□ নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮৬১]


○ অধ্যায়ঃ [নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত]


হযরত আবূ হুরাইরা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলাল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ

[ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻣﻦ ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻰ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻋﺸﺮﺍ . ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﻣﺴﻠﻢ )]

"যে ব্যক্তি আমার প্রতি একবার দুরুদ পড়লো, তার প্রতি আল্লাহ্ দশটি রহমত বর্ষণ করবেন।"(টীকাঃ ১.) [মুসলিম]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখাঃ 

_______

◇ টীকাঃ ১.

এ হাদীসের সমর্থন ক্বোরআন-ই করীমের নিন্মোক্ত আয়াত করে থাকে-

[ﻣَﻦ ﺟَﺎﺀَ ﺑِﺎﻟْﺤَﺴَﻨَﺔِ ﻓَﻠَﻪُ ﻋَﺸْﺮُ ﺃَﻣْﺜَﺎﻟِﻬَﺎ]

(অর্থাৎঃ যে কেউ একটা সৎকর্ম করবে তার জন্য তদনুরূপ দশগুণ রয়েছে। ৬:১৬০)

ইসলামে একটি পূণ্যের বিনিময় কমপক্ষে দশ(১০)গুণ। স্মর্তব্য যে, বান্দা নিজের যোগ্যতানুসারে দুরুদ শরীফ পাঠ করে; কিন্তু আল্লাহ্ তা'আলা আপন মর্যাদা অনুসারে তার প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যা বান্দার ধারণা ও চিন্তার অতীত।


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮৬২]


○ অধ্যায়ঃ [নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত]


হযরত আনাস [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলাল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ

[ﻋﻦ ﺃﻧﺲ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ‏[ﷺ ‏] ﻣﻦ ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻰ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻋﺸﺮ ﺻﻠﻮﺍﺕ ﻭﺣﻄﺖ ﻋﻨﻪ ﻋﺸﺮ ﺧﻄﻴﺎﺕ ﻭﺭﻓﻌﺖ ﻟﻪ ﻋﺸﺮ ﺩﺭﺟﺎﺕ -. ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺂﺋﻰ )]

"যে কেউ আমার প্রতি একবার দুরুদ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তার প্রতি দশটি রহমত (বর্ষণ) করবেন আর দশটি গুনাহ্ মার্জনা করা হবে এবং দশটি মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেওয়া হবে।"(টীকাঃ ১.) [নাসাঈ]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখাঃ 

_______

◇ টীকাঃ ১.

অর্থাৎ একটি দুরুদের মধ্যে তিন(০৩)টি উপকারিতা নিহিত রয়েছে।

যথাঃ দশ(১০)টি রহমত, দশ(১০)টি গুনাহ্'র মার্জনা এবং দশ(১০)টি মর্যাদা বুলন্দ করা।

ওই ব্যক্তিই ভাগ্যবান, যাঁর রসনা প্রতিনিয়ত দুরুদ শরীফের সাথে মিলতে থাকে। দুরুদ শরীফ প্রত্যেক দো'আ ক্ববূল হওয়ার পূর্বশর্ত।


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮৬৩]

○ অধ্যায়ঃ [নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত]


হযরত ইবনে মাসঊদ [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলাল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ

[ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻦ ﻣﺴﻌﻮﺩ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ‏[ﷺ ‏] ﺍﻭﻟﻰ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﺑﻰ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﻤﺔ ﺍﻛﺜﺮﻫﻢ ﻋﻠﻰ ﺻﻠﻮﺓ . - ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻱ )]

অর্থাৎ "ক্বিয়ামত-দিবসে আমার অতি নিকটতম সেই হবে, যে আমার উপর বেশী পরিমাণে দুরুদ শরীফ পাঠ করবে।" (টীকাঃ ১) [তিরমিযী]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখাঃ 

_______

◇ টীকাঃ ১.

ক্বিয়ামত দিবসে ওই ব্যক্তি সবচেয়ে বেশী শান্তিতে থাকবে, যে হুযূরের সাথে থাকবে। আর হুযূরের সাথে থাকার সৌভাগ্য অর্জনের মাধ্যম হলো দুরুদ শরীফ বেশী করে পাঠ করা।

এতে প্রতীয়মান হয় যে, দুরুদ শরীফ সর্বোত্তম পুণ্যকর্ম; কারণ সমস্ত পুণ্যকর্ম দ্বারা জান্নাত লাভ হয়, আর এটা দ্বারা জান্নাতের দুলহা হুযূর [ﷺ] কে পাওয়া যায়।


□ হুযূর [ﷺ] দূরবর্তী ও নিকটবর্তী সব জায়গা থেকে শুনেনঃ

_______

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮৬৪]


○ অধ্যায়ঃ [নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত]

তাঁরই (হযরত ইবনে মাসঊদ [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ]) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলাল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ

[ﻭﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﺍﻥ ﻟﻠﻪ ﻣﻼﺋﻜﺔ ﺳﻴﺎﺣﻴﻦ ﻓﻰ ﺍﻷﺭﺽ ﻳﺒﻠﻐﻮﻧﻰ ﻣﻦ ﺍﻣﺘﻰ ﺍﻟﺴﻼﻡ ‏] . - ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺂﺋﻰ ﻭﺍﻟﺪﺍﺭﻣﻰ )

অর্থাৎ "আল্লাহর কিছু সংখ্যক ফিরিশতা ভূ-পৃষ্ঠে ভ্রমণ করে বেড়াচ্ছে, যারা আমার উম্মতের সালাম আমার নিকট পৌঁছায়।" (টীকাঃ ১) [নাসাঈ, দারেমী]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

◇ টীকাঃ ১.

