জাহান্নামি নারীর পরিচয়


নারী যেমন স্বল্প আমলের মাধ্যমেই জান্নাতি হতে পারে, তেমনি কতিপয় আচরণের দ্বারা সে জাহান্নামি হয়ে থাকে। এ প্রসঙ্গে আল্লামা হাফিজ শামসুদ্দীন যাহাবী (رحمة الله) তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ‘আল কাবায়ির’ -এ একটি বিখ্যাত হাদীস সংকলন করেছেন। হাদীসটি হলো- একবার হযরত আলী  (رضي الله عنه) এবং হযরত ফাতেমা  (رضي الله عنه) হযরত রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর সাথে সাক্ষাতের জন্য তাঁর ঘরে গেলেন। হযরত আলী  (رضي الله عنه) বলেন, আমরা গিয়ে মহানবী কে ক্রন্দনরত অবস্থায় পেলাম। এমনকি নবী করিম (ﷺ)-র কান্নায় অবিরাম অশ্রু ঝরছিল। আমি আরজ করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনি এত কাঁদছেন কেন? উত্তরে নবী করিম (ﷺ)ইরশাদ করলেন, মেরাজের রাতে আমি মহিলাদেরকে দোযখের বিভিন্ন রকম শাস্তিতে নিপতিত দেখেছি। সে শাস্তির ভয়ারহতায় আমি কাঁদছি। অতঃপর মহানবী (ﷺ) ইরশাদ করলেন, 


প্রথম মহিলাকে দেখলাম, জাহান্নামে তাকে চুল দ্বারা ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে এবং তার মাথার মগজ পাতিলের ফুটন্ত পানির ন্যায় টগবগ করছে।


দ্বিতীয় মহিলাকে তার জিহবা দ্বারা জাহান্নামের ভিতর লটকানো দেখলাম।


তৃতীয় মহিলাকে দেখলাম, নিজ স্তন দ্বারা জাহান্নামে ঝুলানো রয়েছে।


চতুর্থ মহিলাকে দেখলাম, তার পদ-যুগল বক্ষের সাথে বাঁধা আর হস্তদ্বয় বাঁধা ললাটের সাথে।


পঞ্চম মহিলাকে দেখতে পেলাম, তার চেহারার অংশ শূকরের মতো, বাকি শরীর গাধার মতো। অথচ সে তো এক মহিলা। আরো দেখতে পেলাম তার সমস্ত শরীরে সাপ, বিচ্ছু জড়ানো।


ষষ্ঠ মহিলাকে দেখতে পেলাম, সে কুকুরের আকৃতিতে বিকৃত হয়ে আছে এবং তার মুখের গহŸরে জ্বলন্ত অগ্নিশিখা দাউদাউ করে প্রবেশ করছে। এমনকি গোটা শরীর ভস্ম হয়ে গুহ্যদ্বার দিয়ে বের হচ্ছে। তাকে আবার আযাবের ফেরেশতারা গুর্জা মেরে পিটাচ্ছে।


অতপর হযরত ফাতেমা  (رضي الله عنه) আরজ করলেন, তাদের ওপর এমন শাস্তির কারণ কী? তাদের এমন কী বদআমল ছিল যে, আপনি তাদেরকে এত ভয়াবহ শাস্তিরত অবস্থায় দেখলেন?


জবাবে নবী করিম (ﷺ)  ইরশাদ করলেন, যে মহিলাকে তার চুলের সাথে ঝুলানো দেখেছি তার শাস্তির কারণ হলো, সে ঘরের বাইরে তথা রাস্তাঘাটে খালি মাথায় চলাফেরা করত। এক কথায় বেগানা তথা গায়রে মাহরাম পুরুষের সামনে চুল না ঢাকা তথা চুলের বেপর্দেগী। মাথার চুলও সতরের অন্তর্ভুক্ত কেননা, মহিলাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত সমস্ত শরীরই সতর। চেহারা, উভয় হাতের কব্জি এবং উভয় পায়ের টাখনু ব্যতীত সমস্ত শরীর সতরের আওতাভুক্ত, যা নামাযের মধ্যে ঢাকা ফরয। এজন্য যদি নামাযের মধ্যে চুলের চার ভাগের একভাগ খুলে যায় এবং তিন তাসবীহ পরিমাণ সময় খোলা থাকে তাহলে নামায হবে না। অথবা এমন পাতলা ওড়না যাতে চুল দেখা যায়, তাতেও নামায হবে না। কেননা পাতলা ওড়নায় পূর্ণাঙ্গ সতর ঢাকা হয়নি। অনেক মহিলা পাতলা ওড়না দু’ভাজ করে মাথায় পরে। তা সত্ত্বেও যদি চুল দেখা যায় বা ওড়না এতো ছোট যে, চুলের খোঁপা বের হয়ে থাকে বা কামিসের হাতা এত ছোট যে, ওড়না পরা সত্ত্বেও হাতের কব্জি পর্যন্ত আবৃত হয় না। তবে এসব ক্ষেত্রে মাসয়ালা হচ্ছে যেসব অঙ্গ নামাযের মধ্যে ঢেকে রাখা ফরয, যদি এসব অঙ্গের চার ভাগের এক ভাগ খুলে যায় এবং তিন তাসবীহ পরিমাণ খোলা থাকে তাহলে নামায হবে না।


