সায়্যিদুনা হযরত আনাস ইবনু মালিক রাদ্বিআল্লাহু তা‘আলা আনহু’র আক্বীদা


নবীয়ে পাক (ﷺ)’র প্রিয় বস্তুকে ভালবাসা- 


❏ সায়্যিদুনা হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, 


إِنَّ خَيَّاطًا دَعَا رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِطَعَامٍ صَنَعَهُ، قَالَ أَنَسُ بْنُ مَالِكٍ: فَذَهَبْتُ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِلَى ذَلِكَ الطَّعَامِ، فَقَرَّبَ إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ خُبْزًا مِنْ شَعِيرٍ وَمَرَقًا فِيهِ دُبَّاءٌ وَقَدِيدٌ، قَالَ أَنَسٌ: فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَتَتَبَّعُ الدُّبَّاءَ مِنْ حَوَالَيِ الصَّحْفَةِ، قَالَ: فَلَمْ أَزَلْ أُحِبُّ الدُّبَّاءَ مُنْذُ يَوْمَئِذٍ


এক দর্জী রাসূলে করিম (ﷺ) কে দাওয়াত দিয়েছেন, সে কিছু খাবার তৈরি করল। এই দাওয়াতে আমি (আনাস ইবনে মালিক) রাসূূল (ﷺ)’র সাথে যাই। এর পর খাওয়ার জন্য দর্জি রাসূল (ﷺ)’র সামনে যবের রুটি, লাউয়ের সুরয়া এবং ভুনা গোশত আনা হয়। তখন আমি দেখতে পাই যে, রাসূল (ﷺ) লাউয়ের টুকরা তালাশ করছেন। এই দিন থেকে আজ পর্যন্ত আমিও লাউকে ভালবাসি।’’  ১১৫

{১১৫. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৩/১৬১৫ পৃ. হা/২০৪১, পরিচ্ছেদ:  بَابُ جَوَازِ أَكْلِ الْمَرَقِ, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/৪৪৬ পৃ. হা/১৪৫৯৫ এবং শুয়াবুল ঈমান, ৮/৪৫ পৃ. হা/৫৪৭৭, সুনানে আবি দাউদ, ৩/৩৫০ পৃ. হা/৩৭৮২, ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ২/১২১৩ পৃ. হা/৪১৮০, পরিচ্ছেদ: كتاب الْأَطْعِمَة}


আক্বীদা

নবী করিম (ﷺ)’র পছন্দনীয় বস্তুকে ভালবাসা মুস্তাহাব এবং এই বস্তু সমূূহ খোঁজ করা বৈধ। এ কারণে রাসূল (ﷺ)’র তাবাররুককে সাহাবায়ে কেরাম ভালবাসতেন। রাসূল (ﷺ)’র চুল মুবারক এবং তাঁর ওজুর পানি সাহাবায়ে কিরাম শরীরে মালিশ করতেন। 





আঙ্গুলের মধ্যে ফয়েজ-

সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) বলেন, আমি রাসূল (ﷺ) কে দেখেছি যে, আসরের নামাযের সময় হল, লোকেরা পানি খুঁজতেছে, কিন্তু পানি পাওয়া গেল না। অতঃপর রাসূল (ﷺ)’র কাছে কিছু পানি আনা হল। 


فَوَضَعَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي ذَلِكَ الإِنَاءِ يَدَهُ


তখন রাসূল (ﷺ) তাঁর বরকতময় হাত মুবারক পানির পাত্রে রাখলেন এবং সাহাবায়ে কিরামগণকে ওযূ করার নির্র্দেশ দিলেন। 


فَرَأَيْتُ المَاءَ يَنْبُعُ مِنْ تَحْتِ أَصَابِعِهِ حَتَّى تَوَضَّئُوا مِنْ عِنْدِ آخِرِهِمْ


আমি দেখলাম যে, রাসূল (ﷺ)’র আঙ্গুুল মুবারকের নীচ থেকে পানি বের হচ্ছে এবং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) ওজু করলেন। হযরত আবূ হামজাহ (رضي الله عنه) বলেন, এ সময় প্রায় তিন শত সাহাবা ছিলেন।  ১১৬

{১১৬. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/৪৫ পৃ. হা/১৬৯, পরিচ্ছেদ: بَابُ التِمَاسِ الوَضُوءِ إِذَا حَانَتِ الصَّلاَةُ , সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৭৮৩ পৃ. হা/২২৭৯, পরিচ্ছেদ:  بَابٌ فِي مُعْجِزَاتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ}


আক্বিদা

নবী পাক (ﷺ) ছিলেন উপমাহীন, বরং তাঁর পবিত্র শরীর মোবারকের প্রতিটি অঙ্গ ছিল দৃষ্টান্তহীন। এটার দ্বারা বুঝা গেল যে, কম জিনিসকে বেশি করার ক্ষমতা আল্লাহ তা’য়ালা তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) কে দান করেছেন। আর সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) হুজুর পুরনূর (ﷺ)’র ফয়েয দ্বারা ধন্য হতেন। 


❏ কবি বলেন- 


انگلياں ہيں فيض پر  ٹو ٹے ہيں پيا سے چہوم كر

ندياں  پنجاب رحمت كى ہيں جارى  واه  واه


-‘‘তাঁর আঙুল মুবারক ছিল দান দক্ষিণায়, পিপাসার্তরা এসে ভীড় জমালো,

(তিনি) তাঁর রহমতের তালু হতে নদী যারী (প্রবাহিত) করলেন।’’





তারকারাজীর সংখ্যার জ্ঞান-

সায়্যিদুনা হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন যে, আমার হাউযের পরিমাণ এতটুকু যে, ইয়ামান এবং সান‘আর মধ্যে যতটুকু দূরত্ব বিদ্যমান। তিনি আরও বলেন-


وَإِنَّ فِيهِ مِنَ الأَبَارِيقِ كَعَدَدِ نُجُومِ السَّمَاءِ


-‘‘এবং এর পাত্র সংখ্যা আসমানের তারকার সমপরিমাণ।’’  ১১৭

{১১৭. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৮/১১৯ পৃ. হা/৬৫৮০, পরিচ্ছেদ: بَابٌ فِي الحَوْضِ, সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮০০ পৃ. হা/২৩০৩, পরিচ্ছেদ: بَابُ إِثْبَاتِ حَوْضِ نَبِيِّنَا صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَصِفَاتِهِ}


আক্বিদা

আসমানের তারকার সংখ্যা কত তা কারো জানা নেই। কিন্তু আমাদের নবী (ﷺ)’র কাছে আসমানের তারকার সংখ্যা কত তার জ্ঞানও আছে। এজন্যই তিনি বলেছেন আসমানের তারকার সংখ্যা যত, হাউজে কাউসারের পাত্রের সংখ্যাও ততগুলো। 


উম্মুল মু‘মিনীন হযরত আয়িশা (رضي الله عنه)’র বর্ণনা থেকেও এই হাক্বীকাতটি প্রকাশ হয়। যেখানে তিনি নবী করিম (ﷺ)’র কাছে জানতে চাইলেন যে, 


يَا رَسُولَ اللَّهِ هَلْ يَكُونُ لِأَحَدٍ مِنَ الْحَسَنَاتِ عَدَدُ نُجُومِ السَّمَاءِ؟ قَالَ: نَعَمْ عُمَرُ


আসমানের তারকারাজির সংখ্যা পরিমাণ কার নেক আমল রয়েছে? এর উত্তরে নবী করিম (ﷺ) বললেন, হ্যাঁ, তা হল হযরত উমর (رضي الله عنه)’র নেক।’’  ১১৮

