━ইতিহাস সাক্ষী ইয়াজিদ চিরঅভিশপ্ত━


━এখন আসুন ইয়াজিদকে জগতবিখ্যাত ইমামগন দ্বারা Justify করি যাদেরকে আহলে হাদিস / সুন্নী / ওহাবী- তাবলিগ সবাই মানেন।━



❏ সহীহ হাদিসঃ

রাসুল [ﷺদুরুদ ] বলেছেন, যে ব্যাক্তি মদিনাবাসীর উপর অত্যাচার করে এবং তাদেরকে ভয় প্রদর্শন করে, তুমি তাঁকে ভয় প্রদর্শন কর, এমন মানুষের উপর আল্লাহ, ফেরেস্তাগন ও সকল মানুষের লা'নত বর্ষিত হোক।

[মো'জামুল আওসাত লিত তাবারানী- ২/১২৫/১]



❏ Imam Ahmed narrates this report from Sa’ib bin Khalad (RA) that the Prophet of Allah (Peace be upon him) said: 


Whosoever spreads injustice and frightened the people of Madina, then Curse (Lanah) of Allah, his Angels and all the people is upon such a person. 


[Musnad Ahmed bin Hanbal as narrated by Imam Ibn Kathir in Al Bidayah Wal Nihayah Vol 8 Page No. 274]



 ইয়াজিদ এর অভিশপ্ত কর্মকান্ডঃ



❏ ইয়াজিদ আল-কুরআনকে ত্যাগ করেছিল 



এয়াযীদের কুরআন প্রত্যাখ্যান

নিচের রেফারেন্সগুলো দেখুন –

১. আল-বেদায়া ওয়ান নেহায়া ৮ম খণ্ড, ২০৪ পৃষ্ঠা,

যিকর রাস আল-হুসাইন

২. মিনহাজ আস্ সুন্নাহ ২য় খণ্ড, ২৪৯ পৃষ্ঠা, যিকর

এয়াযীদ

৩. শরহে ফেকাহে আকবর, ৭৩ পৃষ্ঠা, যিকর

এয়াযীদ

৪. শরহে তাফসীরে মাযহারী, ৫ম খণ্ড, ২১

পৃষ্ঠা, সূরাহ ইবরাহীম

৫. শাযরাহ আল-যাহাব, ৬৯ পৃষ্ঠা,

যিকরে শাহাদাতে হুসাইন

৬. মাকাতাহিল হুসাইন ২য় খণ্ড, ৫৮ পৃষ্ঠা,

যিকরে শাহাদাতে হুসাইন

৭. তাযকিরায়ে খাওওয়াস, ১৪৮ পৃষ্ঠা

৮. তারীখে তাবারী ১১তম খণ্ড, ২১-২৩ পৃষ্ঠা,

যিকর ২৮৪ হিজরী

৯. তাফসীরে রূহুল মা’আনী (সূরা মোহাম্মদ

সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম)


❏ ওহাবী সালাফী সুন্নী সকলের গ্রহনযোগ্য Scholar ইবনে কাসীর (রঃ) ৬৩ হিজরীর (কারবালার) ঘটনা সম্পর্কে নিজ ’তারিখ’ গ্রন্থে লিখেন:



فقال ابن الزبير يا هؤلاء قتل أصحابكم فانا لله وإنا إليه راجعون


وقد أخطأ يزيد خطأ فاحشا فى قوله لمسلم بن عقبة أن يبيح المدينة ثلاثة أيام وهذا خطأ كبير فاحش مع ما انضم إلى ذلك من قتل خلق من الصحابة وأبنائهم وقد تقدم أنه قتل الحسين وأصحابه على يدى عبيد الله بن زياد وقد وقع فى هذه الثلاثة أيام من المفاسد العظيمة فى المدينة النبوية مالا يحد ولا يوصف مما لا يعلمه إلا الله عز وجل وقد أراد بارسال مسلم بن عقبة توطيد سلطانه وملكه ودوام أيامه من غير منازع فعاقبه الله بنقيض قصده وحال بينه وبين ما يشتهيه فقصمه الله قاصم الجبابرة وأخذه أخذ عزيز مقتدر وكذلك أخذ ربك إذا أخذ القرى وهى ظالمة إن أخذه أليم شديد



ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه) বলেন, ওহে মানুষেরা! তোমাদের আসহাবদেরকে হত্যা করা হয়েছে - ইন্না লিল্লাহে ইন্না ইলাইহে রাজেউন। এয়াযীদ একটি ঘৃণিত ভুল কাজ করেছে মদীনা মোনাওয়ারাকে তিন দিনের জন্যে ‘মোবাহ’ হিসেবে কার্যকর করার লক্ষ্যে মুসলিম ইবনে উকবাকে আদেশ দিয়ে। এটি ছিল তার সবচেয়ে বড় ও মারাত্মক ভুল। অনেক সাহাবা-এ-কেরাম ও তাঁদের সন্তানদের হত্যা করা হয়। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে যে উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদের মাধ্যমে এয়াযীদ আমাদের রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর দৌহিত্র ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) ও তাঁর সাথীদের শহীদ করে; আর ওই তিন দিনে মদীনা মোনাওয়ারায় এমন গর্হিত অপরাধ সংঘটিত হয় তা আল্লাহ ছাড়া কেই জানেন না। এয়াযীদ তার শাসনকে মুসলিম ইবনে উকবাহের প্রেরণের মাধ্যমে সংহত করতে চেয়েছিল, কিন্তু আল্লাহতা’লা তার ইচ্ছাকে পুরো হতে দেন নি এবং তাকে শাস্তি দিয়েছিলেন। বস্তুতঃ আল্লাহ তাকে মেরে ফেলেন যেমনিভাবে তিনি আগ্রাসী শহরগুলোকে (অর্থাৎ, ওই শহরগুলোর আক্রমণকারীদেরকে) নিজ কব্জায় নিয়েছিলেন; আর নিঃসন্দেহে আল্লাহর

কব্জা কঠোর ও বেদনাদায়ক।” [আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া, ৮ম খণ্ড, ২৮৩ পৃষ্ঠা]



❏ ইয়াজিদের অনুগত সেনা ইবনে যিয়াদের মন্তব্য :-



كان يزيد كتب إلى عبد الله بن زياد أن يسير إلى الزبير فيحاصره بمكة فأبى عليه وقال والله لا أجمعهما للفاسق أبدا أقتل ابن بنت رسول الله ص وأغزو البيت الحرام وقد كانت أمه مرجانة قالت له حين قتل الحسين ويحك ماذا صنعت وماذا ركبت وعنفته تعنيفا شديدا قالوا وقد بلغ يزيد أن ابن الزبير يقول فى خطبته يزيد القرود شارب الخمور تارك الصلوات منعكف على القينات



 ইবনে যিয়াদও এয়াযীদের আচরণে বিরূপ

এয়াযীদের অপরাধ এতো গর্হিত ছিল যে এমন

কি তার অনুগত উবায়দুল্লাহ ইবনে যিয়াদ

যাকে মুসলিম ইবনে আকীল ও পরবর্তী পর্যায়ে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)-এর হত্যার জন্যে পাঠানো হয়েছিল, এবং যাকে পত্র মারফত এয়াযীদ বলেছিল মক্কায় গিয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه)-এর ওপর আবরোধ দিতে, সেও তা করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছিল: ’আল্লাহর শপথ! আমি কোনো ফাসেক (পাপী এয়াযীদ)-এর খাতিরে দুটো (অপ)- কর্মতে জড়াবো না। আমি ইতোমধ্যেই রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর মেয়ের (ঘরের)

নাতিকে হত্যা করেছি; আর এখন (সে নির্দেশ

দিচ্ছে) বায়তুল হাররামের সাথে যুদ্ধ করতে।’

তবে এয়াযীদ যখন ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)-

কে শহীদ করে, তখন তার মা মারজানা তাকে বলেন, ‘তুমি মরো গে! তুমি এই জঘন্য অপরাধ

কীভাবে করতে পারলে?’ তিনি তাকে অত্যন্ত

কঠোর ভাষায় ভর্ৎসনা করেন। এয়াযীদকে জানানো হয় যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه) তাঁর বিভিন্ন ভাষণে এয়াযীদ সম্পর্কে বলতেন, সে একজন জালিয়াত, মদ্যপ, নামায তরককারী ও গায়িকা (ভ্রষ্টা) নারীদের সাহচর্যে অবস্থানকারী ব্যক্তি।

