অধ্যায়ঃ কিতাবুল ইমান


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (০৬)]


○ অধ্যায়ঃ [ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ : ঈমান পর্ব]

[ﻭﻋﻦ ﺍﻧﺲ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻻ ﻳﺆﻣﻦ ﺍﺣﺪﻛﻢ ﺣﺘﻰ ﺍﻛﻮﻥ ﺍﺣﺐ ﺍﻟﻴﻪ ﻣﻦ ﻭﺍﻟﺪﻩ ﻭﻭﻟﺪﻩ ﻭﺍﻟﻨﺎﺱ ﺍﺟﻤﻌﻴﻦ . ‏]

: ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )

হযরত আনাস [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, (টীকাঃ ১) তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ্ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ "তোমাদের কেউ মু'মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতামাতা, সন্তান-সন্ততি এবং সকল লোকের চেয়েও অধিক প্রিয় হবো।" (টীকাঃ ২)

[বোখারী ও মুসলিম]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

◇ টীকাঃ ১.

তিনি হলেন- আনাস ইবনে মালিক ইবনে নাদ্বর আনসারী খায়রাজী। হুযূরের বিশেষ খাদিম। দশ বছর তাঁর পবিত্র সংস্পর্শে ছিলেন। তিনি শত বছরের অধিক হায়াত পান। ফারুক্ব-ই আ'যমের যুগে বসরায় চলে যান। খুব সম্ভব তিনি সেখানেই হিজরী ৯৩ সনে ইন্তিকাল করেন। বসরায় সর্বশেষ সাহাবী হিসেবে তাঁর ওফাত হয়। তার নূরানী মাযার শরীফ সর্বস্তরের মানুষের যিয়ারতস্থল।★

★ উল্লেখ্য, তিনি ওই ৪ জন সৌভাগ্যবান সাহাবীর অন্যতম, যাঁরা হুযূরের খেদমত করে বিশেষ নি'মাতের অধিকারী হয়েছেন। তাঁরা হলেন-

এক. হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ]। তিনি হুযূরের খিদমতের ফলে নবীগণের পর সর্বশ্রেষ্ঠ মানব হবার গৌরব লাভ করেন।

দুই. হযরত আনাস [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ]। তিনি দীর্ঘ দশ বছর যাবদ হুযূরের খেদমত করলে হুযূর তাঁর দীর্ঘায়ু ও অধিক সন্তানের জন্য দো'আ করেন। ফলে তিনি এত দীর্ঘ হায়াত লাভ করেন যে, শেষ বয়সে তিনি লোক সমক্ষে আসতেও সঙ্কোচ বোধ করতেন। কারণ, তিনি নিজ হাতে পুত্র ও পৌত্রসহ সর্বমোট ১০৪ জনকে দাফন করার সুযোগ পান। এতে তাঁর দীর্ঘায়ু ও সন্তানের আধিক্য সহজে অনুমেয়।

তিন. হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস [ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ]। তিনি মাত্র সাত বছর বয়সে হুযূর [ﷺ]'র খিদমত এমনিভাবে করেছেন যে, হুযূরের জন্য তাহাজ্জুদের ওযূর পানি ও শৌচকর্ম সম্পাদনের পানি গভীর রাতে আলাদা আলাদাভাবে ব্যবস্থা করতেন। হুযূর খুশী হয়ে তাঁকে বুকে জড়িয়ে ধরে দো'আ করেছিলেন- "আল্লিমহুল্ কিতা-ব। " (হে আল্লাহ্! তাঁকে কিতাবুল্লাহ্'র ইলম দান করুন!) ফলে তিনি মুফাস্সিরকুল সরদার ( ﺭﺋﻴﺲ ﺍﻟﻤﻔﺴﺮﻳﻦ ) হবার গৌরভ অর্জন করেন।

চার. হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে মাস্'ঊদ [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ]। তিনি হুযূর-ই আকরাম [ﷺ]'র জুতো মুবারক ও বিছানা মুবারক বহনের খিদমত আঞ্জাম দেওয়ার ফলে হুযূর [ﷺ] তাঁর জন্য দো'আ করেছিলেন- ﺍﻟﻠﻬﻢ ﻓﻘﻬﻪ ﻓﻰ ﺍﻟﺪﻳﻦ (হে আল্লাহ্! তাঁকে দ্বীনের বুঝশক্তি দান করুন)। সুতরাং তিনি 'ফক্বীহ্'কুল সরদার হবার মর্যাদা লাভ করেছেন।

◇ টীকাঃ ২.

