হযরত আলী (رضي الله عنه)


❏ হাদিস ৪৫:


হযরত আবু রাফি’ (رضي الله عنه)র স্ত্রী হযরত সালমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে আত্ তাবারানী বর্ণনা করেন, যিনি বলেন:

إِنِّي لَمَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْأَسْوَاقِ فَقَالَ: «لَيَطْلُعَنَّ عَلَيْكُمْ رَجُلٌ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ» إِذْ سَمِعْتُ الْخَشْفَةَ، فَإِذَا عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللهُ عَنْه.ُ

আমি (এখনো) নিজেকে মহানবী (ﷺ) এর হুযূরে (উপস্থিতিতে) দেখতে পাচ্ছি যখন তিনি বলেন, ‘বেহেশতী এক ব্যক্তি এক্ষণে তোমাদের সামনে উপস্থিত হবে।’ আর দেখো! আমি কারো পদশব্দ শুনতে পাই, অতঃপর হযরত আলী (رضي الله عنه) (মজলিশে) হাজির হন।” [৫৩]

🔺৫৩. [নোট-১৫: হযরত রাফি’ (رضي الله عنه)র স্ত্রী হযরত সালমা (رضي الله عنه) থেকে আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’পুস্তক (২৪:৩০১)। দেখুন আল-হায়তামী (৯:১৫৬-১৫৭ #১৪৬৯৩)।]


❏ হাদিস ৪৬:


হযরত আবু সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকে আল-হাকিম ও আল-বায়হাকী বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ، فَانْقَطَعَتْ نَعْلُهُ فَتَخَلَّفَ عَلِيٌّ يَخْصِفُهَا فَمَشَى قَلِيلاً ثُمَّ قَالَ : إِنَّ مِنْكُمْ مَنْ يُقَاتِلُ عَلَى تَأْوِيلِ الْقُرْآنِ كَمَا قَاتَلْتُ عَلَى تَنْزِيلِهِ فَاسْتَشْرَفَ لَهَا الْقَوْمُ ، وَفِيهِمْ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا ، قَالَ أَبُو بَكْرٍ : أَنَا هُوَ ، قَالَ : لاَ قَالَ عُمَرُ : أَنَا هُوَ ، قَالَ : لاَ ، وَلَكِنْ خَاصِفُ النَّعْلِ يَعْنِي عَلِيًّا فَأَتَيْنَاهُ فَبَشَّرْنَاهُ..

আমরা একবার রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে ছিলাম; এমন সময় তাঁর স্যান্ডেলের ফিতা ছিঁড়ে যায়। হযরত আলী (رضي الله عنه) তা সারাতে পেছনে পড়ে থাকেন। এমতাবস্থায় নবী পাক (ﷺ) কিছু দূর হাঁটার পর এরশাদ ফরমান, ‘সত্য হলো, তোমাদের মাঝে কেউ একজন কুরআন মজীদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ (তাফসীর) নিয়ে জেহাদ (কঠিন সাধনা, সংগ্রাম) করবে, যেমনিভাবে আমি সংগ্রাম করেছি এর নাযেল (অবতীর্ণ) হওয়া নিয়ে।’ হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) জিজ্ঞেস করেন, ‘সেই ব্যক্তি কি আমি?’ হুযূর পূর নূর (ﷺ) উত্তরে ‘না’ বলেন। অতঃপর হযরত উমর (رضي الله عنه) জিজ্ঞেস করেন, ‘তাহলে কি আমি?’ রাসূলে করীম (ﷺ) এরশাদ ফরমান, ‘না, ওই স্যান্ডেল মেরামতকারী (খাসিফ আন-না’আল)।’ [৫৪]

🔺৫৪. [নোট-১৬: হযরত আবু সাঈদ আল-খুদরী (رضي الله عنه) হতে সহীহ সনদে ইমাম আহমদ বর্ণিত, যা বিবৃত করেছেন আল-হায়তামী (৯:১৩৩); ‘আল-আরনাওত’ (১৫:৩৮৫ #৬৯৩৭)-এর বর্ণনানুযায়ী সহীহ সনদে ইবনে হিব্বান-ও; এটাকে সহীহ বলেছেন আল-হাকিম (৩:১২২), আর আয্ যাহাবী নিজ ‘তালখিস আল-’এলাল আল-মুতানাহিয়া কিতাবে (পৃষ্ঠা ১৮) বলেন: “এই হাদীসের সনদ ভাল।” এই হাদীস আরও বর্ণনা করেছেন আল-বাগাবী তাঁর ‘শারহ আল-সুন্নাহ’ গ্রন্থে’ (১০:২৩৩), আবু এয়ালা স্বরচিত ‘মুসনাদ’ বইয়ে (#১০৮৬), সাঈদ ইবনে মনসুর তাঁর ‘সুনান’ পুস্তকে, ইবনে আবি শায়বা (১২:৬৪), আবু নুয়াইম নিজ ‘হিলইয়া’ কিতাবে, এবং আল-বায়হাকী তাঁর ‘দালাইল আন্ নুবুওয়া’ গ্রন্থে’ (৬:৪৩৫) ও ‘শুয়াবুল ঈমান’ পুস্তকে।]


❏ হাদিস ৪৭:


আবু ইয়ালা ও আল-হাকিম নির্ভরযোগ্য রওয়ায়াত হিসেবে শ্রেণীভুক্ত করে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)মা থেকে বর্ণনা করেন যে মহানবী (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)কে বলেন:

قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ : أَمَا إِنَّكَ سَتَلْقَى بَعْدِي جَهْدًا قَالَ : فِي سَلاَمَةٍ مِنْ دِينِي ؟ قَالَ : فِي سَلاَمَةٍ مِنْ دِينِكَ.

বাস্তবিকই তুমি আমার (বেসালের) পরে কঠিন সংগ্রাম/সাধনায় লিপ্ত হবে।” তিনি জিজ্ঞেস করেন, “আমার ধর্মকে নিরাপদে রেখে?” বিশ্বনবী (ﷺ) এরশাদ করেন, “হ্যাঁ।”[৫৫]

🔺৫৫. [নোট-১৭: হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে আল-হাকিম (৩:১৪০=৩:১৫১) এবং ‘মুরসাল’ হিসেবে ইবনে আবি শায়বা (৬:৩৭২ #৩২১১৭)।]


❏ হাদিস ৪৮:


হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে আত্ তাবারানী বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

أُمِرْتُ بِقِتَالِ النَّاكِثِينَ، وَالْقَاسِطِينَ، وَالْمَارِقِينَ.