[ইবনে কাসীর কৃত ‘আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া’,

৮ম খণ্ড, ২৭৯ পৃষ্ঠা]



❏ তিনি আরো লিখেন:-


ثم أباح مسلم بن عقبة الذى يقول فيه السلف مسرف بن عقبة قبحه الله من شيخ سوء ما أجهله المدينة ثلاثة أيام كما أمره يزيد لا جزاه الله خيرا وقتل خيرا خلقا من أشرافها وقرائها وانتهب أموالا كثيرة منها ووقع شر وفساد عريض على ما ذكره غير واحد فكان ممن قتل بين يديه صبرا معقل بن سنان وقد كان صديقه قبل ذلك ولكن أسمعه فى يزيد كلاما غليظا فنقم عليه بسببه



ইবনে কাসীর আরও বর্ণনা করেন:

মুসলিম ইবনে উকবা, যার অপর পরিচিতি আস্ সাইফ মুসরাফ বিন উকবা নামে (আল্লাহ এই বদ ও মূর্খ লোকের কল্যাণ না করুন, আমীন),

সে এয়াযীদের আদেশে মদীনা মোনাওয়ারার

আক্রমণকে ‘বৈধতা’ দিয়েছিল তিন দিনের জন্যে।

আল্লাহতা’লা এয়াযীদকে ‘জাযা’ ও ’খায়র’ মন্ঞ্জুর

না করুন, আমীন। সে বহু ন্যায়বান মানুষের

হত্যা সংঘটন করে এবং মদীনার বিপুল মালামাল

লুঠপাট করে। একাধিক বর্ণনায় এসেছে যে সে ওখানে প্রচুর ক্ষতি সাধন করে এবং অনেক ফাসাদের জন্ম দেয়। এও উল্লেখিত হয়েছে যে (সাহাবী) হযরত মুয়াফল ইবনে সানান (رضي الله عنه)-কে ইবনে উকবার সামনে বেঁধে রাখা হয় এবং তারপর শহীদ করা হয়। এই সময় সে বলে, ‘তুমি এয়াযীদের বন্ধু ছিলে, কিন্তু পরে তুমি তার বিরুদ্ধে কঠোর ভাষা ব্যবহার করেছ; তাই এয়াযীদ তোমার

প্রতি বিরূপ ভাবাপন্ন হয়েছে। [আল-বেদায়াহ

ওয়ান্ নেহায়াহ, ৮ম খণ্ড, ২৮০ পৃষ্ঠা]



❏ নেতৃস্থানীয় তাবেঈ সাঈদ

ইবনে মুসাইয়েব (رحمة الله)-এর প্রতি এয়াযীদের

বৈরিতা আল-মুদাইনী (رحمة الله) বলেন যে,"



قال المدائنى وجىء إلى مسلم بسعيد بن المسيب فقال له بايع فقال أبايع على سيرة أبى بكر وعمر فأمر بضرب عنقه فشهد رجل إنه مجنون فخلى سبيله


অর্থ: হযরত সাঈদ ইবনে মুসাইয়েব (رحمة الله)-কে নিয়ে আসা হয়

মুসলিম বিন উকবার সামনে। সে তাঁকে তার

কাছে বায়াত (আনুগত্য) গ্রহণ করতে বলে।

তিনি এর জবাবে বলেন, “আমি (শুধু)

সাইয়্যেদুনা হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও

সাইয়্যেদুনা হযরত উমর (رضي الله عنه)-এর সীরাতের

(আদর্শের) প্রতি বায়াত নিতে পারি।” এমতাবস্থায়

ইবনে উকবা তাঁকে হত্যার নির্দেশ দেয়। কিন্তু

কেউ একজন (তাঁকে বাঁচাবার জন্যে) বলেন

যে এই ব্যক্তি (হযরত সাঈদ) পাগল।

এতে তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়। [ আল-বেদায়াহ

ওয়ান্ নেহায়াহ, ৮ম খণ্ড, ২৮১ পৃষ্ঠা]



❏ ইবনে কাসীরের ভাষ্য –

ইবনে কাসীর তার রচিত ‘আল-বেদায়া’ গ্রন্থের

৮ম খণ্ডের ১১৬৯ পৃষ্ঠায় ‘যিকরে এয়াযীদ বিন

মোয়াবিয়া’ শীর্ষক অধ্যায়ে লিখেন:

”বিভিন্ন বর্ণনায় আমরা জানতে পারি যে এয়াযীদ

দুনিয়ার কুকর্ম পছন্দ করতো; মদ্যপান করতো,

গান-বাজনায় ছিল আসক্ত, দাড়িবিহীন ছেলেদের

সাথে সমকামিতায় লিপ্ত, ঢোল বাজাতো, কুকুর

পালতো, ব্যাঙের, ভালুকের ও বানরের লড়াই

লাগিয়ে দিতো। প্রতিদিন সকালে সে মদ্যপ

অবস্থায় বানরকে ঘোড়ার পিঠের

সাথে বেঁধে ঘোড়াকে দৌড় দিতে বাধ্য

করতো।” [আল-বেদায়া ওয়ান্ নেহায়া, ৮ম খণ্ড,

১১৬৯ পৃষ্ঠা]



❏ ইবনে আসীরের মন্তব্য:-


ইবনে আসীর নিজ ’তারীখ আল-কামিল’

গ্রন্থের ৩য় খণ্ডের ৪৫০ পৃষ্ঠায় মুনযির

ইবনে যাবীর থেকে বর্ণনা করেন:

”এটি সত্য যে এয়াযীদ আমাকে ১,০০,০০০ (এক

লক্ষ) দিরহাম পুরস্কারস্বরূপ দিয়েছিল, কিন্তু এটি তার

প্রকৃত

অবস্থা বর্ণনা করা হতে আমাকে রুখবে না।

আল্লাহর কসম, সে একজন মাতাল।”



❏ ইমাম নাসাফী রহ্‌মতুল্লাহি আলাইহি তাঁর “কিতাবুল আক্বায়িদ” বলেছেন, “ইয়াযিদের উপর, ইবনে যিয়াদের উপর, আহলে বাইত-এর সদস্যগণের শহীদকারীদের উপর লা’নত বর্ষিত হোক।”

(আকাইদে নাসাফী পৃ ১৬২)



❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) এর মন্তব্য :-



❏ ইমাম যাহাবী (রঃ) বর্ণনা করেন,

”এয়াযীদ ছিল এক জঘন্য নসিবী (আহলে বায়তকে ঘৃণাকারী)। সে রাজত্ব আরম্ভ করে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)-কে শহীদ করে এবং রাজত্বের ইতি টানে হাররা-এর ঘটনা দ্বারা (অর্থাৎ, মদীনা অবরোধ, যার দরুন সহীহ হাদীস মোতাবেক সে লা’নতের যোগ্য হয়)। ফলে মানুষেরা তাকে ঘৃণা করতো; অধিকন্তু সে জীবনে রহমত-বরকত কিছুই পায় নি; ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)-এর শাহাদাতের পরে তার বিরুদ্ধে অনেকে অস্ত্র তুলে নেন - যেমনটি করেছিলেন মদীনাবাসীগণ, যাঁরা আল্লাহর ওয়াস্তে (তার বিরুদ্ধে) রুখে দাঁড়ান।”

[‘সিয়্যার আল-আ’লম আন্ নুবালা’, ৪র্থ খণ্ড, ৩৭-৩৮ পৃষ্ঠা]



❏ ইমাম যাহাবী তাঁর ইতিহাস গ্রন্থে আরও বলেন,

“আমি বলি, এয়াযীদ মদীনাবাসীদের সাথে যে আচরণ করেছিল, এবং ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) ও তাঁর বংশধরদের যেভাবে হত্যা করেছিল, আর যেভাবে মদ্যপান ও গর্হিত কাজে লিপ্ত হয়েছিল, তাতে মানুষেরা তাকে ঘৃণা করতেন এবং তার বিরুদ্ধে একাধিকবার রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। আল্লাহতা’লা এয়াযীদের জীবনে রহমত-বরকত দেন নি; উপরন্তু, আবু বিলাল মিরদাস্ বিন আদইয়া আল-হানযালী তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান।”

[তারিখুল ইসলাম ওয়া তাবাকাত আল-মাশাহির ওয়াল্ আ’লম, ০০৫ খণ্ড, ৩০ পৃষ্ঠা]



