বিষয় নং-৪: জিবরাঈল (عليه السلام) হতে আল্লাহ তা‘য়ালার দূরত্ব ৭০ হাজার নূরের পর্দা: 


‘‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’’ গ্রন্থের ২৭৬ পৃষ্ঠায় ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর লিখেছেন যে,  জিবরাঈল (عليه السلام) হতে আল্লাহ্ তা‘য়ালা পর্যন্ত ৭০ হাজার নূরের পর্দা রয়েছে অথবা ৭০টি নূরের পর্দা রয়েছে, এ মর্মে কোন সহীহ হাদিস পাওয়া যায় না। নাউযুবিল্লাহ! 

তিনি এ বিষয়ে তার গ্রন্থের ২৭৭ পৃষ্ঠায় আরও লিখেন-‘‘এ অর্থের হাদিসগুলি কিছু সন্দেতীতভাবে মিথ্যা ও বানোয়াট কথা আর কিছু যয়ীফ, দুর্বল ও অনির্ভরযোগ্য কথা।’’


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এখন ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীরের ইলমের দৌড় কতটুকু তা দেখা যাবে। 


প্রথম বর্ণনা:


❏ মিশকাত শরীফে ‘বাবে মসজিদ’ অধ্যায়ে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটি হল-

وَعَن أبي أُمَامَة  ؓ قَالَ: إِنَّ حَبْرًا مِنَ الْيَهُودِ سَأَلَ النَّبِيَّ ﷺ : أَيُّ الْبِقَاعِ خَيْرٌ؟ فَسَكَتَ عَنْهُ وَقَالَ: أَسْكُتُ حَتَّى يَجِيءَ جِبْرِيلُ فَسَكَتَ وَجَاءَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَسَأَلَ فَقَالَ: مَا المسؤول عَنْهَا بِأَعْلَمَ مِنَ السَّائِلِ وَلَكِنْ أَسْأَلُ رَبِّيَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى. ثُمَّ قَالَ جِبْرِيلُ: يَا مُحَمَّدُ إِنِّي دَنَوْتُ مِنَ اللَّهِ دُنُوًّا مَا دَنَوْتُ مِنْهُ قطّ. قَالَ: وَكَيف كَانَ ياجبريل؟ قَالَ: كَانَ بَيْنِي وَبَيْنَهُ سَبْعُونَ أَلْفَ حِجَابٍ مِنْ نُورٍ. فَقَالَ: شَرُّ الْبِقَاعِ أَسْوَاقُهَا وَخَيْرُ الْبِقَاع مساجدها 

-‘‘হযরত আবু উমামা বাহেলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলল,  জনৈক ইয়াহুদী আলেম হুযূর পাক (ﷺ) কে জিজ্ঞাসা করলো যে, জমিনের মধ্যে উত্তম স্থান কোনটি? হুযূর (ﷺ) তাকে বললেন, তুমি জিবরাঈল (عليه السلام) এর আসা পর্যন্ত নীরব থাক। এই বলে তিনি নিজে নীরব থাকলেন এবং ঐ আলেমও নীরব থাকলেন। অতঃপর জিবরাঈল আসলেন। হুযূর (ﷺ) তখন বিষয়টি তার নিকট জিজ্ঞাসা করলেন। জিবরাঈল (عليه السلام) বললেন, প্রশ্নকারী অপেক্ষা (রাসূল (ﷺ) হতে) প্রশ্নকৃত ব্যক্তি (জিবরাঈল) অধিক জ্ঞাত নহে। তবে আপনি বললে আমি আমার প্রতিপালককে জিজ্ঞাসা করবো। অতঃপর জিবরাঈল (عليه السلام) বললেন,  হে মুহাম্মদ (ﷺ)! আমি আল্লাহর এত নিকটবর্তী হয়েছিলাম,  যতটা এর পূর্বে কখনও হইনি। হুযূর (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, কিভাবে এবং কত নিকটে গিয়াছিলেন? জিবরাঈল (عليه السلام) বললেন,  আমার এবং আল্লাহর মাঝে মাত্র ৭০ হাজার নূরের পর্দা বাকী ছিল। তখন আল্লাহ্ পাক বললেন, যমিনের নিকৃষ্টতর স্থান হল বাজার সমূহ এবং যমিনের উকৃষ্টতার স্থান হল মসজিদ সমূহ।’’  ১৩

১৩. খতিব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ১/২৩০পৃ.: হা/৭৪১, আলবানী, বলেন সনদটি ‘হাসান’, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৪/১৩৯ পৃ. হা/৯৯০৪


● এ হাদিসটির সনদ সহীহ। আহলে হাদিস আলবানী এটিকে মিশকাতের তাহকীকে এটিকে ‘হাসান’ বলেছেন।১৪

১৪. আলবানী, (তাহকীক) মিশকাতুল মাসাবীহ : ১/২৩০ পৃ. হা/৭৪১


দ্বিতীয় বর্ণনা:


