সায়্যিদুনা জাবির বিন আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه)’র আক্বিদা


খানার উপর দো‘আ চাওয়া এবং খানার মধ্যে বরকত-

সায়্যিদুনা হযরত জাবির (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, যখন (খন্দক) গর্ত খনন করা হল তখন আমি রাসূল (ﷺ)’র মধ্যে অধিক ক্ষুদার প্রভাব দেখলাম। 

আমি আমার পরিবারের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম যে, তোমার কাছে খাওয়ার কিছু আছে? কেননা, আমি রাসূল (ﷺ)’র মধ্যে অধিক ক্ষুধার প্রভাব দেখেছি। 

তখন তিনি একটি থলে বের করলেন, যার মধ্যে চার কেজি যব ছিল, আর আমার কাছে একটি গৃহপালিত ছাগল ছিল। আমি বকরিটিকে জবেহ করলাম আর আমার বিবি আটা পিসতেছে। তিনিও আমার সাথে সাথে কাজ শেষ করলেন। আমি ছাগলের গোশত কেটে ডেকসির মধ্যে ঢেলে দিলাম। 

অতঃপর আমি রাসূল (ﷺ)’র খিদমতে যাচ্ছিলাম, তখন আমার বিবি আমাকে বললেন, আমাকে রাসূল (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه)’র সামনে লজ্জিত করবেন না। আমি রাসূল (ﷺ)’র খেদমতে উপস্থিত হলাম এবং তাঁর কান মুবারকে চুপে চুপে বললাম, হে রাসূল (ﷺ)! আমরা একটি ছাগলের বাচা জবেহ করেছি এবং এক সা যব পিসেছি যেগুলো আমাদের কাছে ছিল। আপনি কয়েকজন সাহাবাকে নিয়ে আমাদের এখানে তাশরীফ নিবেন। 


তখন রাসূল (ﷺ) উঁচু আওয়াজে বললেন-


يَا أَهْلَ الخَنْدَقِ إِنَّ جَابِرًا قَدْ صَنَعَ سُؤْرًا، فَحَيَّ هَلًا بِكُمْ


-‘‘হে খন্দকবাসী, জাবির তোমাদেরকে দাওয়াত দিয়েছেন। সুতরাং তোমরা চলো।’’ 


রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করলেন-

لاَ تُنْزِلُنَّ بُرْمَتَكُمْ، وَلاَ تَخْبِزُنَّ عَجِينَكُمْ حَتَّى أَجِيءَ


-‘‘আমি না আসা পর্যন্ত ডেকসি আনবে না এবং রুটিও পাকাবে না।’’ 


অতঃপর আমি আসলাম এবং রাসূল (ﷺ)ও তাঁর সাহাবাদের নিয়ে আসলেন। আমি আমার পারিবারের কাছে গেলে, তিনি বললেন, তোমারই বদনাম ও অসম্মান হবে। আমি বললাম, তুমি যে রকম আমাকে বলেছ, আমি সে রকমই করেছি। অতঃপর পিসনকৃত আটা বের করলেন।


فَبَصَقَ فِيهِ وَبَارَكَ

-‘‘রাসূল (ﷺ) এর মধ্যে থুথু মোবারক দিলেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করলেন।’’ 


অতঃপর ডেকসির মধ্যে থুথু মোবারক দিলেন এবং বরকতের জন্য দোয়া করলেন, তারপর বললেন, রুটি বানানোর জন্য। আরেকজনকে ডাক। আর তোমরা দুজনে মিলে রুটি বানাও। আর ডেকসির থেকে তরকারি পরিবেষণ কর কিন্তু ডেকসি চুলা থেকে নামাবে না। 


وَهُمْ أَلْفٌ، فَأُقْسِمُ بِاللَّهِ لَقَدْ أَكَلُوا حَتَّى تَرَكُوهُ


সাহাবায়ে কিরাম ছিলেন এক হাজার, আল্লাহর শপথ, তাঁরা সবাই খেয়েও হুবহু অবশিষ্ট রেখেছিলেন। আর যে সময় তিনি পুনরায় আসলেন আমাদের ডেকসিটি উতরানো ছিল এবং আমাদের পিসনকৃত আটাগুলো প্রথমবার যেভাবে ছিল সেভাবেই রয়ে গেল (সুবহানাল্লাহ!)।  ১৫০

