❏ হাদিস ৬৭:


হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা


মহানবী (ﷺ) এর সীরাতে হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)মাকে উদ্ধৃত করা হয়েছে, তিনি বলেন:

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ: إِذَا جَاءَ نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ دَعَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَاطِمَةَ، فَقَالَ: «إِنَّهُ قَدْ نُعِيَتْ إِلَيَّ نَفْسِي» فَبَكَتْ، فَقَالَ: «لَا تَبْكِينَ، فَإِنَّكِ لَأَوَّلُ أَهْلِي لَاحِقٌ بِي» ، فَضَحِكَتْ. فَرَآهَا بَعْضُ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، فَقَالَتْ لَهَا: رأَيْنَاكِ بَكَيْتِ، ثُمَّ ضَحِكْتِ. فَقَالَتْ: إِنَّهُ قَالَ لِي: «نُعِيَتْ إِلَيَّ نَفْسِي» فَبَكَيْتُ، فَقَالَ: «لَا تَبْكِي، فَإِنَّكِ أَوَّلُ أَهْلِي لَاحِقٌ بِي» ، فَضَحِكْتُ.

সূরা নসরের ’যখন আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় আসবে’ – আয়াতটি নাযেল হলো, তখন রাসূলুল্লাহ (ﷺ) হযরত মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহাকে তলব করেন এবং তাঁকে বলেন, ‘আমার জানাযা এইমাত্র ঘোষিত হয়েছে।’ এ কথা শুনে মা ফাতেমা (رضي الله عنه) কান্নাকাটি করেন। এমতাবস্থায় হুযূর পূর নূর (ﷺ) তাঁকে বলেন, ‘কেঁদো না, কেননা তুমিই সর্বপ্রথম আমাকে অনুসরণ করবে (পরলোকে)।’ এ কথা শুনে মা ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হাসেন। নবী পাক (ﷺ) এর কতিপয় স্ত্রী তাঁকে এ অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করেন, ‘ওহে ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা! আমরা তোমাকে প্রথমে কাঁদতে তার পর হাসতে দেখলাম কেন?’ তিনি উত্তর দেন, ‘মহানবী (ﷺ) আমাকে বলেছিলেন যে তাঁর জানাযা এইমাত্র ঘোষিত হয়েছে, তাই আমি কেঁদেছিলাম। অতঃপর তিনি আমাকে বলেন যে আমিই তাঁকে সর্বপ্রথম অনুসরণ করবো (পরলোকে); এ কারণে আমি হেসেছি’।”[৭৫] 

🔺৭৫. [নোট-৩৭: বিশুদ্ধ সনদে হযরত আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে এটা বর্ণনা করেছেন আদ্ দারিমী, আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-আওসাত’ কিতাবে (১:২৭১ #৮৮৩), এবং আংশিকভাবে আল-বুখারী ও ইমাম আহমদ; হযরত ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকেও অনুরূপ বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেছেন আল-বাযযার ও আল-বায়হাকী; দেখুন – ইবনে কাসীর কৃত তাফসীর (৪:৫৬২)।]


নির্ভরযোগ্য রওয়ায়াতসমূহ অনুযায়ী মা ফাতেমা (رضي الله عنه) এই ঘটনার ছয় মাস পরই বেসালপ্রাপ্ত হন।


❏ হাদিস ৬৮:


ইমাম হাসান (رضي الله عنه) হযরত আবু বাকরাহ (رضي الله عنه) থেকে আল-বুখারী বর্ণনা করেন, তিনি বলেন:

إِنَّ ابْنِي هَذَا سَيِّدٌ وَلَعَلَّ اللَّهَ أَنْ يُصْلِحَ بِهِ بَيْنَ فِئَتَيْنِ عَظِيمَتَيْنِ مِنَ المُسْلِمِينَ..