❏ ‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

عن ابن عَبَّاسٍ ؓ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ : إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ إِسْرَافِيلَ مُنْذُ يَوْمَ خَلْقَهُ صَافًّا قَدَمَيْهِ لَا يَرْفَعُ بَصَرَهُ بَيْنَهُ وَبَيْنَ الرَّبِّ تَبَارَكَ وَتَعَالَى سَبْعُونَ نورا مَا مِنْهَا من نورٍ يدنو مِنْهُ إِلاّ احْتَرَقَ . رَوَاهُ التِّرْمِذِيّ وَصَححهُ 

রাসূলে খোদা হুযূর পুরনূর (ﷺ) ইরশাদ করেন, আল্লাহ্ পাক হযরত ইসরাফিল ফিরিশতাকে সৃষ্টি করার দিন হতে তিনি (ইসরাফিল) নিজের দুই পায়ের উপর দাড়িয়ে রয়েছেন, তিনি চোখ তুলেও অন্যদিকে তাকান না। তার ও তার প্রতিপালকের মাঝখানে সত্তরটি নূরের পর্দা রয়েছে। তিনি যে কোন একটি পর্দার নিকটবর্তী হলে তখনই তা তাকে পুড়িয়া ফেলবেন। খতিব তিবরিযী (رحمة الله) বলেন,  উক্ত হাদিসটি ইমাম তিরমিযী বর্ণনা করে বলেছেন,  হাদিসটি সহীহ।’’ ১৫

১৫. 

ক. খতিব তিবরিযী : মিশকাত শরীফ : ৪/৩৫২ : হা/৫৭৩১

খ. ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী : আস্ সুনান : বাদায়িল খালক : ৪/৩৫১ পৃ.

গ.বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ১/১৭৬পৃ. হাদিসঃ ১৫৭


তৃতীয় বর্ণনা:


❏ অনুরূপ আরও হাদিস বর্ণিত হয়েছে-

عَنْ أَنَسٍ - ؓ - عَنِ النَّبِيِّ - ﷺ - قَالَ: سَأَلْتُ جِبْرِيلَ: هَلْ تَرَى رَبَّكَ؟ قَالَ: إِنَّ بَيْنِي وَبَيْنَهُ سَبْعِينَ حِجَابًا مِنْ نُورٍ، لَوْ رَأَيْتُ أَدْنَاهَا لَاحْتَرَقْتُ. 

-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) জিবরাঈল (عليه السلام) কে প্রশ্ন করলেন আপনি কী ‘‘আল্লাহ্ তা‘য়ালাকে দেখেছেন? জিবরাঈল (عليه السلام) উত্তরে বললেন,  আমার এবং আমার প্রভুর মাঝে ৭০টি নূরের হিযাব (পর্দা) রয়েছে, সবচেয়ে কাছের পর্দার নিকটবর্তীও যদি আমি হই তাহলে আমি জ্বলে ছাই হয়ে যাবো।’’  ১৬

১৬. 

ক. তাবরানী : মু‘জামুল আওসাত : ৬/২৭৮ পৃ. হাদিস নং-৬৪০৭

খ. ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ১/৭৯ পৃ. হাদিসঃ২৫১ 

ঘ. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী: হিলইয়াতুল আউলিয়া : ৪/৬৩ পৃ

ঙ. ইমাম ইবনে হিব্বান : আজীমাত : ২/৬৭০ পৃ.

চ. খতিব তিবরিযী : মিশকাত : বাদয়িল খালক : ৪/৩৫১ পৃ. হা/৫৭২৯-৫৭৩০

ছ. ইমাম বগভী মাসাবীহুস সুন্নাহ, ৪/৩০ পৃ. হা/৪৪৫৭ 

জ. আল্লামা ইমাম যাহাবী : সিয়ারু আলামিন আন নুবালা : ৬/২৪১ পৃ.

ঝ. আল্লামা ইমাম মানাবী : ফয়জুল কাদীর : ৪/৭৮ পৃ.


● আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) লিখেন-

وَأَخْرَجَهُ الطَّبَرَانِيُّ مِنْ حَدِيثِ أَنَسٍ، وَأَنَّهُ حَدِيثٌ صَحِيحٌ

-‘‘ইমাম তাবরানী (رحمة الله) হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, নিশ্চয় এ হাদিসটি সহীহ।’’  (মেরকাত, ২/৬২০ পৃ. হা/৭৪১)


চতুর্থ বর্ণনা:


❏ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) এর সূত্রে ৭০টি নূরের পর্দা সম্পর্কে আরেকটি সনদ বর্ণিত আছে। ১৭

১৭.

(ক) তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১১/৩৭৯ পৃ. হাদিস, ১২০৬১, 

(খ) ইবনে আবি শায়খ ইস্পাহনী, আল-আযিমাত, ২/৭০০ পৃ. 