অর্থাৎ এসব ফিরিশতার ডিউটি হচ্ছে এ যে, তাঁরা হুযূরের আস্তানা-ই আলীয়ায় উম্মতের সালাম পৌঁছাতে থাকেন।

এখানে কিছু কথা স্মরণ রাখা দরকার যে, প্রথমতঃ ফিরিশতা কর্তৃক দুরুদ শরীফ প্রেরণ করায় এটা অনিবার্য হয় না যে, হুযূর স্বয়ং প্রত্যেকের দুরুদ শরীফ শুনছেন না; সঠিক অভিমত হচ্ছে সরকার-ই দু'আলম প্রত্যেক নিকট ও দূরবর্তী দুরুদ শরীফ পাঠকদের দুরুদ শরীফ শুনছেনও, দুরুদ শরীফ পাঠকদের সম্মান বৃদ্ধির জন্য ফিরিশতারাও তাঁর পবিত্র দরবারে দুরুদ শরীফ পৌঁছিয়ে দেন, যাতে দুরুদ শরীফের বরকতে আমরা গুনাহগারদের নাম হুযূরের মহান দরবারে ফিরিশতার মুখে উচ্চারিত হয়।

হযরত সুলাইমান [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ] তিন(০৩) মাইল দূর থেকে যদি ছোট্ট পিপীলিকার শব্দ শুনে থাকেন, তবে হুযূর আমরা পাপীদের প্রার্থনা শুনবেন না কেন? দেখুন, আল্লাহ্ তা'আলা আমাদের কৃতকর্মসমূহ দেখছেন, এতদসত্ত্বেও তাঁর সমীপে ফিরিশতারা আমলসমূহ পেশ করছেন।

দ্বিতীয়তঃ

এসব ফিরিশতা এতো দ্রুতগামী যে, এদিকে উম্মতের মুখে দুরুদ শরীফ উচ্চারিত হয়, ওদিকে তাঁরা হুযূরের সবুজ গম্বুজে তা পেশ করেন। যদি কেউ কোন মজলিসে হাজার বার দুরুদ শরীফ পাঠ করে, তবে এ ফিরিশতা তার ও মদীনা তাইয়্যেবাহ্'র মধ্যে হাজার বার গমনাগমন করবেন। এটা নয় যে, সারা দিনের দুরুদ শরীফ থলের মধ্যে পুরে নিয়ে ডাক পিয়নের মতো বিকেলে সেখানে পৌঁছাবেন; যেমনটি এ যুগের কিছু মূর্খ লোক মনে করে থাকে।

তৃতীয়তঃ

আল্লাহ তা'আলা ফিরিশতাদেরকে হুযূর-ই আনওয়ারের পবিত্র দরবারের খিদমতগার করেছেন। হুযূর-ই আনওয়ারের খিদমতগারগণ এ ফিরিশতাদের সমান মর্যাদা রাখেন।


□ দুরুদ শরীফ পড়লে 'রুহ মুবারক ফিরে আসা'র অর্থঃ

__

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮৬৫]


○ অধ্যায়ঃ [নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত]

হযরত আবূ হুরাইরা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলাল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ

[ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻣﺎ ﻣﻦ ﺍﺣﺪ ﻳﺴﻠﻢ ﻋﻠﻰ ﺍﻻ ﺭﺩ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻰ ﺭﻭﺣﻰ ﺣﺘﻰ ﺍﺭﺩ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ ‏] -. ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺃﺑﻮ ﺩﺍﻭﺩ ﻭﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻰ ﻓﻰ ﺍﻟﺪﻋﻮﺍﺕ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ )

অর্থাৎ "আমার প্রতি (যখনই) কোন ব্যক্তি সালাম পৌঁছায়, তখনই আল্লাহ্ আমাকে আমার রুহ ফিরিয়ে দেন, যাতে আমি তাঁর জবাব দিই।" (টীকাঃ ১)

[আবূ দাউদ, বায়হাক্বী-দা'ওয়াতুল কবির]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

◇ টীকাঃ ১.

এখানে 'রুহ' মানে মনোনিবেশ করা ( ﺗﻮﺟﻪ )। ওই 'রুহ' দ্বারা ওই প্রাণ বুঝানো উদ্দেশ্য নয়, যার মাধ্যমে জীবন প্রতিষ্ঠিত থাকে। হুযূর আল্লাহর অনুগ্রহক্রমে স্থায়ী জীবনে জীবিত রয়েছেন।

এ হাদীসের এ অর্থ নয় যে, 'আমি এমনভাবে প্রাণহীন থাকি যে, কেউ দুরুদ পড়লে জীবিত হয়ে জবাব দিতে থাকে।' অন্যথায় প্রতিটি মুহূর্তে হুযূরের উপর লক্ষ-কোটি বার দুরুদ পাঠ করা হয়ে থাকে, তখন তো এটা অপরিহার্য হবে যে, প্রতিটি মুহূর্তে লক্ষবার তাঁর রুহ বের হয় আর প্রবেশ করতে থাকে।