হযূর পূর নূর (ﷺ) আমার কাছ থেকে ওয়াদা নিয়েছেন যে আমাকে বিশ্বাসঘাতক, প্রতারক/ধোকাবাজ ও ধর্মচ্যুত (আল-নাকিসীন ওয়াল-ক্কাসিতীন ওয়াল-মারিক্কীন)-দের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে। [৫৬]

🔺৫৬. [নোট-১৮: হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে হযরত আলী ইবনে রাবেয়া (رضي الله عنه) এবং তাঁর কাছ থেকে আল-বাযযার, আর আবু ইয়ালা (১:৩৯৭ #৫১৯)-এর সনদে রয়েছেন আল-রাবী’ ইবনে সাহল যিনি দুর্বল। দেখুন – ইবনে হাজর রচিত ‘লিসান আল-মিযান’ (২:৪৪৬ #১৮২৭); তবে ইবনে হাজর এর অর্থকে সত্য হিসেবে বিবেচনা করেন। একে হযরত আম্মার ইবনে এয়াসের (رضي الله عنه)-এর বর্ণিত বলেও উদ্ধৃত করেন আবু এয়ালা (৩:১৯৪ #১৬২৩)।]


❏ হাদিস ৪৯:


আল-হুমায়দী, আল-হাকিম এবং অন্যান্য হাদীসবেত্তা হযরত আবুল আসওয়াদ (আল-দুয়ালী) রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

عَنْ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ، قَالَ : أَتَانِي عَبْدُ اللهِ بْنُ سَلاَمٍ ، وَقَدْ وَضَعْتُ رِجْلِي فِي الْغَرْزِ ، وَأَنَا أُرِيدُ الْعِرَاقَ ، فَقَالَ : لاَ تَأْتِ الْعِرَاقَ ، فَإِنَّكَ إِنْ أَتَيْتَهُ أَصَابَكَ بِهِ ذُبَابُ السَّيْفِ ، قَالَ عَلِيٌّ : وَايْمُ اللهِ لَقَدْ قَالَهَا لِي رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَبْلَكَ.

হযরত আলী (رضي الله عنه) রেকাবে (অশ্বে পা রাখার স্থানে) পা রাখামাত্র হযরত আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (رضي الله عنه) এসে তাঁকে বলেন, ‘ইরাকবাসীদের কাছে যাবেন না! যদি যান, তাহলে তরবারির আঘাতসমূহ আপনার ওপর পড়বে।’ হযরত আলী (رضي الله عنه) উত্তর দেন, ‘আল্লাহর নামে শপথ করে বলছি, আপনার এ কথা বলার আগে মহানবী (ﷺ)ও একই কথা বলেছেন’।”[৫৭]

🔺৫৭. [নোট-১৯: হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে হযরত আবুল আসওয়াদ (رضي الله عنه) হতে আল-হুমায়দী তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (১:৩০ #৫৩), আল-বাযযার (২:২৯৫-২৯৬ #৭১৮), আবু ইয়ালা (১:৩৮১ #৪৯১), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আহাদ’ পুস্তকে (১:১৪৪ #১৭২), ইবনে হিব্বান (১৫:১২৭ #৬৭৩৩), এবং আল-হাকিম (৩:১৪০=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১৫১); এঁদের সবার এসনাদে শিয়াপন্থী আবদুল মালিক ইবনে আ’য়ান থাকায় আয্ যাহাবী এটাকে দুর্বল বলেছেন, তবে একে শক্তিশালী বিবেচনা করেছেন আল-হায়তামী (৯:১৩৮) এবং ’হাসান’ (নির্ভরযোগ্য) বলেছেন আল-আরনাওত; অপর দিকে জিয়া আল-মাকদেসী একে বিশুদ্ধ রওয়ায়াত বলে মত প্রকাশ করেন তাঁর প্রণীত ‘আল-মুখতারা’ গ্রন্থে’ (২:১২৮-১২৯ #৪৯৮)।]


❏ হাদিস ৫০:


আবু নুয়াইম হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

قَالَ لِيَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا عَلِيُّ إِنَّهَا سَتَكُونُ فِتْنَةٌ، وَسَتَحَاجُّ قَوْمَكَ» قُلْتُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، فَمَا تَأْمُرُنِي؟ فَقَالَ: «احْكُمْ بِالْكِتَابِ.

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমাকে বললেন, ‘(ভবিষ্যতে) অনেক ফিতনা-ফাসাদ হবে এবং তোমার লোকেরা তোমার সাথে দ্বিমত পোষণ করবে।’ আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘আপনি আমাকে (ওই সময়) কী করার নির্দেশ দেন?’ তিনি উত্তর দিলেন, ‘কিতাব (কুরআন মজীদ) অনুযায়ী শাসন করো’।”[৫৮]


🔺৫৮. [নোট-২০: হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে দুর্বল বর্ণনাকারী শিয়াপন্থী আল-হারিস ইবনে আব্দিল্লাহ আল-আ’ওয়ার বর্ণিত এবং আত্ তাবারানী কৃত ‘আল-আওসাত’ গ্রন্থে (২:২৯-৩০ #১১৩২) ও আল-সগীর পুস্তকে (২:১৭৪ #৯৭৮) উদ্ধৃত যার মধ্যে শেষোক্ত কিতাবের এসনাদে রয়েছেন আতা’ ইবনে মুসলিম আল-খাফফাফ যিনি আল-উকায়লী প্রণীত আল-দু’আফা বইয়ের (৩:৪০৫ #১১৪৩) ভাষ্যানুযায়ী দুর্বল রাবী।]


❏ হাদিস ৫১:


আল-বায়হাকী হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

خُطِبَتْ فَاطِمَةُ إِلَى رَسُولِ اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ لِي مَوْلَاةٌ لِي: هَلْ عَلِمْتَ أَنَّ فَاطِمَةَ قَدْ خُطِبَتْ إِلَى رَسُولِ اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قُلْتُ لَا. قَالَتْ فَقَدْ خُطِبَتْ فَمَا يَمْنَعُكَ أَنْ تَأْتِيَ رَسُولَ اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَيُزَوِّجَكَ فَقُلْتُ وَعِنْدِي شَيْءٌ أَتَزَوَّجُ بِهِ؟ فَقَالَتْ إِنِّكَ إِنْ جِئْتَ رَسُولَ اللَّه صَلَّى اللَّه عليه وسلم زوجك فو اللَّه مَا زَالَتْ تُرَجِّينِي حَتَّى دَخَلْتُ عَلَى رَسُولِ اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وسلم وَكَانَ لِرَسُولِ اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَلَالَةٌ وَهَيْبَةٌ فَلَمَّا قَعَدْتُ بَيْنَ يديه أفحمت فو اللَّه مَا اسْتَطَعْتُ أَنْ أَتَكَلَّمَ. فَقَالَ رَسُولُ اللَّه صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَا جَاءَ بِكَ أَلَكَ حَاجَةٌ؟ فَسَكَتُّ، فَقَالَ: مَا جَاءَ بِكَ. أَلَكَ حَاجَةٌ؟ فَسَكَتُّ، فَقَالَ: لَعَلَّكَ جِئْتَ تَخْطُبُ فَاطِمَةَ، فَقُلْتُ: نَعَمْ.

