বিষয় নং- ১৩: আযানের দোয়ায় “শাফায়াতাহু” যোগে দোয়া পড়া।


বর্তমানকালে কিছু নামধারী আলেম তারা রাসূল (ﷺ) এর শাফায়াতকে অস্বীকার করে আযানের দোয়ায়- 


وَاجْعَلْنَا فِي شَفَاعَتِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ


এই যোগে কাউকে পড়তে দেখলে বিদ‘য়াত বলে থাকেন। অপরদিকে ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার “হাদীসের নামে জালিয়াতি” গ্রন্থের ৪৮৬ পৃষ্ঠায় লিখেন, -“কোন সহীহ বা যয়ীফ সনদে আযানের দুআর মধ্যে এ বাক্যটি বর্ণিত হয় নি।” তাই সরাসরি হাদিস উলে­খ করাই গুরুত্বপূর্ণ মনে করছি। তবে বলে রাখা ভাল হাদিস শরীফে وَاجْعَلْنَا فِي شَفَاعَتِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ  কিয়ামতের দিন তাঁর তথা রাসূল (ﷺ) এর শাফায়াত আমাদের নসীব করুন- উক্তিটি উলে­খ রয়েছে। وَارْزُقْنَا আর وَاجْعَلْنَا হল সমার্থক শব্দ وَارْزُقْنَا শব্দের অর্থ হল নসীব করুন আর وَاجْعَلْنَا শব্দের অর্থ হল বানিয়ে দিন।


❏ ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا سَيْفُ بْنُ عَمْرٍو الْغَزِّيُّ قَالَ: نا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي السَّرِيِّ قَالَ: نا عَمْرُو بْنُ أَبِي سَلَمَةَ، عَنْ صَدَقَةَ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، عَنْ سُلَيْمَانَ بْنِ أَبِي كَرِيمَةَ، عَنْ أَبِي قُرَّةَ عَطَاءِ بْنِ أَبِي قُرَّةَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ ضَمْرَةَ السَّلُولِيِّ قَالَ: سَمِعْتُ أَبَا الدَّرْدَاءِ، يَقُولُ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - ﷺ- إِذَا سَمِعَ النِّدَاءَ قَالَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، صَلِّ عَلَى عَبْدِكَ وَرَسُولِكَ، وَاجْعَلْنَا فِي شَفَاعَتِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ . قَالَ رَسُولُ اللَّهِ - ﷺ -: مَنْ قَالَ هَذَا عِنْدَ النِّدَاءِ جَعَلَهُ اللَّهُ فِي شَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ - 


-‘‘হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  তিনি বলেন,  রাসূলে করিম (ﷺ) যখন আযান শুনতে পেতেন তখন বলতেন-“আল্লাহুম্মা রব্বা হাযিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাতি ওয়াস সালাতিল কাইয়েমাতি সলি­ আলা আবদিকা ওয়া রাসূলিকা ওয়া যাআলনা ফি শাফায়াতিহি ইয়াওমাল কিয়ামাহ” অতঃপর বলেন- যে ব্যক্তি আযানের সময় এ দোয়া পড়বে কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াতের মধ্যে আল্লাহ্ তাকে অন্তর্ভুক্ত করবেন।’’  ১৪৯