স্মর্তব্য যে, হুযূর এক মুহূর্তে অগণিত দুরুদ শরীফ পাঠকের প্রতি সমানভাবে মনোনিবেশ করেন, সকলের সালামের উত্তরও প্রদান করেন; যেমনঃ সূর্য একই সময় সমগ্র বিশ্বের প্রতি ফিরে থাকে; অনুরুপ, নবূয়ত-আকাশের সূর্য একই সময়ে সকলের দুরুদ ও সালাম শুনেও থাকেন, জবাবও প্রদান করেন। কিন্তু এতে তাঁর কোন প্রকারের কষ্ট অনুভূত হয় না। এমন হবেও না কেন? তিনি তো মহান আল্লাহর পবিত্র সত্তার প্রকাশস্থল। মহান রব একই সময়ে সকলের দো'আ-প্রার্থনা শুনেন।


□ 'আমার কবরকে ঈদ বানিয়ে নিও না'র অর্থঃ

_____

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮৬৬]

○ অধ্যায়ঃ [নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত]

তাঁরই (হযরত আবূ হুরাইরা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ]) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি

রাসূলুল্লাহ [ﷺ] কে এরশাদ করতে শুনেছিঃ

[ﻭﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﺳﻤﻌﺖ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻳﻘﻮﻝ ﻻ ﺗﺠﻌﻠﻮﺍ ﺑﻴﻮﺗﻜﻢ ﻗﺒﻮﺭﺍ ﻭﻻ ﺗﺠﻌﻠﻮﺍ ﻗﺒﺮﻯ ﻋﻴﺪﺍ ﻭﺻﻠﻮﺍ ﻋﻠﻰ ﻓﺎﻥ ﺻﻠﻮﺗﻜﻢ ﺗﺒﻠﻐﻨﻰ ﺣﻴﺚ ﻛﻨﺘﻢ . ‏] -‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﻨﺴﺂﺋﻰ )

অর্থাৎ "তোমরা নিজেদের ঘরকে কবর বানিও না। (টীকাঃ ১) আর আমার কবরকে ঈদ বানিও না। (টীকাঃ ২) এবং আমার প্রতি দুরুদ প্রেরণ করতে থাকো। কারণ, তোমাদের দুরুদসমূহ আমার নিকট পৌঁছানো হয়, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন।"(টীকাঃ ৩) [নাসাঈ]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

১. (তোমরা নিজেদের ঘরকে কবর বানিও না।)

◇ টীকাঃ ১.

অর্থাৎ তোমাদের ঘরে মৃত দাফন করো না; বরং বাইরে কবরস্থানে (কিংবা অন্য কোথাও) দাফন করো। নিজের ঘরে দাফন হওয়া হুযূর [ﷺ] -এরই বৈশিষ্ট্য।

অথবা নিজেদের ঘরগুলোকে কবরস্থানের মতো আল্লাহর যিকর হতে খালি রেখো না; বরং ফরযসমূহ মসজিদে সম্পন্ন করো আর নফলসমূহ করো ঘরে।

২. (আর আমার কবরকে ঈদ বানিও না।)

◇ টীকাঃ ২.

অর্থাৎ যেভাবে ঈদগাহে বছরে মাত্র দু'বার যাওয়া হয়, সেভাবে আমার মাযারে এসো না; বরং বার বার উপস্থিত হও। অথবা যেভাবে ঈদের দিন খেলাধুলা করার জন্য মেলায় যেয়ে থাকো, সেভাবে তোমরা আমার রওযায় বে-আদবী প্রদর্শন করে এসো না; বরং আদব ও শালীনতা সহকারে এসো।

৩. (এবং আমার প্রতি দুরুদ প্রেরণ করতে থাকো। কারণ, তোমাদের দুরুদসমূহ আমার নিকট পৌঁছানো হয়, তোমরা যেখানেই থাকো না কেন।)

◇ টীকাঃ ৩.

মিরক্বাত প্রণেতা এ স্থানে বর্ণনা করেছেন যে, 'আরওয়াহ্-ই ক্বুদ্সিয়াহ' (পবিত্র আত্মাসমূহ) শরীর হতে বের হয়ে ফিরিশতার মতো হয়ে যায়। তখন সেগুলো সমগ্র বিশ্বকে হাতের তালুর মতো দেখেন আর তাঁদের জন্য কোন বস্তু পর্দাবৃত থাকে না। এ একই বিষয়বস্তু কিছু পার্থক্য সহকারে 'আশি'আতুল লুম'আত' -এও বর্ণনা করা হয়েছে।

সুতরাং এ হাদীসের মর্মার্থ এ হলো যে, 'তোমরা যেখানেই থাকো না কেন, তোমাদের দুরুদের শব্দ আমার নিকট পৌঁছে।' বর্তমান বিদ্যুৎ শক্তির বলে যখন ওয়ারলেস, মোবাইল ও রেডিও দ্বারা লাখো মাইল দূর হতে শব্দ শুনা যায়, তখন নুবূয়তের শক্তিবলে দুরুদ শরীফের শব্দ শুনা অসম্ভব হবে কেন?

