বিষয় নং- ১৩:  নামায বেহেস্তের চাবি।


আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানী উক্ত হাদিসটিকে দ্বঈফ বলেছেন। বাংলাদেশে তার উত্তরসূরি মুযাফফর বিন মুহসিন তার লিখিত ‘জাল হাদীছের কবলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর ছালাত’ গ্রন্থের ৭১ পৃষ্ঠায় আলবানীর ভুল তাহকীক দিয়ে দলিল পেশ করেছেন যে এ হাদিসটি যঈফ। হাদিসটির একাধিক সূত্র রয়েছে, আমি চেষ্টা করবো প্রত্যেকটি সূত্র নিয়েই এ আলোকপাত করার।



প্রথম হাদিস:


❏ ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) সংকলন করেন-


حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرٍ مُحَمَّدُ بْنُ زَنْجَوَيْهِ الْبَغْدَادِيُّ، وَغَيْرُ وَاحِدٍ قَالُوا: حَدَّثَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا سُلَيْمَانُ بْنُ قَرْمٍ، عَنْ أَبِي يَحْيَى الْقَتَّاتِ، عَنْ مُجَاهِدٍ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مِفْتَاحُ الْجَنَّةِ الصَّلاَةُ، وَمِفْتَاحُ الصَّلاَةِ الْوُضُوءُ.


-‘‘হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, জান্নাতের চাবি হল সালাত আর সালাতের চাবিকাঠি হল পবিত্রতা।’’  ১৪৭

➥{আহমদ : আল-মুসনাদ : ২৩/২৯ পৃ. হা/১৪৬৬২, উকাইলী,  দ্বঈফাউল কাবীর,  ২/১৩৭ পৃ. আদি,  আল-কামেল, ৩/১১০৭ পৃ. সুনানে তিরমিযি, ১/৫৫পৃ. হাদিস,  ৪, বায়হাকী : শুয়াবুল ঈমান : ৩/৪ পৃ. কিতাবুত ত্বাহারাত, হা/২৭১১, খতীব তিবরিযী : মিশকাতুল মাসাবীহ : ১/৬২ পৃ. হা/২৯৪, কিতাবুত ত্বাহারাত,  সুয়ূতি : জামেউস সগীর : ২/৫৯৯ পৃ. হা/৮১৯২, সুয়ূতি : জামেউল আহা/,  আবু দাউদ তায়লসী : আল-মুসনাদ : ২/৩৭০ পৃ. হা/১৮৯৯, তিরমিযী : আস-সুনান : ১/৪ পৃ. কিতাবুত ত্বাহারাত, হা/৪, আলবানী : দ্বঈফু মিশকাত : হা/২৯৪, ইমাম ইবনে আদি, আল-কামিল, ৪/২৪১ পৃ. ক্রমিক. ৭৩৫}



সনদ পর্যালোচনা:


ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) এটি সংকলন করে একে ‘হাসান’ বলেছেন। ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله)ও তাঁর তাহকীক মেনে নিয়ে ‘হাসান’ বা গ্রহণযোগ্য বলেছেন। 


❏ আহলে হাদিস মুযাফফর বিন মুহসিন তার গ্রন্থের ৭১ পৃষ্ঠায় এ সনদ বিষয়ে লিখেছেন-‘‘উক্ত সনদে দু’জন দুর্বল রাবী আছে। 

(ক) সুলায়মান বিন করম ও 

(খ) ‘আবু ইয়াহ্ইয়া ক্বাত্তাত’।’’ 

আলবানী ও সে ছাড়াও আরও অনেক আহলে হাদিস এক হাদিসকে যঈফ প্রমাণের অপচেষ্টা চালিয়ে থাকেন। 



নিষ্পত্তি:


প্রথম রাবী: রাবী ‘সুলাইমানের’ বিষয়ে ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


وقال محمد بن عوف عن أحمد لا أرى به بأسا


-‘‘মুহাদ্দিস মুহাম্মদ বিন আওফ ইমাম আহমদ (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তার সম্পর্কে বলেন, আমি তার হাদিস গ্রহণ করতে কোনো অসুবিধা দেখছি না।’’ 


(ইবনে হাজার, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/২১৩ পৃ. ক্রমিক.৩৬৬)


