বিষয় নং-১৫: নূরের সমূদ্রে ফিরিশতাগণের সৃষ্টি:


ড. আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার লিখিত হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ২৬২ পৃষ্ঠা লিখেন-‘‘জিবরাঈল (আ) প্রতিদিন সকালে নূরের সমূদ্রে ডুব দিয়ে শরীর ঝাড়া দেন এবং প্রতি ফোটা নূর থেকে ৭০ হাজার ফিরিশতা সৃষ্টি করা হয়। এ অর্থে ও এ জাতীয় সকল হাদীস বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।’’


সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! তিনি একে জাল বলার ক্ষেত্রে একটি অনির্ভরযোগ্য দলিলও উপস্থাপন করতে পারেননি। একটি হাদিস জাল বানোয়াট বিভিন্ন কারণে হয়ে থাকে, কখনো কোনো সনদই থাকে না, কখনো আবার সনদের আপত্তিকর অবস্থার কারণে একে জাল বলা হয়ে থাকে। এবার আমি এ বিষয় হাদিসে পাক তুলে ধরার চেষ্টা করবো, ইন শা আল্লাহ


ইমাম আবূ শাইখ ইস্পাহানী (رحمة الله) সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ الْحَسَنِ، حَدَّثَنَا أَبُو عُبَيْدِ اللَّهِ الْمَخْزُومِيُّ، حَدَّثَنَا مَرْوَانُ بْنُ مُعَاوِيَةَ الْفَزَارِيُّ، عَنْ زِيَادِ بْنِ الْمُنْذِرِ، عَنْ عَطِيَّةَ، عَنْ أَبِي سَعِيدٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، قَالَ: إِنَّ فِي الْجَنَّةِ لَنَهْرًا مَا يَدْخُلُهُ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ مِنْ دَخْلَةٍ فَيَخْرُجُ فَيَنْتَفِضُ إِلَّا خَلَقَ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ كُلِّ قَطْرَةٍ تَقْطُرُ مِنْهُ مَلَكًا


-‘‘হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, নিশ্চয় জান্নাতে একটি নহর আছে। যখন হযরত জিবরাঈল (আ.) এতে গিয়ে বাহিরে এসে ডানা পরিষ্কার করেন তখন তাঁর ডানা থেকে যতগুলো ফোটা ঝড়ে পড়ে আল্লাহ তা‘য়ালা প্রত্যেক ফোটা থেকে একেকজন ফেরেস্তা সৃষ্টি করেন। অথচ হযরত জিবরাঈল (আ.)-এর ছয়শ ডানা রয়েছে। যদি তিনি একটি ডানা বিছিয়ে দেয় তাহলে আসমানের উপরিভাগ ঢেকে যাবে।’’ 

(ইমাম আবু শাইখ ইস্পাহানী, আল-আযিমাত, ২/৭৩৫ পৃ., মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১৪/৪৫৪ পৃ. হা/৩০২৩২, ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১১/৪৮৮ পৃ.) 


এ সনদের অন্যতম রাবী ‘যিয়াদ ইবনে মুনযির’ কে ইমাম যাহাবী (رحمة الله) যঈফ রাবী বলে অভহিত করেছেন। (যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৩/৪৬৮ পৃ. ক্রমিক. ১৫৪)


দ্বিতীয় সূত্র:


ইমাম উকাইলী , ইবনে আবি হাতেম , ইবনে মারদুভাই (رحمة الله) সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ دَاوُدَ الْقُومَسِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا صَفْوَانُ بْنُ صَالِحٍ قَالَ: حَدَّثَنَا الْوَلِيدُ بْنُ مُسْلِمٍ قَالَ: حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ جَنَاحٍ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيِّبِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: وَفِي السَّمَاءِ الرَّابِعَةِ نَهَرٌ يُقَالُ لَهُ الْحَيَوَانُ، يَدْخُلُ فِيهِ جِبْرِيلُ كُلَّ يَوْمٍ فَيَنْغَمِسُ فِيهِ انْغِمَاسَةً، ثُمَّ يَخْرُجُ فَيَنْتَفِضُ انْتِفَاضَةً، فَيَخِرُّ عَنْهُ سَبْعُونَ أَلْفَ قَطْرَةٍ، فَيَخْلُقُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ مِنْ كُلِّ قَطْرَةٍ مَلَكًا،


-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, চতুর্থ আসমানে একটি নহর আছে যাকে ‘হায়াতের নহর’ বলা হয়। জিবরাঈল (আ.) এতে প্রত্যেক দিবসে একবার ডুব দিয়ে ডানা ঝাড়েন। যা থেকে সত্তর হাজার ফোঁটা ঝড়ে পড়ে। আল্লাহ তা‘য়ালা প্রত্যেক ফোঁটা থেকে একেকটি ফিরিশতা সৃষ্টি করেন।’’ 

(ইমাম উকাইলী, দু¦আফাউল কাবীর, ২/৫৯ পৃ. ক্রমিক. ৪৯৭, ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৫/৪৮৬ পৃ. হা/৮৮৪২, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১২/২৩০ পৃ. হা/৩৪৭৯৮, বুরহানুদ্দীন হালাবী, সিরাতে হালাবিয়্যাহ, ১/২২০ পৃ., ইমাম ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ৩/১৩৪ পৃ.) 


এটি সংকলন করে ইমাম উকাইলী (رحمة الله) বলেন- بِإِسْنَادٍ صَالِحٍ -‘‘সনদটি গ্রহণযোগ্য।’’ (ইমাম উকাইলী, দু¦আফাউল কাবীর, ২/৫৯ পৃ. ক্রমিক. ৪৯৭, ইমাম সুয়ূতি, আল-লাআলি মাসনূআ, ১/৮৪ পৃ., ইবনে র্আরাক, তানযিহুশ শারিয়াহ, ১/১৯৪ পৃ.) 


এ সনদের অন্যতম রাবী ‘রাওহু ইবনে জানাহ’ কে কেউ কেউ দুর্বল ভাবতে পারেন, তার বিষয়ে আল্লামা ইবনুল র্আরাক (رحمة الله) লিখেন-


وَبِأَن روحا وَثَّقَهُ دُحَيْم وَلم يتهم بكذب.


-‘‘নিশ্চয় রাবী ‘রাওহু’ কে ইমাম দুহাইম (رحمة الله) সিকাহ বলেছেন, তাকে কেউ মিথ্যুক হওয়ার অভিযোগ দেয়নি।’’ (ইবনে র্আরাক, তানযিহুশ শারিয়াহ, ১/১৯৪ পৃ.)  বুঝা যায় এ হাদিসটির মান কমপক্ষে ‘হাসান’।


তৃতীয় সূত্র:


ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) এ বিষয়ক আরেকটি সূত্র সংকলন করেন এভাবে-


روى عن عطاء ومقاتل والضحاك عن ابن عباس


-‘‘হযরত আতা, মুকাতিল, যাহ্হাক ইবনে মুযাহিম (রহ.) যথাক্রমে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন.............।’’ 

(ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ২/৪৭৬ পৃ.) এ সনদটিও গ্রহণযোগ্য।


সব মিলিয়ে এ বিষয়টি প্রমাণিত তাতে কোনো সন্দেহ নেই।





 
Top