❏ ইমাম যাহাবী আরও লিখেন, “যিয়াদ

হারসী বর্ণনা করে: ‘এয়াযীদ আমাকে মদ পান

করতে দেয়। আমি ইতিপূর্বে কখনোই এ রকম

মদ পান করি নি; তাই তাকে জিজ্ঞেস

করি কোথা থেকে সে এই মদের উপাদান

সংগ্রহ করেছে। এয়াযীদ জবাবে বলে,

এটি মিষ্টি ডালিম, ইসপাহানের মধু, হাওয়াযের চিনি,

তায়েফের আঙ্গুর ও বুরদাহ-এর

পানি দ্বারা প্রস্তুতকৃত।’ আহমদ

ইবনে মাসামা বর্ণনা করেন: ‘একবার এয়াযীদ

মদ্যপান করে নাচা আরম্ভ করে; হঠাৎ

সে পড়ে যায় এবং তার নাক দিয়ে রক্ত

বেরুতে আরম্ভ করে’।” [সিয়ার আল-আ’লম

আন্ নুবালাহ, ০০৪ খণ্ড, ০৩৭ পৃষ্ঠা]



❏ হাফিজুল হাদিস ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) ইয়াজিদ সম্পর্কে মন্তব্য:-



❏ বুখারী শারীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাকার শায়খুল ইসলাম

ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) তাঁর রচিত


‘আল-এমতা’ বিল আরবাঈন’ শীর্ষক বইয়ের পুরো শিরোনামই দিয়েছেন :-


’'ইয়াযীদের প্রতি লা’নত’'


وأما المحبة فيه والرفع من شأنه فلا تقع إلا من مبتدع فاسد الاعتقاد فإنه كان فيه من الصفات ما يقتضي سلب الإيمان عمن يحبه لأن الحب في الله والبغض في الله من الإيمان والله المستعان


ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) লিখেছেন,

“ইয়াযীদকে ভক্তি ও তার প্রশংসা ’পথভ্রষ্ট, গোমরাহ ব্যক্তি ছাড়া আর কেউই করে না; আর তার ইমান তথা বিশ্বাস একেবারেই শূন্য। কেননা, ইয়াযীদের এমন সব বৈশিষ্ট্য ছিল যার ভক্ত, অনুরক্ত হলে কুফর তথা কুফরির তথা অবিশ্বাসের যোগ্য হতে হয; কারন, কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে ভালোবাসা এবং কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে ঘৃণা করাই হল ঈমানের লক্ষণ।”


তথ্যসুত্র :

[দার আল- কুতুব আল-’এলমিয়্যা, বৈরুত, লেবানন হতে ১৯৯৭ সালে প্রকাশিত ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী প্রণীত ‘আল-’ইমতা বিল্ আরবাঈন আল-মাতবাইনাত আস্ সামা’আ’ (الإمتاع بالأربعين المتباينة السماع), পুস্তকের ৯৬ পৃষ্ঠা]


❏ ইমাম ইবনে হাজার ইয়াজিদের ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন : ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রাঃ) তাঁর তফসীরে, ইয়াজিদের ‘মাগফুর’ বা ক্ষমাপ্রাপ্ত হওয়ার ধারণাটিকে ধূলিসাৎ করেছেন এভাবে , “ ইবনে মুহলাব বলেছেন যে, এই হাদীসে আমীর মুয়াবিয়ার কথা ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন তিনি প্রথম নৌ অভিযান করেছিলেন এবং এই হাদীসে ইয়াযিদের কথাও ইঙ্গিত করা হয়েছে কারন সে প্রথম কাইসারের নগরী আক্রমন করেছিল (এই তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা কারন ইয়াযিদ প্রথম যুদ্ধে অংশগ্রহন করে নি সে অনেক পরের একটি অভিযানে তার পিতা কর্তৃক শাস্তিস্বরুপ প্রেরিত হয়েছিল- লেখক) কিন্তু, ইবনে আল তীন এবং ইবনে আল্ মূনীর এর উত্তর দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, ইহা অপরিহার্য নয় যে, ব্যতিক্রম ব্যতিরেকে সকলেই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত কারন উলামায়ে ক্বিরাম তথা জ্ঞানী ব্যক্তিবর্গ সকলেই একমত যে, তারাই এই ক্ষমাপ্রাপ্তির অন্তর্ভুক্ত হবে যারা প্রকৃতই তার উপযুক্ত হবে কারন আক্রমনকারীদের মধ্যে যদি কেউ পরে মুরতাদ হয়ে যায় তাহলে সে আর ক্ষমাপ্রাপ্তগনের অন্তর্ভুক্ত বলে বিবেচিত হবে না এবং এটা প্রমান যে উক্ত হাদীসে উল্লেখিত ক্ষমাপ্রাপ্তির বিষয়টি শর্তাধীন।