(হযরত) ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার পাণি গ্রহণের প্রস্তাব দেয়া হয় মহানবী (ﷺ) এর কাছে (কিন্তু তিনি তা নাকচ করেন); এমতাবস্থায় আমার এক দাসী (যাকে পরবর্তীকালে মুক্ত করা হয়) আমাকে বলে, ‘আপনি কি শুনেছেন হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহার বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল? তাহলে এ ব্যাপারে (পাণি গ্রহণের প্রস্তাব নিয়ে) মহানবী (ﷺ) এর সাথে দেখা করায় আপনাকে বাধা দিচ্ছে কী?’ আমি নবী পাক (ﷺ) এর সাথে দেখা করতে গেলাম, আর তাঁর চেহারা মোবারক ওই সময় সৌম্য ভাবময় ছিল। আমি তাঁর সামনে দাঁড়াতেই ভয়ে স্থির হয়ে গেলাম। আল্লাহর শপথ, আমি একটি কথাও বলতে পারলাম না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ফরমালেন, ‘কী কারণে তোমার এখানে আসা, বলো?’ আমি চুপ রইলাম। অতঃপর তিনি বললেন, ‘হয়তো তুমি ফাতেমার পাণি গ্রহণের প্রস্তাব নিয়ে এসেছ?’ আমি বললাম, জ্বি।”[৫৯]


🔺৫৯. [নোট-২১: হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন আল-বায়হাকী তাঁর ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ কিতাবে ৭:২৩৪ #১৪১২৯) এবং আল-দুলাবী নিজ ‘আল-যুররিয়্যা আল-তাহেরা’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৬৪), যা ‘কানয’ গ্রন্থে’ (#৩৭৭৫৪) বিবৃত হয়েছে।]


❏ হাদিস ৫২:


আল-হাকিম নির্ভরযোগ্য রওয়ায়াত হিসেবে এবং আবু নুয়াইম হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসের (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন যে রাসূলে করীম (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)কে বলেন:

الَّذِي يَضْرِبُكَ عَلَى هَذِهِ ، ( يعني قرن علي ) حتى تبتل هذه من الدم يعني لحيته

মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বড় অপরাধী হলো সে-ই, যে ব্যক্তি তোমার এখানে (কপালের পাশে দেখিয়ে বলেন) আঘাত করবে, যতোক্ষণ না রক্তে এটা (দাড়ি দেখিয়ে বলেন) ভিজে যায়।” [৬০]


🔺৬০. [নোট-২২: এই রওয়ায়াত এসেছে – (১) হযরত আম্মার ইবনে ইয়াসের (رضي الله عنه) হতে বিশুদ্ধ সনদে, যা বিবৃত হয়েছে ইমাম সৈয়ুতী কৃত ‘তারিখ আল-খুলাফা’ গ্রন্থে’ (পৃষ্ঠা ১৭৩), ইমাম আহমদ প্রণীত ‘মুসনাদ’ কিতাবে, আন-নাসাঈ লিখিত ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ পুস্তকে (৫:১৫৩ #৮৫৩৮),  আবু নুয়াইমের রচিত ‘দালাইল আন-নুবুওয়া’ বইয়ে (পৃষ্ঠা ৫৫২-৫৫৩ #৪৯০), এবং আল-হাকিম (৩:১৪০-১৪১), আর এ ছাড়াও সনদের মধ্যে একজন বর্ণনাকারীর অনুপস্থিতিতে হযরত আম্মার (رضي الله عنه) হতে তাবেঈ আল-বাযযার (৪:২৫৪ #১৪২৪); (২) হযরত জাবের ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) হতে আবু নুয়াইম নিজ ‘দালাইল’ পুস্তকে (পৃষ্ঠা ৫৫৩ #৪৯১) – দেখুন আস-সৈয়ুতীর ‘খাসাইসুল কুবরা’ (২:৪২০); (৩) হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে শিয়াপন্থী সালাবা ইবনে ইয়াযিদ আল-হিম্মানী রওয়ায়াতকৃত এবং লিপিবদ্ধ রয়েছে ইবনে সা’আদ (৩:৩৪), ইবনে আবি হাতিম, আবু নুয়াইম কৃত ‘দালাইল’ (পৃষ্ঠা ৫৫২ #৪৮৯), ইবনে আবদিল বারর প্রণীত ‘আল-এস্তিয়াব’ (৩:৬০), এবং আল-নুয়াইরী লিখিত ‘নিহায়াত আল-আরব’ (২০:২১১); (৪) হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে সুহাইব, যা লিপিবদ্ধ আছে আত্ তাবারানীর ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে’ (৮:৩৮-৩৯ #৭৩১১), ইবনে আবদিল বারর-এর ‘আল-এস্তিয়াব’ পুস্তকে (৩:১১২৫), ইবনে আসাকির, আল-র“য়ানী, ইবনে মারদুইয়াহ, এবং আবু ইয়ালা (১:৩৭৭ #৪৮৫)। দেখুন – ‘কানয’ (#৩৬৫৬৩, #৩৬৫৭৭-৮, #৩৬৫৮৭), ইবনুল জাওযীর ‘সিফাতুস্ সাফওয়া’ (১:৩৩২), এবং আল-হায়তামী (৯:১৩৬); (৫) হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে হাইয়ান আল-আসাদী, যা লিপিবদ্ধ আছে আল-হাকিমে (৩:১৪২); এবং (৬) মওকুফ বর্ণনা – হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে যায়দ ইবনে ওয়াহব, যা লিপিবদ্ধ করেছেন আল-হাকিম (৩:১৪৩) ও ইবনে আবি আসিম নিজ ‘আল-যুহদ’ কিতাবে (পৃষ্ঠা ১৩২)। আল-তালিদী এই বর্ণনা তাঁর ‘তাহযিব আল-খাসাইস’ পুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করেন নি ।]


❏ হাদিস ৫৩:


আবু নুয়াইম অনুরূপ বর্ণনা করেছেন জাবের ইবনে সামুরা ও সুহাইব থেকে।

আল-হাকিম রওয়ায়াত করেন হযরত আনাস (رضي الله عنه)র কথা, তিনি বলেন:

دَخَلْتُ مَعَ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَلَى عَلِيِّ بْنِ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ يَعُودُهُ وَهُوَ مَرِيضٌ، وَعِنْدَهُ أَبُو بَكْرٍ وَعُمَرُ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، فَتَحَوَّلَا حَتَّى جَلَسَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَ أَحَدُهُمَا لِصَاحِبِهِ: مَا أُرَاهُ إِلَّا هَالِكٌ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ্রإِنَّهُ لَنْ يَمُوتَ إِلَّا مَقْتُولًا، وَلَنْ يَمُوتَ حَتَّى يَمْلَأَ غَيْظًا.