এখানে 'প্রিয়' দ্বারা স্বভাবগত ভালবাসার প্রেমাষ্পদ ( ﻃﺒﻌﻰ ﻣﺤﺒﻮﺏ ) বুঝানো উদ্দেশ্য। শুধু আক্বলী বা যুক্তিগত নয়। কেননা, সন্তানদের, মাতাপিতার প্রতি স্বভাবগত ভালোবাসা হয়ে থাকে। এ ভালবাসাই হুযূরের প্রতি অধিকতর হওয়া চাই।

মহান আল্লাহ্'র প্রশংসাক্রমে প্রত্যেক মু'মিনের কাছে হুযূর জান-মাল ও সন্তান-সন্ততির চেয়ে অধিক প্রিয়। সাধারণ মুসলমানও ওইরুপ স্বধর্ম ত্যাগকারী সন্তানগণ এবং বেদ্বীন মাতাপিতাকে ত্যাগ করে থাকে, প্রিয় নবী [ﷺ]'র সম্মানে প্রাণও উৎসর্গ করে দেয়। এ বিষয়ে গাযী আব্দুর রশীদ, গাযী-ই ইলমে দ্বীন আব্দুল ক্বাইয়ূম প্রমুখের জীবন্ত উদাহরণ মওজূদ রয়েছে।


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (০৭)]


○ অধ্যায়ঃ [ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ : ঈমান পর্ব]

[ﻭﻋﻦ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﺛﻠﺚ ﻣﻦ ﻛﻦ ﻓﻴﻪ ﻭﺟﺪﺑﻬﻦ ﺣﻼﻭﺓ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ ﻣﻦ ﻛﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﺭﺳﻮﻟﻪ ﺍﺣﺐ ﺍﻟﻴﻪ ﻣﻤﺎ ﺳﻮﺍﻫﻤﺎ ﻭﻣﻦ ﺍﺣﺐ ﻋﺒﺪﺍ ﻻﻳﺤﺒﻪ ﺍﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻣﻦ ﻳﻜﺮﻩ ﺍﻥ ﻳﻌﻮﺩ ﻓﻰ ﺍﻟﻜﻔﺮ ﺑﻌﺪ ﺍﻥ ﺍﻧﻘﺬﻩ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﻪ ﻛﻤﺎ ﻳﻜﺮﻩ ﺍﻥ ﻳﻠﻘﻰ ﻓﻰ ﺍﻟﻨﺎﺭ . ‏]

: ‏( ﻣﺘﻔﻖ ﻋﻠﻴﻪ )

অর্থাৎঃ তাঁরই (হযরত আনাস ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ্ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ "যার মধ্যে তিনটি স্বভাব থাকবে, সে ঈমানের স্বাদ পাবে-(টীকাঃ ৩৯) যার নিকট আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল অন্য সবকিছু থেকে অধিক প্রিয়, (টীকাঃ ৪০) যে ব্যক্তি বান্দার সাথে শুধু আল্লাহ্'র সন্তুষ্টির জন্যই ভালবাসা রাখে (টীকাঃ ৪১) এবং যাকে আল্লাহ্ কুফর থেকে মুক্তি দেবার পর সে কুফরে পুনরায় ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হবার ন্যায় মন্দ মনে করে।" (টীকাঃ ৪২)

[বোখারী ও মুসলিম]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

◇ টীকাঃ ৩৯.

শারীরিক খাবারসমূহে যেমন- বিভিন্নরকম স্বাদ রয়েছে, তেমনিভাবে রুহানী খাবারসমূহ ঈমান এবং আ'মালেও বিভিন্ন রকম স্বাদ বিদ্যমান। যেমনিভাবে ওই খাবারসমূহের স্বাদ ওই ব্যক্তিই অনুভব করতে পারে, যার প্রকাশ্য ইন্দ্রীয় সঠিক থাকে, তেমনিভাবে এ ঈমানী খাবারগুলোর স্বাদ ওই ব্যক্তিই অনুভব করতে পারে, যার রুহ্ বিশুদ্ধ থাকে।

