❏ দরসে হাদীসঃ 【হাদীস নং- (৭৬)】

○ অধ্যায়ঃ 【 ﺑﺎﺏ ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﺑﺎﻟﻘﺪﺭ : তাক্বদীরের উপর ঈমান আনা】

【 ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻗﺎﻝ ﺣﺪﺛﻨﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻭﻫﻮ ﺍﻟﺼﺎﺩﻕ ﺍﻟﻤﺼﺪﻭﻕ ﺃﻥ ﺧﻠﻖ ﺍﺣﺪﻛﻢ ﻳﺠﻤﻊ ﻓﻲ ﺑﻄﻦ ﺃﻣﻪ ﺃﺭﺑﻌﻴﻦ ﻳﻮﻣﺎ ﻧﻄﻔﺔ ﺛﻢ ﻳﻜﻮﻥ ﻋﻠﻘﺔ ﻣﺜﻞ ﺫﻟﻚ ﺛﻢ ﻳﻜﻮﻥ ﻣﻀﻐﺔ ﻣﺜﻞ ﺫﻟﻚ ﺛﻢ ﻳﺒﻌﺚ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻟﻴﻪ ﻣﻠﮕﺎ ﺑﺄﺭﺑﻊ ﻛﻠﻤﺎﺕ ﻓﻴﻜﺘﺐ ﻋﻤﻠﻪ ﻭﺃﺟﻠﻪ ﻭﺭﺯﻗﻪ ﻭﺷﻘﻰ ﺍﻭ ﺳﻌﻴﺪ ﺛﻢ ﻳﻨﻔﺦ ﻓﻴﻪ ﺍﻟﺮﻭﺡ ﻓﻮﺍﻟﺬﻱ ﻵ ﺇﻟﻪ ﻏﻴﺮﻩ ﺇﻥ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻟﻴﻌﻤﻞ ﺑﻌﻤﻞ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﺣﺘﻰ ﻣﺎﻳﻜﻮﻥ ﺑﻴﻨﻪ ﻭﺑﻴﻨﻬﺎ ﺍﻻ ﺫﺭﺍﻉ ﻓﻴﺴﺒﻖ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻓﻴﻌﻤﻞ ﺑﻌﻤﻞ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﻓﻴﺪ ﺧﻠﻬﺎ ﻭﺍﻥ ﺃﺣﺪﻛﻢ ﻟﻴﻌﻤﻞ ﺑﻌﻤﻞ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻨﺎﺭ ﺣﺘﻰ ﻣﺎﻳﻜﻮﻥ ﺑﻴﻨﻪ ﻭﺑﻴﻨﻬﺎ ﺇﻻ ﺫﺭﺍﻉ ﻓﻴﺴﺒﻖ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻓﻴﻌﻤﻞ ﺑﻌﻤﻞ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻓﻴﺪ ﺧﻠﻬﺎ .

‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )】

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাদিক্বুল মাসদূক্ব (সর্বস্বীকৃত সত্যবাদী) নবী [ﷺ] সংবাদ দিয়েছেন, (টীকাঃ ১৮)

❝তােমাদের মধ্যে প্রত্যেকের সৃষ্টির মূল উপাদান মায়ের পেটে চল্লিশ দিন বীর্য হিসেবে থাকে, তারপর ওই পরিমাণ সময় রক্তপিণ্ড, তারপর ওই পরিমাণ মেয়াদকাল যাবৎ মাংসপিণ্ড।(টীকাঃ ১৯) তারপর আল্লাহ তাআলা একজন ফিরিস্তাকে চারটি বিষয় বাতলিয়ে দিয়ে তার নিকট প্রেরণ করেন। (টীকাঃ ২০) তখন ওই ফিরিস্তা তার কর্ম, তার মৃত্যু, তার রিযিক্ব এবং সে কি হতভাগা না সৌভাগ্যবান- এ সবকিছুই লিপিবদ্ধ করে যায়। (টীকাঃ ২১) তারপর তাতে রূহ ফুঁকে দেওয়া হয়। অতঃপর ওই সত্তারই শপথ! যিনি ব্যতীত কোন মা'বূদ নেই; নিশ্চয় তােমাদের মধ্যে কেউ বেহেস্তীদের কাজ করতে থাকে, এমনকি তার ও বেহেশতের মধ্যখানে শুধু এক হাতের ব্যবধান থাকে, (টীকাঃ ২২) তখন হঠাৎ লিপিবদ্ধ তাক্বদীর তার সামনে এসে যায় এবং সে দোযখীদের কাজ করে বসে; (টীকাঃ ২৩) অতঃপর সে সেখানেই পৌঁছে যায়। আর তােমাদের মধ্যে কেউ দোযখীদের কাজ করতে থাকে, এমনকি তার ও দোযখের মধ্যখানে শুধু এক হাতের ব্যবধান থাকে, তখনই তার লিপিবদ্ধ তাকদীর তার সামনে এসে যায় এবং সে বেহেস্তীদের কাজ করে থাকে। অতঃপর সে সেখানেই প্রবেশ করে।❞ (টীকাঃ ২৪)

