابْنِ مَسْعُوْدٍ، وَهُوَ يَقْرَأُ، فَقَالَ النَّبِيُّ : مَنْ سَرَّهُ أَنْ يَقْرَأَ الْقُرْآنَ كَمَا نَزَلَ، فَلْيَقْرَأْهُ عَلَىٰ قِرَاءَةِ ابْنِ أُمِّ عَبْدٍ . وَجَعَلَ يَقُوْلُ لَهُ: سَلْ تُعْطَهْ ، فَأَتَاهُ أَبُوْ بَكْرٍ وَعُمَرُ يُبَشِّرَانِهِ، فَسَبَقَ أَبُوْ بَكْرٍ عُمَرَ إِلَيْهِ، فَبَشَّرَهُ وَأَخْبَرَهُ: أَنَّ النَّبِيَّ  قَدْ أَمَرَهُ بِالدُّعَاءِ، فَقَالَ: اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَسْأَلُكَ إِيْمَانًا دَائِمًا لَا يَزُوْلُ، وَنَعِيْمًا لَا يَنْفَدُ، وَمُرَافَقَةَ نَبِيِّكَ فِيْ جَنَّةِ الْـخُلْدِ.


وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنِ الْـهَيْثَمِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ: أَنَّ أَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ  سَمَرا عِنْدَ النَّبِيِّ ، فَخَرَجَا وَخَرَجَا مَعَهُمَا، فَمَرُّوْا بِابْنِ مَسْعُوْدٍ وَهُوَ يَقْرَأُ فِي الصَّلَاةِ، فَقَالَ النَّبِيُّ : مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَقْرَأَ الْقُرْآنَ غَضًّا كَمَا أُنْزِلَ، فَلْيَقْرَأْهُ عَلَىٰ قِرَاءَةِ ابْنِ أُمِّ عَبْدٍ ، وَجَعَلَ يَقُوْلُ: سَلْ تُعْطَهْ ، وَذَكَرَ تَمَامَ الْأَوَّلِ.


বাব নং ১৯০. ৮. হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র ফযীলত


৩৭২.অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হায়শাম থেকে, তিনি জনৈক ব্যক্তি থেকে তিনি, আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, হযরত আবু বকর ও হযরত ওমর (رضي الله عنه) এক রাত্রে রাসূল (ﷺ) ’র খেদমতে বসে আলাপ করছিলেন। বর্ণনাকারী বলেন, ওরা দু’জন ও নবী করমি (ﷺ)  সহ একত্রে হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র নিকট গমন করেন। এ সময় তিনি পবিত্র কুরআন মাজীদ তিলাওয়াত করছিলেন। তখন নবী করমি (ﷺ)  এরশাদ করেন, যে ব্যক্তি কুরআন নাযিল যেভাবে হয়েছে সেভাবে তেলাওয়াত করতে চায়, সে যেন ইবনে উম্মে আবদে (আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ)’র তিলাওয়াতের ন্যায় তিলাওয়াত করে।


অতঃপর রাসূল (ﷺ)  ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) কে বললেন, তুমি দোয়া কর তোমার দোয়া কবুল হবে। এরপর হযরত আবু বকর ও ওমর (رضي الله عنه) তাঁকে সুসংবাদ দেয়ার জন্য তাঁর নিকট গমন করেন এবং আবু বকর (رضي الله عنه) অগ্রগামী হয়ে তাঁকে এ সংবাদ দান করেন। আর এ সংবাদও দেন যে, রাসূল (ﷺ)  তাঁকে দোয়া করতে বলেছেন। তখন তিনি এভাবে দোয়া করলেন-হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট এমন স্থায়ী ঈমান প্রার্থনা করি যা কখনো শেষ হবে না, এবং চিরস্থায়ী জান্নাতে আপনার নবীর সাথে থাকতে চাই।


অন্য বর্ণনায় হায়শাম থেকে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) সম্পর্কে বর্ণিত আছে যে, আবু বকর ও ওমর (رضي الله عنه) নবী করমি (ﷺ) ’র সাথে আলাপ করছিলেন। অতঃপর উভয় সাহাবী এবং রাসূল (ﷺ)  বের হয়ে হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র নিকট গমন করেন। এ সময় তিনি নামাযে কুরআন তিলাওয়াতে মশগুল ছিলেন। তখন নবী করমি (ﷺ)  বলেন, কুরআন যে পদ্ধতিতে নাযিল হয়েছে কেউ যদি সে পদ্ধতিতে কুরআন তিলাওয়াত পসন্দ করে তবে যেন ইবনে উম্মে আবদের ন্যায় কুরআন তিলাওয়াত করে। আর তিনি পূর্বের ন্যায় দোয়া করেন। 

(সহীহ ইবনে হিব্বান, ১৫/৫৪৩/৭০৬৮)


٣٧٣- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَوْنٍ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ: أَنَّهُ كَانَ إذَا دَخَلَ رَسُوْلُ اللهِ  بَيْتَهُ، أَرْسَلَ وَالِدَتَهُ أُمَّ عَبْدٍ تَنْظُرُ إِلَىٰ هَدْيِ النَّبِيِّ ، وَدَلِّهِ، وَسَمْتِهِ، فَتُخْبِرُهُ بِذَلِكَ، فَيَتَشَبَّهُ بِهِ.


