ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)


❏ হাদিস ৭০:


আল-হাকিম ও আল-বায়হাকী বর্ণনা করেন হযরত উম্মে আল-ফযল বিনতে আল-হারিস রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা হতে, তিনি বলেন:

فَدَخَلْتُ يَوْمًا إِلَى رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَوَضَعْتُهُ فِي حِجْرِهِ ، ثُمَّ حَانَتْ مِنِّي الْتِفَاتَةٌ ، فَإِذَا عَيْنَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تُهْرِيقَانِ مِنَ الدُّمُوعِ ، قَالَتْ : فَقُلْتُ : يَا نَبِيَّ اللهِ ، بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي مَا لَكَ ؟ قَالَ : أَتَانِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ الصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ ، فَأَخْبَرَنِي أَنَّ أُمَّتِي سَتَقْتُلُ ابْنِي هَذَا فَقُلْتُ : هَذَا ؟ فَقَالَ : نَعَمْ ، وَأَتَانِي بِتُرْبَةٍ مِنْ تُرْبَتِهِ حَمْرَاءَ.

একদিন আমি হযরত রাসূলে আকরাম (ﷺ)কে দেখতে গেলাম, আমার কোলে ছিলেন ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)। আমি মহানবী (ﷺ) এর দিকে আবার ফিরে তাকাতেই দেখি তাঁর চোখ অশ্রু সজল। তিনি বললেন, ‘জিবরাইল আমীন এসে আমাকে বলেছেন যে আমার উম্মতের (কিছু লোক) আমার এই নাতিকে শহীদ করবে, আর তিনি ওর সমাধিস্থলের এক মুঠোভর্তি লাল মাটি নিয়ে এসেছেন’।”[৭৮]

🔺৭৮.[নোট-৪১: হযরত উম্মে আল-ফযল থেকে বর্ণনা করেন আল-হাকিম (৩:১৭৬-১৭৭=১৯৯০ সংস্করণের ৩:১৯৪), যিনি আল-বুখারী ও মুসলিমের মানদন্ডে একে বিশুদ্ধ বলেছেন; তবে আয্ যাহাবী বলেন: “বরঞ্চ এটা যয়ীফ মুনক্কাতী, (কেননা) শাদ্দাদ হযরত উম্মে আল-ফযলের সাক্ষাৎ পাননি; অপর দিকে মোহাম্মদ ইবনে মুস’আব (আল-কিরকিসানী) দুর্বল (বর্ণনাকারী)।” তবে আয্ যাহাবী ‘সিয়্যার’ পুস্তকে (আরনাওত সংস্করণের ৩:২৮৯) অনুরূপ একটি বর্ণনা উদ্ধৃত করে বলেন যে ওর এসনাদ ’হাসান’ (নির্ভরযোগ্য/বিশুদ্ধ)।]


❏ হাদিস ৭১:


ইবনে রাওয়াহা, আল-বায়হাকী ও আবু নুয়াইম হযরত উম্মে সালামা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে বর্ণনা করেন

عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اضْطَجَعَ ذَاتَ يَوْمٍ، فَاسْتَيْقَظَ وَهُوَ خَاثِرُ النَّفْسِ، وَفِي يَدِهِ تُرْبَةٌ حَمْرَاءُ يُقَلِّبُهَا، فَقُلْتُ: مَا هَذِهِ التُّرْبَةُ يَا رَسُولَ اللهِ؟ فَقَالَ: ” أَخْبَرَنِي جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ أَنَّ هَذَا يُقْتَلُ بِأَرْضِ الْعِرَاقِ – لِلْحُسَيْنِ – فَقُلْتُ لِجِبْرِيلَ عَلَيْهِ السَّلَامُ: أَرِنِي تُرْبَةَ الْأَرْضِ الَّتِي يُقْتَلُ بِهَا، فَهَذِهِ تُرْبَتُهَا “.

