পর্দাহীনতা কুমারী মাতৃত্ব ও একক মাতৃত্ব ডেকে আনে


আজকের বিশ্বে কুমারী মাতৃত্বের অন্যতম কারণ হলো পর্দাহীনতা। পশ্চিমা-বিশ্বের তথাকথিত ‘নারী স্বাধীনতা’র আরেক অভিশাপ হলো কুমারী মাতৃত্ব।


বৃটেনে এক জরিপে দেখা যায় যে, ১৯৮২ সালে যেখানে কুমারী-মাতার সংখ্যা ছিল নব্বই হাজার, ১৯৯২ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় দুই লক্ষ পনেরো হাজার। ১৯৯২ সালে জন্ম নেয়া শিশুদের ৩১% ছিল অবিবাহিতা মাতার সন্তান। এই অবিবাহিতা বা কুমারী-মাতাদের মধ্যে আড়াই হাজারের বয়স ১৫ বছরের নিচে। বৈধ বিবাহের মাধ্যমে জন্ম নেয়া শিশুর তুলনায় অবৈধ শিশুর জন্মের হারও দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অপরদিকে অবৈধভাবে জন্ম নেয়া শিশুর দায়ভার অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বর্তাচ্ছে কুমারী-মাতা বা একক-মাতৃত্বের ওপর। নারীর ওপর কুমারী-মাতৃত্বের এই দায়ভার পশ্চিমা-বিশ্বে নারী-নিপীড়নের এক নিষ্ঠুর উদাহরণ।


পর্দাহীনতাকে উসকে দেয় বিজ্ঞাপন ও পর্নোগ্রাফী


তথাকথিত নারী-স্বাধীনতার নামে নারীকে আজ যথেচ্ছভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে বিজ্ঞাপন-সামগ্রী এবং পর্নোগ্রাফীতে। আর এটি উসকে দিচ্ছে পর্দাহীনতা। পণ্যের বিজ্ঞাপনে নারী যেন আজ একটি অপরিহার্য বিষয়। সম্প্রতি ‘দি ওয়াশিংটন পোস্ট’ পত্রিকার বরাত দিয়ে বাংলাদেশের ‘দৈনিক জনকণ্ঠ’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়-


“আমেরিকার মেয়েরা যৌন-আবেদনময়ী হওয়ার পরিবেশেই বড় হচ্ছে। তাদের সামনে যেসব পণ্য ও ছবি তুলে ধরা হচ্ছে তাতে তারা যৌনতার দিকেই আকৃষ্ট হচ্ছে। মার্কিন সংস্কৃতি, বিশেষ করে প্রধান প্রধান প্রচার মাধ্যমে মহিলা ও তরুণীদের যৌন ভোগ্যপণ্য হিসেবে দেখানো হচ্ছে। আমেরিকান সাইকোলজিক্যাল এসোসিয়েশন (এপিএ) ‘টাস্কফোর্স অন দ্যা সেক্সুয়েলাইজেশন অব গার্লস’-এর সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে একথা বলা হয়।


রিপোর্টের প্রণেতাগণ বলেন, টিভি-শো থেকে ম্যাগাজিন এবং মিউজিক-ভিডিও থেকে ইন্টারনেট পর্যন্ত প্রতিটি প্রচার-মাধ্যমেই এই চিত্র দেখা যায়। তাদের মতে, যৌন, রূপ ও মনদান তরুণী ও মহিলাদের এ তিনটি অতি সাধারণ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত। এগুলো হলো পেটের গোলযোগ, আত্মসম্মানহানিবোধ এবং মনমরা ভাব।


আমেরিকান লিজ গুয়া নামের একজন মহিলা বলেন, তিনি তাঁর ৮ বছরের মেয়ের উপযোগী পোশাক খুঁজে পেতে অসুবিধায় রয়েছেন। প্রায়ই সেগুলো খুবই আঁটসাঁট, নয়তো খুবই খাটো। যৌন-আবেদন ফুটিয়ে তোলার জন্যই এ ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়।” ১৯৯

১৯৯.দৈনিক জনকণ্ঠ, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০০৭


এতক্ষণ পর্যন্ত তথাকথিত নারী স্বাধীনতার নামে পশ্চিমা জগতের ঘুণেধরা সমাজের একটি ভয়ঙ্কর চিত্র তুলে ধরা হলো। বাস্তবচিত্র তার চাইতেও আরো অনেক বেশি ভয়াবহ। অর্থনৈতিক চাকচিক্য আর প্রযুক্তিগত উন্নতির আড়ালে তথাকথিত ‘আধুনিক’ বিশ্বের সমাজ ও পারিবারিক ব্যবস্থায় আজ ধস নেমেছে। নারী-স্বাধীনতা ও ব্যক্তি-স্বাধীনতার নামে নারী আজ পদে পদে লাঞ্চিত ও নিগৃহীত হচ্ছে, ব্যবহৃত হচ্ছে ভোগের সামগ্রী হিসেবে। এ থেকে মুক্তির একমাত্র উপায়  ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও জীবন নির্ধারনের সঠিক ও পূর্ণ অনুসরণ এবং পর্দা বিধানকে গ্রহণ করা।


উল্লিখিত সবগুলো পরিণামই ইহলৌকিক পরিণাম। এছাড়া পর্দার বিধান লঙ্ঘন করার কারণে রয়েছে পারলৌকিক পরিণাম। আর এ ইহলৌকিক পরিণামের একটি শেষ বা সীমান্ত রয়েছে। কিন্তু পারলৌকিক পরিণাম বা শাস্তির কোনো শেষ বা সীমান্ত নেই। সুতরাং একটি সুস্থ বিবেক এবং একটি সুস্থ কেয়াস বা চিন্তাশক্তির বিবেচনায় পর্দা অপরিহার্য একটি বিধান বলে প্রমাণিত।


উল্লিখিত জরিপগুলোকে সুস্থ বিবেক ও মানসিকতা নিয়ে বিবেচনা করলে একটিমাত্র কারণই খুঁজে পাওয়া যায়। আর সেটি হলো, পর্দাহীনতার বিস্তৃতি। পরীক্ষামূলকভাবে এবং নিজস্বভাবে যেসব এলাকা বা ব্যক্তিত্ব ইসলামের আলোয় আলোকিত হয়ে পর্দার বিধানকে গ্রহণ করেছেন, তারাই রক্ষা পেয়েছেন এই ভয়াবহতা থেকে।

 
Top