【বোখারী, মুসলিম】

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___________________________________

১. 【সাদিক্বুল মাসদূক্ব (সর্বস্বীকৃত সত্যবাদী) নবী [ﷺ] সংবাদ দিয়েছেন】

◇ টীকাঃ ১. 'সাদিক্ব’ তিনিই, যাঁর সব উক্তিই সত্য। 'মাসদূক্ব’ তিনিই, যাঁর সকল আমল সত্য। অথবা ‘সাদিক্ব’ তিনিই, যিনি বােধসম্পন্ন হয়ে সত্য বলেন এবং 'মাসদূক্ব’ ওই ব্যক্তি, যিনি শুরু থেকেই সত্যবাদী হন। অথবা ‘সাদিক্ব' হলেন যিনি বাস্তব ঘটনানুযায়ী সংবাদ দেন এবং 'মাসদূক্ব’ হচ্ছেন, যিনি স্বীয় মুবারক মুখে যা বলে দেন, বাস্তবেও তা ঘটে। নবী করীম [ﷺ]'র মধ্যে এ সর্ব গুণই বিদ্যমান।

২. 【তােমাদের মধ্যে প্রত্যেকের সৃষ্টির মূল উপাদান মায়ের পেটে চল্লিশ দিন বীর্য হিসেবে থাকে, তারপর ওই পরিমাণ সময় রক্তপিণ্ড, তারপর ওই পরিমাণ মেয়াদকাল যাবৎ মাংসপিণ্ড।】

◇ টীকাঃ ২. অর্থাৎ মায়ের গর্ভে বীর্য (শুক্রাণু) চল্লিশ দিন পর্যন্ত ওই অবস্থায় সাদা রঙেই থাকে। তারপর লাল বর্ণের রক্তে পরিণত হয়। তারপর চল্লিশ দিন পরে জমাট বেঁধে মাংস হয়।

সম্মানিত সূফীগণ বলেছেন, যেহেতু হযরত আদম [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ]’র দেহ মুবারক সৃষ্টির উপাদান চল্লিশ বছর এবং হযরত মূসা [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ]’র তুর পাহাড়ে অবস্থান চল্লিশ দিন ছিলাে, এ জন্যেই শুক্রাণুর উপর প্রত্যেক চল্লিশ দিন পর পরিবর্তন ঘটে। সুতরাং সন্তান প্রসবের পর নিফাস’র সময়সীমাও চল্লিশ দিন। বিবেক-বুদ্ধির পরিপূর্ণতাও আসে চল্লিশ বছরে। এ হাদীস শরীফ সূফীগণের চিল্লার দলীল। সুন্নী মুসলমানগণ মৃতব্যক্তির চেহলাম এ হাদীস শরীফের ভিত্তিতেই করে থাকেন। কারণ চল্লিশের মধ্যে পরিবর্তন হওয়া বিদ্যমান।

৩. 【তারপর আল্লাহ তাআলা একজন ফিরিস্তাকে চারটি বিষয় বাতলিয়ে দিয়ে তার নিকট প্রেরণ করেন।】

◇ টীকাঃ ৩. অর্থাৎ তাক্বদীর লিখক ফিরিস্তা, যিনি গর্ভস্থ শিশুর অদৃষ্ট লেখায় নিয়ােজিত একমাত্র ফিরিস্তা। তিনি সমগ্র দুনিয়ার গর্ভবতী মহিলাদের পর্যবেক্ষক। বুঝা গেলাে যে, তিনিও হাযির-নাযির (উপস্থিত-প্রত্যক্ষকারী)।

৪. 【তখন ওই ফিরিস্তা তার কর্ম, তার মৃত্যু, তার রিযিক্ব এবং সে কি হতভাগা না সৌভাগ্যবান- এ সবকিছুই লিপিবদ্ধ করে যায়।】