কিছু কিছু পর্দা পালনকারিণী মহিলা ঘরের বাইরে তো মাথা ঢেকে রাখার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে থাকে, কিন্তু ঘরের ভেতরে বেগানা আত্মীয়স্বজনের সামনে এর কোনো গুরুত্বই দেয় না। অথচ উক্ত হাদীসের মধ্যে এ বিষয়ে ভয়াবহ শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে।


দ্বিতীয় মহিলা যাকে মহানবী (ﷺ) জিহবার দ্বারা ঝুলন্ত অবস্থায় দেখেছেন, তার সম্পর্কে ইরশাদ করেন যে, সে ঐ মহিলা, যে জিহবা দ্বারা স্বামীকে কষ্ট দিত। 


তৃতীয় মহিলা যাকে মহানবী (ﷺ) স্তনের মাধ্যমে ঝুলানো দেখেছেন, তার সম্পর্কে নবী করিম (ﷺ)  বলেন, সে ঐ মহিলা, যে বিবাহিতা হওয়া সত্ত্বেও পরপুরুষের সাথে অবৈধ সম্পর্ক রাখত।


চতুর্থ মহিলা যাকে রাসূল   তার পদযুগল বক্ষের সাথে আর হস্তদ্বয় ললাটের সাথে বাঁধা অবস্থায় দেখেছেন, তার সম্পর্কে মহানবী (ﷺ) ইরশাদ করেন, সে ঐ মহিলা, যে দুনিয়াতে অপবিত্রতা ও হায়েয নেফাস হতে পবিত্রতার গুরুত্ব দিত না। সাথে সাথে নামাযের গুরুত্ব দিত না; বরং তা নিয়ে উপহাস করত।


প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, স্বামী-স্ত্রী উভয়ের উপর যখন গোসল ফরয হয় তখনই গোসল করে নিতে হবে। যদি ঐ সময় গোসল করতে না পারে তবে কমপক্ষে ইস্তেঞ্জা করে, অযু করে, কুলি করে, হাত মুখ ধৌত করে ঘুমাবে। তাও যদি করা সম্ভব না হয় তাহলে সুবহে সাদেকের পর সূর্য উঠার এতটুকু সময় পূর্বে গোসল করে নিবে, যাতে পুরুষ হলে জামাতের সাথে নামায আদায় করতে পারে। আর মহিলা হলে যাতে সূর্য উঠার পূর্বেই নামায পড়ে নিতে পারে। এটি হলো সর্বনিম্ন স্তর।


যদি কোনো ব্যক্তি অপবিত্র অবস্থায় ঘুমিয়ে যায়, এরপর সূর্যোদয়ের পরে উঠে, তার জন্য উক্ত শাস্তি হবে। কেননা সে গোসল করতে এ পরিমাণ বিলম্ব করেছে যে, যার কারণে তার জামাত ছুটে যায় বা নামায কাযা হয়ে যায়। এটি সম্পূর্ণরূপে নাজায়েয তথা হারাম।


এমনিভাবে হায়েয, নেফাসেরও একই হুকুম। হায়েয, নেফাস বন্ধ হওয়ার পর যদি নামাযের জন্য এতটুকু সময় থাকে, যাতে করে সে গোসল করে নামাযের সময় শেষ হওয়ার পূর্বেই ‘আল্লাহু আকবার’ বলতে পারবে, তবে ঐ ওয়াক্তের নামায ফরয হয়ে যাবে। আর যদি এর থেকে বেশি সময় পাওয়া যায়, তবে তো নামায ফরয হবেই, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাই এ সময় দ্রুত গোসল করে নামায পড়তে হবে। 


উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, কেউ নামাযের ওয়াক্ত শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা পূর্বে হায়েয বন্ধ হওয়ার আলামত পেল। তাহলে তখনই সে গোসল করে নামায আদায় করবে। কিন্তু বর্তমানে মহিলাদের মাঝে এ রোগ ব্যাপক হয়ে পড়েছে যে, তারা ওয়াক্তকে বেপরোয়ার সাথে কাটিয়ে দেয়। যদি এশার পর হায়েয বন্ধ হয় তাহলে সারারাত অববিত্র অবস্থায় কাটিয়ে দেয়। অথচ সুবহে সাদেকের পূর্বে গোসল করে এশার নামায পড়া তার উপর ফরয ছিল। তাই তার করণীয় হবে, তাকে সে সময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা এবং নামায আদায় করা।


ঐ শাস্তির তৃতীয় কারণ, নামায নিয়ে বিদ্রোপ করা এবং নামাযকে সাধারণ জিনিস মনে করা। নামাযের ব্যাপারে বেপরোয়া হওয়া।


বর্তমানে অধিকাংশ পুরুষ মহিলাই এ অবস্থার শিকার। যুবক-যুবতিদের মাঝে আজ নামাযের গুরুত্ব নেই। এমনিভাবে বয়স্ক মহিলাদেরও নামাযের প্রতি কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তাদেরকে যদি নামায সম্পর্কে বলা হয় তাহলে এমনভাবে উত্তর দেয় যে, মনে হয় যেন নামায তাদের নিকট সাধারণ একটি তুচ্ছ বিষয়। অথচ নামায অন্যতম ফরয ইবাদত। আর এ নামাযের মতো এমন ফরয ইবাদত নিয়ে যদি কেউ উপহাস করে তবে তার ঈমান হারানোর আশঙ্কা রয়েছে।


পঞ্চম ঐ মহিলা যাকে মহানবী (ﷺ) এমন অবস্থায় দেখেছেন যে, তার চেহারা শূকরের মতো, বাকি শরীর গাধার মতো আর সাপ, বিচ্ছু তার শরীরে জড়ানো। এ মহিলা সম্পর্কে মহানবী (ﷺ)বলেন যে, সে মিথ্যা কথা বলত এবং চুগলখোরি করত। যার কারণে তার এ শাস্তি।


ষষ্ঠ মহিলা যাকে রাসূলুল্লাহ (ﷺ)কুকুরের আকৃতিতে দেখেছেন এবং তার মুখ দিয়ে আগুন প্রবেশ করছে আর গুহ্যদ্বর দিয়ে বেরুচ্ছে। ওদিকে জাহান্নামের ফেরেশতা গুর্জা দিয়ে পিটাচ্ছে। এই শাস্তির কারণ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন যে, এর কারণ হলো প্রথমত হিংসা, দ্বিতীয়ত উপকারের খোঁটা দেয়া।


হিংসার অর্থ হলো কারো নেয়ামত ও সুখ দেখে দুঃখিত হওয়া ও তার অবসান কামনা করা। আজকাল হিংসা এত বেশি পরিমাণ দেখা যায় যে, একজন অন্যজনের শান্তিতে থাকা, খাওয়া, পরিধান করা ইত্যাদি দেখতে পারে না। মোটকথা, অপরের শান্তি আদৌ সহ্য হয় না। কারো উন্নতি দেখলেই হিংসার আগুনে জ্বলে অঙ্গার হয়ে যায়। যা হারাম এবং মহাপাপ।


উপকারের খোঁটা দেয়া তথা উপকার করার সময় উদ্দেশ্য থাকে যে, আমি তার থেকে এ উপকারের বিনিময় পাব। যখন বিনিময় পায় না তখনই খোঁটা দেয়। যেমন কোনো মহিলার বিবাহ শাদি কিংবা বিপদ আপদে অন্য মহিলা সাহায্য করল। অতঃপর যখন তাকে উপযুক্ত বিনিময় হিসেবে সাহায্য না করে, তখন সে অন্যান্য মহিলার কাছে বলতে থাকে যে, দেখ! আমি তার কত কিছু করলাম। আর সে আমার এমন বিপদের সময় কিছুই করল না। 


এজন্য নারী-পুরুষ উভয়েরই উচিত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কারো উপকার করা। আর আল্লাহ তায়ালার নিকটই প্রতিদানের আশা করা। তাহলে অন্তরে কোনো কষ্ট আসবে না।


 
Top