আর যেমনিভাবে প্রকাশ্য ইন্দ্রীয়গুলো দুরস্ত করার জন্য বিভিন্ন রকম ঔষধ রয়েছে, তেমনি ওই ইন্দ্রীয়ের অনুভূতি দুরস্তকারী রুহানী ঔষধপত্রও রয়েছে।

এ হাদীস শরীফে ওই ঔষধগুলোর উল্লেখ রয়েছে। হুযূর [ﷺ] হলেন শারীরিক ও আত্মিক উভয় দিকের চিকিৎসাকারী।

যে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ অর্জন করতে পারে, সে বড় কঠিন কাজের কষ্টও আনন্দের সাথে সহ্য করতে পারে। সে শীতকালের নামায ও জিহাদ সানন্দে সম্পন্ন করতে পারে। কারবালার ময়দান এ হাদীসের জীবন্ত তাফসীর। এ স্বাদই সমস্ত মুশকিলকে সহজ করে দেয়। এর দ্বারাই 'রেদ্বা বিল ক্বাদ্বা' (তাক্বদীরের উপর সন্তুষ্টি) ভাগ্যে জুটে।

◇ টীকাঃ ৪০.

মাল-দৌলত, স্ত্রী, সন্তান-সন্ততি ইত্যাদি সবই দুনিয়াবী নি'মাত। এতে ক্বোরআন, কা'বা, মদীনা মুনাওয়ারাহ্ ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত নয়। যেহেতু এগুলোর প্রতি ভালোবাসা রাখা মানে স্বয়ং আল্লাহ্-রসূলকে মুহাব্বত করা।

এ হাদীস থেকে বুঝা গেলো যে, হুযূরের প্রতি ওই ধরনের ভালোবাসা রাখা চাই যে থরনের ভালবাসা আল্লাহ্'র প্রতি রাখতে হয়।

'মুহাব্বত'র বহু প্রকার রয়েছেঃ

মায়ের প্রতি মুহাব্বত এক রকম, স্ত্রীর প্রতি অন্য রকম, সন্তানের প্রতি এক ধরনের, ভাইবোনের প্রতি অন্য ধরনের। হুযূরের প্রতি মুহাব্বত ওই ধরনের হওয়া চাই, যে ধরনের আল্লাহ্'র প্রতি রাখা চাই। অর্থাৎ মুহাব্বত-ই ঈমানী ও ইরফানী। ﻫﻤﺎ (সর্বনাম) এরশাদ করা থেকে বুঝা গেলো যে, আল্লাহ্-রসূলের জন্য একটিমাত্র দ্বিবচন-সর্বনাম আসতে পারে, যেখানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে, সেখানে সমকক্ষতার সম্ভাবনা বিদ্যমান থাকার কারণেই নিষেধাজ্ঞা এসেছে। সুতরাং হাদীসগুলোর মধ্যে কোন বৈপরীত্য নেই।

স্মর্তব্য যে, এখানে মহব্বত দ্বারা 'মুহাব্বত-ই তব'ঈ' বা স্বভাবগত মহব্বত বুঝানো উদ্দেশ্য, শুধু মুহাব্বত-ই আক্বলী (বিবেকগত মহব্বত) নয়।★

★ [যেমন তিক্ত ঔষধ সেবন করতে স্বভাব না চাইলেও আক্বল বা বিবেক তা সেবন করতে রোগমুক্তির স্বার্থে বাধ্য করে। এমন মহব্বত হুযূরের জন্য প্রযোজ্য নয়। যেমনঃ কেউ যদি নিছক বেহেশত লাভের উদ্দেশ্যে বিবেক খাটিয়ে হুযূরকে ভালবাসে, অন্তর দিয়ে নয়, তবে এমন ভালবাসা কোন মু'মিন থেকে কাম্য নয়।]

◇ টীকাঃ ৪১.