➥{তাবরানী : মু’জামুল আওসাত : ৪/৭৮ পৃ. হাদিস ৩৬৬২  ও মু‘জামুল কাবীর,  ১২/৮৫ পৃ. হাদিস,  ১২৫৫৪, হাইসামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ : ১/৩৩৩ পৃ. হা/১৮৭৯,  মাকতুবাতুল কুদসী, কায়রু,  মিশর,  অধ্যায়,  কিতাবুল আযান, ইমাম সাখাভী, মাকাসিদুল হাসানা : ২৪৮ পৃ. হা/৪৮২, আজলূনী : কাশফুল খাফা : ১/৩৫৬ পৃ. হা/১২৮৭, ইবনে হাজার মক্কী, আল-ফাতওয়ায়ে ফিকহিয়্যাহতুল কুবরা, ১/১৩১ পৃ. অধ্যায়,  আযান, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ,  বয়রুত,  লেবানন, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/১১৬ পৃ. হা/৩৯৬, দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, শাওকানী, তুহফাতুল-যাকীরীন, ১/১৫৩ পৃ. কেনানী, ইত্তাহফুল খায়রুল মুহরাহ, ১/৪৯০ পৃ. হা/৯১৫}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ আল্লামা নূরুদ্দীন হাইসামী (رحمة الله) উক্ত হাদিসের সনদ সম্পর্কে বলেন-


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَفِيهِ صَدَقَةُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ السَّمِينُ ضَعَّفَهُ أَحْمَدُ وَالْبُخَارِيُّ وَمُسْلِمٌ وَغَيْرُهُمْ، وَوَثَّقَهُ دُحَيْمٌ وَأَبُو حَاتِمٍ وَأَحْمَدُ بْنُ صَالِحٍ الْمِصْرِيّ


-‘‘উক্ত হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তাঁর “মু‘জামুল কাবীরে” গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদিসে “সাদাকাত বিন আব্দুল্লাহ আস-সামিন” রাবী ইমাম আহমদ, বুখারী,  মুসলিম ও আরো কিছু মুহাদ্দিসগণের দৃষ্টিতে দুর্বল। তবে ইমাম দুহাইম,  আবু হাতেম  ১৫০ 

➥{আবু হাতেম : র্জারাহ ওয়া তা‘দিল : ৪/৪২৯ পৃ. হাদিস,  ১৮৮৯}



❏ আহমদ বিন সালেহ মিশরী (رحمة الله) এর দৃষ্টিতে তিনি সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’  ১৫১

➥{আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ : ১/৩৩৩ পৃ.হাদিস,  ১৮৭৯}



উসূলে হাদিসের নীতিমালা হলো কোনো রাবীকে একজামাত মুহাদ্দিস সিকাহ বললে, আর একজামাত মুহাদ্দিস তাকে দুর্বলতার ইঙ্গিত করলে সে রাবীর হাদিসের মান ‘হাসান’ স্তরের ধরে নেয়া হবে। অপরদিকে এক জামাত গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসগণ তাকে সিকাহ বলেছেন। ১৫২

➥{যাহাবী : মিযানুল ই’তিদাল : ২/৩১০ পৃ. ক্রমিক.৩৮৭২, ও তাহযীবুত তাহযীব, ৪/৪১৫.পৃ. হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়ায়েদ : ১/৩৩৩ পৃ. ১০/৬৯ পৃ. ৯/৩০৮ পৃ. ৬/২৬১ পৃ. ২/১২৯ পৃ. ৪/৩১০পৃ., মিয্যী: তাহযীবুল কামাল ফি আসমার্উ-রিযাল : ৭/৭৮-৭৯ পৃ. রাবী: ২৮৪৬, আসকালানী : তাক্বরীবুত তাহযীব : ১/৩৬৬ পৃ.ক্রমিক.২৯৯২}



❏ ইমাম হাইসামী (رحمة الله) উক্ত রাবীর বর্ণনা করা আরেকটি সনদ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে উল্লেখ করেন-


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ، وَفِيهِ صَدَقَةُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ السَّمِينُ، وَثَّقَهُ أَبُو حَاتِمٍ وَجَمَاعَةٌ، وَضَعَّفَهُ غَيْرُهُمْ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ. 