{১১৮. খতিবে বাগদাদী, তারিখে বাগদাদ, ৭/১৪০ পৃ. ক্রমিক./৩৫৭৮, ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, ৩/১৭১১ পৃ. হা/৬০৬৮, পরিচ্ছেদ:  بَابِ مَنَاقِبِ أَبِي بَكْرٍ وَعُمَرَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا, ইমাম ইবনে আছির, জামিউল উসূল, ৮/৬৩২ পৃ. হা/৬৪৬৬, মোল্লা আলী ক্বারী, মিরকাত, ৯/৩৯১৭ পৃ. হা/৬০৬৮ }


কেননা উম্মুল মু‘মিনীন (رضي الله عنه)’র প্রশ্নের উত্তর তিনিই দেবেন যিনি আসমানের তারকার সংখ্যা কত তা জানেন। আর যে ব্যক্তির নাম বলেছেন তাঁর নেকীর সংখ্যা কত তাও জানেন। সুতরাং বুঝা গেল আমাদের নবীজী (ﷺ)’র কাছে তারকার সংখ্যার ‘ইলম রয়েছে। 





ঘোড়ার তেজকে ধীরগতি করণ-

সায়্যিদুনা হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূূল (ﷺ) ছিলেন সবচাইতে বেশি সুন্দর, সবচাইতে বেশি দানশীল এবং সবচেয়ে বেশি সাহসী। একরাতে মাদিনা বাসীরা ভীত সন্ত্রস্ত হল। সাহাবায়ে কিরাম এই বিকট শব্দের দিকে গেলেন, রাসূল (ﷺ) ঐ স্থানে পুনরায় এসে মিলিত হন। রাসূূূল (ﷺ) হযরত তালহা (رضي الله عنه)’র ঘোড়ার খালি পিটে আরোহী ছিলেন। রাসূূল (ﷺ)’র বরকতময় গর্দান মুবারকে তলোয়ার ছিল। রাসূল (ﷺ) বললেন, তোমাদেরকে এটি ভীত সন্ত্রস্ত করেনি। তিনি বলেন- 


وَجَدْنَاهُ بَحْرًا، أَوْ إِنَّهُ لَبَحْرٌ

আমি একে বহমান সমুদ্রের শব্দের মতো পেয়েছি অথবা এটি সমুদ্র ছিল। 


হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, 


وَكَانَ فَرَسًا يُبَطَّأُ


-‘‘এই ঘোড়াটি অতি ধীর গতিতে চলল।’’  ১১৯

{১১৯. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮০২ পৃষ্ঠা, হা/২৩০৭, রাসূল (দ.)’র বীরত্ব অধ্যায়, সহীহ বুখারী, ৪/৩৯ পৃ. হা/২৯০৮, ।}


আক্বিদা

নাবীয়ে পাক (ﷺ) যেরূপ বাহাদুর এবং সাহসী ছিলেন অন্য কেউ এরূপ ছিল না। তিনি যেরূপ দানশীল ছিলেন অন্য কেউ এরূপ ছিল না। তাঁর পবিত্র শরীর মোবারক ঘোড়ার সাথে স্পর্র্শ হওয়ার কারণে ওই তজস্বী ঘোড়া মন্থরগতি সম্পন্ন হয়েছে। নবী আকরাম (ﷺ)’র পবিত্র বারকত মন্ডিত শরীর মোবারক অনেক বরকতবান এবং উপকার দানকারী। 





হাত মোবারক থেকে বরকত অর্জন করা-

সায়্যিদুনা হযরত আনাস ইবনু মালিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূলে পাক (ﷺ) যখন ফজরের নামায শেষ করতেন, তখন মদিনা মুনাওয়ারার খাদেমগণ পানি ভর্তি পাত্র নিয়ে রাসূল (ﷺ)’র নিকট উপস্থিত হতেন। তখন রাসূল (ﷺ) প্রত্যেক পাত্রের মধ্যে নিজের হাত মোবারক ডুবাতেন। শীতকালীন কয়েকটি সকালে তিনি এরূপ করতেন। 


فَيَغْمِسُ يَدَهُ فِيهَا


-‘রাসূল (ﷺ) নিজের হাত মুবারক তাতে ডুবাতেন।’  ১২০

{১২০. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮১২ পৃ, হা/২৩২৪, মিশকাত, ৩/১৬১৭ পৃ. হা/৫৬০৮, মুসনাদে বায্যার, ১৩/৩২৯ পৃ. হা/৬৯২৯, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৩/২৪৪ পৃ. হা/৩৬৭৭}


আক্বিদা

মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা আবু মালেকী (رحمة الله) এই হাদিসে পাকের ব্যাখ্যায় লেখেন যে, সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) নবী করিম (ﷺ)’র হাত মুবারকের স্পর্শ থেকে বারকাত অর্জন করার জন্য পানির মধ্যে হাত লাগিয়েছেন। বুঝা গেল সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)’র দৃষ্টিতেও রাসূল (ﷺ)’র হাত মোবারক বরকত এবং উপকার দানকারী। এটাও বুঝা গেল যে, বুজর্গগণের হাত মোবারক কোন বস্তুর সাথে স্পর্শ হলে তা বরকত মন্ডিত হয়। 





চুল মুবারক এবং সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)’র আক্বিদা-

সায়্যিদুনা হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, আমি দেখেছি যে, নাপিত রাসূল (ﷺ)’র মাথা মুবারক মুন্ডাতেন, আর সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) তাঁর চারিদিকে ঘুরাফেরা করতেন।


فَمَا يُرِيدُونَ أَنْ تَقَعَ شَعْرَةٌ إِلَّا فِي يَدِ رَجُلٍ


-‘‘তাঁরা চাইতেন যে, অন্ততঃ একখানা চুল মুবারাক তাঁদের কারো হাতে পড়ন।’’  ১২১

{১২১. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮১২ পৃ, হা/২৩২৫, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৯/৩৬৩ পৃ. হা/১২৩৬৩, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/১০৮ পৃ. হা/১৩৪১১, ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/২০৪ পৃ. হা/৮৮০৪}


আক্বিদা

সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)’র চুল মুবারক তাবাররুক হিসাবে উঠাতেন, এবং নিজেদের কাছে রাখতেন। আর এর দ্বারা ফায়দা হাসিল করতেন। 


❏ আল্লামা বাদরুদ্দীন আইনী (رحمة الله) এবং অন্যান্য সিরাত লেগণ লিখেছেন যে, 


أَلا تى أَنَّ خَالِدْ بْنِ الْوَلِيْدِ، رَضِي اللهُ عَنْهُ، جَعَلَ فِي قَلَنْسُوَتِهِ مِنْ شَعْرِ رَسُوْلِ اَللهِ، عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَكَانَ يَدْخُلُ بِهَا فِي الْحَرْبِ وَيَسْتَنْصِرُ بِبَرْكَتِهِ


-‘‘হযরত খালিদ বিন ওয়ালিদ (رضي الله عنه) তাঁর টুপির মধ্যে রাসূল কারিম (ﷺ)’র চুল মোবারক রাখতেন। আর তিনি এটা নিয়েই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতেন এবং এর বারকাতে সাহায্য প্রার্থনা করতো।’’  ১২২

{১২২. আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী, উমদাতুল কারী শরহে সহীহ বুখারী, ৩য় খণ্ড, ৩৭ পৃ., দারু ইহ্ইয়াউত তুরাসুল আরাবী, বয়রুত, লেবানন, ইমাম কাযি আয়ায, আশ-শিফা, ২য় খন্ড, ৫৬ পৃ:, শিহাবুদ্দীন খিফ্ফাযী, নাসিমুর রিয়াদ্ব, ৩ খণ্ড, পৃ: ৪৩৪}

  

