ভুল দৃষ্টিভঙ্গি আর অপবাদ, নিজের অদৃষ্টে খোদার অভিশাপ।
এ বিষয়গুলো ধ্রুব সত্য যা জীবনে একবার হলেও  মানুষ ভুল করে থাকে। ভুল যখন হয় মস্তবড় মাশুলও তখন বেশি। কত বেশি? তা সৃষ্টিকর্তাই ভাল জানেন। দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, বি পজিটিভ ডায়লগে নয়, মানষিকতায় পরিবর্তন আনুন।
আমাদের অন্তর প্রথমেই নেগেটিভ বিষয়ের দিকে ধাবিত হয়। কেমন নেগেটিভ? সিমপল একটা উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, সাপোজ একি বয়সের একটা ছেলে আর একটা মেয়ে কোথাও দাঁড়িয়ে কথা বলছে আপনে এই দৃশ্যটি দেখা মাত্র মনে হতে পারে বয়ফ্রেন্ড, গার্লফ্রেন্ড। অথচ যদি তারা আপন ভাই-বোন হয়? (নাউযুবিল্লাহ) যদি অন্যকোন আত্মীয় হয়? অথবা স্বামী-স্ত্রী হয়? কিন্তু না সবার আগে কিন্তু এটাই ধারণা আসে।
অর্ধেক গ্লাস পানি নিয়ে কাউকে যদি প্রশ্ন করুন, এখানে কতটুকু পানি আছে? কেউ বলবে অর্ধেক পূর্ণ, কেউ বলবে অর্ধেক খালি। দুইজন সঠিক হলেও দৃষ্টিভঙ্গি ভিন্ন। আর এই ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির জন্যই নেগেটিভ দিকে আমরা বেশি ধাবিত হই।
আরেকটা উদাহরণ দেয়া যাক, যার জীবন-মৃত্যুর সম্পর্কঃ
"সুমন" আর "নির্জলা" দুইজন ভিন্ন ধর্মাবিলম্বী ছিল। ধর্মান্তরিত হয়ে একে অপরের সাথে পবিত্র বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। দুইজনই ভিন্ন ভিন্ন ভার্সেটিতে পড়ুয়া দুইজন স্টুডেন্ট। লোকচক্ষুর ভয়ে বিষয়টি গোপন করে তারা স্বাভাবিক ভাবে জীবন-যাপন করে।  সুবিধার জন্য "নির্জলা" তার স্বামীর সাথে তাদের ভার্সেটির নিকটস্থ কোন ফ্ল্যাটে ভাড়া নিয়ে থাকে। স্বল্প দিনের মধ্যেই তারা নির্ভয়ে ঐ এলাকায় অবাধ বিচরণ শুরু করে। একসাথে কখনো দোকানে, কখনো বাজারে, কখনো খাবার হোটেলে, কখনো শপিং মলে। বিষয়টা ধীরে ধীরে এলাকার সিনিয়র, জুনিয়র ভাই-বোনদের দৃষ্টিগোচর হয়। তারা ইতিমধ্যে বিরাট কৌতুহল নিয়ে সবার নিকট এটা বলাবলি করতে থাকে। এক থেকে একশ, গভির থেকে গভির, যা হয়নি, যা জানে না তা নিয়েও। যেমনঃ নির্জলার চরিত্র খারাপ, সে এখানে এক ছেলের সাথে রাত কাটায়, বাইরে অন্য ছেলে, চলা-ফেরা সব উদ্ভট।
এরূপ ভাবে একে অপরের কানাঘুষায় তা শিক্ষকদের কানেও পৌঁছে যায়। একজন শিক্ষক তাকে ডাকায় কিন্তু স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের রহস্য যেহেতু সে খুলে বললে বাসায় প্রব্লেম হবে সেহেতু তেমন কিছুই খোলাসা করতে পারল না। শিক্ষকও ভুল বুঝল। বিষয়টা সবাই প্রথম থেকেই লিভ টুগেদার হিসেবে ভাবছিল আর সেভাবেই চলতে থাকল। অবশ্য এই সমাজে এর চেয়ে ব্যতিক্রম কিছু আশাও করা যায় না।
যা হোক একটা ছিল পুতঃপবিত্র বন্ধন অন্যটা অভিশপ্ত অপবিত্র নাপাক সম্পর্ক। ছোট মুখে বলে দেয়া তো খুব সহজ কিন্তু দুনিয়ার জঘন্যতম পাপের মধ্যে এটি একটি। ছোট্ট একটা ধারণার প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল? অবশেষে কুৎসিত ভাবে বিষয়টা বাসায় জানাজানি হল, তাদের লেখা-পড়া বন্ধ হয়ে গেল, সুন্দর জীবন নষ্ট হল।
নির্জলাকে প্রতিনিয়ত অসতী-চরিত্রহীনা, কলঙ্কিনী এসব গালাগালি শুনতে হত। কেউ কেউ সত্য জানত কিন্তু তা যথেষ্ট ছিল না। কারণ সবাই যখন মিথ্যা অপবাদ রটায় তখন সেটাই সত্য হয়ে যায়।এভাবে ভার্সেটি, বাসা, শিক্ষক, ছোট-বড়, ভাই-বোন সবার মুখ থেকে এসব শুনতে শুনতে মানসিকভাবে তার ডিপ্রেশন চলে আসল। অবশেষে সবার অপবাদের অবসান ঘটিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিতে হল। বিয়ে করেও কোন একটা মেয়েকে এভাবে চোখের সামনে কলঙ্কিত হয়ে মরতে দেখলাম, তাও চরিত্রহীনার অপবাদ নিয়ে।
এই আত্মহত্যার শাস্তি "নির্জলা" পাবে কিন্তু এর পিছনে যারা জড়িত ছিল তারাই মূলত তাকে হত্যা করেছিল। আমাদের সমাজে এমন অনেক নির্জলা আছে। এতক্ষণ শুনলেন আবেগের কথা।
এবার আসুন সৃষ্টিকর্তার সুদৃঢ় সতর্কবাণী শুনিঃ
"এবং যারা পূন্যাত্না রমণীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করবে, অতঃপর চারজন চাক্ষুষ সাক্ষী উপস্থিত করবে  না, তবে তাদেরকে ৮০টি বেত্রাঘাত করো এবং তাদের কোন সাক্ষ্য কখনো গ্রহণ করো না এবং তারা ফাসিক্ব।
(সূরা আন-নূর : ৪)
"নিশ্চয় ঐ সমস্ত লোক  যারা  অপবাদ   আরোপ  করে  সতী-সাধ্বী  ঈমানদার নারীদের প্রতি, দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের উপর লা’নত এবং তাদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।
(সূরা আন-নূর : ২৩-২৪)
রাসুল (ﷺ) বলেছেন,
তোমরা সাতটি মারাত্মক কবীরা গুনাহ থেকে বেঁচে থাক তা হলঃ
১) আল্লাহর সাথে শির্ক করা।
২) যাদু করা।
৩) অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করা।
৪) সুদ খাওয়া।
৫) ইয়াতিমের মাল ভক্ষণ করা।
৬) যুদ্ধের সময় পলায়ন করা।
৭) নিরাপরাধ ঈমানদার সতী নারীর উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করা।
(বুখারী, মুসলিম,  মিশকাত)

 
Top