-‘‘ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হাদিসটি ইমাম তাবরানী বর্ণনা করেছেন আর সনদে রাবী ‘সাদাকাত’ রয়েছেন আর তাকে ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) ও একজামাত মুহাদ্দিস সিকাহ বলেছেন, আর কেউ কেউ তাকে যঈফ বলেছেন, এ ছাড়া সনদের সমস্ত রাবীই সিকাহ।’’  ১৫৩ 

➥{হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ: ৬/২৬১ পৃ. হা/১০৫৭১}



তাই আমি বলবো, তাকে সরাসরি দ্বঈফ রাবীর অর্ন্তভুক্ত করা হলে এক জামাত ইমামের রায়কে উপেক্ষা করা হবে। 


❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার জীবনীর শুরুতেই লিখেছেন- الإِمَامُ، العَالِمُ، المُحَدِّثُ -‘‘তিনি ছিলেন হাদিসের ইমাম, বিজ্ঞ আলিম, মুহাদ্দিস।’’ 


(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩১৪ পৃ. ক্রমিক.১০৪) 


❏ ইমাম আওযায়ী (رحمة الله) তার সম্পর্কে বলেন- كَانَ مِنْ كِبَارِ العُلَمَاءِ. -‘‘তিনি অনেক বড় আলেমদের একজন।’’ 


(ইমাম যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৭/৩১৪ পৃ. ক্রমিক.১০৪)


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ইমাম আওযায়ী (رحمة الله) কতবড় ইমামদের একজন, তাঁর দৃষ্টিতে যিনি অনেক বড় আলিম তিনি অত্যন্ত দুর্বল রাবী হতে পারেন! 


❏ আল্লামা মুগলতাঈ (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


ولما ذكره ابن شاهين في الثقات قال: وثقه سعيد بن عبد العزيز بحضرة الأوزاعي.


-‘‘ইমাম ইবনে শাহীন (رحمة الله) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন এবং বলেছেন, মুহাদ্দিস সাঈদ বিন আব্দুল আযিয (رحمة الله) ইমাম আওযায়ী (رحمة الله)-এর সামনে তাকে সিকাহ বলেছেন।’’ 


(মুগলতাই, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৬/৩৬২ পৃ. ক্রমিক. ২৪৯০) 


❏ তিনি আরও উল্লেখ করেছেন- وخرج الحاكم حديثه في مستدركه. -‘‘ইমাম হাকেম (رحمة الله) তার হাদিস সহীহ হিসেবে তার মুস্তাদরাকে সংকলন করেছেন।’’


(মুগলতাই, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৬/৩৬২ পৃ. ক্রমিক. ২৪৯০)


❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


وقال عثمان الدارمي عن دحيم ثقة


-‘‘মুহাদ্দিস উসমান দারেমী (رحمة الله) বলেন, ইমাম দুহাইম (رحمة الله) তাকে সিকাহ বা বিশ্বস্ত বলেছেন।’’ 


(ইবনে হাজার, তাহযিবুত-তাহযিব, ৪/৪১৬ পৃ., ক্রমিক.৭২৭) 


❏ তিনি আরও উল্লেখ করেন-


وقال يعقوب بن سفيان عن دحيم صدقة من شيوخنا لا بأس به


-‘‘মুহাদ্দিস ইয়াকুব বিন সুফিয়ান (رحمة الله) বলেন, ইমাম দুহাইম (رحمة الله) বলেন, সাদাকাত (رحمة الله) আমাদের মাশায়েখে কিরামদের একজন, তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা নেই।’’


(ইবনে হাজার, তাহযিবুত-তাহযিব, ৪/৪১৬ পৃ., ক্রমিক.৭২৭) 


❏ যাহাবী (رحمة الله) বলেন, তিনি ইমাম আওযায়ী (رحمة الله) থেকে পাঁচহাজার হাদিস শুনেছেন।  ১৫৪