❏ ইমাম কাযি আয়্যাদ (رحمة الله) ঘটনাটি এভাবে উল্লেখ করেন-


وَكَانَتْ فِي قَلَنْسُوَةِ خَالِدِ بْنِ الْوَلِيدِ شَعَرَاتٌ مِنْ شَعَرِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ.. فَسَقَطَتْ قَلَنْسُوَتُهُ فِي بَعْضِ حُرُوبِهِ فَشَدَّ عَلَيْهَا شَدَّةً أَنْكَرَ عَلَيْهِ أَصْحَابُ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَثْرَةَ مَنْ قُتِلَ فِيهَا


-‘‘হযরত খালিদ ইবনু ওয়ালীদ (رضي الله عنه) তাঁর টুপির মধ্যে (যুদ্ধ ক্ষেত্রে) রাসূল (ﷺ)-এর চুল মোবারক রাখতেন।......এক যুদ্ধে তিনি সে চুল ওয়ালা টুপি নিতে পারেননি অনেক সাহাবী এতে তাকে হেয় পতিপন্ন করলেন কেননা (এ বারকাত শূণ্য হওয়ায়) এজন্য অনেক মুসলমান শহীদ হতে হয়।’’  ১২৩

{১২৩. ইমাম কাযি আয়্যাদ, শিফা শরীফ, ২/১২৭ পৃ.}


ইমাম আবু ই‘য়ালা (رحمة الله) এই হাদিসটি সনদসহ সহীহভাবে সংকলন করেন। ১২৪

{  ১২৪. ইমাম আবু ই‘য়ালা, আল-মুসনাদ, ১৩/১৩৮ পৃ. হা/৭১৮৩}


মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম আবু ফযল কাযি আয়্যাদ মালেকী (رحمة الله) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন যে, সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) রাসূলে পাক (رضي الله عنه)’র চুল মোবারক তাবাররুক হিসেবে রাখতেন এবং এটাকে তা’জিম ও সম্মান জানাতেন।  ১২৫

{১২৫. ইমাম কাযি আয়াজ মালেকী, শরহে সহীহ মুসলিম, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃ: ৪৭৪, (دار الوفاء للطباعة والنشر والتوزيع، مصر) মিশর হতে ১৪১৯ হিজরীতে প্রকাশিত।}


উম্মুল মু‘মিনীন সায়্যিদুনা উম্মু সালমা (رضي الله عنه)’র কাছে রৌপ্যের একটি ডিব্বা ছিল। এর মধ্যে তিনি নবী করিম (ﷺ)’র চুল মুবারক রাখতেন। তাঁর কাছে যখন কোন অসুস্থ ব্যক্তি আসত, তিনি ওই রৌপ্যের ডিব্বাটি পাত্রের মধ্যে নিয়ে নাড়াচড়া করতেন এবং এর মধ্যে পানি দিতেন, অসুস্থ ব্যক্তি পানিগুলো পান করলে সুস্থ হয়ে যেতেন।  ১২৬

{১২৬. সহীহ বুখারী শরীফ, ৭ম খণ্ড, পৃৃ: ১৬০, হা/৫৮৯৬, খতিব তিবরিযি, মিশকাত পৃ.  শরীফ, ২/১২৭০পৃ., হা/৪৪৮০।}


সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)’র এই আমলগুলো ছিল, এর ব্যাপারে রাসূল (ﷺ)’র কোন বাণী পাওয়া যায় না, কিন্তু সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ)’র সামনে এই আমলগুলো কেন করেছেন? শুধুমাত্র তাদের মহব্বত এবং আক্বীদা তাদেরকে বাধ্য করেছে। 

বুঝা গেল কোন আমল মহব্বত বা আক্বীদার কারণে করা হলে তা বৈধ, যদিওবা এ ব্যাপারে রাসূূলে করিম (ﷺ)’র কোন বাণী পাওয়া না যায়।


আর এর জন্য দলিল চাওয়া যে, রাসূল (ﷺ) কী এর হুকুম দিয়েছেন বা এরূপ তিনি করেছেন? স্পষ্টত এটা ভুল। 

কোন কোন দল এরূপ তালাশ করে। সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) এর আমল এবং রাসূূল (ﷺ) কর্তৃক নিষেধ না করার কারণে তাদের ধ্যান-ধারণা বদলানো উচিত। আর যারা আমল করে তাদের সমালোচনা না করা উচিত। 





হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র অসিয়ত-

বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার আল্লামা ইবনু হাজার আসকালানী (رحمة الله) বর্ণনা করেন যে, 


وَرَوٰى اِبْنُ السَّكَنِ، مِنْ طَرِيْقِ صَفْوَاَنْ بْنِ هُبَيْرَةَ، عَنْ أَبِيْهِ، قَالَ: قَالَ لِي ثَابِتُ البَنَانِيّ: قَالَ لِي أَنَسْ بْنِ مَالِكْ: هَذِهِ شَعْرَةٌ مِنْ شَعْرِ رَسُوْلِ اللَّه صَلّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَضَعْهَا تَحْتَ لِسَانِيْ قَالَ: فَوَضَعْتُهَا تَحْتَ لِسَانِهِ، فَدُفِنَ وَهِيَ تَحْتَ لِسَانِهِ


-‘‘ইমাম ইবনে সাকান (رحمة الله) তিনি ছাফওয়ান ইবনে হুবাইরা (رحمة الله) এর সূত্রে তিনি তার পিতার সূত্রে তিনি বলেন, হযরত ছাবিত বেনানী (رحمة الله) বলেন, আমাকে সৈয়্যিদুনা হযরত আনাস (رضي الله عنه) {তাঁর নিকট থাকা রাসূল (ﷺ)’র চুল মোবারক ছিল সম্পর্কে) অসিয়ত করেছিলেন যে, এগুলো হলো রাসূল (ﷺ)-এর চুল মোবারক। আমার যখন ইন্তেকাল হবে এই চুল মোবারক আমার মুখের নিচে রাখবে, হযরত ছাবিত বুনানী (رضي الله عنه) বলেন-


فَضَعْهَا تَحْتَ لِسَانِيْ قَالَ: فَوَضَعْتُهَا تَحْتَ لِسَانِهِ، فَدُفِنَ وَهِيَ تَحْتَ لِسَانِهِ


-‘‘সুতরাং আমি ওই চুল মোবারক তাঁর মুখের নিচে রাখলাম এবং তাকে দাফন করা হল। ওই চুল মুবারক এখনো পর্যন্ত তাঁর মুখের নীচে রয়েছে।’’  ১২৭

{১২৭. ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, ইসাবা ফি তামিজিল সাহাবা, ১ম খন্ড, পৃ: ২৭৬, দারুল কুতুব ইলমিয়্যা, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪১৫ হি., আল্লামা আইনী, উমদাতুল কারী শরহে বোখারী, ২য় খন্ড, ২৩৭ পৃ:, মিশর থেকে প্রকাশিত।}


আক্বিদা:

সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)’র আক্বীদা ছিল যে, নবী করিম (رضي الله عنه)’র চুল মুবারকের বরকত কবরেও কাজে আসবে। এজন্যই তো অসিয়ত করেছেন। আর এই অসিয়তের উপর হযরত ছাবেত বেনানী (رحمة الله) আমল করেছেন। হযরত ছাবিত বেনানী ওই মহান ব্যক্তিত্ব যাকে মর্তবাবান মুহাদ্দিসগণ দেখেছেন যে, দাফনের সময় তিনি কবরে নামায পড়তেছেন। যেটি বর্ণনা করেছেন, দেওবন্দী তাবলীগ জামাতের মৌলভি যাকারিয়া ছাহিব সাহরানপুরী। ১২৮

{১২৮. ফাযায়েলে নামায, ৩য় অধ্যায়ের খুশু-খুজু’র বর্ণনায়। এ বিষয়টি নিয়ে আমি আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ২য় খণ্ডের ৩০০-৩০১ পৃষ্ঠায় এ বিষয়ে আলোকপাত করেছি।}