◇ টীকাঃ ৪. অর্থাৎ সে কি করবে, কখন ও কোথায় মৃত্যুবরণ করবে, কি কি আহার করবে, কি পান করবে এবং তার মৃত্যু কাফির অবস্থায় হবে, না মু'মিন অবস্থায়! স্মর্তব্য যে, এ বিষয়গুলাে ওই পঞ্চজ্ঞানভুক্ত, যেগুলাে সম্বন্ধে বলা হয়েছে ﻭَﻋِﻨﺪَﻩُ ﻣَﻔَﺎﺗِﺢُ ﺍﻟْﻐَﻴْﺐِ [আর তাঁরই নিকট রয়েছে অদৃশ্যভাণ্ডারের চাবিসমূহ...l(৬:৫৯)] এ ফিরিশতা আল্লাহ প্রদত্ত শিক্ষাক্রমে সমস্ত মানুষের এ সব বিষয়ে জ্ঞাত। 'মিরক্বাত’ কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ বিষয়গুলো একটি ফলকে লিখে শিশুর গলায় ঝুলানাে হয়। মহান রব এরশাদ ফরমাচ্ছেন- ﻭَﻛُﻞَّ ﺇِﻧﺴَﺎﻥٍ ﺃَﻟْﺰَﻣْﻨَﺎﻩُ ﻃَﺎﺋِﺮَﻩُ ﻓِﻲ ﻋُﻨُﻘِﻪِ (এবং প্রত্যেক মানুষের ভাগ্য আমি তার গ্রীবালগ্ন করে দিয়েছি।(১৭:১৩) চিন্তা করুন, যখন ফিরিস্তার ইলমের পরিমাণ এতটুকু হয়, তখন আমাদের প্রিয়নবী [ﷺ], যিনি আ’লামুল খালক্ব (সৃষ্টিকুলের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী), তাঁর জ্ঞান তাে আমাদের ধারণা-কল্পনার বহু ঊর্ধ্বে। আর এ ফলকে লিখা এবং গলায় ঝুলানাে এজন্যই যেন বাস্তব দৃষ্টিতে তা পড়তে পারে। স্মর্তব্য যে, লিপিবদ্ধ করা লাওহে মাহফূযেও হয়ে থাকে এবং শবে ক্বদরে ফিরিশতাদের সহীফাসমূহেও হয়ে থাকে। তাছাড়া, শিশুদের কপাল কিংবা গলার ফলকে অথবা হাতেও হয়ে থাকে; কিন্তু এ লিখন বিভিন্ন ধরনের।

৫. 【তারপর তাতে রূহ ফুঁকে দেওয়া হয়। অতঃপর ওই সত্তারই শপথ! যিনি ব্যতীত কোন মা'বূদ নেই; নিশ্চয় তােমাদের মধ্যে কেউ বেহেস্তীদের কাজ করতে থাকে, এমনকি তার ও বেহেশতের মধ্যখানে শুধু এক হাতের ব্যবধান থাকে】

◇ টীকাঃ ৫. অর্থাৎ শুধু মৃত্যুর। অর্থাৎ মৃত্যু হবে এবং ওখানে। পৌঁছে যাবে। 'এক হাত' উপমা দেওয়ার জন্য এরশাদ করেছেন।

৬. 【তখন হঠাৎ লিপিবদ্ধ তাক্বদীর তার সামনে এসে যায় এবং সে দোযখীদের কাজ করে বসে】

◇ টীকাঃ ৬. অর্থাৎ কাফির হয়ে যায়। এতে ইঙ্গিতে বলা হয়েছে। যে, মহান রব কুকর্ম ব্যতীত কাউকে দোযখে নিক্ষেপ করেন না। সুতরাং এটাই সুস্পষ্ট যে, কাফিরদের শিশুরা দোযখী নয়। (আল্লাহ ও তাঁর রসূলই সর্বাধিক জ্ঞাতা)

৭. 【অতঃপর সে সেখানেই পৌঁছে যায়। আর তােমাদের মধ্যে কেউ দোযখীদের কাজ করতে থাকে, এমনকি তার ও দোযখের মধ্যখানে শুধু এক হাতের ব্যবধান থাকে, তখনই তার লিপিবদ্ধ তাকদীর তার সামনে এসে যায় এবং সে বেহেস্তীদের কাজ করে থাকে। অতঃপর সে সেখানেই প্রবেশ করে।】

◇ টীকাঃ ৭. অর্থাৎ ঈমান এনে মুত্তাক্বী (খােদাভীরু) হয়ে মৃত্যু বরণ করে। সুতরাং কোন পাপী যেন মহান রবের করুণা থেকে নিরাশ না হয় এবং কোন নেককারও যেন স্বীয় তাকওয়ার উপর অহঙ্কার না করে। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে শুভমৃত্যু দান করুন!

স্মর্তব্য যে, জান্নাত অর্জিত হবে- নেক আমলের ভিত্তিতে, আল্লাহর দান স্বরূপ এবং তাঁর বদান্যতা ও অনুগ্রহক্রমে। এখানে আমল দ্বারা অর্জিত জান্নাতের উল্লেখ করা হয়েছে। অন্যথায় মুসলমানের শিশুরাতো, জান্নাতীই। আল্লাহ তাআলা এরশাদ ফরমান: ﺍﻟﺤﻘﻨﺎ ﺑﻬﻢ ﺫﺭﻳﺘﻬﻢ (অর্থাৎ আমি তাদের সন্তানদেরকে তাদের সাথে মিলিয়ে দিই)।

□ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ

f/Ishq-E-Mustafa ﷺ

【সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ১ম খন্ড, পৃ. ৯০,৯১, হাদীস নং-৭৬ এবং টীকাঃ (১৮-২৪) দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম।]

 
Top