যে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) একদিন ঘুমিয়ে পড়েন এবং ঘুম থেকে জেগে ওঠেন নিষ্ক্রিয় ভাব নিয়ে; তাঁর হাত ভর্তি ছিল এক মুঠো লাল মাটি দ্বারা যা তিনি এদিক-ওদিক নাড়াচাড়া করছিলেন। তিনি তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! এই মাটি কিসের?’ মহানবী (ﷺ) উত্তর দেন, ‘জিবরাইল আমীন আমাকে জানিয়েছেন যে এই বাচ্চা (ইমাম হুসাইন) ইরাক রাজ্যে শহীদ হবে, আর এই মাটি তার সমাধিস্থলের।’ [৭৯]

🔺৭৯. [নোট-৪২: হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) থেকে এটা বর্ণনা করেন ইবনে আবি আসিম তাঁর ‘আল-আহাদ ওয়াল মাসানী’ কিতাবে (১:৩১০ #৪২৯), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ পুস্তকে (৩:১০৯, ২৩:৩০৮), এবং আল-হাকিম (১৯৯০ সংস্করণের ৪:৪৪০) মূসা ইবনে ইয়াকুব আল-জামি’র সূত্রে নির্ভরযোগ্য সনদে; অপর বর্ণনা এসেছে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) হতে আত্ তাবারানী কৃত ’আল-কবীর’ গ্রন্থে’ (৩:১০৭ #২৮১৫)। হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা বা উম্মে সালামা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে আরও বর্ণনা করেন ইমাম আহমদ তাঁর ‘মুসনাদ’ ও ‘ফযায়েলে সাহাবা’ বইগুলোতে, তবে এক্ষেত্রে সনদ খুব দুর্বল।]


❏ হাদিস ৭২:


আবু নুয়াইম বর্ণনা করেন হযরত উম্মে সালামা থেকে, যিনি বলেন:

كَانَ الْحَسَنُ وَالْحُسَيْنُ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا يَلْعَبَانِ بَيْنَ يَدَيِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي بَيْتِي، فَنَزَلَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ، فَقَالَ: يَا مُحَمَّدُ، إِنَّ أُمَّتَكَ تَقْتُلُ ابْنَكَ هَذَا مِنْ بَعْدِكَ. فَأَوْمأَ بِيَدِهِ إِلَى الْحُسَيْنِ. وَضَمَّهُ إِلَى صَدْرِهِ وَدِيعَةٌ عِنْدَكِ هَذِهِ التُّرْبَةُ فَشَمَّهَا رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَقَالَ: «وَيْحَ كَرْبٍ وَبَلَاءٍ» . قَالَتْ: وَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «يَا أُمَّ سَلَمَةَ إِذَا تَحَوَّلَتْ هَذِهِ التُّرْبَةُ دَمًا فَاعْلَمِي أَنَّ ابْنِي قَدْ قُتِلَ» قَالَ: فَجَعَلَتْهَا أُمُّ سَلَمَةَ فِي قَارُورَةٍ.

ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইন আমার ঘরে খেলছিলেন, এমন সময় জিবরাইল আমীন অবতীর্ণ হন এবং বলেন, ‘এয়া রাসূলাল্লাহ (ﷺ)! নিশ্চয় আপনার উম্মতের (কতিপয় লোক) আপনার এই নাতিকে (ইমাম হুসাইনের দিকে দেখিয়ে) শহীদ করবে।’ তিনি ইমামের সমাধিস্থলের কিছু মাটিও এনে দেন। হুযূর পাক (ﷺ) তা শুঁকেন এবং বলেন, ‘এতে কষ্ট ও ক্লেশ-যন্ত্রণার গন্ধ রয়েছে।’ অতঃপর আরও বলেন, ‘এই মাটি যখন রক্তে পরিণত হবে, তখন বুঝবে আমার নাতি শহীদ হয়েছে।’ অতএব আমি ওই মাটি একটি বয়ামে রেখে দেই।”[৮০]