হযরত দাতা গঞ্জে বখ্শ আলী হাজওয়ারী (رضي الله عنه) আবুল আব্বাস মাহদী সায়ারী (رحمة الله)’র ব্যাপারেও এরূপ অসিয়তের কথা বর্ণনা করেছেন। তাঁর কাছে হুযূরে পাক (ﷺ)’র দুইটি চুল মোবারক ছিল। তিনি অসিয়ত করেন যে, এ দুটি চুল মোবারক আমার মুখের উপর রাখবে। সুতরাং এরূপ করা হয়েছে। হযরত দাতা গঞ্জে বখ্শ ‘আলী হাজওয়ারী (ﷺ) বলেন যে, তাঁর কবর মোবারক মরওয়ের মধ্যে লোকেরা এখানে নিজেদের হাজত নিয়ে আসে। আর নিজেদের প্রয়োজন ও হাজত তালাশ করে। তাদের হাজত পূর্ণও হয়। আর এটি পরীক্ষিত।  ১২৯

{১২৯. কাশফুল মাহজুব, (ফার্সী), পৃ: ১৪৩।}


বুঝা গেল যে, আল্লাহর ওলীগণও এই আক্বীদা পোষণ করেন যে, প্রিয় নবী (ﷺ)’র চুল মোবারকের বরকতের কারণে হাজত ও মুশকিলের সমাধান হয়। 






হাজত রওয়া রাসূল (ﷺ)-


❏ সায়্যিদুনা হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, এক মহিলার বিবেকে কিছু ত্র“টি ছিল, সে বলতে লাগল,


يَا رَسُولَ اللهِ إِنَّ لِي إِلَيْكَ حَاجَةً


-‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আপনার কাছে আমার কিছু হাজত আছে।’ তিনি বললেন, হে অমুকের মা, যে গলিতে ইচ্ছা অপেক্ষা কর, আমি তোমার হাজত পূর্ণ করব। অতঃপর রাসূূল (ﷺ) রাস্তায় তার সাথে কথা বললেন এবং তার হাজত পূর্ণ করেন। ১৩০

{১৩০. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮১২ পৃ, হা/২৩২৬, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬১৮পৃ., হা/৫৮১০, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৮/১২৫ পৃ. হা/৮১৬৭, সুনানি আবি দাউদ, হা/৪৮১৮}


আক্বিদা

নবীয়ে পাক (ﷺ)’র দরবারে সাহাবায়ে কিরামগণ হাজাত নিয়ে আসতেন, আর রাসূল (ﷺ) তাদের হাজাত পূর্ণ করতেন। 





পবিত্র শরীর মোবারক থেকে সুগন্ধি-


❏ সায়্যিদুনা হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন যে,


وَعَنْ أَنَسٍ قَالَ: كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَزْهَرَ اللَّوْنِ كَانَ عَرَقُهُ اللُّؤْلُؤُ إِذَا مَشٰى تَكَفَّأَ وَمَا مَسَسْتُ دِيْبَاجَةً وَلَا حَرِيرًا أَلْيَنَ مِنْ كَفِّ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلَا شمَمتُ مِسْكاً وَلَا عَنْبَرَةً أَطْيَبَ مِنْ رَائِحَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ 


রাসূল (ﷺ)’র রং অতি পরিস্কার এবং উজ্জ্বল ছিল। তাঁর ঘাম মুবারক ছিল বাতির মতো। তিনি যখন চলতেন পূর্র্ণ শক্তি সহকারে চলতেন। রাসূল (ﷺ)’র হাত মুবারক থেকে অধিক কোমল কোন মোটা রেশমি বা পাতলা রেশমি আমি কখনো দেখিনি। এমন কোন মেশক আম্বর দেখিনি যার খুশবু রাসূল (ﷺ)’র (পবিত্র শরীর) মুবারক থেকে অধিক খুশবু।  ১৩১

{১৩১. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮১৫ পৃ, হা/২৩৩০, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬১১পৃ., হা/৫৭৮৭, সুনানে দারিমী, হা/৬২, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২১/৮২ পৃ. হা/১৩৩৮১, সহীহ ইবনে হিব্বান, ১৪/২১৬ পৃ. হা/৬৩১০, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৭/৩৪ পৃ. হা/১৭৮১৬, ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/২৩৩ পৃ. হা/৮৭৯১}


আক্বিদা

আল্লামা কাযি আয়্যায মুহাদ্দিস (رضي الله عنه) লেখেছেন যে, রাসূূলে মুর্কারম (ﷺ)’র পবিত্র শরীর মোবারক থেকে ঘাম মোবারাকের খুশবুু বের হয়। আর তার শরীর মোবারকের অতিরিক্ত বস্তু থেকে পবিত্র হওয়াটা তাঁর খুছুছিয়তের অন্যতম। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে এমন খুছুছিয়্যাত দ্বারা প্রতিপালন করেন যা অন্য কারো মধ্যে নেই।  ১৩২

{১৩২. কাযি আয়াজ, শিফা শরীফ, ১ম খণ্ড, পৃ: ২৯।}

  





ঘাম মুবারক থেকে বরকত হাসিল-

সায়্যিদুনা হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, 

নবী করিম (ﷺ) হযরত উম্মু সুলাইম (رضي الله عنه)’র ঘরে তাশরীফ নিলেন এবং তাঁর বিছানায় শুয়ে পড়লেন, তিনি (সুলাইম) যখন আসলেন তাকে বলা হল যে, তোমার ঘরে তোমার বিছানায় নবী করিম (ﷺ) শুয়ে আছেন। 


তিনি এসে দেখলেন যে, নবী করিম (ﷺ)’র ঘাম মুবারক বের হচ্ছে এবং চামড়ার বিছানার সাথে নবী করিম (ﷺ)’র ঘাম মুবারক মিশে যাচ্ছে। 


তখন হযরত উম্মু সুলাইম (رضي الله عنه) নিজের শিশিটি খুললেন এবং ঘাম মুবারক মুছে মুছে শিশিতে নিলেন। তখন রাসূূল (ﷺ) তাকে বললেন, হে উম্মে সুলাইম তুমি কী করছ? তিনি বললেন-


نَرْجُو بَرَكَتَهُ لِصِبْيَانِنَا


আমি এই ঘাম মোবারক বাচ্চাদের জন্য বরকতের আশা রাখি। তখন রাসূল (رضي الله عنه) বললেন, أَصَبْتَ “তোমার আশা সঠিক।”  ১৩৩

{ ১৩৩. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮১৫ পৃ, হা/২৩৩১, পরিচ্ছেদ:  بَابُ طِيبِ عَرَقِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالتَّبَرُّكِ بِهِ , খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬১১পৃ., হা/৫৭৮৮, ইমাম কাযি আয়াজ মালেকী, শিফা শরীফ, ১/৬৩ পৃ.}


আক্বিদা

রাসূল (ﷺ)’র পবিত্র শরীর মুবারাকের সাথে স্পর্শকৃত বস্তু থেকে বরকত হাসিল করা সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) গণের আমল ছিল। আর রাসূূল (ﷺ) এর সত্যায়নও করেছেন। এ বিষয়ে ইমাম মুসলিম (رحمة الله) সংকলন করেন, উক্ত সাহাবী হযরত আনাস ইবনু মালিক (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন-


عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ، قَالَ: دَخَلَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ عِنْدَنَا، فَعَرِقَ، وَجَاءَتْ أُمِّي بِقَارُورَةٍ، فَجَعَلَتْ تَسْلِتُ الْعَرَقَ فِيهَا، فَاسْتَيْقَظَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَقَالَ: يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هَذَا الَّذِي تَصْنَعِينَ؟ قَالَتْ: هَذَا عَرَقُكَ نَجْعَلُهُ فِي طِيبِنَا، وَهُوَ مِنْ أَطْيَبِ الطِّيبِ


