পর্দাহীনতার বৈশ্বিক জরিপ


ইসলামের পর্দাব্যবস্থা সম্পর্কে অজ্ঞতা অথবা এর অন্তর্নিহিত তাৎপর্য না বোঝার কারণে কতিপয় জ্ঞানপাপী একে পশ্চাৎপদতা, সেকেলে, নারীকে শৃঙ্খলিতকরণের পন্থা, উন্নয়নের অন্তরায় এবং নারী ও পুরুষের মধ্যে একটি বৈষম্য সৃষ্টির প্রয়াস বলে আখ্যায়িত করে থাকে। মূলত এই ভুল বুঝাবুঝির জন্য মুসলিম বিশ্বের কতিপয় এলাকায় ইসলামের সত্যিকার শিক্ষার অপপ্রয়োগ আর পাশ্চাত্য গণমাধ্যমের নেতিবাচক ভূমিকাই দায়ী। কিছু গণমাধ্যমের এটা একটা নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে যে, ইসলামের কথা উঠলেই তার প্রতি একটা কুৎসিত আচরণ প্রদর্শন করা হয়। আর তাদের এই অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হয়ে আমাদের এই অঞ্চলেও অনেকে পর্দাপ্রথা সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করে থাকে।


বাস্তবতার নিরিখে দেখা যায়, একজন খ্রিস্টান ‘নান’ বা ধর্মাজাজিকা যখন লম্বা গাউন আর মাথা-ঢাকা পোশাক পরে থাকে তখন তা আর পশ্চাৎপদতা, উন্নয়নের অন্তরায় বা নারীকে শৃঙ্খলিতকরণের প্রয়াস বলে বিবেচিত হয় না; বরং তা শ্রদ্ধা, ভক্তি বা মাতৃত্বের প্রতীক রূপেই বিবেচিত হয়। পক্ষান্তরে একজন মুসলিম নারী যখন বোরকা বা হিজাব ব্যবহার করেন, তখন তা নিয়ে শুরু হয় তর্কবিতর্ক আর আলোচনা-সমালোচনা। মূলত ইসলামের পর্দাব্যবস্থা নারীকে লাঞ্চিত করার পরিবর্তে তাকে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করেছে। পর্দাব্যবস্থা সমাজে একটি ভারসাম্যপূর্ণ সমাজব্যবস্থার প্রবর্তন করেছে।


আসুন আমরা দেখি, তথাকথিত প্রগতি, নারী-স্বাধীনতা, নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা সমাজকে বা নারীকে কী দান করেছে? প্রচলিত সাধারণ ধারণায় বিংশ শতাব্দী, বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী সময় থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত সময়কে নারী স্বাধীনতার স্বর্ণযুগ বলে আখ্যায়িত করা হলেও এক সমীক্ষায় দেখা যায় যে, এই সময়ে বিশ্বে নারী-নির্যাতন বৃদ্ধি পেয়েছে শতকরা পঁচিশ ভাগ। এ বিষয়ে এখানে একটি জরিপের বিবরণ তুলে ধরা হলো।


পর্দাহীনতা গর্ভপাত বাড়ায়


পর্দাহীনতার ফলে গর্ভপাতের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৯৬৮ সালে ইংল্যান্ডে গর্ভপাতকে বৈধতা প্রদান করার পর সেখানে কেবল রেজিস্টার্ড গর্ভপাতের ঘটনাই বৃদ্ধি পেয়েছে দশগুণ। এর মধ্যে মাত্র শতকরা একভাগ (১%) স্বাস্থ্যগত কারণে আর বাকি ৯৯%-ই অবৈধ গর্ভধারণের কারণে ঘটেছে। ১৯৬৮ সালে যেখানে ২২ হাজার রেজিস্টার্ড গর্ভপাত ঘটানো হয়, সেখানে ১৯৯১ সালে এক লক্ষ আশি হাজার আর ১৯৯৩ সালে তা দাঁড়ায় আট লক্ষ উনিশ হাজারে। এর মধ্যে পনেরো বছরের কম বয়সী মেয়ের সংখ্যা তিন হাজার।


এটা তো গেল যুক্তরাজ্যের অবস্থা। এখন আসুন যুক্তরাষ্ট্র বা আমেরিকার দিকে দৃষ্টি দেয়া যাক। সেখানকার পরিস্থিতি আরো ভয়াবহ। রেজিস্টার্ড পরিসংখ্যা অনুযায়ী কেবলমাত্র ১৯৯৪ সালেই যুক্তরাষ্ট্রে দশ লক্ষ গর্ভপাত ঘটানো হয়। নামের একটি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের মতে, প্রকৃত গর্ভপাতের সংখ্যা উক্ত সংখ্যার তুলনায় ১০%-২০% বেশি।


এক্ষেত্রে কানাডার পরিস্থিতি কিছুটা ভালো। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক। তবে জাপানের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিগুণ। অর্থাৎ, জাপানে প্রতি বছর প্রায় বিশ লক্ষ রেজিস্টার্ড গর্ভপাত ঘটানো হয়ে থাকে। তথাকথিত সভ্য জগতে ‘ইচ্ছার স্বাধীনতা’র জন্য বিগত ২৫ বছরে এক বিলিয়ন অর্থাৎ দশ কোটিরও অধিক ভ্রুণকে হত্যা করা হয়। উক্ত সংখ্যা কেবলমাত্র রেজিস্টার্ড পরিসংখ্যান থেকে নেয়া হয়েছে। প্রকৃত সংখ্যা আরো ভয়াবহ।


বর্বর যুগে কন্যা-সন্তানদের হত্যা করা হতো অর্থনৈতিক কারণে। কিন্তু আজ তথাকথিত সভ্য-জগতে ব্যভিচার, অবৈধ মিলন আর অনৈতিকতার চিহ্ন মুছে ফেলতে এসব হত্যাকাণ্ড চালানো হয়েছে। এসবই হলো বেপর্দা আর নারী-পুরুষের অবাধ মেলামশার ভয়াবহতা। ২০০

 ২০০.কারী উম্মে রুমান, নারীর জান্নাত পাওয়ার পথ, পৃ. ১৬৬-১৭৫

 
Top