{১৫০. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৩/১৬১০ পৃ. হা/২০৩৯, ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৫/১০৮ পৃ: হা/৪১০২, ইমাম হাকেম, আল-মুস্তাদরাক, ৩/৩২ পৃ. হা/৪৩২৪, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/৩৫৩ পৃ. হা/৮৯০৯, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬৪৫ পৃ. হা/৫৮৭৭}


আক্বিদা

খাবার সামনে নিয়ে দো‘আ চাওয়া বৈধ। সামান্য জিনিসকে বেশি করা এটা প্রিয় নবী (ﷺ)’র মু’জিযা। অনুরূপ রাসূল (ﷺ)’র এই জ্ঞান হওয়া যে, হযরত জাবির (رضي الله عنه)’র ঘরের মধ্যে সমস্ত সাহাবাদের খাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়নি, এরপরেও সকল সাহাবাদেরকে যাওয়ার জন্য আদেশ দেয়া এবং এটাও বলা যে, আমি না আসা পর্যন্ত ডেকসি আনবে না এবং আটা রুটিও আনবে না। 

এটা স্পষ্টভাবে বুঝা গেল যে, রাসূল (ﷺ) জানতেন যে, এই গোশত এবং রুটিগুলো দ্বারা সমস্ত সাহাবাদের জন্য ভালভাবেই হয়ে যাবে। আর এটা এমন জ্ঞান যা ইলমে গায়বের সাথে সম্পর্ক রাখে। সুতরাং এভাবেই হয়েছে। হযরত জাবের (رضي الله عنه) বলেন, সৈন্য ছিল প্রায় এক হাজার মুজাহিদ।


উপকারি মনে করা এবং ফুঁ দেওয়া-


قَالَ أَبُو الزُّبَيْرِ: وَسَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللهِ يَقُولُ: لَدَغَتْ رَجُلًا مِنَّا عَقْرَبٌ، وَنَحْنُ جُلُوسٌ مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللهِ أَرْقِي؟ قَالَ: مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَفْعَلْ


হযরত আবূ যুবায়ের (رضي الله عنه) বলেন, আমি সায়্যিদুনা হযরত জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, একদিন রাসূল (ﷺ) এর সামনে আমাদের এক ব্যক্তিকে একটি বিচ্ছু দংশন করল। তখন এক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ)! আমি কি তার ঝাড়ফুঁক করব? তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন,


مَنِ اسْتَطَاعَ مِنْكُمْ أَنْ يَنْفَعَ أَخَاهُ فَلْيَفْعَلْ

-‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি তার ভাইয়ের উপকার করতে সক্ষম হয়, সে যেন তা করে।’’  ১৫১

{১৫১. {ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/১৭৭৬ পৃ. হা/২১৯৯, ইমাম তাহাভী, শরহে মা‘আনীল আছার, ৪/৪৭৬ পৃ. হা/৬৬৮০, ই.ফা.বা, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬৪৫ পৃ. হা/৫৮৭৭, ইমাম হাকেম, আল-মুসাস্তাদরাক, ৪/৪৬০ পৃ. হা/৮২৭৭, নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৭/৭৪ পৃ. হা/৭৪৯৮, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, হা/১৯১৪, সহীহ ইবনে হিব্বান, ২/২৯০ পৃ. হা/৫৩২, ১৭/৩৭ পৃ. হা/৭৪}


আক্বিদা

আল্লাহর সৃষ্টি থেকে উপকার লাভ করা জায়েয। এবং এটাকে আল্লাহর সৃষ্টি জেনে উপকারী জানাও জায়েয। ১৫২ 


কেননা রাসূল (ﷺ) নিজেই ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার আপন ভাইয়ের উপকার চায় সে উপকার দেয়ার জন্য দম করাও জায়িয। এবং এটা রাসূূল (ﷺ)’র সুন্নাত। 


{১৫২. আল্লাহ রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়ে গেছেন যে, যখন কোন ব্যক্তি অসহায় অবস্থায় কোন স্থানে পড়ে যায় তার কোন সাহায্যকারী ব্যক্তি খুজেঁ না পায় তখন মহান অলীদের আহ্বান করার জন্য। তারা আল্লাহর বান্দাদের সাহায্যের জন্য গায়েবী ভাবে চলে আসেন। 


