পঞ্চবিংশ অধ্যায়


একজন মুসলিমের সাথে সাক্ষাতে সুন্নাতগুলো


 ১। সালাম প্রদানঃ


 রাসুল ﷺকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিলঃ ‘কোন ইসলাম উত্তম (কাজের ক্ষেত্রে)?’ তিনি বলেন, ‘লোকদের খাবার খাওয়ানো এবং তোমার পরিচিত ও তোমার অপরিচিতকে সালাম প্রদান।’ 


حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ خَالِدٍ، قَالَ حَدَّثَنَا اللَّيْثُ، عَنْ يَزِيدَ، عَنْ أَبِي الْخَيْرِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو ـ رضى الله عنهما ـ أَنَّ رَجُلاً، سَأَلَ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم أَىُّ الإِسْلاَمِ خَيْرٌ قَالَ ‏ "‏ تُطْعِمُ الطَّعَامَ، وَتَقْرَأُ السَّلاَمَ عَلَى مَنْ عَرَفْتَ وَمَنْ لَمْ تَعْرِفْ


‘আবদুল্লাহ‌ ইব্‌নু ‘আমর رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


জনৈক ব্যক্তি আল্লাহ ﷻ'র  রাসুল ﷺ-কে জিজ্ঞেস করল, ইসলামে কোন্‌ জিনিসটি উত্তম? তিনি বললেন, তুমি খাদ্য খাওয়াবে ও চেনা অচেনা সকলকে সালাম দিবে।


(সহিহ বুখারী, হাদিস নং ১২, ২৮, ৬২৩৬; মুসলিম ১/১৪ হাঃ ৪২, আহমাদ ৬৭৬৫) (ইসলামী ফাউন্ডেশনঃ ১১)



 ২। সালামকে বর্ধিত করা-


 ওয়ালাইকুমুস সালাম এর সাথে ওয়ারাহতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ এর মাধ্যমে, এতে তিরিশটি নেকী হয়।২ একজন মুসলিম দিনে রাতে বহুবার সালাম উচ্চারণ করে থাকে।


حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ كَثِيرٍ، أَخْبَرَنَا جَعْفَرُ بْنُ سُلَيْمَانَ، عَنْ عَوْفٍ، عَنْ أَبِي رَجَاءٍ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ حُصَيْنٍ، قَالَ جَاءَ رَجُلٌ إِلَى النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ ‏.‏ فَرَدَّ عَلَيْهِ السَّلاَمَ ثُمَّ جَلَسَ فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ‏"‏ عَشْرٌ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ ‏.‏ فَرَدَّ عَلَيْهِ فَجَلَسَ فَقَالَ ‏"‏ عِشْرُونَ ‏"‏ ‏.‏ ثُمَّ جَاءَ آخَرُ فَقَالَ السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللَّهِ وَبَرَكَاتُهُ ‏.‏ فَرَدَّ عَلَيْهِ فَجَلَسَ فَقَالَ ‏"‏ ثَلاَثُونَ ‏"‏ ‏.‏


ইমরান ইবনু হুসাইন رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, এক লোক নবী ﷺ এর নিকট এসে বললো, আস্‌সালামু ‘আলাইকুম। তিনি তার জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। তিনি বললেনঃ দশ নেকি! এরপর আরেকজন এসে বললো, আস্‌সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ। নবী ﷺ অনুরূপ জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। তিনি বললেন, বিশ নেকি! অতঃপর আরেকজন এসে বললো, আস্‌সালামু ‘আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। নবী ﷺ তারও জবাব দিলেন। লোকটি বসলো। তিনি বললেনঃত্রিশ নেকি।

  

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫১৯৫)


 মনে রাখবেন একজন বিদায় নেয় তখনও পূর্ণ সালাম দেয়া উচিতঃ


 যখন তোমাদের কেউ সাক্ষাতে আসে তখন বলবেঃ সালাম, এবং যখন কেউ বিদায় নেয়ার সিদ্ধান্ত নেবে তখনও বলবেঃ সালাম। 