আমি রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর সাথে অসুস্থ হযরত আলী (رضي الله عنه)কে দেখতে যাই, যিনি শয্যাশায়ী ছিলেন; এই সময় হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) ও হযরত উমর (رضي الله عنه)-ও তাঁকে দেখতে সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের একজন অপরজনকে বলছিলেন, “আমার মনে হয় না তিনি বাঁচবেন।” এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এরশাদ ফরমান: “নিশ্চয় সে শাহাদাত ছাড়া মারা যাবে না এবং তার অন্তর যতোক্ষণ না তিক্ত হবে ততোক্ষণ সে মৃত্যুবরণ করবে না।”[৬১]

🔺৬১. [নোট-২৩: আল-হাকিম (৩:১৩৯=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১৫৫); অবশ্য এই বর্ণনাকে আয্ যাহাবী ‘সম্পূর্ণ ত্রুটিযুক্ত (ওয়াহিন) বলেছেন।]


❏ হাদিস ৫৪:


আল-হাকিম বর্ণনা করেন হযরত সাওর ইবনে মিজযা’আ (رضي الله عنه) থেকে, তিনি বলেন:

عَنْ ثَوْرِ بْنِ مَجْزَأَةَ، قَالَ: مَرَرْتُ بِطَلْحَةَ بْنِ عُبَيْدِ اللَّهِ يَوْمَ الْجَمَلِ وَهُوَ صَرِيعٌ فِي آخِرِ رَمَقٍ، فَوَقَفْتُ عَلَيْهِ فَرَفَعَ رَأْسَهُ، فَقَالَ: إِنِّي لَأَرَى وَجْهَ رَجُلٍ كَأَنَّهُ الْقَمَرُ، مِمَّنْ أَنْتَ؟ فَقُلْتُ: مِنْ أَصْحَابِ أَمِيرِ الْمُؤْمِنِينَ عَلِيٍّ، فَقَالَ: ابْسُطْ يَدَكَ أُبَايِعُكَ، فَبَسَطْتُ يَدِي وَبَايَعَنِي، فَفَاضَتْ نَفْسُهُ، فَأَتَيْتُ عَلِيًّا فَأَخْبَرْتُهُ بِقَوْلِ طَلْحَةَ، فَقَالَ: «اللَّهُ أَكْبَرُ اللَّهُ أَكْبَرُ صَدَقَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَبَى اللَّهُ أَنْ يَدْخُلَ طَلْحَةَ الْجَنَّةَ إِلَّا وَبَيْعَتِي فِي عُنُقِهِ.

উটের (যুদ্ধের) দিবসে আমি হযরত তালহা (رضي الله عنه)র পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম, আর ওই সময় তিনি (মাটিতে শায়িত অবস্থায়) প্রায় ইন্তেকাল করার পর্যায়ে ছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, ‘তুমি কোন্ পক্ষ?’ আমি উত্তর দিলাম, ‘ঈমানদারদের খলীফার বন্ধুদের দলে।’ তিনি বললেন, ‘তোমার হাত বাড়িয়ে দাও যাতে আমি তোমার কাছে আনুগত্যের শপথ নিতে পারি।’ আমি আমার হাত বাড়িয়ে দিলাম এবং তিনি আমার প্রতি আনুগত্যের শপথ নিলেন। এর পরপরই তিনি ইন্তেকাল করলেন, আর আমিও হযরত আলী (رضي الله عنه)র কাছে ফেরত গিয়ে সমস্ত ঘটনা খুলে বললাম। তিনি বললেন, ‘আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) সত্য বলেছিলেন এই মর্মে যে আল্লাহতা’লা তালহাকে আমার প্রতি দৃঢ় আনুগত্যের শপথ গ্রহণ ছাড়া বেহেশতে নেবেন না’।” [৬২]


🔺৬২. [নোট-২৪: আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৩:৪২১); তবে ইবনে হাজর তাঁর ’আল-আতরাফ’ (এতরাফ আল-মুসনাদ আল-মু’তালী বি আতরাফ আল-মুসনাদ আল-হাম্বলী) পুস্তকে এটাকে ‘অত্যন্ত দুর্বল সনদ’ বলেছেন যা বিবৃত হয়েছে ‘কানয’ পুস্তকে (#৩১৬৪৬)।]


❏ হাদিস ৫৫:


আল-বায়হাকী রওয়ায়াত করেন ইবনে এসহাকের মাধ্যমে, তিনি বলেন:

قَالَ: حَدَّثَنَا بُرَيْدَةُ بْنُ سُفْيَانَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ كَعْبٍ، أَنَّ كَاتِبَ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِهَذَا الصُّلْحِ، كَانَ عَلِيَّ بْنَ أَبِي طَالِبٍ فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عليه وَسَلَّمَ: «اكْتُبْ هَذَا مَا صَالَحَ عَلَيْهِ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ سُهَيْلَ بْنَ عَمْرٍو» ، فَجَعَلَ عَلِيٌّ يَتَلَكَأُ وَيَأْبَى أَنْ يَكْتُبَ إِلَّا مُحَمَّدٌ رَسُولَ اللهِ. فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «اكْتُبْ فَإِنَّ لَكَ مِثْلَهَا تُعْطِيهَا وَأَنْتَ مُضْطَهَدٌ» ، فَكَتَبَ هَذَا مَا صَالَحَ عَلَيْهِ مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ سُهَيْلَ بْنِ عَمْرٍو .

এয়াযিদ ইবনে সুফিয়ান আমার কাছে বর্ণনা করেন মোহাম্মদ ইবনে কাআব হতে এই মর্মে যে, হুদায়বিয়ার সন্ধিতে রাসূলে করীম (ﷺ)-এর কাতেব বা লেখক ছিলেন হযরত আলী (رضي الله عنه); হুযূর পাক (ﷺ) তাঁকে বলেন, ‘লেখো, এগুলো মোহাম্মদ ইবনে আবদিল্লাহ (ﷺ) ও সোহায়ল ইবনে উমরের মধ্যকার সন্ধির শর্তাবলী।’ হযরত আলী এটা লিখতে রাজি হলেন না। তিনি ‘আল্লাহর প্রেরিত রাসূল’ বাক্যটি ছাড়া এই সন্ধিপত্র লিখতে সম্মত ছিলেন না। এমতাবস্থায় নবী পাক (ﷺ) তাঁকে বলেন, ‘এটা লেখো, কেননা নিশ্চয় তুমি অনুরূপ কিছু ভোগ করবে এবং অন্যায় আচরণের শিকার হবে’।”[৬৩]