এ বিষয়ে ইমাম তাবরানী (رحمة الله) একটি হাদীস সংকলন করেন-

حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِسْحَاقَ التُّسْتَرِيُّ، ثَنَا أَحْمَدُ بْنُ يَحْيَى الصُّوفِيُّ، ثَنَا عَبْدُ الرَّحْمَنِ بْنُ سَهْلٍ، حَدَّثَنِي أَبِي، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ عِيسَى، عَنْ زَيْدِ بْنِ عَلِيٍّ، عَنْ عُتْبَةَ بْنِ غَزْوَانَ، عَنْ نَبِيِّ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا أَضَلَّ أَحَدُكُمْ شَيْئًا أَوْ أَرَادَ أَحَدُكُمْ عَوْنًا وَهُوَ بِأَرْضٍ لَيْسَ بِهَا أَنِيسٌ، فَلْيَقُلْ: يَا عِبَادَ اللهِ أَغِيثُونِي، يَا عِبَادَ اللهِ أَغِيثُونِي، فَإِنَّ لِلَّهِ عِبَادًا لَا نَرَاهُمْ وَقَدْ جُرِّبَ ذَلِكَ

-“ইমাম তাবরানী যথাক্রমে..............আলে রাসূল (ﷺ) ইমাম জয়নাল আবেদীনের সন্তান যায়েদ বিন আলি (رحمة الله) হতে তিনি যাহাবী উতবাতা ইবনে গাযওয়ান (رضي الله عنه) হতে তিনি আল্লাহর নবী হতে তিনি বলেন, যখন কোন স্থানে তোমরা পথহারা হয়ে যাও অথবা কোন এমন অঞ্চলে অবস্থান হল যেখানে তোমাদের কোন সাহায্যকারী সাথী নেই। অতঃপর তোমরা বলবে: হে আল্লাহর মহান বান্দাগণ (ওলীরা) সাহায্য করুন! হে আল্লাহর নৈকট্য প্রাপ্ত বান্দাগণ সাহায্য করুন!......অতঃপর তোমার সমস্যা দূর হয়ে যাবে।” (তাবরানী, মু’জামুল কাবীর, ১৭/১১৭ পৃ. হা/ ২৯০, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ১/৭৮ পৃ. হা/ ৭৩৪, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৬/৭০৬ পৃ. হা/১৭৪৯৮, ইমাম হাইছামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ১০/১৩২ পৃ., মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১৬৯৩ পৃ. হা/২৪৪১) 


এই হাদিস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, যখন আমরা দুরাবস্থায় পড়বো তখন আল্লাহর নবী আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়ে গেছেন আল্লাহর মহান বন্ধু (অলীদের) আহবান করার জন্য। এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে আহলে হাদিসদের ইমাম নওয়াব সিদ্দিক হাসান খাঁন ভূপালি লিখেন- رجاله ثقات -“এই হাদিসের সমস্ত রাবী সিকাহ।” (নাযলুল আবরার, ৩৩৫ পৃষ্ঠা) 


অনেকে এই সনদের সমস্ত রাবীই সিকাহ অনেকে আলে রাসুল (ﷺ) যায়েদ বিন আলীকে প্রশ্ন বিদ্ধ করতে চান, ইমাম যাহাবী তার জবাব তার জীবনীতে উল্লেখ করেছেন। (যাহাবী, সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৫/৩৮৯ পৃ. ক্রমিক নং ১৭৮, তারিখুল ইসলাম, ৩/৪১৫ পৃ. ক্রমিক নং ১১৫) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে লিখেন-

قَالَ بَعْضُ الْعُلَمَاءِ الثِّقَاتِ: هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ يَحْتَاجُ إِلَيْهِ الْمُسَافِرُونَ

-‘‘বিশ্বস্ত উলামাগণ বলেছেন, এই হাদিসটি ‘হাসান’ এবং মুসাফিরদের জন্য দলিল।’’ (মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ৪/১৬৯৩ পৃ. হা/২৪৪১) 


ইমাম বাযযার (رحمة الله) সংকলন করেন যে, সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত সূত্রে সেখানে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ:....فَإِذَا أَصَابَ أَحَدَكُمْ عَرْجَةٌ بِأَرْضِ فَلَاةٍ فَلْيُنَادِ: أَعِينُوا عِبَادَ اللَّهِ