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ، وَمُسَدَّدٌ، قَالاَ حَدَّثَنَا بِشْرٌ، - يَعْنِيَانِ ابْنَ الْمُفَضَّلِ - عَنِ ابْنِ عَجْلاَنَ، عَنِ الْمَقْبُرِيِّ، - قَالَ مُسَدَّدٌ سَعِيدُ بْنُ أَبِي سَعِيدٍ الْمَقْبُرِيُّ - عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ إِذَا انْتَهَى أَحَدُكُمْ إِلَى الْمَجْلِسِ فَلْيُسَلِّمْ فَإِذَا أَرَادَ أَنْ يَقُومَ فَلْيُسَلِّمْ فَلَيْسَتِ الأُولَى بِأَحَقَّ مِنَ الآخِرَةِ ‏"‏ ‏.‏


আবূ হুরাইরাহ رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: তোমাদের কেউ মাজলিসে উপস্থিত হলে যেন সালাম দেয় এবং মাজলিস হতে বিদায়ের সময়ও যেন সালাম দেয়। প্রথম সালাম শেষ সালামের চেয়ে জরুরী নয়।

  

(সুনানে আবু দাউদ, হাদিস নং ৫২০৮)



 ৩। হাসিমুখে সাক্ষাত, যেমন নবী ﷺ বলেছেনঃ


 কোন ভাল জিনিসকেই ছোট করে দেখবে না- যদিও তা তোমার ভাইয়ের সাথে হাসিমুখে সাক্ষাতও হয়। 


حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ فُلَيْحٍ قَالَ: حَدَّثَنَا أَبِي، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ أَبِي يُونُسَ مَوْلَى عَائِشَةَ، أَنَّ عَائِشَةَ قَالَتِ: اسْتَأْذَنَ رَجُلٌ عَلَى رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «بِئْسَ ابْنُ الْعَشِيرَةِ» ، فَلَمَّا دَخَلَ هَشَّ لَهُ وَانْبَسَطَ إِلَيْهِ، فَلَمَّا خَرَجَ الرَّجُلُ اسْتَأْذَنَ آخَرُ، قَالَ: «نِعْمَ ابْنُ الْعَشِيرَةِ» ، فَلَمَّا دَخَلَ لَمْ يَنْبَسِطْ إِلَيْهِ كَمَا انْبَسَطَ إِلَى الْآخَرِ، وَلَمْ يَهِشَّ إِلَيْهِ كَمَا هَشَّ لِلْآخَرِ، فَلَمَّا خَرَجَ قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، قُلْتُ لِفُلَانٍ مَا قُلْتَ ثُمَّ هَشَشْتَ إِلَيْهِ، وَقُلْتَ لِفُلَانٍ مَا قُلْتَ وَلَمْ أَرَكَ صَنَعْتَ مِثْلَهُ؟ قَالَ: «يَا عَائِشَةُ، إِنَّ مِنْ شَرِّ النَّاسِ مَنِ اتُّقِيَ لِفُحْشِهِ».


আয়েশা رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাক্ষাত প্রার্থনা করলো। তিনি বলেনঃ বংশের কু-সন্তান। সে তার সাক্ষাতে উপস্থিত হলে তিনি তার সাথে হাসিমুখে প্রশস্ত হৃদয়ে মিলিত হন। সে বের হয়ে যাওয়ার পর আর এক ব্যক্তি তাঁর সাক্ষাত প্রার্থনা করে। তিনি বলেনঃ বংশের সু-সন্তান। কিন্তু তিনি তার সাথে আগের ব্যক্তির মতো হাসিমুখে মিলিত হননি। এ ব্যক্তিও বের হয়ে চলে গেলে আমি বললাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি অমুকের সম্পর্কে ঐরাপ মন্তব্য করলেন অথচ তার সাথে হাসিমুখে মিলিত হলেন এবং এই ব্যক্তি সম্পর্কে এরূপ মন্তব্য করলেন অথচ প্রথম ব্যক্তির মতো তার সাথে সাক্ষাত করেননি। তিনি বলেনঃ হে আয়েশা! যার অশ্লীল বাক্য ও দুর্ব্যবহারের জন্য লোকে তাকে ত্যাগ করে, সে হলো সর্বনিকৃষ্ট। 