হযরত এয়াকুব [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ] শত মাইলের ব্যবধান হতে হযরত ইয়ূসুফ [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ] -এর জামার সুঘ্রাণ পান। হযরত সুলায়মান [ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﺴﻼﻡ] তিন(০৩) মাইল দূরত্ব হতে পিপীলিকার শব্দ শুনেন; অথচ আজ পর্যন্ত কোন ক্ষমতা পিঁপড়ার শব্দ শুনেনি। অতএব, আমাদের প্রিয় রসূলও দুরুদ পাঠকদের শব্দ অবশ্যই শুনেন।


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮৬৭)]


○ অধ্যায়ঃ [নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত]


তাঁরই (হযরত আবূ হুরাইরা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ]) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

রাসূলাল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ

[ﻭﻋﻦ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﺭﻏﻢ ﺍﻧﻒ ﺭﺟﻞ ﺫﻛﺮﺕ ﻋﻨﺪﻩ ﻓﻠﻢ ﻳﺼﻞ ﻋﻠﻰ ﺭﻏﻢ ﺍﻧﻒ ﺭﺟﻞ ﺩﺧﻞ ﻋﻠﻴﻪ ﺭﻣﻀﺎﻥ ﺛﻢ ﺍﻧﺴﻠﺦ ﻗﺒﻞ ﺍﻥ ﻳﻐﻔﺮ ﻟﻪ ﺭﻏﻢ ﺍﻧﻒ ﺭﺟﻞ ﺍﺩﺭﻙ ﻋﻨﺪﻩ ﺍﺑﻮﺍﻩ ﺍﻟﻜﺒﺮ ﺍﻭ ﺍﺣﺪﻫﻤﺎ ﻓﻠﻢ ﻳﺪﺧﻼﻩ ﺍﻟﺠﻨﺔ . ‏] -. ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ )

অর্থাৎ "ওই ব্যক্তির নাসিকা ধূলি মিশ্রিত হোক, যার নিকট আমার আলোচনা হয়েছে, আর সে আমার প্রতি দুরুদ পাঠ করেনি।(টীকাঃ ১) ওই ব্যক্তির নাক ধূলিমিশ্রিত হোক, যার নিকট রমযান আসলো, আর সেটা তার ক্ষমা লাভের পূর্বেই চলে যায়, ওই লোকের নাসিকা ধূলিমিশ্রিত হোক, যার সামনে তার মাতা-পিতাকে অথবা তাদের উভয়ের মধ্যে একজনকে বার্ধক্যে পেয়েছে, অথচ (তাঁরা) তাকে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দেয় নি।"(টীকাঃ ২) [তিরমিযী]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

১. (ওই ব্যক্তির নাসিকা ধূলি মিশ্রিত হোক, যার নিকট আমার আলোচনা হয়েছে, আর সে আমার প্রতি দুরুদ পাঠ করেনি।)

◇ টীকাঃ ১.

অর্থাৎ এরুপ মুসলমান অপমানিত-লাঞ্ছিত হোক, যে আমার নাম শুনে দুরুদ শরীফ পাঠ করেনি।

আরবীতে এ ধরনের বদ-দো'আ মানে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করা; প্রকৃত বদ-দো'আ বুঝানো উদ্দোশ্য নয়।

এ হাদীসের উপর ভিত্তি করে কিছু সংখ্যক আলিম বলেছেন যে, একই মজলিশে যদি কয়েকবার হুযূর [ﷺ] -এর পবিত্র নাম নেওয়া হয়, তবে প্রত্যেক বার দুরুদ শরীফ পড়া ওয়াজিব। কিন্তু এ অভিমতের সপক্ষে প্রদত্ত প্রমাণ দুর্বল। কেননা, ( ﺭﻏﻢ ﺍﻧﻒ ) (তার নাক ধূলিময় হোক) একটি হালকা বাক্য। এটা দ্বারা বড়জোর দুরুদ পড়া মুস্তাহাব সাব্যস্ত হতে পারে; ওয়াজিব প্রমাণিত হতে পারে না। তবে এটার মর্মার্থ হলো- যে বিনা প্রয়োজনে দশটি রহমত, দশটি মর্যাদা, দশটি গুনাহ ক্ষমার মর্যাদা অর্জন করবে না, সে বড়ই বোকা!

২. (ওই ব্যক্তির নাক ধূলিমিশ্রিত হোক, যার নিকট রমযান আসলো, আর সেটা তার ক্ষমা লাভের পূর্বেই চলে যায়, ওই লোকের নাসিকা ধূলিমিশ্রিত হোক, যার সামনে তার মাতা-পিতাকে অথবা তাদের উভয়ের মধ্যে একজনকে বার্ধক্যে পেয়েছে, অথচ (তাঁরা) তাকে জান্নাতে পৌঁছিয়ে দেয় নি।)

◇ টীকাঃ ২.