অর্থাৎ বান্দাদেরকে শুধু এ জন্যই মুহাব্বত করবে যে, আল্লাহ্ সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্য এতে শামিল হবে না। উস্তাদ, শায়খ, এমনকি মাতাপিতা ও সন্তানদেরকে এ জন্য মুহাব্বত করবে যে, তা আল্লাহ্'র সন্তুষ্টির মাধ্যম এবং ইসলামের তরীক্বা। এটা সার্বক্ষণিক (স্থায়ী) মুহাব্বত। দুনিয়াবী মুহাব্বত দ্রুত ছিন্ন হয়ে যায়। আল্লাহ্ তা'আলা এরশাদ ফরমায়েছেনঃ

[ﺍﻟْﺄَﺧِﻠَّﺎﺀُ ﻳَﻮْﻣَﺌِﺬٍ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻟِﺒَﻌْﺾٍ ﻋَﺪُﻭٌّ ﺇِﻟَّﺎ ﺍﻟْﻤُﺘَّﻘِﻴﻦَ]

অর্থাৎ "অন্তরঙ্গ বন্ধু সেদিন একে অপরের শত্রু হবে, পরহেযগারগণ ব্যতীত।" [৪৩:৬৭]

◇ টীকাঃ ৪২.

অর্থাৎ কুফর ও কাফিরদের প্রতি স্বভাবগত ঘৃণা জন্মে যায়। ইসলামের তাওফীক্বকে মহান রবের নি'মাত মনে করে। কাফিরদের নিকট থেকে এমনভাবে নিজেকে রক্ষা করবে যেমনিভাবে সাপের কাছ থেকে নিজেকে রক্ষা করে। কারণ, সাপ হচ্ছে জানের দুশমন এবং এসব লোক ঈমানের দুশমন।


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (০৮)]


○ অধ্যায়ঃ [ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ : ঈমান পর্ব]

[ﻭﻋﻦ ﺍﻟﻌﺒﺎﺱ ﺑﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻤﻄﻠﺐ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﺫﺍﻕ ﻃﻌﻢ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ ﻣﻦ ﺭﺿﻰ ﺑﺎﻟﻠﻪ ﺭﺑﺎ ﻭﺑﺎﻻﺳﻼﻡ ﺩﻳﻨﺎ ﻭﺑﻤﺤﻤﺪ ﺭﺳﻮﻻ . ‏] : ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ )

হযরত আব্বাস ইবনে আবদুল মুত্তালিব [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] (টীকাঃ ১) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ" ওই ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ উপভোগ করেছে, যে আল্লাহ্ রব, ইসলাম দ্বীন এবং হযরত মুহাম্মাদ [ﷺ] ঈমানের রসূল হওয়ার উপর সন্তুষ্ট হয়েছে। (টীকাঃ ২)

[মুসলিম শরীফ]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

◇ টীকাঃ ১.

তিনি হুযূর করীমের আপন চাচা। তাঁর বয়স হুযূরের চেয়ে দু'বছরের বেশি ছিলো।তিনি বলতেন, "বড় হলেন হুযূর, বয়স আমার বেশি।" তাঁর মাতা কা'বা শরীফের উপর সর্বপ্রথম সিল্কের রেশমী গিলাফ দিয়েছিলেন। তিনি হাতির ঘটনার পূর্বে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং ৩২ হিজরীর ১২ রজব জুমু'আর দিন ৮৮ বছর বয়সে ওফাত পান। তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয়। আমি (লেখক) তাঁর কবর শরীফের যিয়ারত করেছি। তিনি ইসলাম আগেই গ্রহণ করেছিলেন; বদরের যুদ্ধে বাধ্য হয়ে কাফিরদের সাথে এসেছিলেন। স্বীয় হিজরতের দিন ইসলাম প্রকাশ করেন। তিনিই সর্বশেষ হিজরতকারী।

◇ টীকাঃ ২.

'আল্লাহ্'র রবূবিয়াতে সন্তুষ্ট থাকা'র অর্থ হচ্ছে- তাক্বদীরে তাঁর ফয়সালার উপর সন্তুষ্ট থাকা। অসুস্থ ব্যক্তি ডাক্তারের তিক্ত ঔষধ এবং তাঁর অপারেশন করার উপরও সন্তুষ্ট থাকেন।

'ইসলাম দ্বীন হবার উপর সন্তুষ্ট থাকার অর্থ হচ্ছে- ইসলামের বিধি-বিধান আনন্দচিত্তে ক্ববূল করা। কোন বিধানের উপর মূখেও সমালোচনা না করা।

'হুযূর [ﷺ] -এর নুবূয়তের উপর সন্তুষ্টি' হচ্ছে- তাঁর সুন্নাতগুলোর প্রতি মুহাব্বত রাখা। তাঁর আওলাদ, মদীনা মুনাওয়ারাহ্ বরং যেসব জিনিস হুযূরের প্রতি সম্পৃক্ত সেসব জিনিসকে মুহাব্বত করা।