❏ তিনি আরও লিখেন-


وقال ابن عدي له أحاديث حسان


-‘‘ইবনে আদী (رحمة الله) বলেন, তার হাদিসের মধ্যে ‘হাসান’ও রয়েছে।’’


(ইবনে হাজার, তাহযিবুত তাহযিব, ৪/২১৩ পৃ. ক্রমিক.৩৬৬) 


সব মিলিয়ে তার হাদিসের মান ‘হাসান’। অপরদিকে সকল আসমাউর রিজালবিদগণ একমত যে সহীহ বুখারীতে তার হাদিস তালীক সূত্রে ও মুসলিমে সরাসরিভাবে তার হাদিস বর্ণিত। 


(ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী, তাক্বরিবুত-তাহযিব, ১/২৫৩ পৃ., ক্রমিক. ২৬০০)



দ্বিতীয় রাবী: রাবী ‘আবূ ইয়াহ্ইয়া’ সম্পর্কে ইমাম ইবনে আদি (رحمة الله) উল্লেখ করেন-


حَدَّثَنَا مُحَمد بْنُ عَلِيٍّ، حَدَّثَنا عُثْمَانُ بْنُ سَعِيد، قلتُ ليحيى بْن مَعِين: فأبو يَحْيى القتات كيف هو؟ فَقال: ثِقةٌ.


-‘‘উসমান ইবনে সাঈদ বলেন, আমি ইমাম ইয়াহইয়া ইবনে মাঈন (رحمة الله) কে রাবী ‘আবু ইয়াহইয়া কাত্তান’ কেমন জিজ্ঞেস করলে অতঃপর  তিনি বলেন, সে সিকাহ বা বিশ্বস্ত।’’ 


(ইমাম ইবনে আদি, আল-কামিল ফি দ্বুআফাউর রিজাল, ৪/২১১ পৃ. ক্রমিক. ৭২৯) 



মুহাদ্দিসদের সিদ্ধান্ত:


১. ইমাম তিরমিযি (رحمة الله) এটি সংকলন করে একে ‘হাসান’ বলেছেন। 


২. আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ হাদিস প্রসঙ্গে লিখেন-


قَالَ ابْنُ حَجَرٍ بِسَنَدٍ حَسَنٍ


-‘‘ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) বলেন, সনদটি ‘হাসান’ পর্যায়ের।’’  


(মোল্লা আলী ক্বারী, মেরকাত, ১/৩৫৩ পৃ. হা/২৯৪) 


৩. আল্লামা মানাভী (رحمة الله) লিখেন- واسناده حسن -‘‘ সনদটি ‘হাসান’ পর্যায়ের।’’ 


(মানাভী, তাইসীর, ২/৩৭৭ পৃ. এবং ফয়যুল কাদীর, ৫/৫২৬ পৃ. হা/৮১৯২)



দ্বিতীয় হাদিস:


❏ এ হাদিসটির আরও একটি সনদ পাওয়া যায় যা ইমাম দায়লামী হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে এভাবে বর্ণনা করেছেন 


الدُّعَاء مِفْتَاح الرَّحْمَة وَالْوُضُوء مِفْتَاح الصَّلَاة وَالصَّلَاة مِفْتَاح الْجنَّة


-‘‘দোয়া হল রহমতের চাবি, ওযু হল নামাযের চাবি আর নামায হলো জান্নাতের চাবি।’’  ১৪৮

➥{দায়লামী : আল-ফিরদাউস: ২/২২৪ পৃ. হাদিস:২০৮৬, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল ২/৬২ পৃ. হা/৩১১৬, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ২/১০৯ পৃ. হা/৬৩৮৮}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ এ সনদটি প্রসঙ্গে আল্লামা মানাভী (رحمة الله) লিখেন- بِإِسْنَاد ضَعِيف -‘‘এ সনদটি যঈফ।’’ 


(মানাভী, তাইসীর, ২/১১ পৃ. এবং ফয়যুল ক্বাদীর, ৩/৫৪০ পৃ. হা/৪২৫৭) 


❏ আল্লামা সান‘আনী (رحمة الله) বলেন- بإسناد ضعيف. -‘‘এ সনদটি যঈফ।’’ 


(সান‘আনী, তানভীর, ৬/১২৮ পৃ.) 


তাই এ সনদটি উপরের সূত্র দ্বারা শক্তিশালী প্রমাণিত হয়।

 
Top