-“যখন ভূলে মসিবতে পড়ে যাবে, যখন কোন আল্লাহর বান্দা যমীনের কোন ভুল স্থানে চলে গেল এই দূরাবস্থায় সময় সে এ বলে আহবান করবে, হে আল্লাহর বান্দাহ (ওলীগণ) সাহায্য করুন।’’ (ইমাম বাযযার, আল-মুসনাদ, ১১/১৮১, হা/৪৯২২, ইমাম হাইছামি, মাযমাউত-যাওয়াহিদ, ১০/১৩২ পৃ. হা/১৭১০৪, ইমাম বায়হাকি, আদাব, ১/২৬৯ পৃ. হা/৬৫৭, এবং শুয়াবুল ঈমান, ১/৩২৫ পৃ. হা/১৬৫, ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৬/৯১ পৃ. হা/২৯৭২১, ইমাম নুরুদ্দীন হাইছামি, কাশফুল আশতার, ৪/৩৪ পৃ. হা/৩১২৯) হাফেজুল হাদিস ইমাম নুরুদ্দিন ইবনে হাজার হাইছামী (رحمة الله) এই সনদ সম্পর্কে বলেন- رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَرِجَالُهُ ثِقَاتٌ. -“ইমাম বাযযার (رحمة الله) হাদিসটি বর্ণনা করেছেন আর সনদের সমস্ত রাবী সিকাহ।” (ইমাম হাইছামী, মাযমাউদ-যাওয়াইদ, ১০/১৩২পৃ. হা/ ১৭১০৪) এজন্য আল্লামা ইমাম খাযেন আশ্শাফেয়ী (ওফাত.৭৪১হি.) আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদা প্রসঙ্গে এ স্থানে লিখেন-

فَإِنَّ اَلإِسْتِعَانَةُ بِالمَخْلُوْقِ فِي دَفْعِ الضَّرَرِ جَائِزة

-‘‘দুঃখ কষ্ট দূর করার জন্য আল্লাহর মাখলুকের কাছ থেকে সাহায্য চাওয়া বৈধ।’’ (খাযিন, লুবাবুত তাভিল ফি মা‘আনিত তানযিল, ২/৫৩০ পৃ.)}



উপমাহীন নাবী (ﷺ)-


❏ সায়্যিদুনা হযরত জাবির ইবনু আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন, রাসূূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- 


مَنْ رَآنِي فِي النَّوْمِ فَقَدْ رَآنِي، إِنَّهُ لَا يَنْبَغِي لِلشَّيْطَانِ أَنْ يَتَمَثَّلَ فِي صُورَتِي


-‘যে ব্যক্তি স্বপ্নে আমাকে দেখেছে সে বাস্তবেই আমাকে দেখেছে। কেননা, শয়তান আমার রূপ ধারণ করতে পারে না।’  ১৫৩

{১৫৩. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৭৭৬পৃ. হা/২২৬৮, স্বপ্ন দেখা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: بَابُ قَوْلِ النَّبِيِّ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ مَنْ رَآنِي فِي الْمَنَامِ فَقَدْ رَآنِي ।}


আক্বিদা

হুযূর পুরনূূর (ﷺ)’র জাত মুবারাক উপমাহীন। শয়তান প্রত্যেকের রূপ ধারণ করতে পারে। কিন্তু প্রিয় নবী (ﷺ)’র রূপ ধারণ করতে পারে না। 

আর যে সব ব্যক্তি রাসূল (ﷺ)’র উপমার ‘আক্বীদা রাখে। অন্য অর্থে সে নিজেকে শয়তান থেকে বড় মনে করে, কেননা সে (শয়তান) তো উপমা ধারণ করতে পারে না। কিন্তু এ ব্যক্তি উপমা ধারণ করে। 


ঘি ভর্তি পাত্র-


সায়্যিদুনা হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, হযরত মালিক (رضي الله عنه)’র মা নবী করিম (ﷺ) কে একটি ঘি ভর্তি পাত্র হাদিয়া হিসেবে পাঠালেন। তাঁর ছেলে যখন তাঁর কাছে তরকারি চাইলেন, তখন তার কাছে যখন কিছুই ছিল না। 

