২- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ حَدِّ الشُّرْبِ وَالسَّرَقَةِ

٣١٣- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ يَحْيَىٰ، عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ ، قَالَ: أَتَاهُ رَجُلٌ بِابْنِ أَخٍ لَهُ نَشْوَانَ، قَدْ ذَهَبَ عَقْلُهُ، فَأَمَرَ بِهِ، فَحُبِسَ حَتَّىٰ إِذَا صَحَا وَأَفَاقَ عَنِ السُّكْرِ، دَعَا بِالسَّوْطِ فَقَطَعَ ثَمَرَتَهُ وَرَقَّهُ، وَدَعَا جَلَّادًا؛ فَقَالَ: اجْلِدْهُ عَلَىٰ جِلْدِهِ، وَارْفَعْ يَدَكَ فِيْ حَدِّكَ وَلَا تَبْدُ ضَبْعَيْكَ.

قَالَ: وَأَنْشَأَ عَبْدُ اللهِ يَعُدُّ حَتَّى اكْمَلَ ثَمَانِيْنَ جَلْدَةً خَلَّىٰ سَبِيْلَهُ، فَقَالَ الشَّيْخُ: يَا أَبَا عَبْدِ الرَّحْمٰنِ! وَاللهِ إِنَّهُ لَابْنُ أَخِيْ، وَمَالِيْ وَلَدٌ غَيْرَهُ، فَقَالَ: شَرُّ الْعَمِّ وَالِيْ الْيَتِيْمِ، أَنْتَ كُنْتَ، وَاللهِ مَا أَحْسَنْتَ أَدَبَهُ صَغِيْرًا، وَلَا سَتَرْتَهُ كَبِيْرًا.

قَالَ: ثُمَّ أَنْشَأَ يُحَدِّثُنَا، فَقَالَ: إِنَّ أَوَّلَ حَدٍّ أُقِيْمَ فِي الْإِسْلَامِ لِسَارِقٍ أُتِيَ بِهِ إِلَى النَّبِيِّ ، فَلَـمَّا قَامَتْ عَلَيْهِ الْبَيِّنَةُ، قَالَ: انْطَلِقُوْا بِهِ، فَاقْطَعُوْهُ، فَلَـمَّا انْطَلَقَ بِهِ نَظَرَ إِلَىٰ وَجْهِ النَّبِيِّ ، كَأَنَّمَا سُفَّ عَلَيْهِ وَاللهِ الرَّمَادُ، فَقَالَ بَعْضُ جُلَسَائِهِ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! لَكَأَنَّ هَذَا قَدِ اشْتَدَّ عَلَيْكَ؟ قَالَ: وَمَا يَمْنَعُنِيْ أَنْ لَا يَشْتَدَّ عَلَيَّ، أَنْ تَكُوْنُوْا أَعْوَانَ الشَّيْطَانِ عَلَى اخِيْكُمْ، قَالُوْا: فَلَوْلَا خَلَّيْتَ سَبِيْلَهُ، قَالَ: أَفَلَا كَانَ هَذَا قَبْلَ أَنْ تَأْتُوْنِيْ بِهِ، فَإِنَّ الْإِمَامَ إِذَا انْتَهَى الَيْهِ حَدٌّ، فَلَيْسَ لِأَحَدٍ أَنْ يُغَلِّطَهُ، قَالَ: ثُمَّ تَلَا:[وَلْيَعْفُوْا وَلْيَصْفَحُوْا] {النور: ২২}.

وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ : أَنَّ رَجُلًا أَتَىٰ بِابْنِ أَخٍ لَهُ سَكْرَانَ، فَقَالَ: تَرْتِرُوْهُ وَمَزْمِزُوْهُ وَاسْتَنْكِهُوْهُ، فَوَجَدُوْا مِنْهُ رِيْحَ شَرَابٍ، فَلَـمَّا صَحَا دَعَا بِهِ وَدَعَا بِسَوْطٍ، فَأَمَرَ بِهِ فَقُطِعَتْ ثَمَرَتُهُ.. وَذَكَرَ الْـحَدِيْثَ.  وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ ، قَالَ: إِنَّ أَوَّلَ حَدٍّ أُقِيْمَ فِي الْإِسْلَامِ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ أُتِيَ بِسَارِقٍ فَأَمَرَ بِهِ فَقُطِعَتْ يَدُهُ، فَلَـمَّا انْطَلَقَ بِهِ نَظَرَ عَلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ ، كَأَنَّمَا يُسَفُّ فِيْ وَجْهِهِ الرَّمَادُ، فَقَالَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! كَأَنَّهُ شَقَّ عَلَيْكَ، فَقَالَ: ্রأَلَا يَشُقُّ عَلَيَّ أَنْ تَكُوْنُوْا أَعْوَانًا لِلشَّيْطَانِ عَلَى اخِيْكُمْ؟ قَالُوْا: فَلَا نَدَعُهُ، قَالَ: ্রأَفَلَا كَانَ هَذَا قَبْلَ أَنْ يُؤْتَىٰ بِهِ، وَإِنَّ الْإِمَامَ إِذَا رُفِعَ إِلَيْهِ الْـحَدُّ، فَلَيْسَ يَنْبَغِيْ لَهُ أَنْ يَدَعَهُ حَتَّىٰ يُمْضِيَهُ، ثُمَّ تَلَا: [وَلْيَعْفُوْا وَلْيَصْفَحُوْا] {النور: ২২] .. الْآيَةَ.