-‘‘নাবী কারীম (ﷺ) আমাদের গৃহে আগমন করলেন এবং ‘কায়লুলা’ (দ্বিপ্রহরের নিদ্রা) করলেন। তাঁর শরীর থেকে ঘর্ম মুবারক প্রবাহিত হতে লাগল। আমার জননী শিশি নিয়ে এলেন এবং ঘর্ম মুছে তাতে ভরতে লাগলেন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর চোখ মুবারক খুলে গেল। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: উম্মু সুলায়ম! তুমি কি করছো? তিনি বললেন, এ ঘর্ম সুগন্ধি রূপে আমরা ব্যবহার করি। কেননা, এটা অত্যন্ত উৎকৃষ্ট সুগন্ধি।’’  ১৩৪

{১৩৪. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮১৫ পৃ, হা/২৩৩১, পরিচ্ছেদ:  بَابُ طِيبِ عَرَقِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالتَّبَرُّكِ بِهِ , খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬১১পৃ., হা/৫৭৮৮ }


এ হাদিসের সাথে কিছুটা মিলসহ আরেকটি হাদিসে পাক রয়েছে। ইমাম মুসলিম (رحمة الله) সংকলন করেন-


عَنْ أَنَسٍ، عَنْ أُمِّ سُلَيْمٍ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَأْتِيهَا فَيَقِيلُ عِنْدَهَا فَتَبْسُطُ لَهُ نِطْعًا فَيَقِيلُ عَلَيْهِ، وَكَانَ كَثِيرَ الْعَرَقِ، فَكَانَتْ تَجْمَعُ عَرَقَهُ فَتَجْعَلُهُ فِي الطِّيبِ وَالْقَوَارِيرِ، فَقَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: يَا أُمَّ سُلَيْمٍ مَا هَذَا؟ قَالَتْ: عَرَقُكَ أَدُوفُ بِهِ طِيبِي


-‘‘নাবী কারীম (ﷺ) উম্মু সুলায়ম (رضي الله عنه) এর কাছে আসতেন এবং কায়লুলা করতেন। তিনি তাঁর জন্যে চামড়ার বিছানা বিছিয়ে দিতেন। রাসূল (ﷺ) তাতে কায়লুলা বা দুপুর কালিন বিশ্রাম করতেন। তাঁর খুব বেশি ঘাম নির্গত হত। উম্মু সুলায়ম (رضي الله عنه) এ ঘাম জমা করে আতরের সাথে মিশিয়ে নিতেন। তিনি জিজ্ঞেস করলেন: উম্মে সুলায়ম, ঘাম দিয়ে তুমি কি কর? তিনি জাওয়াব দিলেন, আতরের সাথে মিশিয়ে নেই।’’ ১৩৫

{১৩৫. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮১৫ পৃ, হা/২৩৩২, পরিচ্ছেদ:  بَابُ طِيبِ عَرَقِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَالتَّبَرُّكِ بِهِ}


এটাও বুঝা গেল যে, মুহাব্বত এবং আক্বীদার কারণে এমন কোন কাজ করা যা দ্বারা ইসলাম এবং শারীয়াতের মর্যাদার কোন পার্থক্য হয় না, চায় তা নবী করিম (ﷺ) করার জন্য হুকুম দান না করুক। যেমন- তাঁর ঘাম মুবারাক শিশির মধ্যে নেয়া এবং তা হতে বারকাত লাভ করার জন্য তিনি বলেননি। কিন্তু উম্মু সুলাইম (رضي الله عنه) তা  নিজের আক্বীদা ও মুহাব্বাতের কারণে করেছেন। রাসূল (ﷺ) তাকে নিষেধ করেননি, বরং তাঁর  আক্বীদাকে সত্যায়ন করেছেন। এটিই হলো আহ্লে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আতের মসলকের জন্য তায়িদ। 






যেটি চাও জিজ্ঞাসা করো-

সায়্যিদুনা হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, সূর্য ঢলে যাওয়ার পর রাসূল (ﷺ) তাশরীফ এনেছেন, আর নামায পড়ানোর পর সালাম ফিরিয়ে মিম্বারে বসে কিয়ামাতের বর্ণনা দিলেন। বললেন, এর (কিয়ামাত) পূর্বে বড় বড় বিষয় প্রকাশ পাবে। তারপর বললেন-


مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَسْأَلَنِي عَنْ شَيْءٍ فَلْيَسْأَلْنِي عَنْهُ، فَوَاللهِ لَا تَسْأَلُونَنِي عَنْ شَيْءٍ إِلَّا أَخْبَرْتُكُمْ بِهِ، مَا دُمْتُ فِي مَقَامِي هَذَا


-‘‘যে কোন ব্যক্তি যে কোন ব্যাপারে আমাকে জিজ্ঞাসা করতে চায়, সে যেন আমাকে জিজ্ঞাসা করে, আল্লাহর শপথ, আমি যতক্ষণ পর্যন্ত এই স্থানে থাকবো, তোমরা যে ব্যাপারেই আমাকে জিজ্ঞাসা করবে না কেন, আমি তার সংবাদ প্রদান করব।’’ 


হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) গণ এটা শুনে কাঁদতে লাগলেন, আর রাসূূল (ﷺ)  বারবার বলতে লাগলেন-আমাকে জিজ্ঞাসা করো, তখন হযরত ‘আব্দুল্লাহ বিন হুজাফা সাহমী (رضي الله عنه) দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন

-

مَنْ أَبِي؟ يَا رَسُولَ اللهِ


আমার পিতা কে? ইয়া রাসূলুল্লাহ (ﷺ)!


অতঃপর রাসূল (ﷺ) বললেন-

 

أَبُوكَ حُذَافَةُ


-‘তোমার পিতা হুজাফা।’ ১৩৬

{১৩৬. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮৩২ পৃ, হা/২৩৫৯, পরিচ্ছেদ:  بَابُ تَوْقِيرِهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَتَرْكِ إِكْثَارِ سُؤَالِهِ عَمَّا لَا ضَرُورَةَ إِلَيْهِ، أَوْ لَا يَتَعَلَّقُ بِهِ تَكْلِيفٌ وَمَا لَا يَقَعُ، وَنَحْوِ ذَلِكَ  , ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৩/১২৯ পৃ. হা/২৬৯৮, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/৭৩১ পৃ. হা/৬৬৫১, মুসনাদে আহমদ, ১৯/১০২ পৃ. হা/১২০৪৪, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, হা/৩১৩৪, মুসনাদে বায্যার, হা/৩১৬৫, সহীহ বুখারী, ১/৩০ পৃ. হা/৯৩, সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/১০৬}


আক্বিদা

রাসূূলে মাকবুল (ﷺ)’র বারংবার ইরশাদ- سَلُونِي -আমাকে জিজ্ঞাসা কর। এর থেকে প্রতীয়মান হয় যে,  আল্লাহ তা‘আলা তাঁর প্রিয় হাবীব (ﷺ) কে প্রত্যেক বস্তুর ইলম দান করেছেন। 

অতঃপর হযরত হুজাফা (رضي الله عنه) কে লোকেরা অপর কোন ব্যক্তির দিকে সম্পর্ক করতো। তিনি বুঝতে পারলেন যে, রাসূূল (ﷺ)’র কাছে প্রশ্ন করলে এই আপত্তিটি পরিষ্কার হয়ে যাবে। 

এজন্য রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন যে, তোমার পিতা হুজাফা (رضي الله عنه)। এর পূর্বেও তিনি এর দিকে সম্পর্কিত ছিলেন। লোকেরা যা বলত তা ছিল একটি আপত্তি। 