🔺৮০. [নোট-৪৩: এটা বর্ণনা করেন আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ পুস্তকে (৩:১০৮ #২৮১৭), আল-মিযযী তাঁর ‘তাহযিব আল-কামাল’ কিতাবে (৬:৪০৯), এবং ইবনে হাজর স্বরচিত ‘তাহযিব আত্ তাহযিব’ গ্রন্থে’ (২:৩০০-৩০১) যাঁর এসনাদে দুর্বল বা প্রত্যাখ্যাত রাফেযী শিয়া ’আমর ইবনে সাবিত ইবনে হুরমুয আল-বাকরী বিদ্যমান। দেখুন – আল-হায়তামী (৯:১৮৯)।]


❏ হাদিস ৭৩:


ইবনে আসাকির বর্ণনা করেন মোহাম্মদ ইবনে ’আমর [৮১]   ইবনে হাসান (رضي الله عنه) হতে, তিনি বলেন:

قال كنا مع الحسين رضي الله عنهـ بنهري كربلاء فنظر إلى شمر بن ذي الجوشن فقال صدق الله ورسوله قال رسول الله (صلى الله عليه وسلم) كأني أنظر إلى كلب أبقع (৫) يلغ في دماء أهل بيتي (৬) فكان شمر أبرص

আমরা ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)-এর সাথে কারবালার (পাশে) নদীতে ছিলাম [৮২] যখন তিনি শিমার ইবনে যি আল-জাওশানের দিকে তাকান এবং বলেন, ‘আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) সঠিক বলেছেন! রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, “আমি দেখতে পাচ্ছি একটা ফোটা ফোটা দাগবিশিষ্ট কুকুর আমার ঘরের মানুষদের রক্তের ওপর লালা ঝরাচ্ছে”।’ শিমার কুষ্ঠরোগী ছিল।”[৮৩]


🔺৮১. [নোট-৪৪: ইমাম নাবহানীর বইয়ে ‘উমর’ লেখা হয়েছে, যা ‘তারিখে দিমাশ্ক’ ও ‘কানযুল উম্মাল’ কিতাবগুলো থেকে সংশোধিত]

🔺৮২. [নোট-৪৫: কুফা নগরীর চব্বিশ মাইল উত্তর পশ্চিমে]

🔺৮৩.[নোট-৪৬: এটা বর্ণনা করেন ইবনে আসাকির ‘তারিখে দিমাশ্ক’ গ্রন্থে’ (২৩:১৯০); দেখুন – ‘কানয’ (#৩৭৭১৭) এবং আল-বেদায়া।]


❏ হাদিস ৭৪:


ইবনে আল-সাকান, আল-বাগাবী ও আবু নুয়াইম বর্ণনা করেন হযরত আনাস ইবনে আল-হারিস (رضي الله عنه) থেকে, তিনি বলেন:

عَنْ أَنَسِ بْنِ الْحَارِثِ قَالَ : قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِلْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ ” إِنَّ ابْنِي هَذَا يُقْتَلُ بِأَرْضٍ يُقَالُ لَهَا : كَرْبَلاءُ ، فَمَنْ شَهِدَ ذَلِكَ مِنْكُمْ فَلْيَنْصُرْهُ ” فَخَرَجَ أَنَسُ بْنُ الْحَارِثِ إِلَى كَرْبَلاءَ ، فَقُتِلَ مَعَ الْحُسَيْنِ بْنِ عَلِيٍّ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا. .

আমি মহানবী (ﷺ)কে বলতে শুনেছি, ‘নিশ্চয় আমার এই নাতি (হুসাইনকে ইশারা করে) কারবালা নামের এক জায়গায় শহীদ হবে। তোমাদের কেউ ওখানে তখন উপস্থিত থাকলে তাকে সাহায্য করো।’ অতঃপর হযরত আনাস ইবনে আল-হারিস (رضي الله عنه) কারবালা যান এবং ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)র সাথে শাহাদাত বরণ করেন।”[৮৪]