অর্থাৎ ওই মুসলমানও লাঞ্ছিত-অপমানিত হয়ে যাক, যে রমযান মাস লাভ করেও সেটার প্রতি সম্মান প্রদর্শন এবং তাতে ইবাদত বন্দেগী করে নিজের গুনাহ্ ক্ষমা করাতে পারে নি।

তেমনি ওই ব্যক্তিও অপমানিত হোক, যে নিজের যৌবনে মাতা-পিতাকে বার্ধক্যে পেয়েছে, আর তাঁদের সেবা-যত্ন করে জান্নাতের অধিকারী হতে পারে নি।

আর বার্ধক্যের কথা এজন্য বলা হয়েছে যে, বার্ধক্যে সন্তান-সন্ততির খিদমতের বেশী প্রয়োজন হয়। আর এ সময়ের দো'আ সন্তান-সন্ততির নৌবহরকে তীরে উপনীত করে দেয়।

স্মর্তব্য যে, এ তিনটি বস্তু মুসলমানের জন্য বড়ই উপকারী। কাফির কোন পূণ্যকর্ম দ্বারাই জান্নাতী হতে পারে না। অবশ্য, কোন কোন পূণ্যকর্মের ফলে সে ঈমান গ্রহণের সামর্থ পেয়ে যায়। আর কতেক পুণ্যের বরকতে তার আযাব হালকা হয়ে যায়।


□ যে ব্যক্তি দুরুদ শরীফ ব্যতীত অন্য কোন কিছুর জন্য দো'আ করেনা তার চাওয়ার প্রয়োজন হয় নাঃ


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮৬৯)]


○ অধ্যায়ঃ [নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত]

[ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﺑﻦ ﻛﻌﺐ ﻗﺎﻝ ﻗﻠﺖ ﻳﺎ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺍﻧﻰ ﺍﻛﺜﺮ ﺍﻟﺼﻠﻮﺓ ﻋﻠﻴﻚ ﻓﻜﻢ ﺍﺟﻌﻞ ﻟﻚ ﻣﻦ ﺻﻠﻮﺗﻰ ﻓﻘﺎﻝ ﻣﺎﺷﺌﺖ ﻗﻠﺖ ﺍﻟﺮﺑﻊ ﻗﺎﻝ ﻣﺎﺷﺌﺖ ﻓﺎﻥ ﺯﺩﺕ ﻓﻬﻮ ﺧﻴﺮ ﻟﻚ ﻗﻠﺖ ﺍﻟﻨﺼﻒ ﻗﺎﻝ ﻣﺎﺷﺌﺖ ﻓﺎﻥ ﺯﺩﺕ ﻓﻬﻮ ﺧﻴﺮ ﻟﻚ ﻗﻠﺖ ﻓﺎﻟﺜﻠﺜﻴﻦ ﻗﺎﻝ ﻣﺎﺷﺌﺖ ﻓﺎﻥ ﺯﺩﺕ ﻓﻬﻮ ﺧﻴﺮ ﻟﻚ ﻗﻠﺖ ﺍﺟﻌﻞ ﻟﻚ ﺻﻼﺗﻰ ﻛﻠﻬﺎ ﻗﺎﻝ ﺍﺫﺍ ﻳﻜﻔﻰ ﻫﻤﻚ ﻭﻳﻜﻔﺮﻟﻚ ﺫﻧﺒﻚ . ‏] - ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ )

হযরত উবাই ইবনে কা'ব [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ]) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আরয করলাম, "হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার প্রতি বেশী পরিমাণে দুরুদ শরীফ পাঠ করি। সুতরাং দুরুদ (এর জন্য সময়) ততটুকু নির্দিষ্ট করবো?" (টীকাঃ ১) এরশাদ করলেন- "যতোটুকু চাও; অবশ্য, যদি দুরুদ (পাঠের সময়) বৃদ্ধি করো, তবে তা তোমার জন্য উত্তম।" আমি বললাম- "অর্ধেক সময় (নির্ধারণ করবো)।" এরশাদ করলেন- "যতোটুকু চাও; অবশ্য, যদি বৃদ্ধি করো, তবে তা তোমার জন্য উত্তম।" আমি বললাম- "দু'-তৃতীয়াংশ।" হুযূর এরশাদ করলেন- "যতোটুকু চাও; অবশ্য, যদি বৃদ্ধি করো, তবে তা তোমার জন্য উত্তম।" (টীকাঃ ২) আমি বললাম- "আমি পুরো (সময়)টাই দুরুদ পাঠ করবো।" (টীকাঃ ৩) তখন হুযূর এরশাদ করলেন, "তবে তা তোমার সকল দুঃখ (লাঘবে) যথেষ্ট হবে এবং তোমার গুনাহ মুছে দেবে।" (টীকাঃ ৪) [তিরমিযী]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

◇ টীকাঃ ১.

কতেক ব্যাখ্যাকার বলেছেন যে, এখানে 'সালাত' দ্বারা 'দো'আ' (প্রার্থনা) বুঝানো উদ্দেশ্য। প্রশ্নের উদ্দেশ্য এ যে, হে আল্লাহর রাসূল! আমার জন্য সীমা নির্ধারণ করে দেয়া হোক- আমার সমস্ত দুরুদ ও ওযীফার মধ্যে দুরুদ কী পরিমাণ পড়বো, আর অবশিষ্ট যিকর-আযকার ও দো'আ কতটুকু পড়বো।

◇ টীকাঃ ২.

অর্থাৎ অতিরিক্ত দুরুদ পড়া নফল আর নফলকে নির্ধারিত করার অধিকার থাকে বান্দার।

বর্ণনাকারী এক-চতুর্থাংশ অথবা অর্ধেক বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে 'দৈনন্দিন ওযীফাগুলোর দু'-তৃতীয়াংশ কিংবা অর্ধেক সময় দুরুদ শরীফ পড়বো আর অবশিষ্ট সময়ে অন্যান্য ওযীফা পড়বো।' উত্তরে এরশদা করা হলো যে, দুরুদ যতো বৃদ্ধি করা হয়, ততোই উত্তম।

◇ টীকাঃ ৩.

