বিষয় নং- ১১: সূরা ইখলাস তিনবার পড়লে সম্পূর্ণ কোরআন পড়ার সাওয়াব।


বর্তমান আহলে হাদিস শায়খগণ বক্তৃতায় বলেন থাকেন উক্ত হাদিসটি নাকি জাল বা বানোয়াট, অথচ জাল কোন কারণে তার কিছুই উল্লেখ করেন না। আবার অনেকে আহলে হাদিস নাসিরুদ্দিন আলবানীর বক্তব্য দিয়ে জাল বলে থাকেন, কেননা আলবানী তার ‘সিলসিলাতুল আহাদিসিদ দ্বঈফাহ’ গ্রন্থের ৪৬৩৪ নং হাদিসের আলোচনায় এ বিষয়ক হাদিসকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। তবে হাদিসটির অনেকগুলো সূত্র রয়েছে, আমি প্রত্যেকটি সূত্র সম্পর্কে আলোকপাত করার চেষ্টা করবো, ইন শা আল্লাহ। 



১ম সূত্র


عَن أبي مَسْعُود الْأنْصَارِيّ رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم: مَنْ قَرَأَ [قُلْ هُوَ الله أَحَدٌ] فَكَأَنَّمَا قرأ ثلث القرآن– 


-‘‘হযরত আবূ মাসউদ আনসারী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ ফরমান, যে ব্যক্তি একবার সূরা ইখলাস পড়বে সে যেন কুরআনের এক তৃতীয়াংশ পাঠ করলো।’’  ১২০

➥{ইমাম নাসায়ী : আস-সুনানুল কোবরা : হা/১০৫২৮, ইমাম আহমদ : আল-মুসনাদ :, সুয়ূতি : জামেউস সগীর : ২/৩৪৪ পৃ. হা/৮৯৪৪, আহলে হাদিস আলবানী : সহীহুল জামে : হা/৬৪৭৩, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৭/২৫৫ পৃ. হা/৭০৯,}



সনদ পর্যালোচনা: 


হাদিসটিকে ইমাম জালালুদ্দিন সুয়ূতি  সহীহ বলেছেন। এমনকি আহলে হাদিস নাসিরুদ্দীন আলবানীও তার গ্রন্থে হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। আমার বক্তব্য হলো এ হাদিসটি মুতাওয়াতির পর্যায়ের।



২য় সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।  ১২১

➥{ইমাম দায়লামী, আল-ফিরদাউস, ৩/২১৫ পৃ. হা/৬৪২০, সুনানে ইবনে মাজাহ, ২/১২৪৪ পৃ. হাদিস,  ৩৭৮৭, আলবানী পর্যন্ত এ গ্রন্থের টিকায় হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। মুসনাদে বায্যার, ১৭/১৫৬ পৃ. হা/৯৭৬৪}



৩য় সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত আবি সাঈদ খুদরী (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।  ১২২

➥{ইমাম মালেক,  আল-মুয়াত্তা, ২/২৯০ পৃ. হা/৭০৮, মুসনাদে আহমদ, ১৭/৪০৭ পৃ. হা/১১৩০৭, সুনানে আবু দাউদ, ২/৭২ পৃ. হাদিস,  ১৪৬১, সুনানে তিরমিযি, ৫/১৮ পৃ. হা/২৮৯৯, তিরমিযি বলেন হাদিসটি হাসান, সহীহ,  নাসাঈ, সুনানে কোবরা, ২/১৯ পৃ. হাদিস,  ১০৬৯, ও ২/১৯ পৃ. হা/১০৭০, ও ৭/২৬৩ পৃ. হাদিস,  ৭৯৭৫,}



৪র্থ সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।  ১২৩

➥{ইমাম আবু দাউদ তায়লসী, আল-মুসনাদ, ২/১২ পৃ. হা/৬৫১, মুসনাদে আহমদ, ২৮/৩৩ পৃ. হাদিস,  ১৭১০৬, সুনানে ইবনে মাজাহ, ২/১২৪৫ পৃ. হাদিস,  ৩৭৮৯, মুসনাদে বায্যার, ৫/২৪৩ পৃ. হাদিস,  ১৮৫৬, ও ৫/২৫১ পৃ. হা/১৮৬৬, নাসাঈ, সুনানে কোবরা, ৯/২৫১পৃ. হাদিস,  ১০৪৪১  ও ৯/২৫১ পৃ. হা/১০৪৪২}