সমস্ত নবীগণ জীবিত এবং রাসূল (ﷺ)’র ইলম-


❏ হযরত সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, 


وَفِي رِوَايَةِ هَدَّابٍ: مَرَرْتُ - عَلَى مُوسَى لَيْلَةَ أُسْرِيَ بِي عِنْدَ الْكَثِيبِ الْأَحْمَرِ، وَهُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ


-‘‘মি’রাজ রজনীতে লালটিলার পাশ দিয়ে আমি অতিক্রম করেছি, তখন হযরত মূসা (عليه السلام) তাঁর কবরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছিলেন।’’ ১৩৭

{১৩৭. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮৪৫ পৃ., হা/২৩৭৫, পরিচ্ছেদ: بَابُ مِنْ فَضَائِلِ مُوسَى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ}


আক্বিদা

আল্লাহর নাবীগণ জীবিত এবং নিজেদের কাবর শরীফে নামায পড়েন। এটাও বুঝা গেল যে, নাবী পাক (ﷺ) কবরের ভিতরের অবস্থা জানেন, যার সম্পর্ক গায়বের সাথে। এ জন্যই তো তিনি বলেন-


هُوَ قَائِمٌ يُصَلِّي فِي قَبْرِهِ


-‘তিনি তাঁর কাবরে দাঁড়িয়ে নামায পড়ছেন।’  ১৩৮

{১৩৮. সমস্ত নবি  ওফাতের পর তাঁদের নিজ নিজ সমাধিতে জীবিত এবং সেখানে তাঁরা নামাজ পড়েন, এটাই সাহাবায়ে কেরামদের সুপ্রসিদ্ধ আকিদা ছিল। ইমাম বায্যার (رحمة الله)সহ এক জামাত ইমামগণ সংকলন করেন-

عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ ﷺ: الْأَنْبِيَاءُ أَحْيَاءٌ فِي قُبُورِهِمْ يُصَلُّونَ-

-‘‘হযরত আনাস বিন মালিক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : নিশ্চয় আম্বিয়ায়ে কিরাম () তাঁদের নিজ নিজ কবরে জীবিত এবং তারা সেখানে নামায আদায় করেন।’’ (ইমাম আবু ই‘য়ালা : আল-মুসনাদ : ৬/১৪৭ পৃ: হাদিস/৩৪২৫, ইমাম বায়হাকী : হায়াতুল আম্বিয়া : ৬৯-৭০পৃ., ইমাম নুরুদ্দীন হায়সামী : মাযমাউদ যাওয়াইদ : ৮/২১১পৃ. হাদিস/১৩৮১২, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী : তবকাতে ইস্পাহানী : ২/৪৪ পৃ:, ইমাম আদী : আল কামিল : ২/৭৩৯ পৃ:,ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: আল-জামেউস সগীর : ১/২৩০ পৃ: হাদিস- ৩০৮৯, ইমাম জালালুদ্দীন সূয়ুতী: শরহুস সুদূর: পৃ. ২৩৭, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী: সিলসিলাতুস সহীহাহ: হাদিস/৬২২, আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী : সাহীহুল জামে : হাদিস নং- ২৭৯০, দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ১/১১৯পৃ. হাদিস/৪০৩) আল্লামা নুরুদ্দীন ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) বলেন- 

رَوَاهُ أَبُو يَعْلَى وَالْبَزَّارُ، وَرِجَالُ أَبِي يَعْلَى ثِقَاتٌ.

-‘‘এ হাদিসের সকল রাবি সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’ (হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৮/২১১পৃ. হা/১৩৮১২) এজন্যই ইমাম জালাল উদ্দিন সুয়ূতি (رحمة الله) (ওফাত.৯১১হি.) তার সুপ্রসিদ্ধ কিতাব [أَنْبَاءُ الْأَذْكِيَاءِ بِحَيَاةِ الْأَنْبِيَاءِ] এর ৭ পৃষ্ঠায় মুসলিম উম্মাহর আক্বিদা লিখেছেন-

النَّظَرِ فِي أَعْمَالِ أُمَّتِهِ وَالِاسْتِغْفَارِ لَهُمْ مِنَ السَّيِّئَاتِ، وَالدُّعَاءِ بِكَشْفِ الْبَلَاءِ عَنْهُمْ، وَالتَّرَدُّدِ فِي أَقْطَارِ الْأَرْضِ لِحُلُولِ الْبَرَكَةِ فِيهَا، وَحُضُورِ جِنَازَةِ مَنْ مَاتَ مِنْ صَالِحِ أُمَّتِهِ، فَإِنَّ هَذِهِ الْأُمُورَ مِنْ جُمْلَةِ أَشْغَالِهِ فِي الْبَرْزَخِ كَمَا وَرَدَتْ بِذَلِكَ الْأَحَادِيثُ وَالْآثَارُ ـ

-‘‘‘উম্মতের বিবিধ কর্ম কাণ্ডের প্রতি দৃষ্টি রাখা, তাদের পাপরাশির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা, তাদের বালা মসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দুআ করা, পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে আনাগোনা করা ও বরকত দান করা এবং নিজ উম্মতের কোন নেক বান্দার ওফাত হলে তার জানাযাতে অংশগ্রহণ করা, এগুলোই হচ্ছে হুযুর (ﷺ) এর সখের কাজ। অন্যান্য হাদিস থেকেও এসব কথার সমর্থন পাওয়া যায়।’’ (ইমাম সুয়ূতি, আল-হাভী লিল ফাতওয়া, ২/১৮৪-১৮৫পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন।) এ বিষয় সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে আমার লিখিত ‘‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ  উন্মোচন’’ এর ১ম খণ্ডের ৪০৭-৪১১ পৃষ্ঠা দেখুন। ইনশাআল্লাহ আপনাদের সঠিক বিষয়টি বুঝে আসবে।}





নবী পাক (ﷺ)’র দোয়ার বারকাত-

সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, আমার মা আমাকে রাসূল (ﷺ)’র খিদমাতে নিয়ে উপস্থিত হলেন এবং আরয করলেন-


هَذَا أُنَس ابْنِي، أَتَيْتُكَ بِهِ يَخْدُمُكَ فَادْعُ اللهَ لَهُ


এটা আমার পুত্র আনাস, আপনার কাছে তাকে নিয়ে এসেছি আপনার খিদমাত করার জন্য। আল্লাহর দরবারে তার জন্য আপনি দো‘আ করুন। তখন রাসূল (ﷺ) প্রার্থনা করেন-


اللهُمَّ أَكْثِرْ مَالَهُ وَوَلَدَهُ


-‘হে আল্লাহ তাকে অধিক সম্পদ এবং আওলাদ দান করুন।’

 

❏ খাদেমুর রাসূল (ﷺ) হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন- 


فَوَاللهِ إِنَّ مَالِي لَكَثِيرٌ، وَإِنَّ وَلَدِي وَوَلَدَ وَلَدِي لَيتَعَادُّونَ عَلَى نَحْوِ الْمِائَةِ، الْيَوْمَ


-‘আল্লাহর শপথ, আমার সম্পদ অনেক এবং আমার সন্তান ও নাতি-নাতনির সংখ্যা শতের কাছাকাছি পৌঁছেছে।’  ১৩৯

{১৩৯. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৯২৯পৃৃ:, হা/২৪৮১, পরিচ্ছেদ:  بَابُ مِنْ فَضَائِلِ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُ, হযরত আনাস (رضي الله عنه)’র ফজিলত অধ্যায়। মুসনাদে আহমদ, ২০/৩১৫ পৃ. হা/১৩০১৩,  বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৩/৭৬ পৃ. হা/৪৯২৬, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, হা/৩২০০, মুসনাদে বায্যার, হা/৬৪২৩}