(গ) বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ১/৩১৫ পৃ. হা/১৫৫


৫ম বর্ণনাঃ


❏ তাবেয়ী ইমাম মুজাহিদ (রহ.) থেকে ৭০ হাজার পর্দার মর্মে আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে। ১৮

১৮. ইবনে আবি শায়খ ইস্পাহানী, আল-আযিমাত, ২/৬৯৩ পৃ.


৬ষ্ঠ বর্ণনাঃ


❏ সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে ৭০ হাজার পর্দার মর্মে আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে। ১৯

১৯. ইবনে হাজার হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১/৭৯ পৃ. হা/২৫৩


৭-৮তম বর্ণনাঃ


❏ এ বিষয়ে সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) ও হযরত সা‘দ (رضي الله عنه) থেকে ৭০ হাজার পর্দার মর্মে আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে। ২০

২০. 

(ক) ইবনে হাজার হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১/৭৯ পৃ. হাদিস, ২৫২ 

(খ) ইবনে হাজার আসকালানী, মুত্তালিবুল আলিয়া, ১২/৫৭৬ পৃ. হা/৩০১৬, 

(গ) আবু ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, ১/৯০পৃ. হা/৮০ 

(ঘ) মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১০/৩৬৯ পৃ. হা/২৯৮৪৬ ও ২৯৮৪৭ 

(ঙ) তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৩/৪১১ পৃ. হা/১৪২৪৮ 

(চ) ইবনে আছেম, আস্-সুন্নাহ, ২/৩৬৬ পৃ. হাদিস, ৭৮৮ 

(ছ) রুহাইনী, আল-মুসনাদ, ২/২১২পৃ. হা/১০৫৫


৯তম হাদিসঃ


❏ এ বিষয়ে সাহাবী হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে অন্য আরেকটি সূত্রে ৭০ হাজার পর্দার মর্মে আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে। ২১

২১. ইবনে হাজার হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১/৭৯ পৃ. হা/২৪৯


১০তম বর্ণনাঃ


❏ এ বিষয়ে সাহাবী হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকে অন্য আরেকটি সূত্রে ৭০ হাজার পর্দার মর্মে আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে। ২২

২২. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১০/৩৬৯ পৃ. হাদিস, ২৯৮৪৬ ও ৪৭


১১তম বর্ণনা:


❏ ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) সংকলন করেন-

وَقَالَ حَدَّثَنَا الْوَلِيد حَدَّثَنَا أَبُو حاتِم حَدَّثَنَا أَبُو سَلمَة مُوسَى بْن إِسْمَاعِيل حَدَّثَنَا حَمَّاد بْن سَلمَة حَدَّثَنَا أَبُو عمرَان الْجونِي عَن زُرارة بْن أَبِي أوفى أَن النَّبِي سَأَلَ جِبْرِيل هَلْ رَأَيْت رَبك فانتفض جِبْرِيل وَقَالَ يَا مُحَمَّد إِن بيني وَبَينه سبعين حِجَابا من نور لَو دنوتُ من أدناها لاحترقت.

-‘‘হযরত যুরারাত ইবনে আউফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) হযরত জিবরাঈল (আ.) কে রাসূল (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন যে আপনি কি মহান রবকে দেখেছেন? তখন জিবরাঈল (আ.) বললেন, আমার এবং আমার রবের মধ্যখানে ৭০ হাজার পর্দার ব্যবধান, আমি যদি প্রথম পর্দার কাছে যাই তাহলে আমি ধ্বংস হয়ে যাবে।’’  ২৩

২৩. 

(ক) ইবনে আবি শায়খ ইস্পাহনী, আল-আযিমাত, ২/৬৬৯ পৃ. 

(খ) তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৬/২৭৮পৃ. হা/৬৪০৭ 

(গ) আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৫/৫৫ পৃ. 

(ঘ) মুসলিম আনসারী দাওলাভী, আল-কূনী ওয়াল আসমা, ৩/১০০৭ পৃ. হা/১৭৬৫, ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনুআ, ১/২৩ পৃ.


●ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এ সনদ প্রসঙ্গে লিখেন- هَذَا مُسْند صَحِيح الْإِسْنَاد. -‘‘এ হাদিসটির সনদ সহীহ।’’  ২৪

২৪. ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ১/২৩ পৃ.


●ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) এ বিষয়ের হাদিসের গ্রহণযোগ্যতা সম্পর্কে লিখেন- فَهَذِهِ الطّرق تقَوِّي الحَدِيث -‘‘এটি অনেক পদ্ধতিতে বর্ণিত হওয়ায় হাদিসটি শক্তিশালী প্রমাণিত।’’২৫

২৫. ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলিল মাসনূ, ১/২৩ পৃ.


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! সকল হাদিসের ইমামগণ একমত যে মতাওয়াতির পর্যায়ের হাদিস অস্বিকারকারী কাফির। আর এ হাদিসটিও মুতাওয়াতির প্রমাণিত।

 
Top