সায়্যিদুনা আবূ মূসা আশ‘আরী (رضي الله عنه)’র আক্বিদা


যেটা চাও জিজ্ঞাসা করো ঃ-

সায়্যিদুনা হযরত আবূ মূসা আশ‘আরী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, রাসূল (ﷺ)’র নিকট এমন কিছু বিষয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল, যা ছিল অসহনীয়। যখন অধিক প্রশ্ন করা হল তিনি রাগান্বিত হয়ে বললেন-


سَلُونِي عَمَّا شِئْتُمْ


-‘তোমরা যে বিষয়েই চাও জিজ্ঞাসা কর।’’ তখন এক ব্যক্তি বললঃ 


مَنْ أَبِي يَا رَسُولَ اللهِ؟


-‘হে রাসূল (ﷺ), আমার পিতা কে?’ তিনি বললেনঃ


أَبُوكَ حُذَافَةُ بْنُ قَيْسٍ


-‘তোমার পিতা হোযাফা।’ অপর ব্যক্তি বললেন, 


مَنْ أَبِي يَا رَسُولَ اللَّهِ؟


-‘হে আল্লাহর রাসূল (ﷺ), আমার পিতা কে?’ তিনি বললেনঃ


أَبُوكَ سَالِمٌ مَوْلَى شَيْبَةَ


-‘তোমার পিতা সালেম, শায়বার আযাদকৃত গোলাম।’ ১৬০

{১৬০. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/৩০ পৃ. হা/৯২, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ৪/১৮৩৪ পৃ. হা/২৩৬০}


আক্বিদা

নাবী কারিম (ﷺ) কে আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত বিষয়ের ইল্ম দান করেছেন। এজন্যই তো তিনি বলেছেনঃ


سَلُونِي عَمَّا شِئْتُمْ


-‘যা চাও জিজ্ঞাসা কর।’ 


❏আ‘লা হযরত আজিমুল বরকত ইমাম আহলে সুন্নাত মুজাদ্দিদে দ্বীন ও মিল্লাত শাহ আহমদ রেযা খাঁন বেরলভী (رحمة الله) এজন্যই বলেছেন- 


سر عرس پر تيرى گذر دل فرش پر ہے تيرى نظر

ملكوت و ملك ميں كوئ شے نہيں جو كہ بتہ عياں نہيں


-‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! আরশপরী আপনার ভ্রমন, এ মাটির পৃথিবীতে আমরা যারা আছি তাদের অন্তরে আপনার বিছানা,

পৃথিবীর রাজত্বে এবং উর্ধ্ব জগতে এমন কোন কিছু নেই যা আপনার কাছে সুস্পষ্ট নয়।’’





উম্মাতের শেষ পরিনতির ইলমঃ-

সায়্যিদুনা হযরত আবূ মূসা আশ‘আরী (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, একদিন নাবী করিম (ﷺ) মদিনা মুনাওয়ারার একটি বাগানে হেলান দিয়ে বসা ছিলেন। এক ব্যক্তি লাকড়ি থেকে কাঁদা ঘষে ঘষে তুলতেছিল। এক ব্যক্তি দরজা খুলছিল এবং রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-


افْتَحْ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ


-‘দরজা খুলে দাও এবং তাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দাও।’ হযরত আবূ মূসা আশ‘আরী (رضي الله عنه) বলেন, আগন্তুক ছিলেন হযরত আবু বাকর (رضي الله عنه)। আমি দরজা খুলে তাঁকে জান্নাতের সু-সংবাদ দিলাম। অতঃপর এক ব্যক্তি দরজা খুললেন, তিনি (ﷺ) বললেন-


افْتَحْ وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ


-‘দরজা খুলে তাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দাও।’ হযরত আবু মূসা আশ‘আরী (رضي الله عنه) বলেন, আমি গিয়ে দেখলাম তিনি হযরত উমর (رضي الله عنه) ছিলেন। আমি দরজা খুলে তাকে জান্নাতের সু-সংবাদ দিলাম। অতঃপর এক ব্যক্তি এসে দরজা খুলতেছেন। নাবী পাক (ﷺ) বসে ছিলেন এবং বললেন, দরজা খুলে দাও। বললেন-