অর্থাৎ সমস্ত দৈনন্দিন ওযীফা ও 'দো'আ ছেড়ে দেবো, এ সবের স্থলে দুরুদই পড়বো। কেননা, নিজের জন্য প্রার্থনা করার চেয়ে উত্তম হচ্ছে সব সময় আপনাকে দো'আর উপঢৌকন দেওয়া।

◇ টীকাঃ ৪.

অর্থাৎ যদি তুমি এরুপ করে নাও, তবে তোমার দ্বীন ও দুনিয়া উভয়ের জন্য যথেষ্ট হবে। দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট দূরীভূত হয়ে যাবে আর পরকালে গুনাহ্'র ক্ষমা হয়ে যাবে। এ কারণে বিজ্ঞ আলিমগণ যে কেউ সমস্ত দো'আ ও ওযীফা ছেড়ে দিয়ে সবসময় অধিক পরিমাণে দুরুদ শরীফ পড়তে থাকে, তবে সে চাওয়া ছাড়াই সব কিছু লাভ করবে। আর দ্বীন ও দুনিয়ার যাবতীয় অসুুবিধার আপসে সমাধান হয়ে যাবে।

এ হাদীসগুলো দ্বারা বুঝা গেলো যে, হুযূরের উপর দুরুদ পড়া মূলতঃ মহান রবের দরবারে নিজের জন্য ভিক্ষা চাওয়া। আমাদের ভিক্ষুকরা আমাদের সন্তানদেরকে দো'আ করে আমাদের নিকট ভিক্ষা চায়। আর আমরা হলাম রবের ভিক্ষুক; তাঁর হাবীবকে দো'আ দিয়ে তাঁর নিকট ভিক্ষা কামনা করো। আমাদের দুরুদ দ্বারা হুযূর [ﷺ]'র উপকার হয় না; বরং আমাদের নিজেদেরই উপকার হয়। এ আলোচনা দ্বারা চকড়ালভীদের ওই আপত্তির অবসান ঘটলো, যা তারা উপস্থাপন করে। তা হচ্ছে- 'যখন হুযূর [ﷺ]'র উপর প্রতি মুহূর্তে রহমত বর্ষিত হচ্ছে, তখন তাঁর জন্য রহমতের প্রার্থনা করার উপকার কি?'

শায়খ আব্দুল হক্ব (মুহাদ্দিস দেহলভী) [ﺭﺣﻤﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ] বলেন, "আমাকে আব্দুল ওহাব মুত্তাক্বী যখনই মদীনা মুনাওয়ারাহ্ হতে বিদায় সম্ভাষণ জানাতে আসতেন, তখন বলকেন যে, হজ্জের সফরে ফরয কার্যাদির পর দুরুদ শরীফের চেয়ে বড় কোন দো'আ নেই। নিজের পুরো সময়টা দুরুদ শরীফ দ্বারা পরিবেষ্টন করে রাখো, আর নিজেকে দুরুদের রং-এ রাঙিয়ে নাও। ;


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮৭৩)]


○ অধ্যায়ঃ [নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত]

[ﻭﻋﻦ ﻋﻠﻰ ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﺍﻟﺒﺨﻴﻞ ﺍﻟﺬﻯ ﻣﻦ ﺫﻛﺮﺕ ﻋﻨﺪﻩ ﻓﻠﻢ ﻳﺼﻞ ﻋﻠﻰ . ‏] - ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻭﺭﺍﻭﻩ ﺍﺣﻤﺪ ﻋﻦ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺑﻦ ﻋﻠﻰ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ ﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﺣﺴﻦ ﺻﺤﻴﺢ ﻏﺮﻳﺐ )

হযরত আলী [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ "কৃপণ ওই ব্যক্তি, যার সম্মুখে আমার আলোচনা হলো, অথচ সে আমার প্রতি দুরুদ পড়লো না।" (টীকাঃ ১) [তিরমিযী]

ইমাম আহমদ হুসাঈন ইবনে আলী [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণনা করেছেন। আর ইমাম তিরমিযী বলেছেন, এ হাদীস 'হাসান', 'সহীহ্', ও 'গরীব' পর্যায়ের। (টীকাঃ ২)

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

◇ টীকাঃ ১.

কেননা, দুরুদ শরীফ পড়তে তো কোন অর্থ ব্যয় হয় না, বরং সওয়াব বেশী পরিমাণে পাওয়া যায়। এ সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়া বড়ই দুর্ভাগ্যেরই কারণ।

এ হাদীস শরীফ থেকে জানা যায় যে, যখনই হুযূরের নাম মুবারক শুনবে কিংবা পড়বে, তখন দুরুদ শরীফ অবশ্যই পড়বে। আর এ পড়া মুস্তাহাব।

◇ টীকাঃ ২.

অর্থাৎ এ হাদীস বিভিন্ন 'সনদ' সূত্রে বর্ণিত। কতেক সনদে 'হাসান', কোন সনদে 'সহীহ' আবার কোন সূত্রে 'গরীব' পর্যায়ের।


□ হুযূর [ﷺ] কি দূরের দুরুদ শরীফ শুনেন?

❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮৭৪)]


○ অধ্যায়ঃ [নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত]


[ﻭﻋﻦ ﺍﺑﻰ ﻫﺮﻳﺮﺓ ﻗﺎﻝ ﻗﺎﻝ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻣﻦ ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻰ ﻋﻨﺪ ﻗﺒﺮﻯ ﺳﻤﻌﺘﻪ ﻭﻣﻦ ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻰ ﻧﺎﺋﻴﺎ ﺍﺑﻠﻐﺘﻪ . ‏] - ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻰ ﻓﻰ ﺷﻌﺐ ﺍﻻﻳﻤﺎﻥ )

হযরত আবূ হুরাইরা [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলাল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ "যে আমার কবরের নিকট আমার উপর দুরুদ পড়বে, তা আমি শুনবো। আর যে দূর হতে আমার প্রতি দুরুদ পড়বে তা আমার নিকট পৌঁছানো হয়।" (টীকাঃ ১) [বায়হাক্বী-শো'আবুল ঈমান]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

◇ টীকাঃ ১.

অর্থাৎ পবিত্র রওযার পার্শ্বে দুরুদ পাঠকের দুরুদ তো বিনা মাধ্যমে (সরাসরি) শুনে থাকি। আর দূরবর্তী স্থান হতে পাঠকের দুরুদ শুনিও, আবার তা পৌঁছানোও হয়। কারণ এখানে দূরের দুরুদ শুনার কথা অস্বীকার করা হয় নি।

সম্মাণিত সূফীগণ বলেন যে, মুহাব্বতপূর্ণ দুরুদ শরীফ পাঠক দূরে অবস্থান করলেও পবিত্র রওযার নিকটেই। আর ভালোবাসাশূন্য ব্যক্তি নিকটে হলেও দূরে। তাঁদের মতে এ হাদীসের মর্মার্থ হচ্ছে- হৃদয়ের নিকটবর্তীদের দুরুদ আমি স্বয়ং মুহাব্বতের সাথে শুনি। আর শুষ্ক-হৃদয়ধারীদের দুরুদ ফিরিশতারা তাদের দায়িত্ব পালন করার জন্য পৌঁছিয়ে তো দিয়ে থাকেন, কিন্তু আমি মনযোগ সহকারে শুনি না। এ একই বিষয়বস্তুর একটি হাদীস 'দালাইলুল খায়রাত শরীফ' -এর ভূমিকায় উল্লেখ করা হয়েছে, যা'তে হুযূর এরশাদ করেছেন-

[ﺍﺳﻤﻊ ﺻﻠﻮﺓ ﺍﻫﻞ ﻣﺤﺒﺘﻰ ﺍﻟﺦ . . .]

অর্থাৎঃ আমি ভালোবাসা পূর্ণ লোকদের পঠিত দুরুদ নিজেই শুনে থাকি।... আল হাদীস।

এতদ্বিত্তিতে আলোচ্য হাদীসের অর্থ সুস্পষ্ট। অন্যথায় যে মাহবূব [ﷺ] হাজার হাজার মণ মাটির অন্তরালে থেকেও দুরুদ শরীফ শোনেন, তিনি দূর হতে দুরুদ শরীফ কেন শুনবেন না?


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮৭৫)]


○ অধ্যায়ঃ [নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত]

[ﻭﻋﻦ ﻋﺒﺪ ﺍﻟﻠﻪ ﺑﻦ ﻋﻤﺮﻭ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻨﺒﻰ ﷺ ﻭﺍﺣﺪﺓ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﻣﻼﺋﻜﺘﻪ ﺳﺒﻌﻴﻦ ﺻﻠﻮﺓ . ‏] - ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ )

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আমর [ﺭﺿﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻤﺎ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

"যে ব্যক্তি নবী করিম [ﷺ] এর উপর একবার দুরুদ শরীফ পাঠ করবে, আল্লাহ্ তা'আলা ও তাঁর ফিরিশতাগণ তার উপর সত্তরবার দুরুদ (রহমত) প্রেরণ করেন।" (টীকাঃ ১) [আহমদ]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

◇ টীকাঃ ১.

এখানে জুমু'আর দিবসের দুরুদ পাঠ বুঝানো উদ্দেশ্য। কেননা, জুমু'আহ্ দিবসের একটি পুণ্য সত্তরের সমান হয়। এজন্য জুমু'আর দিনের হজ্জকে 'হজ্জে আকবর' বলা হয়। আর এটার সাওয়াব সত্তর হজ্জের সাওয়াবের সমপরিমাণ। অন্যান্য হাদীসে অন্য দিনে পঠিত দুরুদের উল্লেখ রয়েছে। সুতরাং হাদীসগুলো পরষ্পর বিরোধী নয়।

এ হাদীস শরীফ যদিও 'মাওক্বফ' পর্যায়ের, কিন্তু মারফূ' পর্যায়ের বলে গণ্য। কেননা, এতে 'ক্বিয়াস' বা অনুমানের অবকাশ নেই।


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮৭৬)]


○ অধ্যায়ঃ [নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত]

