বিষয় নং-১৯: রাসূল (ﷺ) এর ইন্তিকালের সময় মালাকুল মাওতের আগমন ও কথাবার্তা:


ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’’ গ্রন্থের ৩৬৫ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন-‘‘গল্পটি বানোয়াট।’’ অপরদিকে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত “প্রচলিত জাল হাদিস” গ্রন্থের ১৮৫ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন-‘‘সুদীর্ঘ এ গল্পটি সম্পূর্ণ বানোয়াট।’’

সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! এবার আমরা এ বিষয়ে হাদিসে পাক বর্ণিত হয়েছে কিনা তা অনুসন্ধান করবো। 


❏ মিশকাত শরীফে ‘বাবু ওফাতুন্নাবী’ (ﷺ) অধ্যায়ে হযরত আলী ইবনে হুসাইন (رضي الله عنه) এর একটি দীর্ঘ হাদিস রয়েছে,  উক্ত হাদিসে আজরাঈল (عليه السلام) ঘটনাটি এভাবে উল্লেখ আছে।

فَاسْتَأْذَنَ عَلَيْهِ فَسَأَلَهُ عَنْهُ. ثُمَّ قَالَ جِبْرِيل: هَذَا مَلَكُ الْمَوْتِ يَسْتَأْذِنُ عَلَيْكَ. مَا اسْتَأْذَنَ عَلَى آدَمِيٍّ قَبْلَكَ وَلَا يَسْتَأْذِنُ عَلَى آدَمِيٍّ بَعْدَكَ. فَقَالَ: ائْذَنْ لَهُ فَأَذِنَ لَهُ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ ثُمَّ قَالَ يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ أَرْسَلَنِي إِلَيْكَ فَإِنْ أَمَرْتَنِي أَنْ أَقْبِضَ رُوحَكَ قَبَضْتُ وَإِنْ أَمَرْتَنِي أَنْ أَتْرُكَهُ تَرَكْتُهُ فَقَالَ: وَتَفْعَلُ يَا مَلَكَ الْمَوْتِ؟ قَالَ: نَعَمْ بِذَلِكَ أُمرتُ وأُمرتُ أَن أطيعَك. قَالَ: فَنَظَرَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى جِبْرِيل عَلَيْهِ السَّلَام فَقَالَ جِبْرِيلُ: يَا مُحَمَّدُ إِنَّ اللَّهَ قَدِ اشْتَاقَ إِلَى لِقَائِكَ -------- الخ –

-‘‘অতঃপর আজরাঈল (عليه السلام) রাসূল (ﷺ) এর হুযরা মোবারকে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন। তারপর জিবরাঈল (عليه السلام) বললেন যে,  ইয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! এই যে মালাকুল মওত আজরাঈলও আপনার নিকট আসবার অনুমতি চাইচ্ছেন। তিনি একমাত্র আপনি ব্যতিত আর কখনও কোন মানুষের নিকট আসতে অনুমতি চাননি। অতএব তাকে প্রবেশের অনুমতি দিন। তখন হুযূর পাক (ﷺ) তাকে অনুমতি দিলেন। তিনি এসে হুযূর (ﷺ) কে সালাম করলেন এবং বললেন,  আপনি অনুমতি দিলে আপনার রূহ মোবারক কবজ করব। আর আমাকে তা বাদ দিতে বললে,  আমি তা বাদ দিব। তখন হুযূর (ﷺ) বললেন,  হে আজরাঈল (عليه السلام) আপনি কি এইরূপ করতে পারবেন? আজরাঈল (عليه السلام) বললেন,  হ্যাঁ,  আমি এরূপও আদিষ্ট  হয়েছি যে,  আমি যেন আপনার নির্দেশ অনুযায়ী চলি। রাবী বলেন,  এই সময় হুযূর (ﷺ) হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) এর দিকে তাকালেন। জিবরাঈল (عليه السلام) বললেন,  হে মুহাম্মদ (ﷺ)! ‘‘আল্লাহ্ পাক আপনার সাক্ষাত লাভের জন্য অত্যন্ত আগ্রহী। এটা শুনামাত্র হুযুরে পাক (ﷺ) আজরাঈল (عليه السلام) কে বললেন,  যে জন্য আপনি আদিষ্ট হয়েছেন তা বাস্তবায়ন করুন। তারপর রূহ মোবারক কবজ করলেন।’’২৭৬

২৭৬. ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুন নবুওয়াত : ৭/২৬৭ পৃ., খতিব তিবরিযী : মিশকাত শরীফ, ৩/১৬৮৫ পৃ. হা/৫৭২০, পরিচ্ছেদ: بَاب هِجْرَة أَصْحَابه صلى الله عَلَيْهِ وَسلم من مَكَّة ووفاته, ইমাম ইবনে সা‘দ : আত্-তবকাতুল কোবরা : ২/২৬০ পৃ., ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : আল-খাসায়েসুল কোবরা : ২/৫৩০ পৃ. হা/৩৩৯৯, ইমাম তাবরানী : মুজামুল কাবীর : ৩/১২৮ পৃ. হা/২৮৯০, ইমাম আদনী : আল মুসনাদ : ৫/২৪৫ পৃ., ইমাম জুরজানী : তারীখে জুরজান : ১/৩৬২ পৃ., ইমাম ইবনে হাজার হায়সামী : মাযমাউয যাওয়াইদ : ৭/৩৫ পৃ., ইমাম শাফেয়ী, আস সুনানিল নাক্কাস : ১/৩৩৪ পৃ., ইমাম কাস্তালানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ৩/৩৬০ পৃ., জুরকানী, শরহুল মাওয়াহেব, ১২/১২৭ পৃ. 


উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, আজরাঈল আলাইহিস সালামের সাথে রাসূল (ﷺ) এর কথা হওয়ার বিষয়টি প্রমাণিত। আহলে হাদিসদের ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী এটিকে মিশকাতের তাহকীকে জাল প্রমাণ করতে না পেরে একে যঈফ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিলেন। ধোঁকাবাজ আলবানী এটি কোন কারণে যঈফ হলো তার কিছুই উল্লেখ করেননি। এ হাদিসটির আরও অনেক সূত্রে শাওয়াহেদ বা সাক্ষ্য পাওয়া যায়।


❏ উক্ত হাদিস শরীফ ছাড়াও আরও হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যেমন-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ؓ قَالَ: جَاءَ مَلَكُ الْمَوْتِ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ، فِي مَرَضِهِ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ فَاسْتَأْذَنَ وَرَأْسُهُ فِي حِجْرِ عَلِيٍّ ,  فَقَالَ: السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ ,  فَقَالَ عَلِيٌّ ؓ: ارْجِعْ فَإِنَّا مَشَاغِيلُ عَنْكَ، فَقَالَ النَّبِيُّ ﷺ : أَتَدْرِي مَنْ هَذَا يَا أَبَا حَسَنٍ؟ هَذَا مَلَكُ الْمَوْتِ ادْخُلْ رَاشِدًا فَلَمَّا دَخَلَ قَالَ: إِنَّ رَبَّكَ عَزَّ وَجَلَّ يُقْرِؤُكَ السَّلَامَ قَالَ: أَيْنَ جِبْرِيلُ؟ قَالَ: لَيْسَ هُوَ قَرِيبٌ مِنِّي الْآنَ يَأْتِي، فَخَرَجَ مَلَكُ الْمَوْتِ حَتَّى نَزَلَ عَلَيْهِ جِبْرِيلُ ,  فَقَالَ لَهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ وَهُوَ قَائِمٌ بِالْبَابِ: مَا أَخْرَجَكَ يَا مَلَكَ الْمَوْتِ؟ قَالَ: الْتَمَسَكَ مُحَمَّدٌ ﷺ فَلَمَّا أَنْ جَلَسَا، قَالَ جِبْرِيلُ: سَلَامٌ عَلَيْكَ يَا أَبَا الْقَاسِمِ هَذَا وَدَاعٌ مِنِّي وَمِنْكَ ,  فَبَلَغَنِي أَنَّهُ لَمْ يُسَلِّمْ مَلَكُ الْمَوْتِ عَلَى أَهْلِ بَيْتٍ قَبْلَهُ، وَلَا يُسَلِّمُ بَعْدَهُ - 

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) এর কাছে মালাকুল মওত আযরাঈল (عليه السلام) (মানব বেশে) আগমন করল। হুযূর (ﷺ) এর মাথা মোবারক তখন হযরত আলী (رضي الله عنه) এর কোলে ছিল। মালাকুল মওত ভেতরে আসার অনুমতি চেয়ে বলল, আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু। হযরত আলী (رضي الله عنه) বললেন, আপনি চলে যান। এখন আমরা আপনার প্রতি মনোযোগ দিতে পারবো না। নবী করীম (ﷺ) বললেন, আবুল হাসান! তুমি কি তাকে চেনো? ইনি মালাকুল মাওত। অতঃপর তিনি মালাকুল মাওতকে প্রবেশের অনুমতি দিলেন। মালাকুল মওত প্রবেশ করে বললেন, আপনার পরওয়ারদিগার আপনাকে সালাম প্রেরণ করেছেন। হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন, আমরা জানতে পেরেছি যে, মালাকুল মাওত এর আগে কারও পরিবারকে সালাম বলেন নি এবং পরেও আর কাউকে সালাম বলবেন না।’’ ২৭৭

২৭৭. 

ক. ইমাম তাবরানী : মুজামুল কাবীর : ১২/১৪১ : হা/১২৭০৮

খ. আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : খাসায়েসুল কোবরা : ২/৫৩১ পৃ : হা/৩৪০১

গ. আল্লামা ইমাম বায়হাকী : দালায়েলুন নবুওয়াত : ৭/২৬৮ পৃ.

ঘ. ইমাম কুস্তালানী : মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া : ৩/৩৬০ পৃ.

ঙ. ইমাম জুরকানী : শরহুল মাওয়াহেব : ১২/১২৭ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত।


❏ তারপরে আজরাঈল (عليه السلام) এর অবস্থা সম্পর্কে অন্য হাদিস এসেছে এভাবে-

وَأخرج أَبُو نعيم عَن عَليّ قَالَ لما قبض النَّبِي صلى الله عَلَيْهِ وَسلم صعد ملك الْمَوْت باكيا إِلَى السَّمَاء وَالَّذِي بَعثه بِالْحَقِّ لقد سَمِعت صَوتا من السَّمَاء يُنَادي وامحمداه – 

-‘‘হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ওফাত হয়ে গেলে মালাকুল মাওত আযরাঈল (عليه السلام) আকাশে কাঁদতে কাঁদতে গেলেন। যিনি হুযূর (ﷺ) কে সত্য নবীরূপে প্রেরণ করেছেন, তার কসম, আমি আকাশে ‘ওয়া মুহাম্মদ’ বলে (আজরাঈলকে) কাঁদতে শুনেছি।’’ ২৭৮ 

২৭৮. 

ক. ইমাম আবু নুয়াইম: হিলইয়াতুল আউলিয়া :

খ. আল্লামা ইমাম জালালুদ্দীন সূয়তী : খাসায়েসুল কোবরা : ২/৫৩২ : হা/৩৪১১


মহান রব সত্য গোপনকারীদের থেকে আমাদের ঈমান ও আমলকে হিফাযত করুন, আমিন।

 
Top