□ 'তাক্বদীর'-এর অর্থ ও প্রকারভেদ এবং কিছু 'তাক্বদীর' পরিবর্তিত হতে পারেঃ

❏ দরসে হাদীসঃ 【হাদীস নং- (৭৩)】


○ অধ্যায়ঃ 【 ﺑﺎﺏ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺑﺎﻟﻘﺪﺭ : তাক্বদীরের উপর ঈমান আনা】(টীকাঃ১)

【 ﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻛﺘﺐ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻘﺎﺩﻳﺮ ﺍﻟﺨﻼﺋﻖ ﻗﺒﻞ ﺃﻥ ﻳﺨﻠﻖ ﺍﻟﺴﻤﻮﺕ ﻭﺍﻷﺭﺽ ﺑﺨﻤﺴﻴﻦ ﺃﻟﻒ ﺳﻨﺔ ﻗﺎﻝ ﻭﻛﺎﻥ ﻋﺮﺷﻪ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺂﺀ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ )】

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে 'আমর [ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেনঃ

“আল্লাহ্ সৃষ্টিকুলের তাক্বদীরসমূহ আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে লিপিবদ্ধ করেছেন। (টীকাঃ ২) তিনি এরশাদ করেন, তাঁর আরশ পানির উপর ছিলাে।" (টীকাঃ৩)

【মুসলিম】

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___________________________________

১. অধ্যায়ঃ 【 ﺑﺎﺏ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺑﺎﻟﻘﺪﺭ : তাক্বদীরের উপর ঈমান আনা】

◇ টীকাঃ ১. এখানে ﻋﺎﻡ (ব্যাপক)’র পর ﺧﺎﺹ (নির্দিষ্ট) উল্লেখ করা হয়েছে; যদিও ঈমানের বর্ণনায় তাক্বদীরও অন্তর্ভুক্ত ছিলাে, কিন্তু যেহেতু তাক্বদীরের মাসআলা অত্যন্ত সূক্ষ্ম ও স্পর্শকাতর, এতে ‘জবরিয়া'-'ক্বদরিয়া’ বহু বাতিল ফির্কার বিরােধপূর্ণ বিষয় রয়েছে এবং এ মাসআলা সর্বসাধারণের জন্য দুর্বোধ্য, তাই এটার পৃথক অধ্যায় নির্ধারণ করা হয়েছে। ﺗﻘﺪﻳﺮ (তাক্বদীর)’র শাব্দিক অর্থ ‘আন্দাজ করা। মহান রব এরশাদ ফরমাচ্ছেন- ﺇِﻧَّﺎ ﻛُﻞَّ ﺷَﻲْﺀٍ ﺧَﻠَﻘْﻨَﺎﻩُ ﺑِﻘَﺪَﺭٍ 【অর্থাৎ "নিশ্চয় আমি প্রত্যেক বস্তুকে একটা নির্ধারিত পরিমাপে সৃষ্টি করেছি।"(৫৪:৪৯)】 কখনও তা বিচার ও ফায়সালা অর্থেও আসে। ইসলামের পরিভাষায় ওই আন্দায ও ফয়সালাকে ‘তাক্বদীর’ বলা হয়, যা মহান রবের পক্ষ থেকে স্বীয় সৃষ্টি সম্পর্কে লিপির অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। তাক্বদীর ৩ প্রকারঃ

১. মুবরাম,

২. মুশাবাহ-ই মুবরাম ও

৩. মু‘আল্লাক্ব।

প্রথম প্রকারের তাক্বদীর পরিবর্তন হওয়া অসম্ভব। দ্বিতীয় প্রকার তাকদীর আল্লাহর বিশেষ প্রিয় বান্দাদের দো‘আয় পরিবর্তিত হতে পারে এবং তৃতীয় প্রকার সাধারণ মুসলমানদের দো‘আ এবং নেক আমলের বদৌলতে পরিবর্তিত হয়। মহান রব এরশাদ ফরমাচ্ছেন- ﻳَﻤْﺤُﻮ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣَﺎ ﻳَﺸَﺎﺀُ ﻭَﻳُﺜْﺒِﺖُ ۖ ﻭَﻋِﻨﺪَﻩُ ﺃُﻡُّ ﺍﻟْﻜِﺘَﺎﺏِ