মহানবী (ﷺ) হযরত হাসান (رضي الله عنه) সম্পর্কে বলেছেন, ‘আমার এই পুত্র (নাতি) মানুষদের সাইয়্যেদ (সরদার) এবং আল্লাহতা’লা হয়তো তার মাধ্যমে মুসলমানদের দুটো বড় দলকে আবার একতাবদ্ধ করবেন’।”[৭৬] 

🔺৭৬.[নোট-৩৮: হযরত আবু বাকরাহ (رضي الله عنه) থেকে চারটি সনদে ইমাম বুখারী এটা বর্ণনা করেছেন; এছাড়া আত্ তিরমিযী (হাসান সহীহ), আন্ নাসাঈ, আবু দাউদের রওয়ায়াতের পাশাপাশি ইমাম আহমদও তাঁর  নিজস্ব চারটি সনদে এটা বর্ণনা করেন।]


❏ হাদিস ৬৯:


হুযূর করীম (ﷺ) যেভাবে বলেছিলেন ঠিক হুবহু সেভাবেই ঘটনাটি ঘটে। হযরত আলী (رضي الله عنه)কে যখন শহীদ করা হয়, তখন মানুষেরা হযরত হাসান (رضي الله عنه)র প্রতি আমৃত্যু আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করেন। তাঁদের সংখ্যা চল্লিশ হাজারেরও বেশি ছিল এবং তাঁরা তাঁর পিতা হযরত আলী (رضي الله عنه)র চেয়েও তাঁর প্রতি বেশি অনুগত ছিলেন। তিনি সাত মাস যাবত ইরাক, খুরাসান ও ট্রান্সঅক্সিয়ানা অঞ্চলের খলীফা ছিলেন; এরপর হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) তাঁর বিরুদ্ধে সৈন্য সমাবেশ করেন। আল-আম্বরে উভয় পক্ষ মুখোমুখি হলে ইমাম হাসান (رضي الله عنه) এবং হযরত মুয়াবিয়াও উপলব্ধি করেন যে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ মুসলমানদের ব্যাপক প্রাণহানি ঘটাবে। উভয় দলের মধ্যস্থতাকারীরা একটি শান্তি-চুক্তির পক্ষে কাজ করেন এবং তাতে উপণীত হন। এরই ফলে আল্লাহর ইচ্ছায় মুসলমানগণ ভ্রাতিঘাতী যুদ্ধ এড়াতে সক্ষম হন এবং আল্লাহতা’লা তাঁর প্রিয়নবী (ﷺ) এর বাণী সত্যে পরিণত করেন – 

“আমার এই নাতি মানুষদের সাইয়্যেদ এবং তার মাধ্যমে হয়তো আল্লাহতা’লা মুসলমানদের দুটো বড় দলকে আবার একতাবদ্ধ করবেন।” [মহানবী (ﷺ) সেজদারত অবস্থায় শিশু হযরত হাসান (رضي الله عنه) তাঁর পিঠে লাফিয়ে ওঠার বিশুদ্ধ রওয়ায়াতের অংশ এটা, যা আবু বাকরাহ (رضي الله عنه) থেকে ইমাম আহমদ বর্ণিত (৩৪:৯৮-৯৯ #২০৪৪৮ হাদীস সহীহ); আর অন্যান্যদের বর্ণনায় হযরত হাসান বসরী (رضي الله عنه)র কথা যুক্ত হয়েছে, তিনি বলেন: আল্লাহর শপথ, আল্লাহর শপথ, তাঁর শাসনের সময় এক শিস্তির বা আঙ্গুল পরিমাণ রক্তও ঝরে নি।” 


অপর এক বর্ণনার শব্দচয়ন ছিল: “এবং আল্লাহতা’লা হয়তো মুসলমানদের দুটো বড় দলকে একতাবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তাকে ব্যবহার করতে পারেন।”[৭৭]

🔺৭৭.[নোট-৪০: কিছু মানুষ যখন হযরত হাসান (رضي الله عنه)কে শান্তি স্থাপনের কারণে কটাক্ষ করে বলেছিল ‘ওহে ঈমানদারদের জন্যে অপমানের পাত্র’, তখন তিনি তাদেরকে উত্তরে বলেন: “আগুনের চেয়ে অপমান শ্রেয়”; তিনি আরও বলেন, “আমি তাদেরকে অপমানিত করি নি, বরং রাজ্য বিস্তারের অভিপ্রায়ে তাদের রক্ত ঝরানোকে ঘৃণা করেছি।” এটা বর্ণনা করেছেন ইবনে আব্দিল বারর তাঁর ‘আল-এস্তিয়াব’ গ্রন্থে।]

 
Top