৩৭৩.অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আউন থেকে, তিনি তার পিতা থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ)  যখন স্বীয় ঘরে প্রবেশ করতেন তখন ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) তাঁর মা উম্মে আবদকে নবী করমি (ﷺ) ’র ব্যক্তিত্ব, চরিত্র ও আকৃতি অবলোকন করার জন্য ভিতরে প্রেরণ করতেন। তিনি সব কিছু ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) কে অবহিত করতেন। আর ইবনে মাসউদ নবী করমি (ﷺ) ’র অনুসরণ করতেন।


٣٧٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَوْنٍ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ، أَنَّهُ كَانَ صَاحِبَ خَصِيْرِ رَسُوْلِ اللهِ . وَفِيْ رِوَايَةٍ: صَاحِبَ عَصَا رَسُوْلِ اللهِ . وَفِيْ رِوَايَةٍ: كَانَ صَاحِبَ رِدَاءِ رَسُوْلِ اللهِ . وَفِيْ رِوَايَةٍ: كَانَ صَاحِبَ الرَّاحِلَةِ لِرَسُوْلِ اللهِ . وَفِيْ رِوَايَةٍ: كَانَ صَاحِبَ سِوَاكِ رَسُوْلِ اللهِ ، وَصَاحِبَ الْـمَيْضَأَةِ، وَصَاحِبَ النَّعْلَيْنِ.


৩৭৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আউন থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে, ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) সম্পর্কে বলেন, তিনি রাসূল (ﷺ) ’র চাটাই বহন ও বিছানোর দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন।  অন্য এক বর্ণনায় আছে, তিনি রাসূল (ﷺ) ’র লাঠি মোবারক সংরক্ষণ করতেন।

অপর এক বর্ণনায় আছ, তিনি রাসূল (ﷺ) ’র চাদর মোবারক সংরক্ষণ করতেন। 


অন্য বর্ণনায় আছে, তিনি রাসূল (ﷺ) ’র সওয়ারীর হেফাযতের দায়িত্ব পালন করেন।


আর এক বর্ণনায় আছে, তিনি রাসূল (ﷺ) ’র মিসওয়াক, উযূর পানির পাত্র (লোটা) এবং জুতা সংরক্ষণের দায়িত্বে ছিলেন। 

(বুখারী, ৩/১৩৭৩/৩৫৫০)


ব্যাখ্যা: এক কথায় তিনি রাসূল (ﷺ)  ’র বিশেষ একনিষ্ট খাদেম ছিলেন এবং এসব খেদমতের মাধ্যমে রাসূল (ﷺ)  থেকে বিশেষ দোয়া প্রাপ্ত হয়েছিলেন।


٣٧٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ مَعْنٍ، عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ ، قَالَ: مَا كَذَبْتُ مُنْذُ أَسْلَمْتُ إِلَّا كَذِبَةً وَاحِدَةً، كُنْتُ أَرْحَلُ لِلنَّبِيِّ ، فَأَتَىٰ رَحَّالٌ مِنَ الطَّائِفِ، فَسَأَلَنِيْ: أَيُّ الرَّاحِلَةِ أَحَبُّ إِلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ ؟ فَقُلْتُ: الطَّائِفِيَّةُ الْـمَكِّيَّةُ، وَكَانَ يَكْرَهُهَا رَسُوْلُ اللهُ ، فَلَـمَّا أُتِيَ بِهَا قَالَ: مَنْ رَحَّلَ لَنَا هَذِهِ؟ قَالُوْا: رَحَّالُكَ، قَالَ: مُرُوْا ابْنَ أَمِّ عَبْدٍ، فَلْيُرَحِّلْ لَنَا، فَأُعِيْدَتْ إِلَيَّ الرَّاحِلَةُ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: قَالَ عَبْدُ اللهِ: إِنَّ النَّبِيَّ  جِيْءَ بِرَجُلٍ مِنْ أَهْلِ الطَّائِفِ، قَالَ: فَجَاءَنِيْ الطَّائِفِيُّ، فَقَالَ: أَيُّ الرَّاحِلَةِ أَحَبُّ إِلَيْهِ؟ قُلْتُ الطَّائِفِيَّةُ الْـمَكِّيَّةُ، فَخَرَجَ، فَقَالَ: مَنْ صَاحِبُ هَذِهِ الرَّاحِلَةِ؟ قِيْلَ: الطَّائِفِيُّ، قَالَ: لَا حَاجَةَ لَنَا بِهَا.


