সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনু মাস‘উদ রাদ্বিআল্লাহু আনহুর আক্বিদা


কিয়ামাত পর্যন্ত সময়ের অবস্থা জানা এবং দেখাঃ- 


সায়্যিদুনা হযরত আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ (رضي الله عنه) বলেন, কিয়ামাতের নিকটবর্তী সময়ে যখন হত্যা এবং লুন্ঠন বেড়ে যাবে, তখন আকস্মিক একটি আওয়ায আসবে যে, দাজ্জাল তাদের বাচ্চাদের কাছে পৌঁছেছে, তখন মানুষের হাতে যা থাকবে তা দাজ্জালের দিকে ছুঁড়ে মারবে। এবং তাদের দিকে মনোনিবেশ করবে, মুসলমানগণ তখন দাজ্জালের পরিচয় লাভের জন্য দশজন আরোহী পাঠাবে। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন- 


إِنِّي لَأَعْرِفُ أَسْمَاءَهُمْ وَأَسْمَاءَ آبَائِهِمْ، وَأَلْوَانَ خُيُولِهِمْ، هُمْ خَيْرُ فَوَارِسَ عَلَى ظَهْرِ الْأَرْضِ يَوْمَئِذٍ


-‘আমি এই আরোহীদের নাম, তাদের বাপ-দাদাদের নাম এবং তাদের ঘোড়ার রঙও জানি, ওই সব মানুষ জমিনের উপর সেদিন সর্বোত্তম আরোহী হবে।’  ১৮৪

{১৮৪. সহীহ মুসলিম শরীফ, ৪/২২২৩ পৃ. হা/২৮৯৯, পরিচ্ছেদ: بَابُ إِقْبَالِ الرُّومِ فِي كَثْرَةِ الْقَتْلِ عِنْدَ خُرُوجِ الدَّجَّالِ, খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ, ৩/১৪৯৩ পৃ: হা/৫৪২২।}


আক্বিদা

রাসূল (ﷺ)’র নুবুয়াতের দৃষ্টিসীমা কিয়ামাতের অবস্থাদি অবলোকন করে। যেসব ঘটনাবলী সংঘটিত হবে তা জানেন। উক্ত দশ আরোহীদের নাম, তাদের বাপ-দাদাদের নাম তো বটেই বরং সমস্ত সৃষ্টিজগতের নাম তাদের বাপ-দাদাদের নাম এবং তাদের চলাফেরাও জানেন। কেননা তিনি (ﷺ) সকলের সাক্ষী এবং পর্যবেক্ষক। 





প্রত্যেক উম্মতের ভাল মন্দ দেখাঃ-


❏হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-


حَيَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُحْدِثُونَ وَيُحَدَثُ لَكَمْ، وَوَفَاتِي خَيْرٌ لَكَمْ تُعْرَضُ عَلَيَّ أَعْمَالُكُمْ، فَمَا رَأَيْتُ مِنْ خَيْرٍ حَمَدَتُ اللَّهَ عَلَيْهِ، وَمَا رَأَيْتُ مِنْ شَرٍّ اسْتَغْفَرْتُ اللَّهَ لَكَمْ    


-‘‘আমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম বা রহমত। কেননা আমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তোমাদের জন্য উত্তম বা নেয়ামত। কেননা তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হবে এবং আমি তা দেখবো। যদি তোমাদের কোন ভালো আমল দেখি তাহলে আমি আল্লাহর নিকট প্রশংসা করবো, আর তোমাদের মন্দ কাজ দেখলে আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য (তোমাদের পক্ষ হতে) ক্ষমা প্রার্থনা করবো।’’ ১৮৫

