ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)'র ওফাতঃ 


খলীফা আবু জাফর মনসুর ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)কে প্রধান বিচারপতির পদ গ্রহণ করতে বললে তিনি অসম্মতি প্রকাশ করেন। কিন্তু খলীফার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করাতে তিনি তাঁর উপর রাগ করে শপথ করলেন যে, এই পদ গ্রহণ না করলে আপনাকে বন্দী করা হবে এবং অপদস্ত করা হবে। এতেও তিনি সম্মতি প্রকাশ না করলে তাঁকে জেল খানায় বন্দী করা হয় এবং প্রতিদিন বাইরে এনে দশটি করে বেত্রাঘাত করা হয়। এভাবে দশদিন যাবৎ লাঞ্ছিত হওয়ার পর আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন এবং এরপর পঞ্চম দিন ইন্তেকাল করেন।

কেউ কেউ বলেন-তাঁকে খাবারে বিষ দেয়া হয়েছিল। তিনি তা খেতে অস্বীকার করে বলেন, আমি জানি যে, এখানে কি দেওয়া হয়েছে। আমি এ খাবার খেয়ে আমার হত্যাকারীর হত্যায় সহযোগী হতে চাই না। সুতরাং আমি তা পানাহার করবোনা। কিন্তু জোর জবরদস্তী তা তাঁর মুখে ঢেলে দিলে তিনি সিজদা অবস্থায় ইন্তেকাল করেন।

কেউ কেউ বলেছেন পদ গ্রহণ না করার কারণে খলীফা তাঁকে এমন মর্মান্তিকভাবে শহীদ করেননি বরং এর কারণ হলো ইমাম সাহেবের প্রতি প্রতিহিংসা পোষণকারী কিছু দুশমনে খলীফাকে বলেছে যে, ইমাম সাহেব বসরায় খলীফার বিরুদ্ধ অবলম্বনকারী ইব্রাহীম ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হাসান ইবনে হোসাইন ইবনে আলী (رحمة الله)কে সহযোগীতা ও সাহায্য করেছেন। এতে খলীফা ভীত ও ক্রোধান্বিত হয়ে তাঁকে বাগদাদে ডেকে আনেন। বিনা দোষে বা বিনা কারণে হত্যা করার দুঃসাহস ছিল না তার। তাই কাযীর পদ গ্রহণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কেননা খলীফা জানতেন যে, তিনি কখনো এই পদ গ্রহণ করবেন না।

তিনি ১৫০ হিজরী সনে ৭০ বছর বয়সে রজব অথবা শা’বান মাসে ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহি রাজেউন) মৃত্যুকালে হাম্মাদ নামী তাঁর এক সন্তান ছিল।

তাঁর ইন্তেকালের পর বাগদাদের কাযী হাসান ইবনে আম্মার তাঁকে গোসল দেন এবং আবু রজা আব্দুল্লাহ ইবনে ওয়াকেদ পানি ঢালেন। গোসল দেওয়া শেষ হতে না হতেই বাগদাদের চতুর্দিক থেকে লোকে লোকারণ্য হয়ে গেল। তাঁর জানাযায় প্রথম জামাতে পঞ্চাশ হাজারের অধিক লোক অংশগ্রহণ করে। এরপর আরো লোকজন আসতে থাকে। ফলে মোট ছয়বার জানাযার নামায পড়তে হয়েছিল। সর্বশেষ জানাযায় তাঁর পুত্র হযরত হাম্মাদ (رحمة الله) ইমামতি করেন। অবশেষে অধিক লোকের কারণে আসরের পরেও দাফন কাজ সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়নি। দাফনের পরেও বিশদিন পর্যন্ত লোকজন তাঁর কবরে জানাযার নামায পড়েছেন। তিনি অসিয়ত করেছিলেন যে, তাঁকে যেন ‘খিযরান’ নামক কবরস্থানের পূর্বদিকে দাফন করা হয়। কেননা তাঁর মতে সেখানকার ভূমি পাক-পবিত্র এবং গযবমুক্ত ছিল। এই অসিয়ত অনুযায়ী ঐ কবরস্থানের পূর্ব পার্শ্বে তাঁকে দাফন করা হয়। 

➥  ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) (৯৭৩হিঃ), আল খায়রাতুল হিসান, উর্দু পৃষ্ঠাঃ  ১৬১-১৬৪, আরবী, পৃষ্ঠাঃ  ১৪৫


 
Top