সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (رضي الله عنه)'র আক্বিদা


নামাযের পর উঁচু স্বরে যিকির করাঃ- 


❏সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে, 


كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَلَّمَ مِنْ صَلَاتِهِ يَقُولُ بِصَوْتِهِ الْأَعْلَى


‘রাসূল (ﷺ) যখন নামাযের সালাম ফিরাতেন তখন তিনি উচ্চ কণ্ঠে এই দো‘আ পড়তেন।’


لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّه لَا إِلَه إِلَّا الله وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدّين وَلَو كره الْكَافِرُونَ


লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলক ওয়া লাহুল হামদ ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর। লা হাওলা ওয়ালা-কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা-না‘বুদু ইল্লা ইয়্যাহু লাহুন নি‘মাত ওয়া লাহুল ফাদলু ওয়া লাহুল সানাউল হাসানু লা-ইলাহা ইল্লাহু মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা ওয়া লাও কারিহাল কা-ফিরুন।’’  ২১২

{২১২. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৪১৫ পৃ. হা/৫৯৪, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৩০৪ পৃ. হা/৯৬৩, সুনানে আবি দাউদ, ২/৮২ পৃ. হা/১৫০৬}


আক্বিদা

নামাযান্তে উচ্চস্বরে যিক্র করা নাবী কারিম, নূরে মুজাস্সাম (ﷺ) হতে প্রমাণিত। আর সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) এর উপর আমল করতেন। 


❏শায়খুল মুহাদ্দিসিন আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-


اس حديث صريح است درجهر بذكر كہ آنحضرت بآواز  بلند خواند


-‘‘এই হাদিসটি স্পষ্ট যে, রাসূল (ﷺ) উচ্চস্বরে যিক্র করা পছন্দ করতেন।’’  ২১৩

{২১৩. আশ‘আতুল লুমআত, ফার্সী, ১ম খণ্ড, পৃ: ৪১৯।}







ফরজ নামাযের পর দো‘আয় মশগুল হওয়াঃ- ২১৪

{২১৪. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}


❏ইমাম তাবরানী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ الْحَسَنِ الْعَطَّارُ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو كَامِلٍ الْجَحْدَرِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا الْفُضَيْلُ بْنُ سُلَيْمَانَ، قَالَ: حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ أَبِي يَحْيَى، قَالَ: رَأَيْتُ عَبْدَ اللهِ بْنَ الزُّبَيْرِ وَرَأَى رَجُلًا رَافِعًا يَدَيْهِ بِدَعَوَاتٍ قَبْلَ أَنْ يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِهِ، فَلَمَّا فَرَغَ مِنْهَا، قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لَمْ يَكُنْ يَرْفَعْ يَدَيْهِ حَتَّى يَفْرُغَ مِنْ صَلَاتِهِ


-“তাবেয়ী মুহাম্মদ ইবনে আবী ইয়াহইয়া (رحمة الله) বলেন, আমি আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (رضي الله عنه) কে দেখেছি যে, তিনি এক ব্যক্তির নামাজ থেকে বের হওয়ার পূর্বে হাত উঠিয়ে দোয়া করতে দেখেন। যখন ঐ লোক নামায থেকে বের হলেন তখন বললেন: নিশ্চয় আল্লাহর রাসূল (ﷺ) নামায থেকে বের হয়ে হাঁত তোলে দোয়া করতেন।” ২১৫

{২১৫.ইমাম তাবারানী, মু’জামুল কাবীর, ১৩/১২৯ পৃ. হাদিস/৩২৪ ও হা/১৪৯০৭; ইবনে কাসির, জামেউল মাসানিদ ওয়াস সুনান, হাদিস/৬৩৯৪; মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ২/১০০ পৃ:; হাইছামী, মাযমাউয জাওয়াইদ, ১০/১৬৯ পৃ. হাদিস/১৭৩৪৫}


এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম নুরুদ্দীন হাইছামী (رحمة الله) বলেন- وَرِجَالُهُ ثِقَاتٌ -“এর সকল বর্ণনাকারীগণ বিশ্বস্ত।”

(ইমাম হাইসামী, মাজমাউয-যাওয়াইদ, ১০/১৬৯পৃ. হাদিস/১৭৩৪৫)।


আক্বিদা

এ হাদিস থেকে প্রমাণ হলো যে, রাসূল (ﷺ) ফরজ নামাযের পর দু‘হাত তুলে দোয়া করেছেন এটাই সাহাবায়ে কিরামের আক্বিদা, তাই বর্তমানে যারা এ আমলের বিরোধীতা করছেন তাদের আক্বিদা ও বিশ্বাস রাসূল ও সাহাবীদের বিরোধী। ফরজে নামাযের পর দু‘আ করলে তা কবুল হওয়ার গ্যারান্টি ১০০%।