🔺৬৩. [নোট-২৫: আল-বায়হাকীর ‘দালাইল’ গ্রন্থে উদ্ধৃত যা ‘মাগাযী’ পুস্তকে ইবনে এসহাকের বর্ণনার অনুসরণে লিপিবদ্ধ; দেখুন – আস্ সৈয়ুতী কৃত ‘খাসাইসে কুবরা’ (১:১৮৮), ‘সীরাতে হালাবিয়্যা’ (২:৭০৭), এবং আল-খুযাঈ প্রণীত ‘তাখরিজাত আল-দেলালাত’ (১৯৯৫ সংস্করণের ১৭৮ পৃষ্ঠা=১৯৮৫ সংস্করণের ১৮৮ পৃষ্ঠা)।]


  • আর এটাই ঘটেছিল সিফফিন যুদ্ধের পরে হযরত আলী (رضي الله عنه) ও হযরত মোআবিয়া (رضي الله عنه)র মধ্যকার সন্ধির সময়।


❏ হাদিস ৫৬:


ইমাম আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থের পরিশিষ্টে এবং এর পাশাপাশি আল-বাযযার, আবু এয়ালা ও আল-হাকিম হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ   فِيكَ مَثَلٌ مِنْ عِيسَى عَلَيْهِ السَّلامُ  أَبْغَضَتْهُ يَهُودُ حَتَّى بَهَتُوا أُمَّهُ ، وَأَحَبَّتْهُ النَّصَارَى حَتَّى أَنْزَلُوهُ بِالْمَنْزِلَةِ الَّتِي لَيْسَ بِهِ ” . ثُمَّ قَالَ : يَهْلِكُ فِيَّ رَجُلانِ , مُحِبٌّ مُفْرِطٌ يُقَرِّظُنِي بِمَا لَيْسَ فِيَّ ، وَمُبْغِضٌ يَحْمِلُهُ شَنَآنِي عَلَى أَنْ يَبْهَتَنِي.. ” .

মহানবী (ﷺ) আমাকে বলেন, ‘তোমার সাথে হযরত ঈসা আলাইহিস সালামের এক সাদৃশ্য আছে; ইহুদীরা তাঁকে এতো ঘৃণা করেছিল যে তারা তাঁর মাকে অপবাদ দিয়েছিল; আর খৃষ্টানরা এতো ভালোবেসেছে যে তারা তাঁকে এমন মর্যাদার আসনে আসীন করেছে যা তাঁর নয়’।[৬৪]” 

🔺৬৪. [নোট-২৬: আবু মরইয়াম এবং আবু আল-বখতারী কিংবা আবদুল্লাহ ইবনে সালামা – এই দু’জনের কোনো একজন থেকে আবদুল্লাহ ইবনে আহমদ নিজ ‘আল-সুন্নাহ’ গ্রন্থে (পৃষ্ঠা ২৩৩-২৩৪ #১২৬৬-১২৬৮), আল-হারিস ইবনে আব্দিল্লাহ হতে ইবনে আব্দিল বারর তাঁর ‘আল-এস্তিয়াব’ কিতাবে (৩:৩৭), আল-নুওয়াইরী স্বরচিত ‘নিহায়াত আল-আরব’ পুস্তকে (২০:৫) এবং আবু আল-হাদিদ কৃত ‘শরহে নাজহ আল-বালাগা’ (১:৩৭২)।]


❏ হাদিস ৫৭:


হযরত আলী (رضي الله عنه) বলেন: “আমার ব্যাপারে (আকিদাগত কারণে) দুই ধরনের লোক ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে – আমার প্রতি বিদ্বেষভাব পোষণকারী যারা আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা রটায়; দ্বিতীয়ত যারা অতি ভক্তিসহ আমার মাত্রাতিরিক্তি প্রশংসা করে।”[৬৫]

🔺৬৫. [নোট-২৭: এটা বর্ণনা করেছেন হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে আবু এয়ালা তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে (১:৪০৬ #৫৩৪) এবং ইমাম আহমদও দুইটি দুর্বল সনদে নিজ ‘মুসনাদ’ কিতাবে – যাকে চিরাচরিত উদারতায় ‘হাসান’ বলেছেন শায়খ আহমদ শাকির (২:১৬৭-১৬৮ #১৩৭৭-১৩৭৮); আল-হাকিম (৩:১২৩)-ও এর সনদকে সহীহ বলেছেন, তবে আয্ যাহাবী এর দুর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত করেন এতে আল-হাকাম ইবনে আব্দিল মালিক থাকার কারণে; একই মত পোষণ করেন ইবনুল জাওযী নিজ ‘আল-এলাল আল-মুতানাহিয়া’ পুস্তকে (১:২২৭ #৩৫৭)। আল-হায়তামী স্বরচিত ‘মজমাউল যাওয়াইদ’ গ্রন্থে’ (৯:১৩৩) একই কারণে ওপরের সকল এসনাদের দুর্বলতার প্রতি ইঙ্গিত করেন, তবে তিনি উল্লেখ করেন যে আল-বাযযার এটা বর্ণনা করেছেন তাঁর ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে’। অনুরূপ দুর্বল সনদে এটা বর্ণনা করেন আল-বায়হাকী নিজ ‘আল-সুনান আল-কুবরা’ পুস্তকে (৫:১৩৭ #৮৪৮৮) এবং ইমাম আহমদ তাঁর ‘ফযাইলে সাহাবা’ কিতাবে (২:৬৩৯ #১০৮৭, ২:৭১৩ #১২২১, ২:৭১৩ #১২২২)।]


❏ হাদিস ৫৮:


আত্ তাবারানী ও আবু নুয়াইম হযরত জাবের ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)কে বলেন,

إِنَّكَ مُؤَمَّرٌ مُسْتَخْلَفٌ، وَإِنَّكَ مَقْتُولٌ، وَهَذِهِ مَخْضُوبَةٌ مِنْ هَذَا» لِحْيَتُهُ مِنْ رَأْسِهِ.

তোমাকে নেতৃত্ব ও খেলাফতের দায়িত্ব অর্পণ করা হবে; আর নিশ্চয় এটা (হযরত আলী (رضي الله عنه)র দাঁড়ি মোবারক) ওর (সে’র মোবারকের) দ্বারা লাল রংয়ে রঙ্গীন হবে’।”[৬৬]

🔺৬৬. [নোট-২৮: হযরত জাবের ইবনে সামুরা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছেন আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ (২:২৪৭ #২০৩৮) ও ‘আল-আওসাত’ (৭:২১৮ #৭৩১৮) গ্রন্থগুলোতে; তবে আল-হায়তামী (৯:১৩৬) অভিমত পোষণ করেন যে উভয়ের সনদ খুবই দুর্বল। শেষাংশের জন্যে ‘নোট-২২’ দেখুন।]


❏ হাদিস ৫৯:


আল-বুখারী ও মুসলিম হযরত সালামা (ইবনে আমির) ইবনে আল-আকওয়া (رحمة الله)-এর কথা উদ্ধৃত করেন, যিনি বলেন:

كَانَ عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، تَخَلَّفَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي خَيْبَرَ، وَكَانَ رَمِدًا، فَقَالَ: أَنَا أَتَخَلَّفُ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَلَحِقَ بِهِ، فَلَمَّا بِتْنَا اللَّيْلَةَ الَّتِي فُتِحَتْ قَالَ: «لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ غَدًا أَوْ لَيَأْخُذَنَّ الرَّايَةَ غَدًا رَجُلٌ يُحِبُّهُ اللَّهُ وَرَسُولُهُ، يُفْتَحُ عَلَيْهِ» فَنَحْنُ نَرْجُوهَا، فَقِيلَ: هَذَا عَلِيٌّ فَأَعْطَاهُ، فَفُتِحَ عَلَيْهِ.