বাব নং ১৫৭. ২. মদ্যপান এবং চুরির শাস্তির বিধান প্রসঙ্গে


৩১৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা ইয়াহিয়া থেকে, তিনি ইবনে মাসউদ (رحمة الله) থেকে বর্ণনা করেন, ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র নিকট জনৈক ব্যক্তি তার নেশাগ্রস্ত ভাতিজাকে নিয়ে আসল। সে নেশার কারণে অজ্ঞান অবস্থায় ছিল। তাঁর নির্দেশে জ্ঞান ফিরে না আসা পর্যন্ত তাকে বন্দী করে রাখা হলো। যখন তার নেশা চলে গেল এবং জ্ঞান ফিরে আসল, তখন তিনি চাবুক আনালেন এবং এর ফলের থোকা কেটে ফেললেন, এরপর এটাকে নরম করলেন। তারপর জল্লাদকে ডেকে তার চামড়ার উপর চাবুক মারার নির্দেশ দিয়ে বলেন মারার সময় হাত তুলবে, তবে এতটুকু তুলবে না যাতে বগল দেখা যায়। ইয়াহিয়া বলেন, স্বয়ং আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ চাবুক গণনা আরম্ভ করেন। আশি চাবুক মারার পর তাকে ছেড়ে দেন। তখন ঐ বৃদ্ধ লোকটি বলল, হে আবু আবদুর রহমান! আল্লাহর কসম! সে আমার ভাতিজা। সে ছাড়া আমার কোন সন্তান নেই। ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, তুমি খারাপ চাচা, তুমি ইয়াতীমের অভিভাবক হয়েছ। আল্লাহর কসম! তুমি তাকে বাল্যকালে আদব শিক্ষা দাওনি এবং প্রাপ্ত বয়সে তার দোষত্র“টি গোপন রাখনি। 

ইয়াহিয়া বলেন, এরপর ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) আমাদেরকে হাদিস বর্ণনা করে বলেন, ইসলামে সর্বপ্রথম এক চোরকে শাস্তি দেওয়া হয়। যাকে নবী করমি (ﷺ)  এর সামনে আনা হয়। সাক্ষ্য প্রমাণে যখন ঐ চোর দোষী সাব্যস্ত হয়, তখন তিনি বলেন, তাকে নিয়ে যাও এবং চুরির অপরাধে তার হাত কেটে দাও। যখন তাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে তখন তাঁর চেহারা মুবারকের রং পরিবর্তন হয়ে গেল।

উপস্থিত একজনে আরয করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! মনে হয় একাজটি আপনার ভারী কঠিন মনে হচ্ছে? উত্তরে তিনি বললেন, কেন ভারী হবে না, তোমরা নিজের ভাইয়ের ব্যাপারে শয়তানের সাহায্যকারী হয়ে যাও। লোকজন আরয করল, তাকে কি ছেড়ে দেয়া যায় না? তিনি বললেন, তোমরা তাকে আমার কাছে আনার আগে ছেড়ে দিলেনা কেন? অবশ্যই ইমামের কাছে যখন কোন অপরাধী শাস্তিরযোগ্য হয়ে যায়, তখন তাকে শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দেয়া তার জন্য বৈধ নয়। এরপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করেন,وليعفوا وليصفحوا  “তোমাদের উচিত ক্ষমা করে দেওয়া ও মুখ ফিরিয়ে নেওয়া।” (সূরা নূর, আয়াত, ২২)

ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে অন্য এক বর্ণনায় আছে এক ব্যক্তি তার নেশাগ্রস্ত ভাতিজাকে নিয়ে তার নিকট আসল। তখন তিনি নির্দেশ প্রদান করেন যে, তাকে জোড়ে নাড়া দাও এবং দেখ তার থেকে মদের গন্ধ আসছে কিনা? তখন তার মধ্যে মদের গন্ধ পাওয়া গেল এবং তিনি তাকে বন্দী করার নির্দেশ দিলেন। যখন তার নেশা দূরীভূত হয় তখন তাকে ডেকে আনালেন সাথে একটি চাবুকও আনালেন। অতঃপর তার নির্দেশে (চাবুক থেকে) থোকা কেটে ফেলা হলো। বাকী হাদিস পূর্বে বর্ণিত হাদিসের ন্যায়।

ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে অপর এক বর্ণনায় বর্ণিত আছে, ইসলামে সর্বপ্রথম যে শাস্তি দেওয়া হয়েছিল তা হলো, নবী করমি (ﷺ)  ’র খেদমতে একজন চোরকে উপস্থিত করা হলো। তার নির্দেশে চোরের হাত কাটা হলো। চোরকে নিয়ে যাওয়ার সময় সাহাবায়ে কিরাম রাসূল (ﷺ)  এর চেহারার দিকে লক্ষ্য করে দেখতে পান যে, তার চেহারা মোবারক কাল রং ধারণ করেছে। কোন একজন বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ বিধান কি আপনার কষ্টদায়ক হয়ে পড়েছে? উত্তরে তিনি বলেন, তোমরা তোমাদের ভাইয়ের ব্যাপারে শয়তানের সাহায্যকারী হবে আর তা আমার কাছে কষ্টদায়ক হবে না? তখন সবাই আরয করল, তাহলে কি আমরা তাকে ছেড়ে দেবো? তিনি বললেন, আমার কাছে তাকে আনার আগইে কি তোমরা এটা করতে পারলে না? অবশ্য ইমামের (বিচারকের) সামনে যখন কোন অপরাধ প্রমাণিত হয়ে শাস্তির যোগ্য হয়ে যায় তখন তাকে শাস্তি না দিয়ে ছেড়ে দেয়া উচিত নয়। 


তারপর তিনি এই আয়াত তিলাওয়াত করেন,

 وليعفوا وليصفحوا 

(সূরা নূর, আয়াত, ২২), কানযুল উম্মাল, ৫/৪০২/১৩৪২৭)


ব্যাখ্যা: উপরোক্ত হাদিসে বিভিন্ন মাসায়েল ও দ্বীনি কল্যাণ নিহিত রয়েছে। যেমন- 

প্রথমতঃ উক্ত হাদিস দ্বারা বুঝা যায় যে, নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শাস্তি প্রয়োগ করা যাবে না। বরং নেশা চলে না যাওয়া পর্যন্ত তাকে বন্দী করে রাখতে হবে। কেননা নেশাগ্রস্ত অবস্থায় শাস্তি দিলে অপরাধীর অনুভূতি হবে না এবং শাস্তির মূল উদ্দেশ্য অর্জিত হবে না। 

দ্বিতীয়তঃ শাস্তি প্রদানের জন্য এতটুকু নেশাগ্রস্থ হতে হবে যে, তার বিবেক পরিপূর্ণভাবে লোপ পেতে হবে। 

তৃতীয়তঃ মদ্যপানকারীকে চাবুক দিয়ে শাস্তি দিতে হবে এবং চাবুকের অগ্রভাগ ছেটে চিকন ও নরম করে ফেলতে হবে। 

চতুর্থতঃ শাস্তি খালি গায়ে চামড়ার উপর প্রদান করতে হবে। কাপড়ের উপর দিলে হবে না। 

পঞ্চমতঃ জল্লাদ শাস্তি প্রদানের সময় হাত উঠিয়ে মারবে। 

ষষ্ঠতঃ হাত এত উপরে উঠাবে না যাতে বগল দেখা যায়। 

সপ্তমতঃ অভিভাবকগণের উচিত যেন অধিনস্তদের চারিত্রিক শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়। এতে অবহেলা করলে আল্লাহর নিকট জবাবদিহি করতে হবে এবং শাস্তির যোগ্য হবে। 

অষ্টমতঃ মদ্যপায়ীর মুখ থেকে মদের গন্ধ পাওয়া গেলে শাস্তির প্রমাণের জন্য যথেষ্ট হবে। 

নবমতঃ অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার সময় বিচারকের মনে কষ্ট অনুভব করা প্রশংসনীয় কাজ। 

দশমতঃ অপরাধীকে বিচারকের সম্মুখে হাযির করার পূর্বে লোকদের যথাসম্ভব ক্ষমা এবং দয়া প্রদর্শন করা উচিত। 

এগারতমঃ ঘটনা যখন বিচারকের সম্মুখে পেশ করা হবে এবং দোষী সাব্যস্ত হবে এবং ক্ষমা ও মুক্তির কোন পথ অবশিষ্ট থাকবে না, তখন শাস্তি প্রয়োগে শিথিলতা, টাল-বাহানা করার বিচারকের কোন সুযোগ থাকবে না।


 
Top