(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৩৩৮, বুখারী, মুসলিম)।


حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ، حَدَّثَنَا ابْنُ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ جَابِرٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «كُلُّ مَعْرُوفٍ صَدَقَةٌ، إِنَّ مِنَ الْمَعْرُوفِ أَنْ تَلْقَى أَخَاكَ بِوَجْهٍ طَلْقٍ، وَأَنْ تُفْرِغَ مِنْ دَلْوِكَ فِي إِنَاءِ أَخِيكَ»


জাবির رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ প্রতিটি পুণ্যই দান-খয়রাত স্বরূপ। তোমার ভাইয়ের সাথে তোমার হাসিমুখে সাক্ষাত এবং তোমার বালতি থেকে তোমার ভাইয়ের পাত্রে একটু পানি ঢেলে দেয়াও সৎ কাজের অন্তর্ভুক্ত।


(আদাবুল মুফরাদ, হাদিস নং ৩০৪, তিরমিযী)



 ৪। করমর্দন (হাতে *মুসাফা) করা-


 এমন দুইজন মুসলিম নেই যারা পরষ্পর সাক্ষাত করে এবং হাত মুসাহা করে, তারা তাদের আলাদা হবার পূর্বেই ক্ষমা করে দেয়া হয়। 


حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ، وَإِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ، قَالاَ حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ نُمَيْرٍ، عَنِ الأَجْلَحِ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ، عَنِ الْبَرَاءِ بْنِ عَازِبٍ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ "‏ مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ فَيَتَصَافَحَانِ إِلاَّ غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَنْ يَفْتَرِقَا ‏"‏ ‏.‏ قَالَ أَبُو عِيسَى هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ غَرِيبٌ مِنْ حَدِيثِ أَبِي إِسْحَاقَ عَنِ الْبَرَاءِ ‏.‏ وَقَدْ رُوِيَ هَذَا الْحَدِيثُ عَنِ الْبَرَاءِ مِنْ غَيْرِ وَجْهٍ وَالأَجْلَحُ هُوَ ابْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ حُجَيَّةَ بْنِ عَدِيٍّ الْكِنْدِيُّ ‏.‏


বারাআ ইবনু ‘আযিব رضي الله عنه থেকে বর্ণিতঃ:


তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ ﷺ  বলেছেনঃ যে দু’জন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করে তাদের আলাদা হবার পূর্বেই তাদের (সগীরা ) গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়। 


(জামে' আত-তিরমিজি, হাদিস নং ২৭২৭, ইবনু মা-জাহ (৩৭০৩), আবূ ‘ঈসা বলেন, এ হাদিসটি হাসান এবং আবূ ইসহাক-বারাআ رضي الله عنه-এর সূত্রে গারীব। বারাআ رضي الله عنه হতে ভিন্ন সূত্রেও এ হাদিসটি বর্ণিত আছে।)



 ৫। কালিমা তাইয়্যেবাহ (উত্তম কথা) বলাঃ


وَقُلْ لِعِبَادِي يَقُولُوا الَّتِي هِيَ أَحْسَنُ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ يَنْزَغُ بَيْنَهُمْ ۚ إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلْإِنْسَانِ عَدُوًّا مُبِينًا


 “আমার বান্দাদেরকে বলুন যা উত্তম তা বলতে। নিশ্চয়ই শয়তান তাদেরকে তাদের মধ্যে মন্দের প্ররোচনা দেয়, নিশ্চয়েই শয়তান মানুষের স্পষ্ট শত্রু।” ৬


(সুরা বনী ইসরাঈল- ১৭ঃ৫৩)


❏ কালিমা তাইয়্যেবার মধ্যে রয়েছে আল্লাহ ﷻ'র  স্মরণ, দো’আ, সালাম, অন্যদের প্রশংসা করা তাদের ভাল কর্মাবলীর জন্য, উত্তম ব্যবহার, উত্তম আচরণ এবং কর্ম।

 
Top