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) খায়বারে অবস্থানকালে হযরত আলী (رضي الله عنه) চোখের পীড়ার কারণে সেখানে তাঁর সাথে যেতে পারেন নি। তিনি বলেন, ‘আমি কীভাবে পেছনে পড়ে থাকি এবং হুযূর পাক (ﷺ) এর সাথে না যাই?’ তাই তিনি বেরিয়ে পড়েন এবং মহানবী (ﷺ) এর সাথে গিয়ে যোগ দেন। খায়বারের যুদ্ধের আগের রাতে রাসূলে খোদা (ﷺ) বলেন, ‘আমি শপথ করে বলছি যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) ভালোবাসেন এমন কাউকে আগামীকাল আমি পতাকা প্রদান করবো, যার ওসীলায় আল্লাহ বিজয় দান করবেন।’ আর দেখো! অপ্রত্যাশিতভাবে হযরত আলী (رضي الله عنه) আমাদের মাঝে আগমন করেন। সবাই বলেন, ‘এই তো আলী!’ এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে পতাকা হস্তান্তর করেন এবং আল্লাহ তাঁর মাধ্যমে বিজয় মন্ঞ্জুর করেন।”[৬৭]

🔺৬৭. [নোট-২৯: সর্ব-হযরত সালামা ইবনে আল-আকওয়া’ (رضي الله عنه), সাহল ইবনে সা’আদ (رضي الله عنه) ও আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকে আল-বুখারী, মুসলিম ও ইমাম আহমদ]


❏ হাদিস ৬০:


(আল-বুখারী এবং) মুসলিম এটা হযরত সালামা ইবনে আল-আকওয়া’ [৬৮]  হতে ভিন্ন শব্দ চয়নে বর্ণনা করেন, যা ওপরের বিবরণের সাথে যুক্ত:

فَبَصَقَ فِي عَيْنَيْهِ فَبَرَأَ.

অতঃপর রাসূলে খোদা (ﷺ) হযরত আলী (رضي الله عنه)র চোখে তাঁর পবিত্র থুথু মোবারক নিক্ষেপ করেন এবং তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেন।” 

🔺৬৮. [নোট-৩০: প্রকৃতপক্ষে সাহল ইবনে সা’আদ]


❏ হাদিস ৬১:


আল-হারিস ও আবু নুয়াইম আরেকটি ভিন্ন বর্ণনায় হযরত সালামা (رضي الله عنه)কে উদ্ধৃত করেন:

قَالَ سَلَمَةُ: فَخَرَجَ بِهَا وَاللهِ يُهَرْوِلُ هَرْوَلَةً وَإِنَّا خَلْفُهُ نَتَّبِعُ أَثَرَهُ حَتَّى رَكَزَ رَايَتَهُ فِي رَضَمٍ مِنَ الْحِجَارَةِ تَحْتَ الْحِصْنِ، فَاطَّلَعَ إِلَيْهِ يَهُوَدِيُّ مِنْ رَأْسِ الْحِصْنِ فَقَالَ: مَنْ أَنْتَ؟ فَقَالَ: عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ، قَالَ: يَقُولُ الْيَهُوَدِيُّ: غُلِبْتُمْ وَلَمَا نَزَلَ عَلَى مُوسَى – أَوْ كَمَا قَالَ – فَمَا رَجَعَ حَتَّى فَتَحَ اللهُ عَلَى يَدَيْهِ فَبَصَقَ فِي عَيْنَيْهِ فَبَرَأَ..

এমতাবস্থায় হযরত আলী (رضي الله عنه) পতাকা নিয়ে দুর্গের ঠিক নিচে (মাটিতে) পুঁতে দেন, যা দেখে জনৈক ইহুদী দুর্গের সর্বোচ্চ স্থান থেকে নিচে তাঁর দিকে তাকিয়ে বলে, ‘আপনি কে?’ তিনি উত্তর দেন, ‘আলী।’ ইহুদী বলে, ‘মূসা আলাইহিস সালমের প্রতি অবতীর্ণ ঐশী গ্রন্থের শপথ, আপনারা বিজয়ী হবেন (‘উলুতুম)।’ আল্লাহতা’লা বিজয় দান না করা পর্যন হযরত আলী (رضي الله عنه) আর পিছু হটেন নি।”[৬৯]

🔺৬৯. [নোট-৩১: হযরত সালামা হতে ইবনে হিশাম কৃত ‘সীরাহ’ (৪:৩০৫-৩০৬) এবং ইবনে হিব্বান প্রণীত ‘আল-সিক্কাত’ (২:১৩)।]


❏ হাদিস ৬২:


আবু নুয়াইম বলেন, “এতে ইশারা রয়েছে যে ইহুদীরা তাদের (ঐশী) কিতাবের বদৌলতে আগাম জানে কাকে তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পাঠানো হবে এবং বিজয় মন্ঞ্জুর করা হবে।” এই বর্ণনা সর্ব-হযরত ইবনে উমর, ইবনে আব্বাস, সা’আদ ইবনে আবি ওয়াক্কাস, আবু হুরায়রা, আবু সাঈদ আল-খুদরী, এমরান ইবনে হুসাইন, জাবের এবং আবু লায়লা আল-আনসারী (رضي الله عنه)মের কাছ থেকেও এসেছে। সবগুলোই আবু নুয়াইম রওয়ায়াত করেছেন, আর তাতে মহানবী (ﷺ) কর্তৃক হযরত আলী (رضي الله عنه)র চোখ মোবারকে পবিত্র থুথু নিক্ষেপ ও চোখ ভাল হয়ে যাওয়ার ঘটনা বিবৃত হয়েছে। [৭০]

🔺৭০. [নোট-৩২: সম্ভবত আবু নুয়াইমের ‘মা’রেফাত আল-সাহাবা ওয়া ফাদলিহিম’ শীর্ষক পুস্তকে।]


❏ হাদিস ৬৩:


হযরত বুরায়দা (رضي الله عنه) থেকে আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম বর্ণনা করেন যে মহানবী (ﷺ) বলেন:

لَأُعْطِيَنَّهَا غَدًا رَجُلًا يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ، وَيُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ يَأْخُذُهَا عَنْوَةًগ্ধ ، وَلَيْسَ ثَمَّ عَلِيٌّ، فَتَطَاوَلَتْ لَهَا قُرَيْشٌ وَرَجَا كُلُّ رَجُلٍ مِنْهُمْ أَنْ يَكُونَ صَاحِبَ ذَلِكَ، فَأَصْبَحَ وَجَاءَ عَلِيٌّ عَلَى بَعِيرٍ لَهُ حَتَّى أَنَاخَ قَرِيبًا وَهُوَ أَرْمَدُ قَدْ عَصَبَ عَيْنَهُ بِشَقَّةِ بُرْدٍ قَطَرِيٍّ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى الله عليه وسلّم مالك؟ قَالَ: رَمِدْتُ بَعْدَكَ، قَالَ ادْنُ مِنِّي، فَتَفَلَ فِي عَيْنِهِ فَمَا وَجِعَهَا حَتَّى مَضَى لِسَبِيلِهِ، ثُمَّ أَعْطَاهُ الرَّايَةَ..

আমি শপথ করে বলছি, কাল আমি যার হাতে পতাকা দেবো সে আল্লাহকে ভালোবাসে এবং তাঁর রাসূল (ﷺ)কেও, আর সে তা (নিজ) ক্ষমতাবলে নেবে।” এ কথা তিনি এমন সময় বলেন, যখন হযরত আলী (رضي الله عنه) সেখানে ছিলেন না। কুরাইশ গোত্র পতাকার জন্যে প্রতিযোগিতা আরম্ভ করে; ঠিক তখনি হযরত আলী (رضي الله عنه) চোখের পীড়া নিয়ে উটের পিঠে চড়ে সেখানে উপস্থিত হন। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাঁকে বলেন, “কাছে এসো।” তিনি এলে তাঁর পবিত্র চোখে হুযূর পাক (ﷺ) নিজ থুথু মোবারক নিক্ষেপ করেন এবং তাঁর হাতে পতাকা দেন। হযরত আলী (رضي الله عنه) বেসাল হওয়া অবধি আর কখনোই তাঁর পবিত্র চোখ পীড়িত হয় নি।[৭১]

🔺৭১. [নোট-৩৩: এই বর্ণনা আত্ তাবারীর নিজ ‘তারিখ’ গ্রন্থে (২:১৩৭)।]


❏ হাদিস ৬৪:


ইমাম আহমদ, আবু এয়ালা, আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম বর্ণনা করেন হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে, যিনি বলেন:

مَا رَمِدْتُ وَلَا صُدِعْتُ مُنْذُ مَسَحَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَجْهِي، وَتَفَلَ فِي عَيْنَيَّ يَوْمَ خَيْبَرَ.

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আমার দু’চোখে যে দিন খাইবারে থুথু নিক্ষেপ করেন, সে সময় থেকে আজ পর্যন্ত ওতে আর কোনো রকম পীড়া বা জ্বালা-পোড়া অনুভব করি নি।”[৭২]

🔺৭২. [নোট-৩৪: আত্ তাবারানী, সাঈদ ইবনে মানসুর, ইবনে আবি শায়বা এবং আত্ তাবারী যিনি এটাকে বিশুদ্ধ বলেছেন তিনিও বর্ণনা করেন; ইমাম আহমদ ও আবু এয়ালার বর্ণনায় শক্তিশালী ‘রাবী’দের এসনাদ বিদ্যমান বলে মত দিয়েছেন আল-হায়তামী ও ইবনে কাসীর নিজ ‘আল-বেদায়া’ পুস্তকে, এবং আল-বায়হাকী তাঁর ‘দালাইল’ কিতাবে; দেখুন – কানয (#৩৫৪৬৭-৩৫৪৬৮)। অপর এক বর্ণনায় হযরত আবু লায়লা (رضي الله عنه) হযরত আলী (رضي الله عنه)কে জিজ্ঞেস করেন কেন তিনি গ্রীষ্মের বস্ত্র শীতে এবং শীতের বস্ত্র গ্রীষ্মে পরেন। তিনি উত্তরে বলেন, “খায়বরের দিবসে আমার চোখ দুটো যখন পীড়াগ্রস্ত ছিল, তখন হুযূর পাক (ﷺ) আমাকে তলব করেন। আমি তাঁকে বলি, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! আমার চক্ষু পীড়া দেখা দিয়েছে।’ তিনি আমার চোখে ফুঁ দিয়ে দোয়া করেন, ‘এয়া আল্লাহ! তার (আলীর) কাছ থেকে ঠান্ডা ও গরম অপসারণ করুন।’ ওই দিন থেকে আমি আর শীত বা গরম অনুভব করি নি।” হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আবি লায়লা (رضي الله عنه) হতে দুর্বল সনদে ইমাম আহমদ ও ইবনে মাজাহ এটা বর্ণনা করেছেন।]


❏ হাদিস ৬৫:


ইবনে এসহাক বর্ণনা করেন হযরত আম্মার ইবনে এয়াসের (رضي الله عنه) হতে, যিনি বলেন:

كُنْتُ أَنَا وَعَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ رَفِيقَيْنِ فِي غَزْوَةِ الْعُشَيْرَةِ مِنْ بَطْنِ يَنْبُعَ، فَلَمَّا نَزَلَهَا رَسُولُ اللهِ صلى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَقَامَ بِهَا شَهْرًا، فَصَالَحَ بِهَا بَنِي مُدْلِجٍ وَحُلَفَاءَهُمْ مِنْ بَنِي ضَمْرَةَ، فَوَادَعَهُمْ، فَقَالَ لِي عَلِيُّ بْنُ أَبِي طَالِبٍ: هَلْ لَكَ يَا أَبَا الْيَقْظَانِ أَنْ نَأْتِيَ هَؤُلَاءِ- نَفَرٌ مِنْ بَنِي مُدْلِجٍ يَعْمَلُونَ فِي عَيْنٍ لَهُمْ- نَنْظُرَ كَيْفَ يَعْمَلُونَ؟ فَأَتَيْنَاهُمْ، فَنَظَرْنَا إِلَيْهِمْ سَاعَةً، ثُمَّ غَشِيَنَا النَّوْمُ، فَعَمَدْنَا إِلَى صَوْرٍ [ (১৯) ] مِنَ النَّخْلِ فِي دَقْعَاءَ [ (২০) ] مِنَ الأرض فنمنا فيه فو الله مَا أَهَبَّنَا [ (২১) ] إِلَّا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّه عليه وَسَلَّمَ بِقَدَمِهِ، فَجَلَسْنَا وَقَدْ تَتَرَّبْنَا مِنْ تِلْكَ الدَّقْعَاءِ، فَيَوْمَئِذٍ قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَلِيٍّ: يَا أَبَا تُرَابٍ- لِمَا عَلَيْهِ مِنَ التُّرَابِ-[ (২২) ] ، فَأَخْبَرْنَاهُ بِمَا كَانَ مِنْ أَمْرِنَا، فَقَالَ: ألا أُخْبِرُكُمْ بِأَشْقَى النَّاسِ رَجُلَيْنِ؟ قُلْنَا: بَلَى يَا رَسُولَ اللهِ، فَقَالَ أُحَيْمِرُ [ (২৩) ] ثَمُودَ الَّذِي عَقَرَ النَّاقَةَ، وَالَّذِي يَضْرِبُكَ يَا عَلِيُّ عَلَى هَذِهِ، وَوَضَعَ رَسُولُ اللهِ صلى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَدَهُ عَلَى رَأْسِهِ، حَتَّى يَبُلَّ مِنْهَا هَذِهِ، وَوَضَعَ يَدَهُ عَلَى لِحْيَتِهِ [ (২৪) ] .

