৮. স্ত্রীকে হাদিয়া দেওয়া


একে অপরকে হাদিয়া বা উপঢৌকন বিনিময় করলে মহব্বত সৃষ্টি হয়। মনের কলুষতা দূরীভূত করে। বিশেষত নারীরা সামান্য উপহার পেলেও অতি আনন্দিত হয়। পরিবারে সুখ-শান্তি অটুট রাখার উদ্দেশ্যে মাঝে মধ্যে স্ত্রীকে হাদিয়া বা উপহার দেওয়া স্বামীর উচিত। পুরুষরা প্রায় দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করে। এ সময় স্ত্রীর পছন্দনীয় কোন বস্তু স্বল্প মূল্য হলেও যদি স্ত্রীর জন্য কিনে আনে তাতে স্ত্রীর খুশীর সীমা থাকে না। এর দ্বারা স্ত্রী থেকে কোন বাড়তি কাজ আদায় করতে চাইলে স্ত্রীরা স্বতঃস্ফুর্তভাবে তা করতে প্রস্তুত থাকে। কারণ এর মাধ্যমে স্ত্রী বুঝতে পারে যে, স্বামী তাকে খুবই পছন্দ করে। সফরে গিয়েও আমার কথা ভুলেনি। নারীরা এটাকে খুবই গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে এবং আত্মতৃপ্তি বোধ করে।আর স্ত্রীরও উচিত স্বামীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। ফলে আরেক সময় স্ত্রীর জন্য হাদিয়া নিতে উৎসাহী হবেন। হযরত হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন

-مَنْ لَمْ يَشْكُرِ النَّاسَ لَمْ يَشْكُرِ اللَّهَ

যে মানুষের কৃতজ্ঞতাপ্রকাশ করে না সে আল্লাহরও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে না।১৭৭

১৭৭.আহমদ, তিরমিযী, সূত্র. মিশকাত; পৃ. ২৬১


হাদিয়া বিনিময় সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- تَهَادَوْا فَإِنَّ الهَدِيَّةَ تُذْهِبُ الضغاءن

তোমরা পরষ্পর উপহার বিনিময় কর, কেননা, উপহার হিংসা-বিদ্ধেষ দূর করে।১৭৮

১৭৮.ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী’র (২৭৯হি.) তিরমিযী, সূত্র. মিশকাত; পৃ. ২৬১

 

হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ইরশাদ করেন-

 تَهَادَوْا فَإِنَّ الهَدِيَّةَ تُذْهِبُ وَحَرَ الصَّدْرِ، وَلَا تَحْقِرَنَّ جَارَةٌ لِجَارَتِهَا وَلَوْ شِقَّ فِرْسِنِ شَاةٍ

তোমরা একে অপরকে হাদিয়া দিও। কেননা, হাদিয়া অন্তরের কলুষ দূর করে। এক প্রতিবেশীনী অপর প্রতিবেশীনীকে হাদিয়া দিতে যেন অবহেলা না করে এবং কেউ যেন হাদিয়া তুচ্ছ মনে না করে; যদিও এক টুকরা ভেড়ার ক্ষুরও হয়। ১৭৯

১৭৯.ইমাম আবু ঈসা তিরমিযী র. (২৭৯হি.) তিরমিযী, সূত্র. মিশকাত; পৃ. ২৬১


৯. স্ত্রীর প্রতি সন্দেহ পোষণ না করা


ইসলামের মূলই হল অদৃশ্যের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। মানুষের অধিকাংশ কার্যক্রম চলে বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে। ব্যবসা-বাণিজ্যতো সম্পূর্ণ বিশ্বাসের উপর নির্ভরশীল। পরস্পর পরস্পরকে বিশ্বাস না করলে যেখানে একটা সমাজ পরিচালিত হওয়া অসম্ভব সেখানে স্বামী-ন্ত্রী একে অপরকে অবিশ্বাস ও সন্দেহ পোষণ করলে একটি পরিবার কীভাবে চলবে? কোন স্বামী কোন বিষয়ে স্ত্রীকে সন্দেহ করলে স্বামী ঘরে ও বাইরে, অফিস-আদালতে কোথাও শান্তিতে থাকতে পারবে না বরং সন্দেহের অনলে সে সর্বক্ষণ জ্বলতে থাকবে এবং সর্বদা অস্থিরতায় ভোগবে। অনুরূপভাবে স্ত্রীরও উচিত স্বামীকে সন্দেহের চোখে না দেখা। এর দ্বারা পরস্পরের মধ্যে ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ইত্যাদি লোপ পায় এবং ধীরে ধীরে অশান্তির চরম শিখরে উন্নীত হয়। পরস্পর পরস্পর থেকে লোকচুরি করে কোন কাজ করা এবং সন্দেহ সৃষ্টি হয় এমন কাজ পরিহার করা উভয়ের উচিত। কারো প্রতি কোন বিষয়ে সন্দিহান হলে সাথে সাথে খোলা-মেলা আলোচনার মাধ্যমে দ্রুত নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ، فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الحَدِيثِ

তোমরা কারো প্রতি ধারণা করা থেকে বেঁচে থাক, কেননা, আনুমানিক ধারণা বড় মিথ্যা। ১৮০

১৮০.বুখারী ও মুসলিম, সূত্র. মিশকাত; পৃ. ৪২৭


স্বামী-স্ত্রী কেউ কারো কোন ত্রুটি দেখলে যাচাই-বাছাই না করে কোন ধরনের মন্তব্য করা অনুচিত। বরং ধীর-স্থীরভাবে নিশ্চিত জ্ঞান লাভ করে মীমাংসার মানসিকতা নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় আলোচনা করা উচিত। নবী করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-

 الأَنَاةُ مِنَ اللَّهِ وَالعَجَلَةُ مِنَ الشَّيْطَانِ

কোন কাজে ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা আল্লাহর পক্ষ থেকে হয়, পক্ষান্তরে তাড়াহুড়া শয়তানের পক্ষ থেকে হয়।১৮১

১৮১.ইমাম আবু ঈসা তিযমিযী র (২৭৯হি.), তিরমিযী, সূত্র. মিশকাত; পৃ. ৪২৯

 
Top