[ তথ্যসূত্র : ফাতহুল বারী শারাহ সাহীহ বুখারী - ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী – খন্ড নং ৬ – পৃ নং ২০০-২০১ ]



❏ তিনি আরো লিখেন :-


قال يحيـى بن عبد الملك بن أبـي غنية أحد الثقات، ثنا نوفل بن أبـي عقرب ثقة قال: كنت عند عمر بن عبد العزيز فذكر رجل يزيد بن معاوية، فقال: قال أمير المؤمنين يزيد، فقال عمر: تقول أمير المؤمنين يزيد، وأمر به فضرب عشرين سوطاً


“ইয়াহইয়া ইবনে আব্দিল মুলক্ বিন আবি গানিয়্যা যিনি ’সিকা (নির্ভরযোগ্য) বর্ণনাকারীদের একজন’, তিনি ‘সিকা’ বর্ণনাকারী নওফল বিন আবি আকরাব থেকে শুনেছেন: একবার খলীফা উমর ইবনে আবদিল আযীয (২য় উমর)-এর দরবারে মানুষেরা এয়াযীদ ইবনে মু’আবিয়া সম্পর্কে আলাপ করছিলেন। ওই সময় এক লোক এয়াযীদকে ‘আমীরুল মো’মেনীন’ (ঈমানদারদের শাসক) খেতাবে সম্বোধন করে। এটি শুনে খলীফা ২য় উমর (রাগান্বিত হয়ে) তাকে বলেন, “তুমি এয়াযীদকে আমীরুল মো’মেনীন ডেকেছ?” অতঃপর তিনি ওই লোককে ২০টি দোররা মারার হুকুম দেন। 

[ইমাম আসকালানী কৃত ‘তাহযিবুত্ তাহযিব’, ৬ষ্ঠ খণ্ডের ৩১৩ পৃষ্ঠা]



❏ হাফিজুল হাদিস (১ লক্ষ হাদিসের হাফিজ) ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ুতী (رحمة الله)

ইয়াজিদ সম্পর্কে বলেন:-



❏ ইমাম জালালউদ্দীন সৈয়ুতী (رحمة الله) ’তারিখুল

খুলাফা’ গ্রন্থে যা বলেন –


”আপনি (ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু) শাহাদাত বরণ করেন এবং আপনার কর্তিত শির ইবনে যিয়াদের সামনে একটি থালায় করে আনা হয়। আপনাকে যে ব্যক্তি হত্যা করেছে তার ওপর

আল্লাহর লা’নত (অভিসম্পাত); আরও লা’নত

ইবনে যিয়াদ ও এয়াযীদের ওপর।” 

[ইমাম সৈয়ুতী রচিত ‘তারিখুল খুলাফা’ গ্রন্থের ১৬৫ পৃষ্ঠা]



❏ ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতি (رحمة الله) বলেন-


ﻗﺎﻝ ﻧﻮﻓﻞ ﺑﻦ ﺍﺑﻲ ﺍﻟﻔﺮﺍﺕ ﻛﻨﺖ ﻋﻨﺪ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻌﺰﻳﺰ ﻓﺬﻛﺮ ﺭﺟﻞ ﻳﺰﺩ ﻓﻘﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺍﻣﻴﺮ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﻳﺰﻳﺪ

ﺑﻦ ﻣﻌﺎﻭﻳﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻲ ﻋﻨﻪ ﻓﺎﻝ ﺗﻘﻮﻝ ﺍﻣﻴﺮ ﺍﻟﻤﺆﻣﻮﻳﻦ ؟ ﻭﺍﻣﺮ ﺑﻦ ﻓﻀﺮﺏ ﻋﺸﺮﻳﻦ ﺳﻮﻃﺎ


