নারী ও পুরুষ এক শ্রেণির নয়


নারী এবং পুরুষ আল্লাহর প্রবীণতম সৃষ্টি। তিনি ইচ্ছা করলে সব মানুষকে নারী অথবা পুরুষ করে সৃষ্টি করতে পারতেন। কিন্তু ভিন্ন অবয়ব দিয়ে নারীকে সৃষ্টি করার কি মহান উদ্দেশ্য ও চিন্তা বা গবেষণা বর্তমানে আমাদের মধ্যে অনুপস্থিত। বরং পাশ্চাত্য অসভ্যদের ন্যায় নারীগণকে পুরুষের সমান অধিকার আদায়ের সংগ্রামে লেলিয়ে দেয়া হচ্ছে। নারীরা জোর গলায় আওয়াজ তুলছে, আল্লাহ নাকি নারী ও পুরুষকে সমঅধিকারের ভিত্তিতে সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু এ সমঅধিকারের তাৎপর্য কি বা পদ্ধতি বা কি? এসব বিশ্লেষণ না করেই সমান অধিকারের ভুল অর্থ সৃষ্টি করে নারী প্রগতির নামে মেতে উঠেছে। কি সম্মানের আসনে অধিষ্ঠিত করে আল্লাহ নারী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন তা অনুসন্ধান না করে তথাকথিত আধুনিকতার মোহে প্রলুব্ধ হয়ে আল্লাহ প্রদত্ত সম্মানের আসন পরিত্যাগ করে লাঞ্চিতা পদদলিত ও ধর্ষিতা হয়ে আজ তারা কেবল ভোগের সামগ্রী তথা বংশখণ্ডে পরিণত হয়ে গিয়েছে। নারী শাসিত সমাজের কর্তা ব্যক্তিরা চাকুরি ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য কোটা নির্ধারণ করে দিলেই নারীদের সমস্যার সমাধান হয়ে গেল। অপর দিকে লক্ষ লক্ষ বেকার যুবক বিএ, এমএ পাস করে চাকুরি না পেয়ে সন্ত্রাস চুরি ডাকাতি করছে রিক্শা টেম্পু চালাচ্ছে। এতেও বেকারত্বের অবসান না হওয়ায় দেশ আজ কোন দিকে চলে যাচ্ছে।


কথায় আছে- মানুষ কাজ না পেলে আকাম করে। ভালো কাজ না পেলে কুকাম করে। নারীদের যাবতীয় দায়-দায়িত্ব পুরুষের। নারীর মান-সম্মান খোরপোষ কিভাবে যোগাবে তা পুরুষরাই বুঝবে। বর্তমানে এ সত্যের স্বীকৃতি না দিয়ে নারীদেরকে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ দিয়ে সীমাহীন বিশৃংখলার আমদানী করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে, কোটাপ্রাপ্ত হয়ে নারীরা চাকুরিতে প্রবেশ করেই যেসব অনর্থপাত ও লজ্জাকর ঘটনা ঘটাচ্ছে তা জাতীয় ইতিহাসকে কলঙ্কিত করছে। এসব দুর্ঘটনার ফিরিস্তি একত্রিত ও সংগৃহীত হওয়ার ব্যবস্থা হলে প্রতি মাসেই একটি করে বিরাট বই হয়ে যাবে। একেই বলে জাতীয় দুর্ভাগ্য।