তখন যে পাত্র করে তিনি রাসূল (ﷺ)’র কাছে ঘি পাঠিয়েছেন তা হতে তিনি কিছু ঘি পেলেন। এই ঘির মাধ্যমে তাঁর ঘরে তরকারীর সমস্যা সমাধান হলো। একদিন তিনি এ ঘির পাত্রকে নড়াচড়া করলেন এবং রাসূূল (ﷺ)’র দরবারে উপস্থিত হলেন। 

নাবি কারীম (ﷺ) জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কি পাত্রটি নেড়েছো? তিনি বললেন, হ্যাঁ, তখন রাসূল (ﷺ) বললেন- 


لَوْ تَرَكْتِيهَا مَا زَالَ قَائِمًا


-‘যদি তুমি পাত্রটি এভাবে রেখে দিতে তবে (অবিরাম) তা হতে ঘি পেতে।’  ১৫৪

{১৫৪. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৭৮৪পৃ:, হা/২২৮০, রাসূূল (দ.)’র মু’জেযা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ: بَابٌ فِي مُعْجِزَاتِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/৩৬৩ পৃ. হা/৮৯১৫, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬৫৮ পৃ. হা/৫৯০৭}


আক্বিদা

বুযুর্গ ব্যক্তিদেরকে হাদিয়া পাঠানো এবং গ্রহণ করা জায়িয। আর নবী করিম (ﷺ)’র সুন্নাত হল হাদিয়া গ্রহণকারীর দো‘আর মাধ্যমে বারকাত হয়। 

এটাও বুঝা গেল যে, নবী করিম (ﷺ) কে আল্লাহ এমন মর্যাদা দান করেছেন যে, তিনি যদি চান তবে বরকত শেষ হবে না। 


অসহায়ের আশ্রয়গার-


হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, এক ব্যক্তি নবী করিম (ﷺ)’র খেদমতে এসে কিছু খাদ্য চাইল। রাসূল (ﷺ) তাকে অর্ধ ওসাক (একশ বিশ কিলোগ্রাম) যব দান করলেন। 

ব্যক্তিটি তার পরিবার এবং মেহমানদেরকে নিয়ে যবগুলো খেতে রইলেন। অবশেষে একদিন ব্যক্তিটি যবগুুলো মেপে ফেলেন। তারপর সে নবী করিম (ﷺ)’র দরবারে উপস্থিত হলে, রাসূল (ﷺ) তাকে বললেন- 


لَوْ لَمْ تَكِلْهُ لَأَكَلْتُمْ مِنْهُ، وَلَقَامَ لَكُمْ


-‘যদি তুমি যবগুলো ওজন না করতে, তবে তোমরা যবগুলো খেতেই থাকতে পারতে (অবিরত) এবং আজ পর্যন্ত যবগুুলো অবশিষ্ট থাকতো।’  ১৫৫

{১৫৫. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৭৮৪পৃ. হা/২২৮১, নবী করিম (ﷺ)’র মু‘জিযা অধ্যায়, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬৭১ পৃ. হা/৫৯৪১, ইমাম ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/৩৬৩ পৃ. হা/৮৯১৪, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, হা/৩১৮১২}


আক্বিদা

সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) গণ প্রিয় নাবী (ﷺ) কে অসহায়ের আশ্রয় হিসেবে জানতেন এবং যদি কোন প্রয়োজন অথবা পেরেশানি ভোগ করতেন তবে রাসূলে কারিম (ﷺ)’র নিকট আরয করতেন। আর রাসূল (ﷺ) তাদের হাজাতপূর্ণ করতেন।


❏ কবি বলেন-


جو گدا  ديكهو لئے جاتا  ہے  تودڑا  نور كا

نور كى سركار سے كيا اس ميں توڑا  نور كا


-‘নবীর দুয়ারে দেখ ভিখারী নূরের কিছু দান নিয়ে গেল,

একটু নিলেও শাহানশাহ থেকে কিবা-ই নিল!’