🔺৮৪. [নোট-৪৭: হযরত সোহায়ম থেকে বর্ণিত, হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকেও বর্ণিত আবু নুয়াইমের ‘দালাইল’ গ্রন্থে’ (পৃষ্ঠা ৫৫৪ #৪৯৩) এবং আল-বাগাবী ও ইবনে আল-সাকান তাঁদের সাহাবা-এ-কেরাম সংকলনে। দেখুন – ইবনে হাজর কৃত ’এসাবা’ (১:১২১), আল-বুখারী প্রণীত ‘আল-তারিখ আল-কবীর’ (২:৩০ #১৫৮৩); ‘আল-এস্তিয়াব’ (১:১১২); ‘আল-খাসাইস আল-কুবরা’ (২:৪৫১)।]


❏ হাদিস ৭৫:


আত্ তাবারানী বর্ণনা করেন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহা থেকে এই মর্মে যে হযরত রাসূলে করীম (ﷺ) এরশাদ ফরমান:

أَخْبَرَنِي جِبْرِيلُ أَنَّ ابْنِي الْحُسَيْنَ يُقْتَلُ بَعْدِي بِأَرْضِ الطَّفِّ، وَجَاءَنِي بِهَذِهِ التُّرْبَةِ، وَأَخْبَرَنِي أَنَّ فِيهَا مَضْجَعَهُ.

জিবরাইল আমীন আমাকে বলেছেন আমার নাতি হুসাইন আমার (বেসালের) পরে আল-তাফফ রাজ্যে (সিরিয়া ও ইরাকের মাঝে) শহীদ হবে, আর তিনি আমাকে এই মাটি এনে দিয়ে বলেছেন যে এতে হুসাইনের সমাধিস্থল হবে।”[৮৫]

🔺৮৫. [নোট-৪৮: হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে এটা বর্ণনা করেন আত্ তাবারানী তাঁর ‘আল-কবীর’ (৩:১০৭ #২৮১৪) ও ‘আল-আওসাত’ (৬:২৪৯ #৬৩১৬) গ্রন্থগুলোতে, যার এসনাদ দুর্বল বলেছেন আল-হায়তামী (৮:২৮৮, ৯:১৮৮); দেখুন – আস্ সৈয়ুতী রচিত ‘যেয়াদাত আল-জামে’ আস্ সগীর’ (#১৪৭) এবং কানয (#৩৪২৯৯)। সামগ্রিকভাবে এটা হাসান (বিশুদ্ধ), কেননা এই বর্ণনা ও উম্মে সালামা (رضي الله عنه)-এর বর্ণনা একে অপরকে সমর্থন দেয়।]


❏ হাদিস ৭৬:


ইমাম আহমদ ও ইবনে সা’আদ এটা হযরত আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন নিম্নের প্রকাশভঙ্গিতে: “আমি অনুভব করি হুসাইন ফোরাত নদীর তীরে শহীদ হবে।”[৮৬]


🔺৮৬. [নোট-৪৯: হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু থেকে এটা বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ, আবু ইয়ালা (#৩৬৩), ইবনে আবি আসিম নিজ ‘আল-আহাদ ওয়াল মাসানী’ পুস্তকে (১:৩০৮ #৪২৭), ইবনে আবি শায়বা (৭:৪৮৭ #৩৭৩৬৭), আল-বাযযার (৩:১০১ #৮৮৪), আত্ তাবারানী তাঁর ‘আল-কবীর’ কিতাবে (৩:১০৫ #২৮১১), আল-মিযযী নিজ ‘’তাহযিব আল-কামাল’ গ্রন্থে’ (৬:৪০৭), এবং ইবনে হাজর স্বরচিত ’তাহযিব আল-তাহযিব’ বইয়ে (২:৩০০); আল-আরনাওত কৃত ‘মুসনাদ’ (২:৭৭-৭৮ #৬৪৮) ও আল-মুনাওয়ী (১:২০৪-২০৫)-এর ভাষ্যানুযায়ী ওপরের সবার এসনাদ দুর্বল, তবে আল-হায়তামী (৯:১৮৭) ও আল-মাকদেসীর প্রণীত ‘আল-মুখতারা’ কিতাবে প্রদত্ত ভাষ্য এর বিপরীত। পক্ষান্তরে আয্ যাহাবী দ্বিতীয় আরেকটি সনদ পেশ করেছেন যা প্রথমটিকে সমর্থন যোগায়। এই বর্ণনায় আছে ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)-এর অনুপস্থিতিতে তাঁকে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহ আনহুর সম্ভাষণ: “সাবরান আবা আবদ-আল্লাহ!” দেখুন – ইবনে তাইমিয়া রচিত ‘মিনহাজ’ (কুরতুবা সংস্করণে ৩:৩৬৭/৩৬৮ এবং আয্ যাহাবী প্রণীত ‘সিয়্যার’ (রেসালা সংস্করণের ৩:২৮৮=ফিকর সংস্করণের ৪:৪০৭-৪০৮)।]