আমাদের নারী সমাজকে আরো বেশি সর্বনাশ করেছে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতিপ্রাপ্ত এনজিওগুলো। এরা জানে পুরুষকে কাবু করতে হলে নারী যন্ত্র আবশ্যক তাই তারা পাড়ায় পাড়ায় মহল্লায় মহল্লায় নারী সমিতি গঠন করে তাদের সুন্দর ব্যবসা জমজমাট করেছে। এসব সমিতিতে পুরুষ সদস্য গ্রহণযোগ্য নয়। শিক্ষিত মহল অবশ্যই অবগত যে, ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কি কৌশলের জাল বিস্তার করে এদেশ জয় করে নিয়েছিল। যে কারণে আমাদের বাপ-দাদারা দু’শ বছর তাদের গোলামী করতে হয়েছিল। এনজিওদের পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদী। যার ফলে এখন দেখা যাচ্ছে, এদেশের নারী সমন্বয়ে সমিতি গঠন করা হচ্ছে এবং সুদের ব্যবসা করা হচ্ছে। কিন্তু তা ক্রমে ক্রমে সম্প্রসারিত হতে হতে আমাদের চরম কষ্টার্জিত স্বাধীনতা ছিনিয়ে নেয়ার যে ষড়যন্ত্র তা যে দিন পূর্ণত্বপ্রাপ্ত হবে সেদিন দেখা যাবে আমাদের পায়ের নীচের মাটি অনেক দূরে সরে গেছে। আমাদের জানা আছে যে, বাবা আদমকে গন্দম (নিষিদ্ধ ফল) খাওয়াতে মহিলা মা হাওয়ারও কিন্তু একটা ভূমিকা ছিল। শয়তান মা হাওয়াকেই সর্বপ্রথম তার কূটজালে আবদ্ধ করেছিল। আল্লাহ পাক বলেন, নিশ্চয়ই শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল। কিন্তু অন্যত্র আল্লাহ পাক ফরমান- “নিশ্চয়ই মহিলার চক্রান্ত মারাত্মক।” শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে তার কূটজাল থেকে বাঁচার জন্য আউযুবিল্লাহ বা লাহাওলা অলা কুওয়াতা ইত্যাদি নানা দোয়া কালাম আছে। যেগুলো পাঠ করা মাত্রই শয়তানের গায়ে আগুন লেগে যায়। অতঃপর শয়তান পালাতে বাধ্য হয়। আযানের আওয়াজ শুনলে তো শয়তানের বেহাল অবস্থা হয়ে যায়। সে পেছন বায়ু ছাড়তে ছাড়তে পালাতে থাকে। কিন্তু কোন মহিলা কাউকে সর্বনাশ করতে চাইলে শয়তানকেও সে হার মানায়। এখানে না চলে কোন দোয়া কালাম আর না চলে আযান। এখানে কামান দাগালেও কাজ হবে না। কারণ এখানে নাকি মন দেয়া নেয়া হয়। এদের একটি মন আছে। এই মনটির নাম রাক্ষুসী। এই রাক্ষুসী মনটা হয়ত আপনার জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিতে পারে, নয়তো এমন কলংক আপনার জীবনে উপহার দিবে যা আমৃত্যু আপনি অনুশোচনায় ভুগতে থাকবেন। এ ধরনের দুর্ঘটনা হাজার নয় লাখ নয় অসংখ্য অগণিত ঘটেছে ঘটছে ঘটবে- ধর্মীয় অনুশাসন না মানলে। আমার মায়ের জাতিরা এ থেকে বাঁচতে ধর্মীয় বই পুস্তক পড়ুন বা মহামনীষীদের জীবনী পড়ুন। দেখবেন কোন পুরুষকে ধ্বংস করার মন-মানসিকতা থাকবে না, কোন ছেলে উত্তক্ত করলেও তার প্রতি ঘৃণা আসবে। হয়ত এক সময় নিক্ষিপ্ত হতে পারে। বাড়ি থেকে বের হতে হলে বোরকা বা চাদরাবৃতা হয়ে বের হোন। দেখবেন যত বড় অসভ্যই হোক না কেন আপনাকে মায়ের নজরে দেখতে বাধ্য। কিন্তু হায়! এ ধরনের নছীহত উপদেশ কত যে হচ্ছে। একদিকে একদল হর-হামেশা নছীহত করছেন অপরদিকে আরেকটা বড় দল নারীকে টেনে আনছে রাজপথে। তারা মিটিং করছে হাত পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে মিছিল করছে, জোর গলায় শ্লোগান দিচ্ছে। আর পুলিশ যখন তাদেরকে লাঠিপেটা করে পরণের বস্ত্রহরণ করে নেয় তখন এই নারকীয় দৃশ্য কয়জন মানুষ সহ্য করে নিতে পারে? এ হল আধুনিক নারীর পাওনা। যেখানে গেলে নারীদের ধ্বংস অনিবার্য সেখানে আজ নারীরা দল বেঁধে যাচ্ছে। এখনও সময় আছে ফিরে আসুন আপনার ঘরে। গায়ে পড়ে এত কথা বলা হচ্ছে এজন্য যে, নারীরা পুরুষদের অর্ধাঙ্গিনী। শরীরের অর্ধেকটা যদি প্যারালাইসিস হয়ে যায় তাহলে মানুষটা যেমন চিরতরে পঙ্গু হয়ে যায় তেমনি বাংলার নারী সমাজ তথা অর্ধেকেরও বেশি স্থানচ্যুত গৃহচ্যুত হওয়ার ফলে বাংলার পুরুষ সংখ্যার অর্ধেকও আজ বিপথগামী হয়ে যাওয়ার কারণে স্বাধীনতা লাভের দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পরও দেশের কোন উন্নতি হচ্ছে না।


আমাদের অর্ধাঙ্গিনী বেহায়া নির্লজ্জ হওয়ার কারণে বাংলাদেশের অর্ধেক লোক আজ আমাদের প্যারালাইসিস হয়ে গেছে। এ কারণেই দেশের এই করুণদশা। মেয়েটা স্কুল-কলেজ থেকে অক্ষত হয়ে ফিরে আসবে কি না এ চিন্তায় আমরা প্রতিটি মা-বাবা চিন্তা করে মরছি।


নারী প্রতিবাদীনীরা সভা করে হাত পা ছুঁড়ে ছুঁড়ে জোর গলায় বলে যে, বোনেরা! আমরা পুরুষের দাসী হয়ে জীবন কাটাত সৃষ্টি হইনি। ওহে নারী! কে বলে তুমি দাসী? তাহলে কি ধর্ষকের হাতে পরে ধর্ষিতা হতে পুলিশের হাতে পরে বিবস্ত্র হতে কাঁচাবাজারে অন্যান্য মার্কেটে পুরুষের ধাক্কা টিটকারী ও ফিসফিসানী সহ্য করতে সৃষ্টি হয়েছেন? আধুনিকতা আপনাদেরকে পশুতে পরিণত করেছে। পশুর চেয়ে দাসীতো অনেক ভালো। নারীরা শুনুন, মন দিয়ে শুনুন! আপনারা দাসী নন পুরুষের সম্রাজ্ঞী। আপনারা ঘরের লক্ষী। আপনারা নির্ধারিত অঙ্গনে বসে সম্রাজ্ঞীর আসন অলংকৃত করুন। আপনাদের সেবায় পুরুষ জাতি। নিজেকে দাসী বলে নিজেই অপমানিত হবেন না। যেহেতু আপনারা আমাদের মা-বোন স্ত্রী। ২৮১

২৮১.মাওলানা মুজিবুর রহমান, জান্নাতী রমণীর গুণাবলী, পৃ. ২৪০-২৪১

 
Top