{১৮৫. বায্যার, আল-মুসনাদঃ ৫/৩০৮পৃ. হাদিসঃ ১৯২৫, সুয়ূতি, জামিউস সগীরঃ ১/২৮২পৃ. হাদিসঃ ৩৭৭০-৭১, ইবনে কাছির, বেদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪/২৫৭পৃ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৪০৭পৃ. হা/৩১৯০৩, ইমাম ইবনে জাওযী, আল-ওফা বি আহওয়ালি মোস্তফা, ২/৮০৯-৮১০পৃ. আল্লামা ইবনে কাছির, সিরাতে নববিয়্যাহ, ৪/৪৫পৃ. উক্ত হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম হাইসামী (رحمة الله) বলেন- رَوَاهُ الْبَزَّارُ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ.  -‘‘উক্ত হাদিসের সমস্ত বর্ণনাকারী সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’ (ইমাম হাইছামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৯/২৪পৃ. হা/১৪২৫০) }


আক্বিদা

এ সহীহ হাদিস থেকে বুঝা যায় যে আল্লাহর নাবী (ﷺ)-এর ওফাত আমাদের জন্য দুঃখের বা শোকের নয় বরং খায়ের তথা ভাল। এ হাদিস থেকে আরও প্রমাণ হল রাসূল (ﷺ)-এর আমাদের ভাল মন্দ সব কর্ম অবলোকন করেন। ১৮৬

{১৮৬. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}






একমাত্র আদম (عليه السلام) ব্যতিত কেহ মাটির সৃষ্টি নয়ঃ- ১৮৭

{১৮৭. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}


❏হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাস‘উদ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমাদেরকে রাসূল (ﷺ) হাদিস বর্ণনা করেছেন-


إِنَّ خَلْقَ أَحَدِكُمْ يُجْمَعُ فِي بَطْنِ أُمِّهِ أَرْبَعِينَ يَوْمًا نُطْفَةً، ثُمَّ يَكُونُ عَلَقَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَكُونُ مُضْغَةً مِثْلَ ذَلِكَ، ثُمَّ يَبْعَثُ اللَّهُ إِلَيْهِ مَلَكًا بِأَرْبَعِ كَلِمَاتٍ: فَيَكْتُبُ عَمَلَهُ، وَأَجَلَهُ، وَرِزْقَهُ، وَشَقِيٌّ أَوْ سَعِيدٌ، ثُمَّ يَنْفُخُ فِيهِ الرُّوحَ


-‘‘তোমাদের সৃষ্টি (অর্থাৎ মূল উপাদান প্রথমে) চল্লিশ দিন তার মাতৃজঠরে নুতফা বা শুক্ররূপে অবস্থান করে। তারপর চল্লিশ দিন লাল জমাট রক্তপিণ্ডরূপে থাকে। তারপর ৪০ দিনে তা মাংসপিণ্ডে পরিনত হয়। তারপর আল্লাহ পাক চারটি বিষয় নিয়ে একজন ফিরিশতাকে তার নিকট প্রেরণ করেন। ফিরিশতা এসে লিখেন, ক. তার আমল, খ. তার মৃত্যু, গ. তার রিযিক, ঘ. সে নেককার হবে না বদকার হবে। অতঃপর তার মধ্যে রূহ প্রবিষ্ট করানো হয়।’’ ১৮৮

{১৮৮. ইমাম  বুখারী, আস-সহীহ, ৪/১১১ পৃ. হা/৩২০৮, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, হা/৮২, সুনানে ইবনে মাযাহ, হা/৭৬, সুনানে তিরমিযি, হা/২১৩৭, সুনানে আবি দাউদ, ৪/২২৮ পৃ. হা/৪৭০৮, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, হা/৭১}


আক্বিদা

এ হাদিস থেকে প্রমাণ হলো একমাত্র আদম (عليه السلام) ব্যতিত কেহই সরাসরি মাটির সৃষ্টি নন, বরং আমরা সকলেই (রাসূল, ঈসা আ., হাওয়া আ. ব্যতিত) নুতফার সৃষ্টি। আর এটাই কোরআন, সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণি এবং সাহাবায়ে কেরামের আক্বিদা। এ বিষয়ে কোরআনের মোট ১১টি স্থানে মহান রব ইরশাদ করেছেন। তাই এ বিষয়টিকে কেউ হেয় করে দেখলে সে কাফির হয়ে যাবেন।  ১৮৯