আক্বিদা

সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) নিজেদের সন্তানদেরকে রাসূল (ﷺ)’র দরবারে পেশ করে তাদের জন্য দো‘আ চাইতেন। হযরত আনাস (رضي الله عنه) শপথ করে বলেন যে, রাসূল (ﷺ)’র দোয়ার বারকাতে আমার অধিক সম্পদ আর অধিক আওলাদ হয়েছে। কবি বলেন-


اجابت نے جہك كر  گلے سے لگايا

دلہن بن كے نكلى جب دعائ محمد


-‘‘কবুলিয়্যাত ঝুঁকে গলায় লাগলো,

হুযূর (ﷺ)-এর দো‘আ নব দুলহার ন্যায় কবুল করা হয়।’’





যে যাকে ভালবাসে সে তার সাথে থাকবে-


❏ সায়্যিদুনা হযরত আনাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন- এক বেদুঈন রাসূল (ﷺ) কে আরজ করলেন-


مَتَى السَّاعَةُ؟


কিয়ামত কখন হবে? রাসূল (ﷺ) বললেন-


وَمَاذَا أَعْدَدْتَ لَهَا؟


তুমি কিয়ামতের জন্য কী প্রস্তুত করেছ? তিনি বললেন-


قَالَ: لاَ شَيْءَ، إِلَّا أَنِّي أُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ


আমার তেমন কোন কিছুই নেই, তবে আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)-কে ভালবাসি। তখন রাসূল (ﷺ) বললেন- 


أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ


‘যাকে তুমি ভালবাস, তাঁর সাথেই তুমি থাকবে।’ 


সায়্যিদুনা আনাস (رضي الله عنه) বলেন যে, ইসলাম গ্রহণ করার পর রাসূল (ﷺ)’র এই মুবারক বাণী ছাড়া অন্য কোন কিছুতে এতটা আনন্দিত হয়নি, যতটা এটা শুনে হয়েছি। 


أَنْتَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ


তার সাথেই তুমি থাকবে, যাকে তুমি ভালবাস। 


❏ সায়্যিদুনা হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন-


فَأَنَا أُحِبُّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا بَكْرٍ، وَعُمَرَ، وَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ مَعَهُمْ بِحُبِّى إِيَّاهُمْ، وَإِنْ لَمْ أَعْمَلْ بِمِثْلِ أَعْمَالِهِمْ


-‘‘সুতরাং আমি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলে মকবুল (ﷺ), হযরত আবূ বকর (رضي الله عنه) এবং হযরত ওমর (رضي الله عنه) কে ভালবাসি। আর আমি আশা রাখি যে, তাদের সাথেই আমি থাকবো। যদিও আমি তাদের সমতুল্য আমল করতে পারিনি।’’  ১৪০

{১৪০ . সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/২০৩২ পৃ. হা/, ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৫/১২ পৃ. হা/৩৬৮৮, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৩৯৫ পৃ. হা/৫০০৯, তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, হা/১৫২৭, মুসনাদে আহমদ, ১৯/১৩১ পৃ. হা/১২০৭৫, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, ৫/৩৭৩ পৃ. হা/৩০২৪, মুসনাদে বায্যার, হা/৬২৮৩, বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, হা/৩৫১}


আক্বিদা

নবীয়ে পাক ছাহেবে লাওলাক (ﷺ)’র সাথে ভালবাসা, সাহাবায়ে কিরাম এবং আউলিয়ায়ে কেরাম সাথে ভালবাসা স্থাপনকারীগণ ক্ষতির মধ্যে থাকেন না। কিয়ামত দিবসে তাদের হাশর হবে নবী-রাসূল (ﷺ), সাহাবা এবং আউলিয়াদের সাথে। 

তাদের সাথে ভালবাসা রাখার যখন এতো বেশি উপকার, সুতরাং তারা যখন সাথে থাকবেন তখন আরো বেশি বরকত মন্ডিত হবে। 

অধিক ভালবাসা এটা তাঁদের পরলৌকিক জীবনের সাথে নির্দিষ্ট নয়। বুঝা গেল আউলিয়ায়ে কিরাম ইন্তেকালের পরও উপকার করতে পারেন।






রাসূল (ﷺ)-এর দৃষ্টি শক্তির পরিসীমা-


❏ মিশকাত শরীফের المُعْجِزَاتْ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন-


نَعَى النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ زَيْدًا وَجَعْفَرًا وَابْنَ رَوَاحَةَ لِلنَّاسِ قَبْلَ أَن يَأْتِيهِ خَبَرُهُمْ فَقَالَ أَخْذَ الرَّايَةَ زِيدٌ فَأُصِيبَ ثُمَّ أَخَذَ جَعْفَرٌ فَأُصِيبَ ثُمَّ أَخَذَ ابْنُ رَوَاحَةَ فَأُصِيبَ وَعَيْنَاهُ تَذْرِفَانِ حَتَّى أَخَذَ الرَّايَةَ سَيْفٌ من سيوف الله حَتَّى فتح الله عَلَيْهِم. رَوَاهُ البُخَارِيّ


-‘‘হযরত যায়েদ, জা’ফর ও ইবন রাওয়াহা (রিদওয়ানুল্লাহে আলাইহিম আজমায়ীন) প্রমুখ সাহাবীগণের শাহাদত বরণের সংবাদ যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আসার আগেই হুযুর (ﷺ) মদীনার লোকদেরকে উক্ত সাহাবীগণের শহীদ হওয়ার কথা জানিয়ে দেন। তিনি বলেন, পতাকা এখন হযরত যায়দ (رضي الله عنه)-এর হাতে, তিনি শহীদ হয়ে গেলেন। শেষ পর্যন্ত ‘আল্লাহর তলোয়ার’ উপাধিতে ভূষিত সাহাবী হযরত খালেদ বিন ওয়ালীদ (رضي الله عنه) ঝাণ্ডা হাতে নিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত আল্লাহ তা’আলা তাঁকে জয় যুক্ত করলেন।’’  ১৪১

{১৪১. ইমাম খতিব তিবরিযী, মিশকাতঃ ৪/৩৮৪ পৃ. হা/৫৮৮৯, ইমাম বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৭/৫১২ পৃ. হা/৪২৬২}

 

আক্বিদা

এতে বোঝা গেল, মদীনা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত যুদ্ধ ক্ষেত্র ‘বেরে মউনা’য় যা কিছু হচ্ছিল, হুযুর (ﷺ) তা’ সুদূর মদীনা থেকে অবলোকন করছিলেন, কারণ মহান রব তাঁর চোখ মুবারকের কাছে সমগ্র দুনিয়া সংকুচিত করে দিয়েছেন। ১৪২

{১৪২ . সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}






প্রত্যেক কবরে নবীজির উপস্থিতি-


❏ সুবিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ ‘মিশকাত’ শরীফের ‘ইছবাতু আযাবিল কবর’ শীর্ষক অধ্যায়ে হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, কবরে যখন মৃত ব্যক্তিকে শায়িত করা হবে তখন-


فَيَقُولَانِ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ لِمُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ


মুনকার-নকীর ফিরিশতাদ্বয় কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন, ওনার (মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ ) সম্পর্কে দুনিয়ায় তুমি কি ধারণা পোষণ করতে?  ১৪৩

{১৪৩. খতিব তিবরিযীঃ মেশকাতঃ ১/৪৫ পৃ. হাদিসঃ ১২৬, মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ৪/২২০০ হাদিসঃ ১৮৭০, বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৩/২০৫, হাদিসঃ ১৩৩৮, মুসলিমঃ আস-সহীহঃ ১/৪৪২ হাদিসঃ ৭০, নাসায়ীঃ সুনানে কোবরাঃ ৪/৯৭ পৃ. হাদিসঃ ২০৫১, আবু দাউদঃ আস্-সুনানঃ ৫/১১৪ পৃ. হাদিসঃ ৪৭৫২}