৫ম সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত আবু দারদা (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।  ১২৪

➥{ইমাম আবু দাউদ তায়লসী, আল-মুসনাদ, ২/৩২০ পৃ. হা/১০৬৭, নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৯/২৫৯পৃ. হা/১০৪৬৯}



৬ষ্ঠ সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত আমর বিন মায়মুন আওদী (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।  ১২৫

➥{ইমাম আবদুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ,  ৩/৩৭১ পৃ. হা/৬০০৩}



৭ম সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত হুমাঈদ বিন আবদুর (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।  ১২৬

➥{ইমাম আবদুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ,  ৩/৩৭১ পৃ. হা/৬০০৪}



৮ম সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত আইয়ুব আনসারী (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।  ১২৭

➥{ইমাম সাঈদ বিন মানসুর, তাফসীরে সাঈদ বিন মানসুর, ২/২৭৭ পৃ. হা/৭৪, সুনানে তিরমিযি, ৫/১৭ পৃ. হা/২৮৯৬, নাসাঈ, আস্-সুনান, ৯/৫১ পৃ. হা/৯৮৬৮,}



৯ম সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।  ১২৮

➥{সুনানে ইবনে মাজাহ, ২/১২৪৪ পৃ. হা/৩৭৮৮, মুসনাদে বায্যার,  ১৪/৯৬ পৃ. হা/৭৫৮১, মুসনাদে আবু ই‘য়ালা, ৭/১৫০ পৃ. হা/৪১১৮,  তাবরানী,  মু‘জামুল আওসাত, ২/২৯৮ পৃ. হা/২০৩৫}



১০ম সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।   ১২৯

➥{সুনানে তিরমিযি,  ৫/১৬ পৃ. হা/২৮৯৪, তাবরানী,  মু‘জামুল আওসাত,  ৫/৩২ পৃ. হা/৪৫৯৪,}



১১তম সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত আয়েশা বিনতে সা‘দ তাঁর পিতা (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।   ১৩০

➥{মুুসনাদে বায্যার,  ৪/৪৭ পৃ. হা/১২১১}



১২তম সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত উবাই ইবনে কা‘ব (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।  ১৩১

➥{নাসাঈ,  আস-সুনানুল কোবরা,  ৯/২৫৪ পৃ. হা/১০৪৫৩  ও ৯/২৫৪ পৃ. হা/১০৪৫৪,}



১৩ম সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত উম্মে কুলসুম বিনতে উকবা (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।  ১৩২

➥{ইমাম নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা,  ৯/২৫৭ পৃ. হা/১০৪৬৪,  তাবরানী,  মু‘জামুল আওসাত, ৮/২৫৬ পৃ. হা/৮৫৬২}



১৪তম সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত আবদুর রহমান বিন আউফ (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।  ১৩৩

➥{ইমাম নাসাঈ,  আস-সুনানুল কোবরা,  ৯/২৫৭ পৃ. হা/১০৪৬৫}



১৫তম সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে মুরসাল সূত্রে হযরত ইবরাহিম নাখঈ (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।   ১৩৪

➥{তাবরানী,  মু‘জামুল আওসাত,  ১/৬৬ পৃ. হা/১৮৬}



১৬তম সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।  ১৩৫

➥{নাসাঈ, আস-সুনানুল কোবরা, ৯/২৫৪ পৃ. হা/১০৪৫৩ ও ৯/২৫৪ পৃ. হা/১০৪৫৪, তাবরানী,  মু‘জামুল কাবীর,  ১২/৪০৫ পৃ. হা/১৩৪৯৩, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৭/২৫৫ পৃ. হা/৭০৯}



১৭তম সূত্র:


❏ এ হাদিসটি এ শব্দে হযরত মু‘য়ায বিন যাবাল (رضي الله عنه) থেকেও আরেকটি সূত্র বর্ণিত আছে।  ১৩৬ 

➥{তাবরানী,  মু‘জামুল কাবীর, ২০/১১২ পৃ. হাদিস,  ২২৩}


তাই বুঝা গেল হাদিসটি মুতাওয়াতির আর সেটাকে অস্বীকার নিঃসন্দেহে কুফুরী।


উপরের হাদিসগুলো থেকে বুঝা গেল একবার পড়লে কুরআন তিন ভাগের একভাগ পড়া হয় আর তিনবার পড়া হলে সম্পূর্ণ কোরআন পড়ার সাওয়াব পাওয়া যায়।


❏ অপরদিকে ইমাম উকাইলী (رحمة الله) তার হাদিস গ্রন্থে এক সাথে তিনবার পড়া প্রসঙ্গে একটি দুর্বল সনদের হাদিস সংকলন করেছেন এভাবে -


مُحَمَّدُ بْنُ مَرْوَانَ الْقُرَشِيُّ قَالَ: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ عَمْرٍو، وَأَبُو سُفْيَانَ الْغَنَوِيُّ قَالَ قَالَا: حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ الْحَارِثِ الْغَسَّانِيُّ قَالَ: حَدَّثَتْنَا سَاكِنَةُ بِنْتُ الْجَعْدِ، قَالَ قَالَتْ: سَمِعْتُ رَجَاءَ الْغَنَوِيَّ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَرَأَ قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٍ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَكَأَنَّمَا قَرَأَ الْقُرْآنَ أَجْمَعَ


-‘‘হযরত রাযায়া গানাভী (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।  রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন : যে ব্যক্তি সূরা ইখলাস তিনবার পাঠ করবে সে যেন সম্পূর্ন কোরআন তেলাওয়াত করলো বা কোরআন তেলাওয়াতের সাওয়াব পেলো।’’  ১৩৭

➥{ইমাম উকাইলী, দ্বঈফাউল কাবীর, ১/১২৫পৃ. ক্রমিক.১৫২, সুয়ূতি : জামেউস সগীর : ২/৫৪৬  হা/৮৯৪৫ ও জামিউল আহাদিস, ২১/২৬৬ পৃ. হা/২৩৪৬৭, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, ৩/২১৬ পৃ. হা/১২১৯১, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১/৫৯৬ পৃ. হাদিস,  ২৭২৫, ইরাকী, তাখরীযে ইহইয়াউল উলূম, ৫/২৩৬৪ পৃ. আলবানী, দ্বঈফাহ,  ১/১২৫৫০ পৃ. হা/১২৫৫০,  ও দ্বঈফু জামেউস সগীর, হা/৮৯৪৫।}



সনদ পর্যালোচনা:


❏ এ হাদিসের সনদটিকে ইমাম সুয়ূতী (رحمة الله) দ্বঈফ বলেছেন, তার কারণ ইমাম উকাইলী (رحمة الله) রাবী গাস্সানী সম্পর্কে লিখেছেন- فِيهِ نَظَرٌ -‘‘তার বিষয়ে আপত্তি রয়েছে।’’ 


(ইমাম উকাইলী, দ্বঈফাউল কাবীর, ১/১২৫ পৃ. ক্রমিক.১৫২) 


❏ ইমাম ইবনে আদী (رحمة الله) উল্লেখ করেছেন- فِيهِ نَظَرٌ، قَالَهُ الْبُخَارِيُّ. -‘‘তার বিষয়ে আপত্তি রয়েছে, এমনটি ইমাম বুখারী (رحمة الله) বলেছেন।’’ 


(ইবনে আদী, আল-কামিল, ১/২৮৩ পৃ.) 


আমি গ্রন্থের শুরুতে আলোচনা করেছি যে দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য, অপরদিকে অনেকগুলো সূত্র দ্বারা শাওয়াহেদ থাকায় হাদিসটির মূল বিষয় বস্তু সঠিক বলে প্রমাণিত।

 
Top