【অর্থাৎ “আল্লাহ যা চান নিশ্চিহ্ন করেন এবং (যা চান) প্রতিষ্ঠিত করেন। আর তাঁরই কাছে রয়েছে মূললিপি।" (১৩:৩৯)】 হযরত ইব্রাহীম [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ]'কে লূত সম্প্রদায়ের জন্য দো‘আ করতে বারণ করা হয়েছিলো। কেননা, তাদের উপর দুনিয়াবী আযাবের ফয়সালা ‘মুবারাম’(নিশ্চিত) হয়ে গিয়েছিলাে। হযরত আদম [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ]’র দো'আর বরকতে হযরত দাঊদ [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ]’র বয়স ৬০ বছরের স্থলে ১০০বছর হয়ে গিয়েছিলাে। প্রথমােক্ত তাকদীর ছিল ‘মুবারাম’ পর্যায়ের। আর এটা হল ‘মু'আল্লাক্ব’।

স্মর্তব্য যে, তাক্বদীরের কারণে মানুষ পাথরের ন্যায় বাধ্য হয়ে যায়নি। নতুবা হত্যাকারীর ফাঁসি হতাে না এবং চোরের হাত কাটা যেতাে না। কেননা, মহান রবের ইলমে এটা এসেছে যে, অমুক ব্যক্তি স্বেচ্ছায় এ কাজ করবে। দোআ, ঔষধ-পথ্য, আমাদের চেষ্টা-তদবীর এবং ইখতিয়ারসমূহ সবই তাক্বদীরের অন্তর্ভুক্ত। এর বিস্তারিত বিশ্লেষণ আমার ‘তাফসীর-ই নাঈমী’: ৩য় পারায় দেখুন।

২. 【আল্লাহ্ সৃষ্টিকুলের তাক্বদীরসমূহ আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাজার বছর পূর্বে লিপিবদ্ধ করেছেন।】

◇ টীকাঃ ২. অর্থাৎ ‘ক্বলম’ লাওহ-ই মাহফূযে আল্লাহ'র হুকুমে অনাদি থেকে অনন্তকাল পর্যন্ত সকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ও বিন্দু বিন্দু করে লিখে দিয়েছে। স্মর্তব্য যে, এই লিপিবদ্ধ করা এ জন্য ছিলাে না যে, মহান রব ভুলে যাবার আশঙ্কা ছিলাে, বরং তাঁর উদ্দেশ্য ছিলাে ফিরিশতাকুল এবং কতেক প্রিয় বান্দাকে সে সম্পর্কে অবগত করানাে।【মিরক্বাত】

এ থেকে বুঝা গেল যে, আল্লাহ্ তা'আলার কিছু বান্দা সৃষ্টিজগতের সমস্ত ঘটনা সম্পর্কে অবগত। নতুবা এ লিপিবদ্ধ করা অযথা হয়ে যেতাে। লাওহ-ই মাহফূযকে ক্বোরআন-ই করীম ‘কিতাবে মুবীন' (সুস্পষ্ট কিতাব) বলেছে। অর্থাৎ স্পষ্টকারী কিতাব। যদি ‘লাওহ মাহফূয’ সকলের দৃষ্টি থেকে গােপন হতাে তাহলে ‘মুবীন’ হতােনা।

৩. 【তিনি এরশাদ করেন, তাঁর আরশ পানির উপর ছিলাে।】

◇ টীকাঃ ৩. এ থেকে বুঝা গেলাে যে, আসমান ও যমীন ইত্যাদি সৃষ্টির পূর্বেই পানির সৃষ্টি হয়েছে। আরশ পানির উপর হবার অর্থ এটাই যে, ওই দু’টির মধ্যখানে কোন আড়াল ছিলােনা। এটাও নয় যে, তা পানির উপর স্থাপন করা হয়েছিলাে। অন্যথায় আরশ সমস্ত জড়পদার্থ থেকে বহু বড়।【আশি'আহ্】

□ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ

f/Ishq-E-Mustafa ﷺ

【সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ১ম খন্ড, পৃ. ৮৬, হাদীস নং-৭৩ এবং টীকাঃ (১-৩) দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম।


 
Top