{১৮৯. সূরা ফোরকান, আয়াত, ৫৪, সূরা ত্বারেক, আয়াত ৫, সূরা দাহর, আয়াত ২, সূরা মুরছালাত, আয়াত ২০-২১,  সূরা সাজদা, আয়াত, ৭-৮,  সূরা ইয়াছিন, আয়াত ৭৭, সূরা নাজাম, আয়াত ৪৫-৪৬, সূরা আবাসা, ১৮-১৯, সূরা আলাক্ব, আয়াত ২, সূরা নাহল, আয়াত ৪, সূরা কিয়ামা, আয়াত, ৩৬-৩৮, এ মোট ১১ স্থানে কোরআনে রয়েছে মানুষ নুতফার বা মা-বাবার বীর্যের তৈরী।}





লাশ দাফনের পরে দু‘হাত তুলে মোনাজাতঃ-


❏ইমাম আবু নুয়াইম (رحمة الله) সংকলন করেন-


عَنْ أَبِي وَائِلٍ، عَنْ عَبْدِ اللهِ، قَالَ: وَاللهِ لَكَأَنِّي أَرَى رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي غَزْوَةِ تَبُوكَ، وَهُوَ فِي قَبْرِ عَبْدِ اللهِ ذِي الْبِجَادَيْنِ وَأَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللهُ تَعَالَى عَنْهُمْ، يَقُولُ: أَدْلِيَا مِنِّي أَخَاكُمَا، وَأَخَذَهُ مِنْ قِبَلِ الْقِبْلَةِ حَتَّى أَسْنَدَهُ فِي لَحْدِهِ، ثُمَّ خَرَجَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَوَلَّاهُمَا الْعَمَلَ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْ دَفْنِهِ اسْتَقْبَلَ الْقِبْلَةَ رَافِعًا يَدَيْهِ يَقُولُ: اللهُمَّ إِنِّي أَمْسَيْتُ عَنْهُ رَاضِيًا فَارْضَ عَنْهُ، وَكَانَ ذَلِكَ لَيْلًا، فَوَاللهِ لَقَدْ رَأَيْتُنِي وَلَوَدِدْتُ أَنِّي مَكَانُهُ


-‘‘তাবেয়ী আ‘মাশ (رحمة الله) তিনি হযরত আবু ওয়ায়েল (رحمة الله) থেকে তিনি সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আল্লাহর শপথ! আমি যেন এখনও তাবূক যুদ্ধে রাসূল (ﷺ) কে আব্দুল্লাহ যিল বিজাদাইন (যিনি নাজাদাইন)-এর কবরের মধ্যে দেখছি। আবু বকর ও উমর (رضي الله عنه)ও সেখানে রয়েছেন। অতঃপর তিনি তাকে ধরে কবরের লাহদে রাখলেন। তারপর তিনি বের হলেন এবং বাকী কাজ সমাপ্তির জন্য  তাঁদের দুইজনকে বললেন। যখন তিনি দাফন সমাপ্ত করলেন, তখন ক্বিবলামুখী হয়ে দুই হাত তুলে বললেন, ‘হে আল্লাহ! আমি তার উপর সন্তুষ্ট হয়েই সকাল করেছি, সুতরাং আপনিও তার প্রতি সন্তুষ্ট হউন’। রাবী বলেন, এটা ছিল রাত্রের ঘটনা। আল্লাহর কসম! আমি নিজে নিজে ভাবছিলাম, যদি তার স্থানে আজ আমি হতাম!।’’ ১৯০

{১৯০. ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ১/১২২পৃ. ইমাম বায্যার, আল-মুসনাদ, ৫/১২২পৃ. হা/১৭০৬)


আক্বিদা

এ হাদিসে পাক থেকে বুঝা গেল, রাসূল (ﷺ) ও খুলাফায়ে রাশেদীন এবং সাহাবায়ে কিরামদের আমল ছিল যে দাফনের পর দু‘হাত তুলে দু‘আ করা সুন্নাত এবং মৃত ব্যক্তির জন্য মঙ্গলময়। ১৯১

{১৯১. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}

 
Top