৯. স্বামীর মানবিক চাহিদা পূরণ করা


স্বামী-স্ত্রীর মানবিক চাহিদা পূরণও বিবাহের একটি উদ্দেশ্য। আর এই মানবিক চাহিদা কার কখন সৃষ্টি হয় তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। এটা সম্পূর্ণ মনস্তাত্বিক ব্যাপার। সুতরাং স্বামী-স্ত্রী প্রত্যেককেই একে অপরের মানবিক চাহিদার প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় নিজের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অপরজনের খাতিরে তা মেনে নিতে হয়। হযরত আবু হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন-

 إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ، فَأَبَتْ أَنْ تَجِيءَ، لَعَنَتْهَا المَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ

যখন স্বামী তার স্ত্রীকে নিজ বিছানায় আসার জন্য ডাকে আর স্ত্রী যদি না যায় তবে ফেরেশতারা ঐ স্ত্রীর উপর সকাল পর্যন্ত অভিশাপ দিতে থাকে। ১২৪

১২৪.ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বুখারী র. (২৫৬হি.) সহীহ বুখারী, খণ্ড, ২ পৃ. ২৮২

 

হযরত তালাক ইবনে আলী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- 

إذا دعا الرجل زوجته لحاجتهفلتأته وإن كانت على التنور 

স্বামী যখন নিজের স্ত্রীকে প্রয়োজনে ডাকে তখন স্ত্রীর উচিত তৎক্ষণাত ডাকে সাড়া দেওয়া। যদিও সে চুলার উপর রান্না বসিয়ে রাখুন না কেন। ১২৫

১২৫.তিরমিযী

 

হযরত যায়েদ বিন আকরাম (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন- 

الْمَرْأَةُ لَا تُؤَدِّي حَقَّ اللهِ عَلَيْهَا حَتَّى تُؤَدِّيَ حَقَّ زَوْجِهَا حَتَّى لَوْ سَأَلَهَا وَهِي عَلَى ظَهْرِ قَتَبٍ لَمْ تَمْنَعْهُ نَفْسَهَا

কোন নারী ততক্ষণ পর্যন্ত পরিপূর্ণরূপে আল্লাহর হক আদায়কারিণী হতে পারবেনা যতক্ষণ পর্যন্ত না স্বামীর হক আদায় করবে। স্বামী যদি তাকে ডাকে আর সে যদি উটের পিঠেও থাকে তবুও নিজেকে স্বামী থেকে বিরত রাখতে পারবেনা। ১২৬

১২৬.তাবরানী আল মু’জাম ও আত তারগীব, খণ্ড. ৩, পৃ.৩৮

 

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم إِذَا دَعَا الرَّجُلُ امْرَأَتَهُ إِلَى فِرَاشِهِ فَلَمْ تَأْتِهِ فَبَاتَ غَضْبَانَ عَلَيْهَا لَعَنَتْهَا الْمَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ :.

হযরত হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) ইরশাদ করেন, স্বামী যখন তার স্ত্রীকে বিছানায় ডাকে, অতঃপর স্ত্রী যদি না যায় আর স্বামী স্ত্রীর উপর অসন্তুষ্ট অবস্থায় রাত যাপন করে তাহলে সকাল হওয়া পর্যন্ত ফেরেশতারা ঐ স্ত্রীকে অভিশাপ করতে থাকে। ১২৭

১২৭.ইমাম মুসলিম র. মুসলিম শরীফ, পৃ. ৪৬৪

 

অপর হাদিসে আছে, আল্লাহ তা’আলা এমন নারীর উপর অসন্তুষ্ট হন যতক্ষণ পর্যন্ত স্বামীকে সন্তুষ্ট না করে। ১২৮

১২৮.ইমাম মুসলিম র. মুসলিম শরীফ, পৃ. ৪৬৪

 

ইমাম নবভী (رحمة الله) উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন- শরঈ কারণ ব্যতীত স্ত্রী স্বামীর বিছানায় না যাওয়া হারাম সাব্যস্ত হওয়া উক্ত হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এমনকি মাসিক হওয়াটা স্বামীর বিছানায় না যাওয়ার কারণ হতে পারে না। কারণ ঐ সময় স্ত্রীর কাপড়ের উপর দিয়ে স্ত্রী থেকে উপকৃত হওয়ার অধিকার আছে। ১২৯

১২৯.শরহে সহীহ মুসলিম, ইমাম নবভী র. (৬৭৭ হি.),হাশিয়ায়ে মুসলিম, পৃ. ৪৬৪

 

عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنِ النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِذَا بَاتَتِ الْمَرْأَةُ هَاجِرَةً فِرَاشَ زَوْجِهَا لَعَنَتْهَا الْمَلاَئِكَةُ حَتَّى تُصْبِحَ 

হযরত হোরায়রা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (ﷺ) ইরশাদ করেন- স্ত্রী যখন স্বামীর বিছানা থেকে পৃথক হয়ে রাত্রী যাপন করে তখন ফেরেশতারা স্ত্রীর উপর অভিশাপ দিতে থাকে, যতক্ষণ না স্ত্রী স্বামীর বিছানায় ফিরে আসে। ১৩০

১৩০.ইমাম মুসলিম র. (২৬১ হি.), সহীহ মুসলিম, পৃ. ৪৬৪


মোট কথা হলো স্বামী-স্ত্রী উভয় সামান্য ব্যাপারে কিংবা বিনা কারণে ঘরের মধ্যে বিছানা পৃথক করা উচিত নয়। কারণ এতে ধীরে ধীরে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে শারিরীক দূরত্বের সাথে সাথে মন ও ভালোবাসার মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি হয়। পক্ষান্তরে যদি এরূপ হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে এবং স্বামি স্ত্রী উভয়ের সম্মতিতে হয় তবে দোষনীয় নয়।

 
Top