আক্বিদা


❏ এ হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি (رحمة الله) লিখেন-


قَالَ النَّوَوِيّ قيل يكْشف للْمَيت حَتَّى يرى النَّبِي صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهِي بشرى عَظِيمَة لِلْمُؤمنِ ان صَحَّ


-‘‘মুসলিম শরিফের ব্যাখ্যাকার ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, মৃত ব্যক্তির দৃষ্টি থেকে আবরণ উঠিয়ে নেয়া হয়, যার ফলে সে নবী করীম (ﷺ)কে সরাসরি দেখতে পায়। এটা তার জন্য বড়ই শুভ সংবাদ। যদি সে সঠিক পথে থাকে।’’  ১৪৪

{১৪৪. ইমাম সুয়ূতি, শরহে সুনানে ইবনে মাযাহ, ১/৩১৬পৃ. হাশীয়ায়ে মেশকাতঃ ২৪ পৃ. নূর মুহাম্মদ কুতুবখানা, করাচী, পাকিস্তান।}


তাই রাসূল (ﷺ) সর্ব অবস্থায়ই হাযির-নাযির আছেন। আমরা আমাদের পাপ রাশির কারণে দেখিনি। 


❏ ইমাম কাস্তাল্লানী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় লিখেন-


فَقِيْلَ يُكْشَفُ لِلْمَيِّتِ حَتَّى يَرْىَ النَّبِىَّ عَلَيْهِ السَّلاَمُ وَهِىَ بَشْرَى عَظِيْمَةُ لِلْمُؤْمِنِ اِنْ صَحَّ


-‘‘এও বলা হয়েছে যে, তখন মৃত ব্যক্তির দৃষ্টির আবরণ অপসারণ করা হয়, যার দরুণ সে নবী (ﷺ)কে দেখতে পায়। এটি মুসলমানদের জন্য বড় সুখের বিষয়, যদি সে সঠিক পথে থাকে।’’  ১৪৫

{১৪৫.ইমাম কাস্তাল্লানীঃ ইরশাদুস্-সারীঃ ২/৪৬৪পৃ.}


আহলে হাদিসদের ইমাম আযিমাবাদী এবং মোবারকপুরীও অনুরূপ তাদের হাদিসের ব্যাখ্যা গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।  ১৪৬

{১৪৬.আযিমাবাদী, আওনুল মা‘বুদ, ১৩/৬২পৃ. মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ৪/১৫৫পৃ.]

 

বুঝা গেল এটাই সঠিক আক্বিদা। ১৪৭

{১৪৭. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}




প্রকাশ্যে গায়বী সংবাদ দেয়ার ঘোষণা-


❏ বুখারী শরীফের كِتَابُ الْاِعْتِصَامِ بِالْكِتَاِب وَالسُّنَّةِ এ ও তাফসীরে খাযেনে لاَ تَسْئَلُوْا عَنِ الْاَشْيَاءِ اِنْه تُبْدَ لَكُمْ. আয়াতের ব্যাখ্যায় উল্লেখিত আছে,


قَامَ عَلَى المِنْبَرِ، فَذَكَرَ السَّاعَةَ، وَذَكَرَ أَنَّ بَيْنَ يَدَيْهَا أُمُورًا عِظَامًا، ثُمَّ قَالَ: مَنْ أَحَبَّ أَنْ يَسْأَلَ عَنْ شَيْءٍ فَلْيَسْأَلْ عَنْهُ، فَوَاللَّهِ لاَ تَسْأَلُونِي عَنْ شَيْءٍ إِلَّا أَخْبَرْتُكُمْ بِهِ مَا دُمْتُ فِي مَقَامِي هَذَا، قَالَ أَنَسٌ: فَأَكْثَرَ النَّاسُ البُكَاءَ، وَأَكْثَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ يَقُولَ: سَلُونِي، فَقَالَ أَنَسٌ: فَقَامَ إِلَيْهِ رَجُلٌ فَقَالَ: أَيْنَ مَدْخَلِي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: النَّارُ، فَقَامَ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ حُذَافَةَ فَقَالَ: مَنْ أَبِي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: أَبُوكَ حُذَافَةُ، قَالَ: ثُمَّ أَكْثَرَ أَنْ يَقُولَ: سَلُونِي سَلُونِي


-‘‘একদিন হুযুর (ﷺ) মিম্বরের উপর দাঁড়ালেন। অতঃপর কিয়ামতের উল্লেখপূর্বক এর আগে যে সমস্ত ভয়ানক ঘটনাবলী ঘটবে, সে সম্পর্কে বর্ণনা দিলেন। এরপর তিনি (ﷺ) বললেন, ‘যার যা খুশী জিজ্ঞাসা করতে পার।’ খোদার শপথ, এ জায়গা অর্থাৎ এ মিম্বরে আমি যতক্ষণ দণ্ডায়মান আছি, ততক্ষণ তোমরা যা কিছু জিজ্ঞাসা কর না কেন, আমি অবশ্যই উত্তর দেব।’ হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, হুজুর (ﷺ)-এর এ জ্বালাময়ী অবস্থা দেখে অনেকে কাঁদতে শুরু করলেন। তিনি অসংখ্য বার বলতে লাগলেন, তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর। হযরত আনাস (رضي الله عنه) বলেন, এ অবস্থা দেখে জনৈক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আরয করলেন, ‘পরকালে আমার ঠিকানা কোথায় হবে?’ ফরমালেন জাহান্নামের মধ্যে। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে হুযাফা (رضي الله عنه) দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসা করলেন হে আল্লাহর রাসূল! ‘আমার বাবা কে? ইরশাদ করেন, হুযাফা।’ এরপর রাসূল (ﷺ) জ্বালাময়ী অবস্থায় বার বার বলতে লাগলেন, জিজ্ঞাসা করো, জিজ্ঞাসা করো।’’ ১৪৮

{১৪৮. বুখারীঃ আস-সহীহঃ ৯/৯৫পৃ. হাদিসঃ ৭২৯৪, ইবনে হিব্বান, আস্-সহিহ, ১/৩০৯পৃ. হাদিসঃ ১০৬, বগভী, শরহে সুন্নাহ, ১৩/২৯৯পৃ. হাদিস, ৩৭২০, আব্দুর রায্যাক, জামেউ মা‘মার বিন রাশেদ, ১১/৩৭৯পৃ. হাদিস, ২০৭৯৬, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, প্রকাশ.১৪০৩হি., ইমাম খাযেন, তাফসীরে খাযেন, ২/৮২পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ. ১৪১৫হি.}

 

আক্বিদা

এ হাদিস থেকে জানতে পারলাম রাসূল (ﷺ) সাহাবায়ে কেরামদেরকে প্রশ্ন করার জন্য কোন শর্ত বেধে দেননি, বরং বলেছেন তোমাদের যা ইচ্ছা জিজ্ঞেস কর, কেননা সাহাবায়ে কিরামের এ বিশ্বাস ছিল যে মহান রব রাসূল (ﷺ) কে প্রকাশ ও অপ্রকাশ্য সকল সংবাদ বলার ক্ষমতা দান করেছেন। আর এটি অবিশ্বাস করেছিল কতিপয় মুনাফিকরা। এ হাদিসে আরও কয়েকটি বিষয় সুস্পষ্ট প্রতিভাত হলো যেমন জান্নাতী জাহান্নামী হওয়া এবং কে হুযাফা (رضي الله عنه)-এর সত্যিকার বাবা এটি ইলমে গায়ব ছাড়া কখনই বলা সম্ভব নয়। ১৪৯

{১৪৯. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}

 
Top