বাব নং ২১১.১৪. নবীয পান করা প্রসঙ্গে


১৪- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ شُرْبِ النَّبِيْذِ

٤٢٣- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، قَالَ: رَأَيْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ مَسْعُوْدٍ، وَهُوَ يَأْكُلُ طَعَامًا، ثُمَّ دَعَا بِنَبِيْذٍ، فَشَرِبَ، فَقُلْتُ: رَحِمَكَ اللهُ، تَشْرَبُ النَّبِيْذَ، وَالْأُمَّةُ تَقْتَدِيْ بِكَ؟ فَقَالَ ابْنُ مَسْعُوْدٍ: رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ  يَشْرَبُ النَّبِيْذَ، وَلَوْلَا أَنِّيْ رَأَيْتُهُ يَشْرَبُ مَا شَرِبْتُهُ.


৪২৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আলকামা থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)কে দেখেছি, তিনি খাবার খাওয়ার পর নবীয চেয়ে তা পান করলেন। আমি বললাম, আল্লাহ আপনার উপর রহম করুন, আপনি নবীয পান করলেন অথচ উম্মত আপনার অনুসরণ করে থাকে? (অর্থাৎ তিনি এটাকে নাজায়েয মনে করেছিলেন) তখন ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বললেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে নবীয পান করতে দেখেছি। যদি তাঁকে নবীয পান করতে না দেখতাম তবে আমিও পান করতামনা। 

(মুসান্নিফে ইবনে আবি শায়বা, ৭/৫১৬/২৪৪০৮)


ব্যাখ্যা: শুকনা আঙ্গুর বা খেজুর পানির মধ্যে দীর্ঘক্ষণ পর্যন্ত ভিজে রেখে এগুলোর রস পানির সাথে মিশ্রিত সুস্বাদু শরবতকে নবীয বলা হয়।


❏মুসলিম শরীফে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমরা একটি মশকে রাসূল (ﷺ) ’র জন্য নবীয তৈরী করেছি। মশকটি উপর দিক থেকে বন্ধ থাকত এর নীচেও একটি মুখ থাকত। ভোরে এই পাত্রে খেজুর ঢেলে নবীয তৈরি করেছি। এটা তিনি রাতে পান করতেন অথবা রাতে তৈরি করেছি যা তিনি ভোরে পান করতেন। সুতরাং সকল ওলামায়ে কিরামের মতে নবীয হালাল ও জায়েয। তবে এটাকে সামান্য আগুনে জোশ দেয়া হয় এবং নেশার সীমানা পর্যন্ত যদি না পৌঁছে, তাহলে এর ব্যবহার সম্পর্কে মতানৈক্য রয়েছে।


❏ইমাম আবু হানিফা ও আবু ইউসুফ (رحمة الله) এটা জায়েয বলেছেন। তবে শর্ত হলো এটা হজম শক্তির জন্য খেতে হবে কোন আমোদ-ফুর্তির জন্য নয়। ইমাম মুহাম্মদ, শাফেঈ ও ইমাম মালিক (رحمة الله)’র মতে এটা না জায়েয। তবে হানাফী মাযহাবে ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله)’র মতের উপর ফতোয়া।


৪২৪ - أَبُوْ حَنِيْفَةَ وَمِسْعَرٌ: عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ جَابِرٍ، قَالَ: نَهَىٰ عَنْ نَبِيْذِ الزَّبِيْبِ وَالتَّمْرِ، وَالْبُسْرِ وَالتَّمْرِ.