❏ হাদিস ৭৭:


আল-বাগাবী তাঁর ‘মু’জাম’ পুস্তকে হযরত আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) থেকে রওয়ায়াত করেন, তিনি বলেন:

فَقَالَ: «يَا أُمَّ سَلَمَةَ‍ احْفَظِي عَلَيْنَا الْبَابَ، لَا يَدْخُلْ عَلَيْنَا أَحَدٌ» . فَبَيْنَمَا هُمْ عَلَى الْبَابِ إِذْ جَاءَ الْحُسَيْنُ فَفَتَحَ الْبَابَ، فَجَعَلَ يَتَقَفَّزُ عَلَى ظَهْرِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَالنَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَلْتَئِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ، فَقَالَ لَهُ الْمَلَكُ: تُحِبُّهُ يَا مُحَمَّدُ؟ قَالَ: «نَعَمْ» . قَالَ: أَمَا إِنَّ أُمَّتَكَ سَتَقْتُلُهُ، وَإِنْ شِئْتَ أَنْ أُرِيَكَ مِنْ تُرْبَةِ الْمَكَانِ الَّذِي يُقْتَلُ فِيهَا. قَالَ: فَقَبَضَ قَبْضَةً مِنَ الْمَكَانِ الَّذِي يُقْتَلُ فِيهِ، فَأَتَاهُ بِسَهْلَةٍ حَمْرَاءَ، فَأَخَذَتْهُ أُمُّ سَلَمَةَ فَجَعَلَتْهُ فِي ثَوْبِهَا. قَالَ ثَابِتٌ: «كُنَّا نَقُولُ إِنَّهَا كَرْبَلَاءُ».

বৃষ্টির ফেরেশতা (মিকাইল) মহানবী (ﷺ)-এর সাথে দেখা করার জন্যে মহান প্রভুর দরবারে আরয করেন এবং অনুমতি পান। তিনি দিনের এমন সময়ে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর ঘরে আসেন যখন তিনি সাধারণতঃ মা উম্মে সালামা (رضي الله عنه)-এর সাথে থাকেন। হুযূর পূর নূর (ﷺ) বলেন, ‘উম্মে সালামা, দরজা বন্ধ রাখো এবং কাউকেই ঢুকতে দেবে না।’ তিনি দরজা বন্ধ করার জন্যে ওর কাছে যাওয়ামাত্র ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) ছুটে এসে ঘরে প্রবেশ করেন এবং মহানবী (ﷺ)-এর কাছে যান, যিনি নাতিকে জড়িয়ে ধরে চুমু খান। এমতাবস্থায় ফেরেশতা তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আপনি কি তাঁকে খুব আদর করেন?’ রাসূলে পাক (ﷺ) জবাবে ’হ্যাঁ’ বলেন। ফেরেশতা বলেন, ‘নিশ্চয় আপনার উম্মতের কতিপয় লোক তাঁকে শহীদ করবে; আর আপনি যদি চান, তবে আমি আপনাকে দেখাতে পারি তাঁকে কোথায় শহীদ করা হবে।’ তিনি মহানবী (ﷺ)কে সেই জায়গা প্রদর্শন করেন এবং সেখান থেকে কিছু লালচে মাটি এনে তাঁকে দেন। এই মাটি উম্মে সালামা (رضي الله عنه) তাঁর চাদরের মধ্যে রাখেন।” সাবিত আল-বনানী (رحمة الله) যিনি এটা হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেছিলেন, তিনি বলেন, “আমাদের বিবেচনায় এই জায়গাটি ছিল কারবালা।”[৮৭]