আল-’উশায়রা সফরে আমি ও হযরত আলী (رضي الله عنه) এক সাথে ছিলাম। যখন নবী পাক (ﷺ) সওয়ার থেকে অবতরণ করেন, তখন আমরা বনূ মিদলাজ গোত্রের মানুষদেরকে দেখি তাদের একটি ঝর্ণা ও খেজুর বাগানে (খামারের) কাজে ব্যস্ত। হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (رضي الله عنه) আমাকে বলেন, ‘ওহে আবু আল-এয়াকযান! আমরা এই লোকদেরকে তাদের কাজে দেখতে গেলে কেমন হয়?’ আমি তাঁকে বলি, ‘আপনার যা মর্জি হয়।’ এমতাবস্থায় আমরা তাদের কাজ দেখতে যাই এবং বেশ কিছু সময় সেখানে অতিবাহিত করি। এরপর আমাদের (সম্ভবত সফরজনিত ক্লান্তির কারণে) ঘুম পায় এবং আমরা দু’জন কিছু দূরে নিম্নভূমিতে অবস্থিত একটি বালিয়াড়ি পেয়ে সেখানে ঘুমিয়ে পড়ি। আল্লাহর শপথ! আমাদের আর কেউ ঘুম থেকে ওঠান নি স্বয়ং মহানবী (ﷺ) ছাড়া, যিনি তাঁর কদম মোবারক দ্বারা আমাদের (স্পর্শ করে) জাগান। আমরা বালি দ্বারা আবৃত হয়ে গিয়েছিলাম। ওই দিন মহানবী (ﷺ) হযরত আলী ইবনে আবি তালেব (رضي الله عنه)-কে বালি দ্বারা আবৃত দেখে বলেন, ‘ওহে আবু তোরাব (বালির মানুষ)! আমি কি তোমাকে সবচেয়ে বদমায়েশ দু’জন ব্যক্তি সম্পর্কে বলবো না?’ আমরা বললাম, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! অনুগ্রহ করে আমাদের বলুন।’ তিনি উত্তর দেন, ‘সামুদ গোত্রের সেই ফর্সা লোকটি যার দ্বারা মাদী উটের হাঁটুর পেছনের দিকের পেশিতন্তু কাটা পড়ে সেটা খোঁড়া হয়ে গিয়েছিল; আর ওহে আলী, দ্বিতীয় লোকটি হবে তোমার এখানে আঘাতকারী।’ এ কথা বলার সময় তিনি হযরত আলী (رضي الله عنه)র কপালের এক পাশে তাঁর পবিত্র হাত রাখেন এবং এরপর হযরত আলী (رضي الله عنه)র দাড়ি মোবারকে হাত রেখে আরও বলেন, ‘যতোক্ষণ না এটা (রক্তে) ভিজে যায়’।” [৭৩]

🔺৭৩. [নোট-৩৫: হযরত আম্মার (رضي الله عنه) থেকে এটা বর্ণনা করেন ইবনে হিশাম (৩:১৪৪), ইমাম আহমদ নিজ ‘মুসনাদ’ (৩০:২৫৬-২৬৭  #১৮৩২১, #১৮৩২৬ হাসান লি-গায়রিহ) ও ‘ফযায়েলে সাহাবা’ পুস্তকে (২:৬৮৭), আল-বাযযার (#১৪১৭), আল-বুখারী তাঁর ‘আল-তারিখ আল-সগীর’ কিতাবে (১:৭১), আত্ তাহাবী স্বরচিত ‘শরহ মুশকিল আল-আসার’ (#৮১১), আদ্ দুলাবী তাঁর ‘আল-আসমা’ওয়াল কুনা’ গ্রন্থে’ (২:১৬৩), আত্ তাবারী নিজ ‘তারিখ’ কিতাবে (২:১৪), আবু নুয়াইম তাঁর ‘হিলইয়া’ (১:১৪১) ও ‘মা’আরিফাত আস্ সাহাবা’ পুস্তকে (#৬৭৫), আল-হাকিম (৩:১৪১=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১৫১), আল-বায়হাকী স্বরচিত ‘দালাইল আন্ নুবুওয়া’ গ্রন্থে’ (৩:১২-১৩), এবং অন্যান্যরা; দেখুন – আল-হায়তামী ৯:১৩৬)।]


পরবর্তীকালে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যেভাবে বর্ণনা করেছিলেন, ঠিক সেভাবেই আল্লাহতা’লার ইচ্ছায় হযরত আলী (رضي الله عنه)র শাহাদাত হয় শেষ জমানার সবচেয়ে বদমায়েশ লোক আবদুর রহমান ইবনে মুলজাম আল-মুরাদীর দ্বারা।


❏ হাদিস ৬৬:


আল-বায়হাকী হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: “ হুযূর পূর নূর (ﷺ) আমাকে বলেন,

سَيُولَدُ لَكَ بَعْدِي غُلَامٌ قَدْ نَحَلْتَهُ اسْمِي وَكُنْيَتِي..

আমার (বেসালের) পরে তোমার ঔরসে এক পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবে যাকে আমি আমার নাম ও কুনইয়া (বংশীয় ধারার নাম) প্রদান করলাম’।” এটা তিনি মোহাম্মদ ইবনে আল-হানাফিয়্যার দিকে ইঙ্গিত করে বলেছিলেন।[৭৪]

🔺৭৪. [নোট-৩৬: অর্থাৎ, মোহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আবি তালেব। এটা বর্ণনা করেছেন ইবনে সা’আদ (৫:৯২), ইবনে আসাকির, এবং আল-বায়হাকী নিজ ‘দালাইল’ পুস্তকে; তবে ইবনে আল-জওযীর মতে এর সনদ দুর্বল; দেখুন – ‘কানযুল ‘উম্মাল’ (#৩৪৩৩০, #৩৭৮৫৪, #৩৭৮৫৮)।]

 
Top