কাউকে ‘না’ না বলা-


❏ সায়্যিদুুনা হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন-


مَا سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا قَطُّ فَقَالَ لَا


-‘কখনো এরূপ হয়নি যে, নবী করিম (ﷺ)’র কাছে কোন কিছু চাওয়া হয়েছে। কিন্তু তিনি “না” বলেছেন।’  ১৫৬

{১৫৬.  সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮০৫ পৃ: হা/২৩১১, রাসূল (ﷺ)’র দানশীলতা অধ্যায়, পরিচ্ছেদ:

 بَابُ مَا سُئِلَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْئًا قَطُّ فَقَالَ لَا وَكَثْرَةُ عَطَائِهِ, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৬১৭ পৃ. হা/৫৮০৫, পরিচ্ছেদ:  بَابٌ فِي أَخْلَاقِهِ وَشَمَائِلِهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسلم, সুনানে দারেমী, ১/২১১ পৃ. হা/৭১, মুসনাদে আহমদ, ২২/১৯৮ পৃ. হা/১৪২৯৪, মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, হা/২০০১, ইমাম আবু নুয়াইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ৭/৮৯ পৃ., ইমাম বুখারী, আদাবুল মুফরাদ, হা/২৯৮, মুসনাদে আবি দাউদ তায়লসী, হা/১৮২৬, সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৬৩৭৭}


আক্বিদা

রাসূলে করিম (ﷺ)’র দরবার এমন এক মহান দরবার যার মধ্যে কোন কিছুর কমতি নেই এবং যে কোন ভিক্ষুক আসুক না কেন, তার থলে পূর্ণ করে নিয়ে যায়।

হুযূরে কারিম (ﷺ)’র দরবারের ভিক্ষুক হওয়া শিরিক নয়, বরং এটাই প্রকৃত ইসলাম। হযরত রাবিয়া (رضي الله عنه) এর উপর খুশে হয়ে রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র পবিত্র ইরশাদ- سَلْ -চাও, এর পর তিনি (রাবিয়া) আরয করলেন- 


أَسْأَلُكَ مُرَافَقَتَكَ فِي الْجَنَّةِ


-‘‘আমি আপনার কাছে চাই, যেন জান্নাতে আপনার সাথে থাকা।’’  ১৫৭


{১৫৭. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৩৫৩ পৃ. হা/৪৮৯, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ১/২৮১ পৃ. হা/৮৯৬, পরিচ্ছেদ: بَاب السُّجُود وفضله, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ২/৬৮৩ পৃ. হা/৪২৪২, সুনানে নাসাঈ, হা/১১৩৮ এবং আস-সুনানুল কোবরা, ১/৩৬৪ পৃ. হা/৭২৮, আবু নুয়াইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ২/৩১ পৃ., সুনানে আবি দাউদ, ২/৩৫ পৃ. হা/১৩২০, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ৫/৫৬ পৃ. হা/৪৫৭০, বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৪৯ পৃ. হা/৬৫৫, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/১৫২ পৃ. হা/৫৬৪, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৭/৩০৬ পৃ. হা/১৯০০৬, ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৯/৩৯৬ পৃ. হা/৭০৫২, বায়হাকী, দাওয়াতুল কাবীর, ১/৫৩৯ পৃ. হা/৪১৯}


❏এজন্যই আ‘লা হযরত ইমামে আহলে সুন্নাত শাহ আহমাদ রেযা খাঁ বেরলভী (رضي الله عنه) বলেন- 


واه كيا  جود  و  كرم  ہے  شاه  بطحا  تيرا

نہيں سنتا ہى نهيں ما نگنے والا  تيرا


-‘তুমি কত বড় দানবীর ও দয়াশীল হে আরবের বাদশাহ্

তুমি শ্রবণকারী নও, নও তুমি যাচনাকারী।’


ছাগলের গোশত কথা বলাঃ-

সায়্যিদুনা হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, খায়বার বাসিদের মধ্যে প্রথমে এক ইয়াহুদী রমনী ভুনাইকৃত ছাগলের মাংশের মধ্যে বিষ মিশ্রিত করে রাসূল (ﷺ)’র খিদমাতে হাদিয়া পেশ করল। 

রাসূল (ﷺ) তা হতে খাওয়া শুরু করলেন এবং সাহাবাদের একটি জামা‘আতও খেতে শুরু করলেন। এরপর রাসূল (ﷺ) সাহাবাদের বললেন যে, খাওয়া থেকে বিরত থাক। আর ইয়াহুদী রমনীকে ডেকে বললেন-


سَمَمْتِ هَذِهِ الشَّاةَ؟


-‘তুমি এই ছাগলের মধ্যে বিষ মিশ্রিত করেছো? মহিলাটি বললঃ আপনাকে কে বলেছে? রাসূল (ﷺ) বললেন-