🔺৮৭. [নোট- ৫০: হযরত আনাস (رضي الله عنه) থেকে এটা বর্ণনা করেন ইমাম আহমদ, আবু এয়ালা (৬:১২৯ #৩৪০২), আল-বাযযার (#২৬৪২), আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (৩:১০৬ #২৮১৩), ইবনে হিব্বান (১৫:১৪২ #৬৭৪২ হাদীস হাসান), আবু নুয়াইম তাঁর ‘দালাইল’ কিতাবে (পৃষ্ঠা ৫৫৩ #৪৯২) আল-বায়হাকী স্বরচিত ‘দালাইল’ পুস্তকে (৬:৪৬৯), এবং আল-মিযযী নিজ ‘তাহযিব আল-কামাল’ গ্রন্থে (৬:৪০৮)। দেখুন – কানয (#৩৭৬৭২), আল-হায়তামী (৯:১৮৭-১৯০), আয্ যাহাবী নিজ ‘সিয়্যার’ কিতাবে (৩:২৮৮-২৮৯=ফিকর সংস্করণের ৪:৪০৮), এবং আস্ সৈয়ুতী কৃত ‘খাসাইস আল-কুবরা’ (২:৪৫০)।]


❏ হাদিস ৭৮:


মোল্লা আল-মওসিলীর বর্ণনায় হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) বলেন:

ثم ناولني كفا من تراب أحمر، وقال: “إن هذا من تربة الأرض التي يقتل فيها فمتى صار دما فاعلمي أنه قد قتل.

মহানবী (ﷺ) আমার কাছে এক মুঠো লাল মাটি হস্তান্তর করে বলেন, ‘সে (হুসাইন) যেখানে শহীদ হবে এটা সেই জায়গার মাটি। এটা যখন রক্তে পরিণত হবে, তখন জানবে যে তাকে শহীদ করা হয়েছে’।” হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) বলেন, “. قالت أم سلمة: فوضعته في قارورة عندي وكنت أقول: إن يوما يتحول فيه دما ليوم عظيم

ওই মাটি আমার কাছে থাকা একটি বয়ামে আমি রাখি, আর সেই ভয়াবহ দিনের আশংকায় থাকি যেদিন তা রক্তে পরিণত হবে।”[৮৮]

🔺৮৮.[নোট- ৫১: এই রওয়ায়াত করেছেন আত্ তাবারানী নিজ ‘আল-কবীর’ গ্রন্থে (৩:১০৮ হাদীস নং ২৮১৭), আল-মিযযী তাঁর ‘তাহযিব আল-কামাল’ পুস্তকে ৬:৪০৯, এবং ইবনে হাজর স্বরচিত ‘তাহযিব আত্ তাহযিব’ কিতাবে ২:৩০০-৩০১ যা’তে রাফেযী শিয়া ‘আমর ইবনে সাবিত ইবনে হুরমুয আল-বাকরী সনদের মধ্যে আছে; এই লোক দুর্বল বা বর্জনীয়। দেখুন – আল-হায়তামী ৯:১৮৯।]


মহানবী (ﷺ) যেভাবে বলেছিলেন, ঠিক সেভাবেই ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)র শাহাদাত হয় কুফা নগরীর কাছে ইরাকের কারবালায়, যে জায়গাটি আত্ তাফফ নামেও পরিচিত। এই হাদীসে তাঁর আরেকটি বিস্ময়কর মো’জেযা হলো এই যে, হযরত উম্মে সালামা (رضي الله عنه) ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه)র শাহাদাতের পরও জীবিত থাকবেন তা এতে প্রকাশিত হয়েছিল; আর বাস্তবে তাই ঘটেছিল।

 
Top