৪২৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ও মিসআর আতা থেকে, তিনি জাবির (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  আঙ্গুর ও খেজুরের নবীয এবং আধা পাকা ও পাকা খেজুর একত্রে মিলিয়ে নবীয করতে নিষেধ করেছেন। 

(সহীহ ইবনে হিব্বান, ১২/১৯৯/৫৩৭৭)


ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিসে বর্ণিত দ্রব্যসমূহের মিশ্রিত নবীয দ্রুত পরিবর্তন হয়ে যায় এবং এতে সহজে মাদকতা সৃষ্টির যথেষ্ট সম্ভাবনা রয়েছে। তাই এ পদ্ধতিতে নবীয তৈরি করতে নিষেধ করা হয়েছে। অন্যথায় জায়েয।


❏ইমাম আবু হানিফা ও আবু ইউসূফ (رحمة الله)’র মতে এ জাতীয় নবীয যদি নেশা সৃষ্টি না হয় তবে জায়েয। বাকী তিন ইমামের মতে নেশা সৃষ্টি হোক বা না হোক, হাদিসের বাহ্যিক দৃষ্টিকোণে এটা হারাম। হানাফীদের মধ্যে ইমাম মুহাম্মদ (رحمة الله)ও ঐ তিন ইমামের মত পোষণ করেন।


٤٢٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَلْقَمَةَ بْنِ مَرْثَدٍ، وَحَمَّادِ بْنِ أَبِيْ سُلَيْمَانَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَةَ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنِ النَّبِيِّ ، قَالَ: لَا تَشْرَبُوْا مُسْكِرًا .


৪২৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আলকামা ইবনে মারছাদ ও হাম্মাদ ইবনে আবি সুলায়মান থেকে, তারা আব্দুল্লাহ ইবনে বুরাইদা থেকে, তিনি তার পিতা বুরাইদা (رضي الله عنه) থেকে, তিনি নবী করমি (ﷺ)  থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, তোমরা নেশা জাতীয় দ্রব্য পান করোনা। 

(জামেউল আহাদীস, ১০/১৫১/৯২৯৭)


٤٢٦- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِيْ عَوْنٍ مُحَمَّدٍ الثَّقَفِيِّ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ شَدَّادٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، أَنَّهُ قَالَ: حُرِّمَتِ الْـخَمْرُ قَلِيْلُهَا، وَكَثِيْرُهَا، وَالسُّكَرُ مِنْ كُلِّ شَرَابٍ.

 

৪২৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু আউন মুহাম্মদ সকফী থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ্দাদ থেকে, তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, মদ কম হোক বা বেশী হোক হারাম করা হয়েছে। আর প্রত্যেক মদে নেশা রয়েছে। 

(মশকিলুল আসার, ১১/১৪২/৪৩৫৫)


ব্যাখ্যা: ইমাম মালিক, ইমাম শাফেঈ ও ইমাম আহমদ (رحمة الله)’র মতে, প্রত্যেক নেশা জাতীয় দ্রব্যকে خمر বা মদ বলা হয় এবং এর কম-বেশী সমস্ত হারাম আর এর পানকারী যে পরিমাণ হোকনা কেন শাস্তি পাওয়ার যোগ্য।


❏ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মতে, خمر আঙ্গুরের কাঁচা রসকে বলা হয়। যখন এটা নেশায় পরিববর্তন হয় তখন অকাট্যভাবে নিশ্চিত হারাম। পবিত্র 


❏কুরআনে বলা হয়েছে-


يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِنَّمَا الْخَمْرُ وَالْمَيْسِرُ وَالْأَنْصَابُ وَالْأَزْلَامُ رِجْسٌ مِنْ عَمَلِ الشَّيْطَانِ فَاجْتَنِبُوهُ-  المائدة: ٩٠


“হে মু’মিনগণ! মদ, জুয়া, প্রতিমা ও ভাগ্য নির্ণায়ক শরসমূহ শয়তানের অপবিত্র কাজ, সুতরাং তোমরা তা বর্জন কর। 

(সূরা মায়িদা, আয়াত-৯০)


সুতরাং আঙ্গুরের খমর কুরআন হাদিস দ্বারা অকাট্য হারাম হয়েছে। বাকী অন্যান্য বস্তু যেমন নবীয, নকীব ও সাকার ইত্যাদির হুকুম ভিন্ন। কারণ এগুলো হারাম হওয়া অকাট্য নয় বরং ظني বা অনুমান ও কিয়াস নির্ভর। এগুলো নেশা সৃষ্টি না হয় পরিমাণ ব্যবহার করা বৈধ, তবে নেশা সৃষ্টি হলে হারাম।

 
Top