এ হাদীস শরীফ পূর্বেকার হাদীস শরীফের বিরোধী নয়। এ তিনটি গুণ যার নসীব হবে, পূর্বের হাদীসে বর্ণিত তিনটি বিষয়ও তার অর্জিত হবে।


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (০৯)]


○ অধ্যায়ঃ [ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ : ঈমান পর্ব]

[ﻭﻋﻦ ﺍﺑِﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻭﺍﻟﺬﻯ ﻧﻔﺲ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻴﺪﻩ ﻻﻳﺴﻤﻊ ﺑﻰ ﺍﺣﺪ ﻣﻦ ﻫﺬﻩ ﺍﻻﻣﺔ ﻳﻬﻮﺩﻯ ﻭﻻ ﻧﺼﺮﺍﻧﻰ ﺛﻢ ﻳﻤﻮﺕ ﻭﻟﻢ ﻳﺆﻣﻦ ﺑﺎﻟﺬﻱ ﺍﺭﺳﻠﺖ ﺑﻪ ﺍﻻ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺍﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﻨﺎﺭ . ‏] ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ )

হযরত আবূ হুরাইরা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ "যে সত্তার কুদরতী হাতে আমার প্রাণ তাঁরই শপথ! এ উম্মতের (টীকাঃ ১) কোন ইহুদী ও খ্রিষ্টান আমার নাম শুনে, অতঃপর আমার প্রতি যা প্রেরণ করা হয়েছে তার উপর ঈমান আনা ব্যতীত মৃত্যুবরণ করে সে দোযখী হবেই।" (টীকাঃ ২)

[মুসলিম শরীফ]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

◇ টীকাঃ ১.

এখানে 'উম্মত' মানে 'উম্মত-ই দাওয়াত'; অর্থাৎ সমস্ত মানুষ। ইহুদী ও খ্রিষ্টান সেটার ব্যাখ্যা। মুশরিক ও কাফির প্রমুখ স্বয়ং এর অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেছে। কারণ, যখন ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের উপরও ইসলাম গ্রহণ করা অনিবার্য হলো, যারা পূর্বের পয়গম্বরগণের উপর ঈমান এনেছিলো, তখন যারা কোন নবীকে মোটেই গণ্য করতো না, তাদের জন্য নিশ্চিতভাবে ইসলাম গ্রহণ করা আবশ্যক।

◇ টীকাঃ ২.

এ হাদীস শরীফ থেকে দু'টি মাসআলা জানা গেলোঃ

এক. সমস্ত সৃষ্টির উপর রাসূলের আনুগত্য করা আবশ্যক। যে কোন দেশ, যে কোন গোত্র এবং যে কোন যমানারই হোক না কেন, যে খোদার বান্দা, তার উপর হুযূরের আনুগত্য করা আবশ্যক।

দুই. যার কাছে হুযূর [ﷺ]'র নুবূয়তের সংবাদ পৌঁছেনি, সে ওযর সম্পন্ন (নিরুপায়)। তার নাজাতের জন্য শুধু তাওহীদ বা একত্ববাদে বিশ্বাস করাটাই যথেষ্ট।

সুতরাং হুযূর [ﷺ]'র সম্মাণিত মাতাপিতা ক্ষমাপ্রাপ্ত ও জান্নাতী। কারন, তাঁরা একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিলেন এবং হুযূরের নুবূয়তের (প্রকাশের) পূর্বেই ওফাত প্রাপ্ত হন। এ মাসআলার পরিপূর্ণ বিশ্লেষণ আমার কৃত 'তাফসীর-ই নাঈমী' ১ম পারায় দেখুন।


□ হাদীস শরীফের ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ

f/Ishq-E-Mustafa ﷺ

[সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী আশরাফী বদায়ূনী, বঙ্গানুবাদঃ মাওলানা আব্দুল মান্নান, ১ম খন্ড, পৃ. ২৮, হাদীস নং-০৯ এর টীকাঃ ৪৫,৪৬ দ্রব্যষ্ট, প্রকাশনায়ঃ ইমাম আহমদ রেযা রিসার্চ একাডেমী, চট্টগ্রাম।]


 
Top