➥{ইমাম যাহাবী,  মিযানুল ই'তিদাল : ২/৩১০ পৃ. রাবী: ৩৮৭২}



❏ উক্ত রাবীকে যদি কেহ একটু শিথিলতাপূর্ণ রাবী ধরলেও হাদিসটি নিঃসন্দেহে ‘হাসান’ এর পর্যায়ভুক্ত হবে। আমি এ হাদিসটির ব্যাপারে সর্বশেষ বলবো যে সনদটি নিঃসন্দেহে ‘হাসান’ কেননা ইমাম হাইসামী (رحمة الله) এ রাবীর হাদিসকে তাঁর এ গ্রন্থে ‘হাসান’ বলে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যেমন তিনি একটি হাদিসের সনদের ব্যাপারে বলেন-


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَفِيهِ صَدَقَةُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ السَّمِينُ، وَثَّقَهُ أَبُو حَاتِمٍ وَغَيْرُهُ، وَضَعَّفَهُ جَمَاعَةٌ، فَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ.


-‘‘হাদিসটি তাবরানী তার মু‘জামুল আওসাত গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন আর সনদে ‘সাদাকাত বিন সামীন’ রয়েছেন তাকে ইমাম আবু হাতেমসহ অনেক মুহাদ্দিস তাকে সিকাহ বলেছেন, আবার এক জামাত মুহাদ্দিসীনে কিরাম তাকে দ্বঈফও বলেছেন, অতঃপর আমি বলবো, তাঁর বর্ণিত হাদিসের মান ‘হাসান’।’’  ১৫৫ 

➥{হাইসামী,  মাযমাউয যাওয়াইদ: ১০/৬৯ পৃ. হা/১৬৭১৭}



তাই সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হলো এ রাবীর বর্ণিত হাদিস ‘হাসান’ পর্যায়ের। এবার আমরা এ হাদিসের সমর্থনে আরেকটি হাদিস উল্লেখ করবো এবং সনদ বিশ্লেষণ করবো।



দ্বিতীয় হাদিস


❏ ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَلِيٍّ الْمَرْوَزِيُّ، ثنا أَبُو الدَّرْدَاءِ عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ الْمُنِيبِ، ثنا إِسْحَاقُ بْنُ عَبْدِ اللهِ بْنِ كَيْسَانَ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ نَبِيَّ اللَّهِ - ﷺ- قَالَ: مَنْ سَمِعَ النِّدَاءَ فَقَالَ: أَشْهَدُ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ، اللَّهُمَّ صَلِّ عَلَى مُحَمَّدٍ وَبَلِّغْهُ دَرَجَةَ الْوَسِيلَةِ عِنْدَكَ، وَاجْعَلْنَا فِي شَفَاعَتِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ - وَجَبَتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ- 


-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। নিশ্চয় নবী করীম (ﷺ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি আযান শ্রবণ করে অত:পর, আশহাদু আল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু ওয়া আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসূলুহু আল্লাহুম্মা ছালি­ আলায়হি ওয়াবালি­গুহু দারজাতাল ওয়া সিলাতি ইনদাকা ওয়াজা আলনা ফি শাফা আতাহু ইয়াওমাল কিয়ামাহ” আর যে এ দোয়া আযানের পর পাঠ করে তার জন্য (আমার) শাফাআত ওয়াজিব হয়ে যাবে।’’  ১৫৬

➥{তাবরানী : মু‘জামুল কাবীর : ১২/৬৬ পৃ. হা/১২৫৫৪,  ইমাম আবু শায়খ ইস্পাহানী: আল-আযান: ১/১৫২ পৃ:,  মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ৭/৭০৪ : হা/২১০১৭,  হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ১/৩৩৩ পৃ: বাব: কিতাবুল আজান,  হা/১৮৮১,  সুয়ূতি, জামিউল জাওয়ামী : হরফে মীম : হা/৫২১২, মুনযিরী : তারগীব ওয়াত তারহীব :১/১১৭ পৃ. হা/৪০০, শাওকানী, তুহফাতুল যাকীরীন, ১/১৫৩ পৃ. কিতাবুল আজান :, সুয়ূতি : জামিউল আহাদিস, ২০/৪০৯ পৃ. হা/২২৪৮১, ইবনে হাজার মক্কী, আল-ফাতওয়ায়ে আল-ফিকহিয়্যাহতুল কোবরা, ১/১৩১ পৃ. অধ্যায়,  বাবুল আযান, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ২/৫৭০ পৃ. হা/৬৭৩, আইনী, উমদাতুল ক্বারী, ৫/১২৪ পৃ.}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ উক্ত হাদিসের সনদ সম্পর্কে আল্লামা ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) বলেন-


رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَفِيهِ إِسْحَاقُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَيْسَانَ لَيَّنَهُ الْحَاكِمُ وَضَعَّفَهُ ابْنُ حِبَّانَ، وَبَقِيَّةُ رِجَالِهِ ثِقَاتٌ.-  


-‘‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী (رحمة الله) মু‘জামুল কাবীর গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন। উক্ত হাদিসের সনদে ‘ইসহাক বিন আব্দুল্লাহ কায়সান’ নামক রাবী রয়েছেন, ইমাম হাকেম  সে শিথিলতাপূর্ণ রাবী, ইমাম ইবনে হিব্বান  তাকে রাবী দুর্বল বলেছেন। এছাড়া এ সনদের সমস্ত রাবী সিকাহ।’’  ১৫৭

➥{আল্লামা ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ১/৩৩৩ পৃ. কিতাবুল আযান}



❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন-


وَفِي إِسْنَادِهِ إِسْحَاقُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ كَيْسَانَ، وَهُوَ لَيِّنُ الْحَدِيثِ.


-‘‘সনদে ইসহাক বিন আব্দুল্লাহ’ নামক রাবী রয়েছেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় নরম প্রকৃতির।’’ 


(ইবনে হাজার, ইত্তিহাফুল খায়রাতুল মিহরাহ, ১/৪৯০ পৃ. হা/৯১৫) 


❏ কোনো মুহাদ্দিসই এ হাদিসকে সরাসরি দুর্বল বলেননি, কেননা রাবী ইসহাক সামান্য দুর্বল। ইমাম ইবনে হিব্বান  বলেন, তিনি হাদিসে কিছুটা ভুল করতেন, তারপরও তিনি তাকে সিকাহ রাবির তালিকায় রেখেছেন।  ১৫৮ 

➥{ইমাম ইবনে হিব্বান, আস্-সিকাত, ৭/৫২ পৃ. ক্রমিক. ৮৯৬৮, ইবনে হাজার আসকালানী, লিসানুল মিযান, ২/৬৩ পৃ. ক্রমিক.১০৪১, যাহাবী, তারীখুল ইসলাম, ৪/৪২৬ পৃ. ক্রমিক. ২০৭, ইমাম মিয্যী, তাহযিবুল কামাল, ১৫/৪৮১ পৃ. ক্রমিক. ৩৫০৮}



❏ ইমাম মিয্যী  বলেন, উক্ত রাবির হাদিস ইমাম বুখারী  তাঁর আদাবুল মুফরাদাত ও ইমাম আবু দাউদ  তাঁর সুনানে আবি দাউদে সংকলিত হয়েছে।  ১৫৯

➥{মিয্যী,  তাহযিবুল কামাল,  ১৫/৪৮১ পৃ. ক্রমিক.৩৫০৮}



❏ উক্ত হাদিস শরীফের ইসহাক নামক রাবীকে ইমাম হাকিম لين তথা নরম প্রকৃতির। হাদিস শাস্ত্রে لين দ্বারা ‘হাসান’ সুন্দর পর্যায়ের রাবীদেরকে বুঝানো হয়ে থাকে।  ১৬০ 