[ﻭﻋﻦ ﺭﻭﻳﻔﻊ ﺍﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﷺ ﻗﺎﻝ ﻣﻦ ﺻﻠﻰ ﻋﻠﻰ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﻗﺎﻝ ﺍﻟﻠﻬﻢ ﺍﻧﺰﻟﻪ ﺍﻟﻤﻘﻌﺪ ﺍﻟﻤﻘﺮﺏ ﻋﻨﺪﻙ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻘﻴﻤﺔ ﻭﺟﺒﺖ ﻟﻪ ﺷﻔﺎﻋﺘﻰ . ‏] - ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﺣﻤﺪ )

হযরত রুয়াইফা' [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] (টীকাঃ ১) হতে বর্ণিত, রাসূলাল্লাহ [ﷺ] এরশাদ করেছেনঃ

"যে ব্যক্তি হুযূর মুহাম্মদ মোস্তফার উপর দুরুদ পড়বে এবং বললে, "হে আল্লাহ্! তাঁকে ক্বিয়ামত দিবসে আপনার নিকটতম ঠিকানায় অবতারণ করুন," (টীকাঃ ২) তার জন্য আমার সুপারিশ নিশ্চিত হয়ে গেলো।" [আহমদ]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

◇ টীকাঃ ১.

তাঁর নাম রুয়াইফা' ইবনে সাবিত আনসারী। তাঁকে হয়রত আমীর-ই মু'আবিয়া [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] ত্রিপলীয় শাসক নিযুক্ত করেছিলেন। তিনি ৪৭ হিজরীতে আফ্রিকার বিরুদ্ধে জিহাদ করেন। তিনি ৫৬ হিজরীতে রাক্ব্ক্বাহ নামক স্থানে ওফাত পান।

◇ টীকাঃ ২.

এ 'ঠিকানা' মানে হয়তো 'মক্বাম-ই মাহমূদ', যা আরশের ডান পার্শ্বে অবস্থিত, যেখানে হুযূর আসীন হবেন আর সমস্ত সৃষ্টি তাঁর প্রশংসা করবেন; অথবা সেটা 'মক্বাম-ই ওসীলাহ্', যা জান্নাতের সর্বোচ্চ স্তর। এ দু'টি স্থানই হুযূর-ই পুরনূর শাফি'-ই ইয়াউমিন্ নুশূর [ﷺ] -এর জন্য নির্ধারিত। এখন হুযূর [ﷺ] -এর জন্য ওই স্থান দু'টির প্রার্থনা করা মূলতঃ নিজের জন্য মহান রবের দরবারে প্রার্থনা করার শামিল। অর্থাৎ 'হে আল্লাহ্! আমাকে হুযূর [ﷺ] -এর সুপারিশের উপযোগী করো।


❏ দরসে হাদীসঃ [হাদীস নং- (৮৭৮)]


○ অধ্যায়ঃ [নবী করিম [ﷺ]-এর উপর দুরুদ শরীফ পাঠ ও দুরুদ শরীফের ফযীলত]

[ﻭﻋﻦ ﻋﻤﺮ ﺑﻦ ﺍﻟﺨﻄﺎﺏ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﻗﺎﻝ ﺍﻥ ﺍﻟﺪﻋﺂﺀ ﻣﻮﻗﻮﻑ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺴﻤﺂﺀ ﻭﺍﻻﺭﺽ ﻻ ﻳﺼﻌﺪ ﻣﻨﻬﺎ ﺷﻰﺀ ﺣﺘﻰ ﺗﺼﻠﻰ ﻋﻠﻰ ﻧﺒﻴﻚ . ‏] - ‏( ﺭﻭﺍﻩ ﺍﻟﺘﺮﻣﺬﻯ )

হযরত ওমর ইবনে খাত্তাব [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ

"দো'আ আসমান ও যমীনের মাঝখানে ঝুলন্ত থাকে। তা থেকে কোন কিছুই উপরের দিকে ওঠে না যতক্ষণ না তুমি আপন নবীর ওপর দুরুদ শরীফ প্রেরণ করো।" (টীকাঃ ১)

[তিরমিযী]

□ উক্ত হাদীস শরীফের ব্যাখায় বলা হয়েছেঃ


___

◇ টীকাঃ ১.

হযরত ওমর [ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ] -এর বাণী তাঁর নিজস্ব অভিমত নয়, বরং এটা হুযূর [ﷺ] থেকে শুনেই বলেছেন। কারণ, এ সব কথা নিছক নিজস্ব অভিমতের ভিত্তিতে বলা যায় না।

এতে প্রতীয়মান হয় যে, দুরুদ-দো'আ ক্ববূল হওয়া বরং আল্লাহ্'র মহান দরবারে উপস্থাপিত হওয়ার মাধ্যম।

(উর্দু লাইন দু'টি মূল কিতাবে দেখুন)

"ছোট্ট পিপঁড়া যদি কা'বার তাওয়াফ করতে চায়,

তবে সেটা যেনো কবুতরের পা জড়িয়ে ধরে।"

তাই দো'আ যদি আল্লাহ্'র নৈকট্যের তাওয়াফ করতে চায়, তবে যেনো হুযূর [ﷺ] -এর পবিত্র ক্বদম জড়িয়ে ধরে।


● পবিত্র হাদীসের ব্যাখ্যা সম্বলিত টীকা পেতে সার্চ করুনঃ

f/Ishq-E-Mustafa ﷺ

[সূত্রঃ মিরআতুল মানাজীহ শরহে মিশকাতুল মাসাবীহ, কৃত- মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী]

 
Top