অর্থ: নাওফিল ইবনু আবী ফিরায়াত (رحمة الله) বলেন, আমি খলীফা উমর ইবনে আব্দুল আযীয (رحمة الله) উনার নিকট ছিলাম, সেখানে এক ব্যক্তি ইয়াজিদ প্রসঙ্গে বর্ননা করতে গিয়ে বলে ফেলেছিল ” হযরত মুয়াবিয়া রদ্বিয়াল্লাহু আনহুর পুত্র আমীরুল মু’মিনিন ইয়াযীদ বলেছে।”” এ কথা শোনার সাথে সাথেই খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয (رحمة الله) বলে উঠলেন, তুমি ইয়াযীদকে আমীরুল মু’মিনিন বলছো ? হযরত উমর বিন আব্দুল আযীয (رحمة الله) তিনি লোকটিকে দোররা মারার নির্দেশ দিলেন। তখনই লোকটিকে বিশটি দোররা মারা হয়।”

তথ্যসূত্রঃ

➥ তারীখুল খুলাফা লি জালালুদ্দীন

সূয়ুতী (رحمة الله) ১৬৭ পৃষ্ঠা।


❏ হাররার ঘটনার বিবরণ


হাররার ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে  মুসলিম শরীফের বরাতে  ইমাম সৈয়ুতী (رحمة الله) আরও লিখেন:


৬৩ হিজরীতে এয়াযীদ

জানতে পারে যে মদীনাবাসী মুসলমানবৃন্দ

তাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং তার বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাই সে এক বিশাল সৈন্যবাহিনী পবিত্র নগরীতে প্রেরণ করে এবং মদীনাবাসীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। পবিত্র নগরী লুঠপাটের পরে সে তার বাহিনীকে পবিত্র মক্কায় পাঠায় সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর (رضي الله عنه)-কে শহীদ করার জন্যে। ওই সময় ‘হাররা’-এর ঘটনা ঘটে। হাররায় কী ঘটেছিল আপনারা জানেন কি? এ প্রসঙ্গে (তাবেঈ) হযরত হাসসান বলেন, “মদীনা মোনাওয়ারায় হামলা হলে পর কেউই নিরাপদ ছিলেন না। অসংখ্য সাহাবী ও অন্যান্য মানুষ শহীদ হন এবং মদীনায় লুঠপাট হয়; আর সহস্র সহস্র কুমারী মেয়ের ইজ্জত নষ্ট করা হয়। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহে রাজেউন। …


মহানবী (ﷺ) এরশাদ করেন:

“মদীনাবাসীকে যে কেউ (সন্ত্রাসের

মাধ্যমে) হয়রানি বা ভীত-সন্ত্রস্ত করলে আল্লাহ-ও তাকে অনুরূপ প্রতিদান দেবেন এবং তার ওপর আল্লাহর লা’নত, ফেরেশতাকুল ও মানব জাতির (মো’মেনদের) লা’নত-ও” (মুসলিম শরীফ)।



মদীনাবাসী মুসলমানবৃন্দ

যে কারণে এয়াযীদের বায়াত গ্রহণ করেন নি,

তা হলো সে ’অত্যধিক পাপাচারে লিপ্ত’ ছিল।

আল-ওয়াকিদী সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ বিন

খাযলাতাল গুসাইল (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন,

তিনি বলেন: “আল্লাহর শপথ! আমরা এয়াযীদের

বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছি যখন আমরা নিশ্চিত

হয়েছি যে ‘আমাদের প্রতি আসমান থেকে পাথর নিক্ষেপ করা হবে’; কেননা, এয়াযীদী গোষ্ঠী তাদের মা, বোন ও কন্যাদের বিয়ে করা আরম্ভ করেছিল, প্রকাশ্যে মদ্যপান করছিল এবং নামাযও তরক করছিল।” ইমাম যাহাবী বলেন, এয়াযীদ ‘মদ্যপান ও অন্যান্য কুকর্মে লিপ্ত’ হবার পর মদীনাবাসীদের প্রতি জুলুম-নিপীড়ন করলে মক্কাবাসী মুসলমানবৃন্দও চারদিক থেকে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আল্লাহতা’লা এয়াযীদের জীবনে কোনো রহমত-বরকত দেন নি। (এয়াযীদ মক্কা আক্রমণ করে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদিয়াল্লাহু আনহুকেও শহীদ করে)।

 [ইমাম সৈয়ুতী প্রণীত ‘তারিখুল খুলাফা’

গ্রন্থের ১৬৭ পৃষ্ঠা]

 
Top