৩৭৫.অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা মা’ন থেকে, তিনি ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণের পর থেকে একটি ব্যতীত কোন মিথ্যা কথা বলিনি। আমি রাসূল (ﷺ)  এর জন্য উটের উপর হাওদা বাঁধতাম। তায়েফ থেকে একজন হাওদা বাঁধাইকারী এসে আমার কাছে জিজ্ঞাসা করলেন যে, রাসূল (ﷺ)  কোন ধরনের হাওদা অধিক পছন্দ করেন, আমি বললাম-তায়েফ ও মক্কার হাওদা। অথচ তিনি তা অপছন্দ করতেন। লোকটি হাওদা তৈরি করে আনলে রাসূল (ﷺ)  বলেন, এ হাওদা কে বেঁধেছে? সবাই বলল, আপনার হাওদা বাঁধাইকারী (আগন্তুক ব্যক্তি)। তিনি বললেন, তোমরা ইবনে উম্মে আবদেকে বল সে যেন আমার জন্য হাওদা বাঁধে। অতঃপর (ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন) আমি পুনরায় তাঁর জন্য হাওদা বেঁধেছি।


অন্য এক বর্ণনায় আছে, ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, খেদমতের জন্য একজন তায়েফ বাসীকে আনা হলো। তিনি বলেন, সে আমার কাছে জিজ্ঞাসা করে যে, রাসূল (ﷺ) ’র কাছে কোন ধরণের হাওদা পছন্দনীয়? আমি বললাম তায়েফ ও মক্কার হাওদা। অতঃপর রাসূল (ﷺ)  বের হয়ে বললেন, এ হাওদাকে কে বেঁধেছে? বলা হলো এক তায়েফবাসী। তিনি বললেন, এটা আমাদের প্রয়োজন নাই। 

(জামেউল আহাদীস, ৩৭/২১৮/৪০৪৫৭)


ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিসে বলা হয়েছে যে, ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) জীবনে একবার মিথ্যা বলেছেন। মিথ্যা বলা কবীরা গুনাহ। অথচ তিনি রাসূল (ﷺ) ’র একজন বিখ্যাত সাহাবী হওয়া সত্তে¡ও কিভাবে মিথ্যা বললেন? এর উত্তরে বলা যায় যে, তিনি রাসূল (ﷺ) ’র বিশেষ খাদেম ছিলেন। তাঁর এই খেদমত অন্য কেউ ছিনিয়ে নেওয়ার ভয়ে তিনি মাত্র একবার মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছিলেন। মূলত রাসূল (ﷺ)প্রেমে আত্মহারা হয়ে তিনি এরূপ করেছেন। 


٣٧٦- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْـهَيْثَمِ، عَنِ الشَّعْبِيِّ، عَنْ مَسْرُوْقٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ: مَا كَذَبْتُ مُنْذُ أَسْلَمْتُ إِلَّا وَاحِدَةً: كُنْتُ أَرْحَلُ لِرَسُوْلِ اللهِ ، فَأَتَىٰ رَحَّالٌ مِنَ الطَّائِفِ، فَقَالَ: أَيُّ الرَّاحِلَةِ أَحَبُّ إِلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ ؟ قُلْتُ: الطَّائِفِيَّةُ الْـمَكِّيَّةُ، قَالَ وَكَانَ يَكْرَهُهَا، فَلَـمَّا رَحَلَ لِرَسُوْلِ اللهِ  أَتَىٰ بِهَا، قَالَ: مَنْ رَحَلَ لَنَا هَذِهِ الرَّاحِلَةَ؟ قَالَ: رَحَّالُكَ الَّتِيْ أُتِيْتَ بِهِ مِنَ الطَّائِفِ، فَقَالَ: رُدُّوا الرِّحَالَةَ لِابْنِ مَسْعُوْدٍ.


৩৭৬.অনুবাদ: ইমামা আবু হানিফা হায়শাম থেকে, তিনি মাসরূক থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি ইসলাম গ্রহণের পরে মাত্র একটি মিথ্যা কথা বলেছি। আমি রাসূল (ﷺ) ’র জন্য উটের হাওদা বাঁধতাম। তায়েফ থেকে একজন হাওদা বাঁধাইকারী আগমণ করে জিজ্ঞাসা করে রাসূল (ﷺ) ’র নিকট কোন ধরণের হাওদা পসন্দনীয়? আমি বললাম, তায়েফ ও মক্কার হাওদা। তিনি বলেন, অথচ রাসূল (ﷺ)  তা অপসন্দ করতেন। অতঃপর হাওদা তৈরী করে রাসূল (ﷺ) ’র সামনে পেশ করা হলে তিনি জিজ্ঞাসা করেন, এই হাওদা আমাদের জন্য কে বেঁধেছে? উত্তর দিল তায়েফ থেকে আগত ব্যক্তি হাওদা বেঁধেছে। তিনি বললেন, উটনিকে ইবনে মাসউদের কাছে পাঠাও (যেন সে হাওদা বাঁধে)।

 
Top