وَبَشِّرْهُ بِالْجَنَّةِ عَلَى بَلْوَى تَكُونُ


এবং তাকে মুসিবতগ্রস্তদের সাথে জান্নাতের সু-সংবাদ দাও। 

আমি গিয়ে দরজা খুলে দেখলাম তিনি হযরত উসমান (رضي الله عنه) ছিলেন। আমি তাঁকে জান্নাতের সু-সংবাদ দিলাম এবং নাবী কারিম (ﷺ) যা বলেছেন আমি তাঁকে তা বললাম। হযরত উসমান (رضي الله عنه) এটা শুনে বললেন-


اللهُمَّ صَبْرًا، أَوِ اللهُ الْمُسْتَعَانُ


-‘হে আল্লাহ আমাকে ধৈর্র্য্য দান করুন অথবা আল্লাহ সাহায্যকারী।’  ১৬১

{১৬১. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/১৮৬৭ পৃ. হা/২৪০৩, হযরত ওসমান (রা.)’র ফজিলত অধ্যায়, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ৩/১৭১৭ পৃ. হা/৬০৮৪, ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৮/৫৬২ পৃ. হা/৬৩৭২}


আক্বিদা

নাবী পাক (ﷺ) জানেন যে, দরজা করাঘাতকারী কে ছিলেন এবং তাদের ইন্তেকাল কি অবস্থায় হবে এবং কিয়ামাত দিবসে তাদের মকাম কী হবে। এজন্যই তো তিনি জান্নাতের সু-সংবাদ দিয়েছেন।

হযরত আবূ মূসা আশ‘আরী (رضي الله عنه)’র আক্বীদার সাথে সাথে হযরত আবু বকর (رضي الله عنه), হযরত উমার (رضي الله عنه) এবং হযরত উসমান (رضي الله عنه) ও ইল্ম হয়ে যায় যে, তাঁদের আক্বিদা ছিল যে, হুযুর (ﷺ) তাঁর উম্মাতের পরকালের খবর জানেন। 

এটাও জানেন যে, জান্নাতি নাকি, জান্নাতি নয়। যদি এই আক্বীদা পোষণ না করতেন, তবে হযরত আবু মূসা আশ’আরী (رضي الله عنه)’র সু-সংবাদ দেয়ার পর যখন তিনি রাসূল (ﷺ)’র খিদমতে এসে বসতেন তখন তিনি রাসূল (ﷺ)’র কাছে জিজ্ঞাসা করতেন যে, আপনার কি জানা আছে, আমরা কি জান্নাতী? প্রশ্ন না করাটাই হচ্ছে এ বিষয়ে দলীল যে, নবী করিম (ﷺ) তাঁর উম্মাতের পরকালের খবর জানেন। 


❏কবি বলেন-


تو  دانا ئے   ما  كان  و  ما  يكون

مگر بے خبر بے خبر دمكہتے ہيں


-“যা কিছু হয়েছে আর যা কিছু হবে সে বিষয়ে আপনি অবগত,

কিন্তু যারা অজ্ঞ তারা আপনাকে অনবগত হিসেবেই দেখেন।”




জানাযা পরেও দোয়া করা যায়ঃ-


❏ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) হাদিস সংকলন করেন-


عَنْ عَمْرِو بْنِ مُرَّةَ، عَنْ خَيْثَمَةَ، أَنَّ أَبَا مُوسَى: صَلَّى عَلَى الْحَارِثِ بْنِ قَيْسٍ الْجُعْفِيِّ بَعْدَ مَا صُلِّيَ عَلَيْهِ


-‘‘হযরত আমর বিন র্মুরা (رحمة الله) তিনি তাবেয়ী হযরত খায়ছামা (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় আবু মূসা আশ‘আরী (رضي الله عنه) হযরত হারেস ইবনে কায়েছ আল-জুফিয়ী (رضي الله عنه)-এর জানাযার নামায আদায় করলেন, পরে তাঁর জন্যে দোয়া করেন।’’ ১৬২

{১৬২.     ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানিল কোবরা, ৪/৭৪পৃ. হাদিস নং.৬৯৯৭।}


আক্বিদা

সাহাবায়ে কেরামদের একটি আদর্শ হলো যে তারা তাদের মু‘মিন ভাইদের জন্য জানাযার নামাযের পরও দোয়া করতেন। আর এটি করা তারা মৃত ব্যক্তির জন্য মঙ্গলময় মনে করতেন। ১৬৩

{১৬৩. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}

 
Top