➥{ইমাম সাখাভী : ফতহুল মুগীস : ১/১৯৯ পৃ.}



❏ ইমাম কিনানী আশ্-শাফেয়ী (ওফাত.৮৪০হি.) এ হাদিসটির সনদ সম্পর্কে বলেন- وَهُوَ لَيِّنُ الْحَدِيثِ -‘‘হাদিসটির সনদটি কিছুটা নরম প্রকৃতির।’’  ১৬১ 

➥{কেনানী,  ইত্তাহফুল খায়রুল মুহরাহ, ১/৪৯০ পৃ. হা/৯১৫}



❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী  বলেন ‘ইসহাক সত্যবাদী ছিলেন, তবে সে হাদিসে ভুল করতেন।  ১৬২ 

➥{আসকালানী,  তাক্বরীবুত-তাহযীব, ১/৪৪৩ পৃ.)



❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) বলেন- لينه ابو احمد الحاكم- -‘‘উক্ত রাবী ইমাম আবু আহমদ হাকেমের নিকট নরম প্রকৃতির রাবী।’’  ১৬৩

➥{ইমাম যাহাবী : মিযানুল ইতিদাল : ১/১৯৪ : রাবী : ৭৭০}



তাই বুঝা গেল যাহাবীর বক্তব্য দ্বারা তিনি উক্ত রাবীকে لين তথা নরম প্রকৃতির মতকেই গ্রহণ করেছেন, তবে দুর্বল নয়। তাই দুর্বল বলা থেকে বিরত থাকাই উচিত। তাই সর্বশেষ এই সনদের ব্যাপারে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া গেল সনদটি ‘হাসান’। অপরদিকে ফকিহগণ উক্ত দোয়াটি এভাবে বর্ণনা করেন। 


❏ اللهم رب هذه الدعوة التامة و الصلوة القائمة ات سيدنا محمدن الوسيلة و الفضيلة و الدرجة الرفيعة و ابعثه مقاما محمودن الذى وعدته و ارزقنا شفاعته يوم القيامة انك لا تخلف الميعاد-


❏ উক্ত দোয়াটি বর্ণনা করেছেন হানাফী অন্যতম ফকীহ ও ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহীম আল হালবী (رحمة الله) এর মশহুর ফতোয়ার কিতাব ছগীরীর ১৯৮ পৃষ্ঠায় আযান অধ্যায়ে। অপরদিকে আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) বুখারী শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ উমদাতুল কারী শরহে বুখারী ৫ম খণ্ডের ১২৪ পৃষ্ঠায় শাফাআত শব্দ যোগে হাদিস বর্ণনা করেছেন। 



❏ আল্লামা মুফতী আমজাদ আলী (رحمة الله) তাঁর ফিক্হ শাস্ত্রের অন্যতম গ্রন্থ বাহারে শরীয়ত এর ৪র্থ খণ্ডের ১৭৩ নং পৃষ্ঠায় রুদ্দুল মুহতার ও গুনিয়া কিতাবের উদ্ধৃতি দিয়ে উক্ত দোয়াটি বর্ণনা করেছেন। 


❏ সর্বশেষ ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরও যখন এ আমলের বিরোদ্ধে কোনো প্রমাণ দিতে পারছেন না তখন তিনি তার গ্রন্থের ৪৮৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘‘আল্লাহর কাছে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর শাফাআতের রিযক লাভের জন্য দুআ করার মধ্যে কোনো দোষ নেই।’’ 


❏ কিন্তু দেওবন্দী আলেম মাওলানা আনোওয়ার শাহ কাশ্মীরী তার এক গ্রন্থে লিখেন- فلا أصل لها -‘‘এ দোয়া পড়ার কোনো ভিত্তি নেই।’’ 


(কাশ্মীরী, আরফুয সাযী, ১/২২৩ পৃ.) 


তার মত হাদিস গবেষক আলেম দাবী করে এমনটি বলা রীতিমত আশ্চর্য জনক। মহান প্রতিপালক আমাদের সবাইকে সঠিকটা বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন

 
Top