❏হযরত আবু উমামা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন-

قِيلَ يَا رَسُولَ اللهِ: أَيُّ الدُّعَاءِ أَسْمَعُ؟ قَالَ: جَوْفَ اللَّيْلِ الآخِرِ، وَدُبُرَ الصَّلَوَاتِ الْمَكْتُوبَاتِ


-‘‘রাসূল (ﷺ)-এর কাছে জানতে চাওয়া হল, কোন সময়ের দু‘আ সবচেয়ে বেশি কবুল হয়? রাসূল (ﷺ) উত্তরে বলেন, রাতের শেষ অংশে (তাহাজ্জুদের সময়) এবং ফরয নামাযের পর।’’ 

(ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান, ৫/৫২৬ পৃ. হা/৩৪৯৯, ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৯/৪৭ পৃ. হা/৯৮৫৬)





নামাযে তাশাহুদে শুধু একবারেই আঙুল ইশারা করাঃ- ২১৬

{২১৬. সম্পাদক কর্তৃক সংযোজিত।}


❏ইমাম আবু দাউদ, ইমাম নাসাঈসহ আরও অনেকে সংকলন করেছেন-


عَنْ عَامِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ الزُّبَيْرِ، أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُشِيرُ بِأُصْبُعِهِ إِذَا دَعَا، وَلَا يُحَرِّكُهَا


-‘‘হযরত আমের ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে যুবায়ের (رحمة الله) তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে জুবাইর (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) যখন (তাশাহহুদে) দোয়া করতেন তখন আঙ্গুল দ্বারা (একবার) ইশারা করতেন এবং কিন্তু তিনি আঙুল (বাড়বাড়) নাড়াতেন না।’’ ২১৭

{২১৭. ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ৩/৩৭পৃ. হা/১২৭০ এবং আস-সুনানিল কোবরা, ২/৬৫পৃ. হা/১১৯৪,  ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/১৭৮পৃ. হা/৬৭৫ }


❏আল্লামা সান‘আনী (১১৮২হি.) এই হাদিসের সনদ প্রসঙ্গে লিখেন- قال النووي: سنده صحيح. -‘‘ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, এই সনদটি সহীহ।’’  ২১৮

{২১৮. ইমাম নববী, খুলাছাতুল আহকাম, ১/৪২৭পৃ. হা/১৩৮৯, ইমাম সান‘আনী, তানভীর শরহুল জামেউস সগীর, ৮/৫৭৭পৃ. হা/৭০৩৮ }


আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله)ও এমনটি উল্লেখ করেছেন। ২১৯ 

{২১৯. ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ২/৭৩৫পৃ. হা/৯১২ }


আল্লামা মানাভী (رحمة الله)ও এমনটি উল্লেখ করেছেন। ২২০

{২২০. মানাভী, ফয়যুল কাদীর, ৫/২২১পৃ. হা/৭০৫৬}


আল্লামা ইবনুল মুলাক্কীন (رحمة الله) বলেন- هَذَا الحَدِيث صَحِيح -‘‘এই হাদিসটি সহীহ।’’  ২২১

{২২১. ইবনুল মুলাক্কীন, বাদরুল মুনীর, ৪/১১পৃ.}


❏আহলে হাদিস আব্দুর রহমান মোবারকপুরী এই হাদিস উল্লেখ করে লিখেছেন-


قَالَ النَّوَوِيُّ إِسْنَادُهُ صَحِيحٌ


-‘‘ইমাম নববী (رحمة الله) বলেন, সনদটি সহীহ।’’ ২২২

{২২২. মোবারকপুরী, তুহফাতুল আহওয়াজী, ২/১৬০পৃ. হা/২৯৫}


আক্বিদা

এ হাদিস থেকে বুঝা গেল সাহাবায়ে কেরামগণ রাসূল (ﷺ) থেকে তাশাহুদে দোয়া পাঠের সময় একবার ইশারা করাই শিখেছেন, আর এটাই ইমাম আযম আবু হানিফা (رحمة الله) এর গবেষণামূলক মত। ২২৩

{২২৩. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) বলেন-

قَالَ ابْنُ الْمَلَكِ: يَدُلُّ عَلَى أَنَّهُ لَا يُحَرِّكُ الْأُصْبُعَ إِذَا رَفَعَهَا لِلْإِشَارَةِ، وَعَلَيْهِ أَبُو حَنِيفَةَ

-‘‘ইমাম ইবনে মালক (رحمة الله) বলেন, হানাফী মাযহাব এই হাদিস থেকেই দলিল নিয়েছেন যে তাশাহহুদে শুধু আঙ্গুল ইশারা করবে, কিন্তু আঙ্গুল নাড়াবে না।’’ (ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ২/৭৩৫পৃ. হা/৯১২)}

 
Top