أَخْبَرَتْنِي هَذِه فِي يَدي للذِّراع


-‘এই ছাগলের বাহুটি যা আমার হাতে আছে, এটাই আমাকে বলেছে।’ তখন রমনীটি বললঃ আমি বললাম:


إِن كَانَ نَبيا فَلَنْ يضرّهُ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ نَبِيًّا اسْتَرَحْنَا مِنْهُ


যদি তিনি সত্য নাবী হন তবে এই বিষ তাঁর কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি তিনি নাবী না হন তবে তাঁর থেকে আমরা মুক্তি লাভ করব। 

রাসূল (ﷺ) তাকে ক্ষমা করে দিলেন, এবং কোন ধরনের শাস্তিও দিলেন না।  ১৫৮

{১৫৮. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ৩/১৬৬৭ পৃ. হা/৫৯৩১, পরিচ্ছেদ: بَاب فِي المعجزات, সুনানে আবি দাউদ শরীফ, ৪/১৭৩ পৃ. হা/৪৫১০, সুনানে দারেমী, ১/২০৮ পৃ. হা/৬৯, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৯/৭০ পৃ. হা/১৩৭, মুসন্নাফে আবদুর রায্যাক, ৬/৬৫ পৃ. হা/১০০১৯, ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/৩২৭ পৃ. হা/৮৮৮৮, হাইসামী, মাযমাউয যাওয়াইদ, ৮/২৯৬ পৃ. হা/১৪০৯২}


আক্বিদা

জীবজন্তুও নাবীপাক (ﷺ)’র গোলাম এবং খাদিম। আল্লাহ তা’আলা তাঁর প্রিয় রাসূল ( কে এমন শক্তি দান করেছেন যে, জবাই করা ছাগলের পাকানো গোশতও তাঁর সাথে কথা বলে আর রাসূল (ﷺ) তার কথা শুনেন। 

ইয়াহুদি নবী করিম (ﷺ)’র এই কামালিয়াত এবং মহান মর্যাদা দেখে ইসলাম গ্রহণ করেছে। 


❏কবি বলেন- 


جن و  ملك ہي  ان كے سپاہى

رب كى خدائى ميں ان كى شاہى


“জ্বিন ও ফেরেশতাও তাঁর সৈনিক,

আল্লাহর জগতের মধ্যেই তাঁর বাদশাহী।”


প্রবল ঝড় দেখে মুনাফিকের মৃত্যু সংবাদ প্রদানঃ-

সায়্যিদুনা জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, একদিন নাবী কারিম (ﷺ) সফর থেকে পুনরায় ফিরে আসলেন। যখন মাদিনা মুনাওয়ারার নিকটবর্তী হলেন, প্রবল ঝড়ের উপক্রম হল। তিনি সাওয়ারগুলোকে দাঁড় করালেন, প্রবল এই ঝড় দেখে বললেন- 


بُعِثَتْ هَذِهِ الرِّيحُ لِمَوْتِ مُنَافِقٍ . فَقَدِمَ الْمَدِينَةَ فَإِذَا عَظِيمٌ مِنَ الْمُنَافِقين قد مَاتَ


-‘‘এই প্রবল ঝড়টি এক বড় মুনাফিকের মৃত্যুর জন্য প্রবাহিত হচ্ছে, আমরা যখন মাদিনা মুনাওয়ারায় আসলাম, জানা গেল যে এক বড় মুনাফিক মারা গেল।’’  ১৫৯

{১৫৯. খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ৩/১৬৫৫ পৃ:, হা/৫৯০০, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/২১৪৫ পৃ. হা/২৭৮২, মুসনাদে ইমাম আহমদ, । মুসনাদে আবি ই‘য়ালা, ৪/২০১ পৃ. হা/২৩০৭, ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ১১/৩২৭ পৃ. হা/৮৮৮৫, }


আক্বিদা

মুনাফিকের মৃত্যুর সংবাদ দেয়া এটা নাবী কারিম (ﷺ)’র ইলমে গায়ব সমূহের মধ্যে একটি। নাবী কারিম (ﷺ) যে রকম বলেছেন সে রকম হওয়াকে সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) গণ সত্যায়ন করেছেন, যেটি ছিল তাঁদের আক্বিদা স্পষ্ট দলিল। 

 
Top